#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫০
১৩৯.
অর্পণ কাপড় চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হতেই শাফাকাত খানের মুখোমুখি হলো।হঠাৎ ছোট্ট মামাকে সে এখানে আশা করেনি।
তুমি,তুমি এখানে কেনো?তোমাকে কে আসতে ব’লেছে?
একমাত্র ভাগ্নেকে দেখতে কি কারো অনুমতি লাগে?শুনলাম সুন্দরী রমনীকে ঘরে তুলেছো!তাও আবার আমার জিনিসের কার্বন কপি।তা কোথায় সে?ডাকো তাকে, দেখে একটু ধন্য হই।
মুখ সামলে কথা বলুন?আপনি ভুলে যাচ্ছেন কার সম্পর্কে কথা বলছেন।সে আমার প্রিয়তমা।তাকে কটুক্তি করা মানে আমাকেই করা।আপনি আমার গুরুজন এবং সম্পর্কের মান আপনার কাছে নাই থাকতে পারে।আমি গুরুজন এবং সম্পর্কে মান রাখতে জানি।প্রথমবার নিজেকে সংযোজত করেছি।তারমানে এই নয় বারবার নিজেকে সংযোজত করব।এখানে কোনো তামাশা হোক আমি চাই না।চলে যান এখান থেকে।অর্পন ঠান্ডা মাথায় মুখ গম্ভীর করে কথাগুলো ব’লে।শাফাকাত খান আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু বলতে পারলেন না।
ঠিক আছে!এখানে কথা না বলতে চাইলে খান বাড়িতে আসো কথা আছে।
হুম।
শাফাকাত খান বেরিয়ে যেতেই অর্পন দুই হাতের মুঠো বন্ধ করে রাগে ফুঁসতে লাগলো।
মিলন,সাজু আমি একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি ফিরতে দেড়ি হবে।তোমার আপুর খেয়াল রেখো।অর্পনের কথায় দুই ভাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
অর্পন গাড়িতে চড়ে বসতেই ড্রাইভার খান বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।
শহর একটি কোলাহল পরিবেশ।গ্রামের মানুষ হঠাৎ করে শহরে আসলেই কেউ কেউ অবাক হয়।আবার কেউ এত কোলাহল পরিবেশ পচ্ছন্দ করে না।তারা গ্রামে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।সেই কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে অর্পন নিজের পরিবার এবং বউয়ের সাথে গ্রামে দিব্যি শান্তিতে কা*টাছিলো!আজ আবার তাকে ফিরতে হচ্ছে।যথাযথ সময়ে খান বাড়ির বড় গেইটের সামনে গাড়ি আসতেই দুই দিকে গেট ভাগ হয়ে সরে যেতেই গাড়িটা ভিতরে ঢুকে।এতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই রাজপুত্র আগমন ঘটে।দারোয়ান আব্দুর চাচা অর্পনের গাড়ি দেখতে পেয়ে চিতকার করে বড় সাহেবকে ডাকতে থাকে।
বড় সাহেব,বড় সাহেব আমাদের রাজপুত্র আসছে।আপনার আদরের নাতি এসেছে।
আব্দুর কথায় জামশেদ উল্লাহ খান খুশি হয়ে বাহিরে নামতেই নিজের নাতিকে দেখতে পান।
অ.র্প.ন!নানাভাই আমার।আজ কতগুলো বছর পর খান বাড়িতেই পা রাখলে।আয় আমার বুকে আয়।জামশেদ উল্লাহ জড়িয়ে ধরেন।কিন্তু অর্পনের সেই দিকে মনযোগ নেই।সে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।তার মধ্যে আনন্দের কোনো ছিটেফোঁটা নেই।এইদিকে অর্পনের আসার খবর পেয়ে তার নানী জান ছুটে আসেন।নাতীকে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পড়েন।আজ তার খুশির দিন।তার ছোট ছেলে অনেক বছর পর বাড়িতে পা রাখতেই তার নাতির মুখ দর্শন হলো।
বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন?আয় ভেতরে আয়।নানীজান তার হাত টেনে ভিতরে টেনে নিয়ে সোফায় বসায়।
এই কে কথায় আছিস।তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার সাজা।আজ আমি নিজের হাতে আমার নাতিকে খাওয়াবো।
