#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ৫
অফিসের জরুরী কাজ পড়ে যাওয়ায় ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই ছুটে যেতে হয়েছিল আলভিকে। বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় রাতটা নিকটস্থ এক কলিগের বাসাতেই কাটাতে হয়েছে তাকে। কলিগের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের টুকটাক কাজ সেরে একেবারে বিকেলের দিকে ফিরে আসে নিজ বাড়িতে সে। আজ অন্য দিনের তুলনায় বাড়ির পরিবেশটা কেমন থমথমে। অথচ এ সময় তো সাধারণত হৈ হৈ পড়ে যায়। এ বিষয়টা বড় অবাক করে আলভিকে।
ব্যাগটা নিজ কক্ষে রেখে, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আলভি। মেহরুনের রুমের সামনে গিয়ে থমকে যায়, রুমটা ফাঁকা পড়ে আছে, জিনিসপত্র সব একেবারে অগোছালো। অথচ এই রুমটা সবসময় পরিপাটি থাকত, আর মেহরুন তো সাধারণত বিকেলের দিকে নিজ কক্ষে পড়ে। আলভি প্রতিদিন এসে দেখে মেহরুন পড়ায় ফাঁকি দিচ্ছে কিনা। তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো? এসব ভাবতে ভাবতে হাটছিল আলভি, হঠাৎ ধাক্কা খায় জারার সাথে।
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে আলভি। ধমকের সুরে বলে ওঠে
-‘ দেখে শুনে চলতে পারিস না নাকি?
জারা মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে বলল
-‘ আমি আবার কি করলাম? তুমি-ই তো অন্যদিকে তাকিয়ে হাটছিলে ভাইয়া।
আলভি কোনো উত্তর দেয় না। চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই জারা বলে উঠল
-‘ কাকে খুঁজচ্ছিলে ভাইয়া, মেহরুন আপিকে নিশ্চয়ই?
আলভি পেছনে ফিরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। জারা মুখ বেঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ তার দেখা আর পাবে কিভাবে? সে তো এখন তার শশুরবাড়িতে।
আলভি অবাক হয়ে যায়। ভ্রু কুচকে বলল
-‘ কি বলছিস? পরিষ্কার করে বল তো।
-‘ মেহরুন আপির বিয়ে হয়ে গেছে এইতো গতকালই।
আলভি চমকায়। চিৎকার করে বলে
-‘ কিহ্, মেহুর বিয়ে হয়ে গেছে, আর আমি ভাই হয়েও জানতে পারলাম না। মানে কি এসবের?
আলভি আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে সোজা মা বাবার রুমের সামনে চলে যায়, জারাও আলভির পিছন পিছন গিয়ে দাঁড়ায়। তাদের রুমের দরজা বন্ধ। বেশ কয়েকবার কড়া নারে। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ মেলে না। হতাশ হয়ে ফিরে চলে আলভি। সব কেমন যেন উলোট পালট লাগছে তার কাছে। পুনরায় জারাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে
-‘ আচ্ছা, কার সাথে বিয়ে হয়েছে মেহুর?
-‘ কেন তোমার বাচপানকা পিয়ারি বন্ধু আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে, জানো না তুমি?
কথাটা বলেই ভেংচি কেটে চলে যায় জারা। আলভি রেগে যায় প্রচন্ড। বন্ধুত্বের মর্যাদা এভাবে ক্ষুন্ন হবে সে কখনো ভাবেনি। আর আদ্রিশ যে এমন করে বসবে তা তার কল্পনারও বাইরে ছিল। আর কিছু না ভেবে এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা চলে যায় আদ্রিশের বাড়িতে।
গোধুলি লগ্নে চেম্বার থেকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরে আসে আদ্রিশ। বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে দেখল আলভি, অরনী, মেহরুন থমথমে মুখে বসে আছে। প্রথমে আলভিকে এখানে দেখে অবাক হয়। পরক্ষণেই আদ্রিশ ওদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আলভির দিকে লক্ষ্য করে মুচকি হেসে বলল
-‘ আরে ইয়ার, কি অবস্থা তোর? কোথায় ছিলি তুই? এতো ব্যস্ত ছিলাম যে তোকে কিছু বলার সময় হয়ে ওঠেনি রে।
এতটুকু বলে শেষ করার আগেই আলভি হাত নাড়িয়ে থামতে বলে। আদ্রিশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ গলায় বলে ওঠে আলভি
-‘ তোকে বিশ্বাস করেছিলাম আর তুই তার প্রতিদানস্বরূপ ঠকিয়েছিস। লজ্জা করল না আমার বোনের দিকে নজর দিতে। আমার নিষ্পাপ বোনটাকে মিথ্যে অপবাদ দিতে তোর বিবেকে বাধে নি। তোর যখন আমার বোনকে এতোই পছন্দ, তাহলে আমাকে বলতে পারতিস। তা না করে তুই কেন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিলি?
আদ্রিশ অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে নেয়। কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল
-‘ তুই আমার পুরো কথাটা শোন আলভি। তাহলে তুই বুঝতে পারবি।
-‘ তোর আর কি কথা শোনার আছে? ঠকবাজ, জোরচ্চর, বেইমান। বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখতে জানিস না, আবার আসিস কথা বলতে।
-‘ তুই ভুল বুঝচ্ছিস আমাকে…
আদ্রিশ কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দেয় আদ্রিশের গালে আলভি। আদ্রিশ গালে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আলভির দিকে।
.