নানী জান আমি এখানে বসতে কিংবা খেতে আসি নিই।যার জন্য আমাকে এতদূর আসতে হয়েছে তাকে ডাকুন।আমি কথা ব’লে চলে যাব।
কি বলছিস তুই?আমি তোকে এত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে দিব না?কয়েকটা দিন থাক আমার কাছে।
এক সময় সেই পরিবেশটা ছিল।কিন্তু আজ সবটা ভিন্ন।আমার আমিটাকে তোমার আদরের ছোট ছেলে ভাঙ্গা আয়নার মতো আমার মনটা ভেঙে দিয়েছে।যেটা কখনোই জোড়া লাগবে না।আমিও চাই না এই ভাঙা সম্পর্কে কোনো নাম দিতে।তাকে ডাকো।কথা আছে।
আমাকে ডাকতে হবে না।আমি এখানেই আছি।শাফাকাত খান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে ব’লে।
অর্পন পাঞ্জাবি হাতা গুটিয়ে নিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আঙুল তুলে বলল,
অতীতে যা করেছেন।তার শাস্তি ভোগ করা এখনো বাকি মিস্টার শাফাকাত খান।আপনার কারণে একটা সংসার ভেঙেছে।শুধু মাত্র আপনি দায়ী।রাজিয়া মা’কে আমি বাঁচাতে পারিনি।কিন্তু তার কন্যাকে বাঁচাতে।যদি আমার জান চলে যায় তবে যাবে।কিন্তু রাজিয়া মায়ের পরিনতি আমার প্রিয়তমার সঙ্গে করতে দিবো না।কিছুতেই না।তার সম্মান,তার ইজ্জত হেফাজত করতে তার স্বামী জনাব অর্পন তালুকদার এখনো বেঁচে আছে।তাই আমার প্রিয়তমার দিকে হাত বাড়াতে হলে আমার মুখোমুখি আগে হতে হবে।
বাহা,বউ দেখছি ভালোই বশ করেছে।তা বউ কি মন্ত্র পড়ালো?যে বউয়ের পালিত কুত্তা হয়ে গেলি।ওই মেয়ের তোও একটা ব্যাবস্থা করতে হয়।শাফাকাত খানের কথা শেষ হতে দেড়ি তার নাক বরাবর ঘুষি মারতে দেড়ি হলো না।অর্পনের হঠাৎ আক্রমণে শাফাকাত খান দিশা না পেয়ে সোফায় পড়ে যান।অর্পন সেই সোফার একপাশে পা রেখে আঙুল তুলে বলল,
ওহ আমার প্রিয়তমা,আমার বউ।আর তালুকদার বাড়ির আমানতের দিকে তুমি চোখ তুলে তাকানোর কথা ভাবলেই বা কি করে।কোন সাহসে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা মুখে আনলে।আমার ইচ্ছে করছে তোমার ওই জিহ্বা কে*টে দিতে।যে জিহ্বা দ্বারা আমার প্রিয়তমাকে অসম্মান করে।
অর্পনের কাজে জামশেদ উল্লাহ খান এবং তার বেগম দুই মামা,ভাগ্নেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু অর্পন রাগে ফুঁসছে।তাকে সামলানো দায়।বাড়ির গার্ড ডেকে তাদের আলাদা করা হলো।শাফাকাত খান ঠোঁটের কিনারে র*ক্ত মুছতে মুছতে বলল,
তুই আমার গায়ে হাত তুলি।
হ্যা,তুললাম।তোমার এতখনে শুকরিয়া করা উচিত ছিলো।তোমাকে আ*ঘাত করেছি।কিন্তু জানে মা*রিনি।দ্বিতীয়বার তোমার ওই নোংরা মুখে আমার বউয়ের নাম নিবেনা।যদি চেষ্টা করেছো।খোদার কসম।তোমাকে ধ্বংস করে দিব।
অর্পন গার্ডদের ধাক্কা দিয়ে খান বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।অর্পনের নানী জান সেই কখন থেকে কান্না করছেন।এসব কি হলো?তার সুন্দর সংসারের কোন কা*লনাগিনী ছায়া পড়লো।
অর্পন এর রাগ দেখে ড্রাইভার বুঝতে পারলো।এবারেও গন্ডগোল হয়েছে।যবে থেকে অর্পনের হয়ে কাজ করে তবে থেকেই এমন ঝগড়াঝাটি দেখতে পায়।এতদিন মুখে মুখে চলতো।আজ সরাসরি হাতাহাতি হয়ে গেছে।স্যারের রাগ প্রচুর।এই রাগ না কমা পর্যন্ত তার সামনে যাওয়া যাবে না।অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই অর্পন নেমে গেলো।ফোন করে পার্টি লোকদের খবর দিল।এবং জরুরি মিটিং বসার আহ্বান জানালো।
১৪০.
পুতুলের দুপুরের ভাত ঘুম ভেঙে যেতেই অর্পনকে দেখতে পেলো না।পুতুল নিজের লম্বা চুলগুলো হাত খোপা করে বের হয়ে পুকুর পাড়ে গেলো।চারদিকে তাকিয়ে কোথায় তাঁকে খুঁজে পেলো না।লোকটা তাঁকে না ব’লে কথায় চলে গেলো।কখনো না ব’লে কোথায় যায় না।পুতুল মন খারাপ করে নিজের ঘরে বসে পড়ে।পানির গ্লাসের নিচে ছোট্ট চিরকুটটা দেখে কপালে চিন্তা ভাজ ফেলে।চিরকুটটা খুলে পড়তেই মুখটা চুপসে গেলো।তার জনাব তাকে না জাগিয়ে ঢাকায় একা চলে গেছে।হঠাৎ কী না-কি কাজ পড়ে গেছে।একবার ডেকে বলে গেলে কি হতো?লোকটা তাকে ঘুমে দেখে একবার ডাকলো না।এটা কোনো কথা।দূর ভাল্লাগে না।
অর্পন চলে যাওয়া পুতুলের খারাপ লাগাটা আরো বেশি করে ঝেকেঁ ধরে।স্বামীকে সে এখনই মিস করছে।তাহলে তাকে ছাড়া বাকি দিনগুলো কা*টাবে কি করে?
জামশেদ উল্লাহ খানের দিকে তাকিয়ে শাফাকাত খান বলল,
পিপীলিকা পাখা গজায় মরিবার তরে।তোমার নাতিকে এর মূল্য দিতে হবে।এতদিন বোনের ছেলে ব’লে কিছু বলিনি।কিন্তু আজ যেটা করলো তারপর ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।ওহ খুব বেড়েছে।রাজনীতি নিয়ে ওর খুব সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গায়।সেই গদিই যদি কেঁড়ে নেই।তাহলেই ওকে উচিত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।তুমি এতদিন কিছু যখন করতে পারোনিই।তখন যা করার আমি করব।হয় ওহ থাকবে।আর না হয় আমি থাকব।দুই রাজা একসাথে রাজ্য পরিচালনা করতে পারে না।শাফাকাত কথায় অর্পনের নানীজান আঁতকে ওঠেন।তার নাতি কিছু হলে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই বাঁচবে না।ছেলেকে বোঝাতে তার পিছনে ছুটে।এইদিকে জামশেদ উল্লাহ খানকে ছেলে কিসের আভাস দিল?বুঝতে পারছেন না।তবে খারাপ এবং ভয়ংকর কিছু হওয়ার পূর্ব আভাস এখনই পাচ্ছেন।
অর্পনকে শেষ করতেই তার শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছে শাফাকাত খান।উদ্দেশ্য একটাই অর্পনের রাজনীতির ক্যারিয়ারে লাল কালির দাগ বসিয়ে দেওয়া।যাঁর ফলে অর্পন এর ক্যারিয়ার শেষ।তাঁকে দূর্বল করেই তার প্রাণনাশ করা।তার আপন জনই তার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।অর্পন জন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি হচ্ছে।
চলবে….
যারা এতদিন মন খারাপ করতেন গল্পটা প্রতিদিন না দিতে পারায়।এখন থেকে গল্পটা প্রতিদিন আসতে চলেছে।আর যারা গল্পটা আগের পর্বগুলো ভুলে গেছেন।মনে নেই তারা আরেকটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন।আপনাদের অপেক্ষা শেষ।আর ওয়েট করাবো না।
ধন্যবাদ।