নিজ কক্ষে অনবরত পায়চারী করে চলেছে জারা। কিছুক্ষণ পর পর দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নাজিয়া সুলতানা মেয়ের এমন পায়চারী মনভাব দেখে বিরক্তির সহিত বললেন
-‘ কি হয়েছে এমন পায়চারী কেন করছিস?
জারা মায়ের দিকে ফিরে তাকায়। ক্রন্দনরত সুরে বলল
-‘ ভাবলাম মেহরুনকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারলে তবেই হয়তো শান্তি মিলবে। কিন্তু আরও উটকো ঝামেলা এসে জুড়ে বসল।
চিন্তিত সহিত নাজিয়া সুলতানা বলল
-‘ কি ঝামেলা বাঁধল আবার?
-‘ ঝামেলাটা আদ্রিশ ভাইয়া পাকিয়েছে। কথা ছিল মেহরুনকে এ বাড়ি থেকে ছলা কৌশল করে বের করে দেওয়া। কিন্তু সে তো উল্টে মেহরুনকে বিয়ে করে বসল। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল আদ্রিশ ভাইয়া। আদ্রিশ ভাইয়ার মনে মনে যে এসব চলছিল, এ জানলে আমি কখনোই আমার পরিকল্পনার কথা তাকে বলতাম না। জানো মা, আজ সকালে আদ্রিশ ভাইয়ার চেম্বারে গিয়েছিলাম, ভাইয়া আমায় অপমান করে বের করে দিয়েছ। সব মেহরুনের জন্য হয়েছে। কি হবে এখন আমার মা? আদ্রিশ ভাইয়াকে আর এজনমে পাওয়া হলো না আমার।
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে জারা। নাজিয়া সুলতানা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। মাথায় তার ভিন্ন পরিকল্পনা চলছে। কিছুটা ভেবে তিনি হঠাৎ হেসে ওঠেন। জারা ক্রন্দনরত অবস্থায় তার মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। নাজিয়া সুলতানা ক্রুর হেসে বলে ওঠেন
-‘ আদ্রিশ তোর হয়নি তো কি হয়েছে, আলভি আছে না?
জারা অবাক হয়ে বলে ওঠে
-‘ ছিহ্, মা এসব কি বলছো তুমি? আলভি ভাইয়া আর আদ্রিশ ভাইয়া কি এক হলো নাকি? ছোটবেলা থেকে আলভি ভাইয়াকে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করে এসেছি।
-‘ তো কি হয়েছে? আলভি তোর আপন ভাই না, তোর চাচাতো ভাই হয়।
-‘ তবুও মা…
নাজিয়া সুলতানা বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন
-‘ আমি তোর মা, তাই তোর থেকে বুদ্ধিও আমার বেশি। যা বলছি তাই চুপচাপ শোন, কথার মধ্যে কথা বলবি না একদম।
জারা চুপচাপ হয়ে বসে থাকে। নাজিয়া সুলতানা পুনরায় বলতে শুরু করলেন
-‘ শোন, আদ্রিশের থেকে আলভির সম্পদও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। মেহরুন তো চলেই গেছে। আলভি এবার পুরো সম্পদ পাবো। ওকে বিয়ে করলে, তুইও ওর পুরো সম্পদের অংশীদার হবি। তারপর না হয় আলভিকে সরিয়ে ফেলে, আদ্রিশকে বিয়ে করলি। তখন তো তুই এই পুরো সম্পদের মালকীন হয়ে যাবি আর আদ্রিশকেও পেয়ে যাবি।
আদ্রিশকে পেয়ে যাবে এই কথাটা শুনে জারা চোখ মুখ চিক চিক করে ওঠে। চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছে নেয়। পরক্ষনে কিছু একটা ভাবতেই মুখে আবার আঁধার নেমে আসে তার। নাক টেনে নিয়ে চিন্তিত সুরে সুধায়
-‘ কিন্তু মেহরুন? মেহরুনকে যদি আদ্রিশ ভাইয়া ছাড়তে না চায়। তখন কি হবে?
নাজিয়া সুলতানা মুচকি হেসে বলেন
-‘ তুইও কি মেহরুনের থেকে কম সুন্দরী নাকি? শোন, পুরুষ মানুষ সৌন্দর্যের পুজারী হয়, বুঝলি? আর মেহরুনের নামে তো কোনো সম্পদ নেই। আলভিকে বিয়ে করে যখন ওকে পথ থেকে সরিয়ে ফেলবি তখন তো সব সম্পত্তির মালিকীন তুই-ই হবি। তখন দেখবি আদ্রিশ এমনিও পাত্তা দিবে তোকে।
মায়ের কথা শুনে জারা হেসে ওঠে। তারা মেতেছে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। এ ষড়যন্ত্র থেকে কি আদৌও মুক্তি মিলবে আদ্রিশ, মেহরুন আর আলভির? নাকি ওদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তিনজনের জীবনই দূর্বিষহ হয়ে উঠবে?
#চলবে ~