#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫১
১৪১.
মেশিনের সাহায্যে পুকুরের পানি সেচে
ধানের ক্ষেতে দিয়েছে।সেখানে এত মাছ পানির সাথে আসবে ভাবনার মাঝেই ছিল না।সেই পানির সাথে মাছ আসছে।এগুলো দেখে তাদের খুশি ধরে না।মিলন,সাজু বরশি দিয়ে মাছ ধরছে।স্বাধীন ক্ষেতে নেমেছে বাইন মাছ,শিং মাছ,কই,পুটি হাড়িতে জায়গায় করেছে।রেনু লাকড়ি ঘর থেকে চিকন কঞ্জি নিয়ে আসছে ক্ষেতে এসেই দুই ছেলেকে ধমক মেরে বলল,
তোদের দুই ভাইকে বললাম স্কুলে যেতে আর তোরা দুইজন কি করলি?ব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসে মাছ ধরা হচ্ছে।জলতি ওঠ।কথা না শুনলে মা’র খাবি।
আম্মু আজকে স্কুলে যামু না।কালকে যামু নিই।
চুপ।বেশি কথা ব’লেই মা’রবো!ওঠ।ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে স্কুলে যা।আজকে স্কুলে না গেলে তোদের খাওয়া বন্ধ।পড়াশোনা না করলে কোনো কথা শুনব না।রেনুর কথায় দুই ভাই গাল ফুলিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাটতে হাটতে ইচ্ছে করে কাঁদা পানিতে পড়ে গেলো।ছেলেদের কৃতি কলাপে রেনু কঞ্জি দিয়ে দৌড়ানি দিতেই বাবার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
কত বড় পড়াচোর হয়েছে।ইচ্ছে করে পরে এমনটা করলো যাতে স্কুলে না যেতে হয়।আজ তিন বাপ পুত্রের খাওয়া বন্ধ।বাপের আহ্লাদে বাদর হয়েছো না।থাক মাঠে পরে বাড়িতে আসতে হবে না।আসলেই হাড্ডিগুড্ডি গুড়া গুড়া করে ফেলব।বউয়ের বকাঝকা দেখে স্বাধীন নিজেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।ছেলেদের জন্য আজ তার কপালেও ভাত নেই।
আব্বু আজকে আম্মু ভাত দিবেনা বলেছে।তাহলে চলো বিরিয়ানি খাই।
চুপ।আর তাড়াতাড়ি বাসায় চল।
রাজনীতি এমন একটা জায়গায় সেখানে সবাই রাজ করতে চায়।লুটপাট তাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়।অসৎ সঙ্গ বেশিই থাকে।এই রাজনীতিতে সবাই স্বার্থপর।গদিতে বসে জনগনের হোক নষ্ট করে।আর জনগন কষ্টে ম*রে!তাতে গদিতে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কিছুই যায় আসে না।একজন সৎ এবং নীতিবান নব্য রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসবে।জনগণে সুখে,দূঃখে পাশে দাড়াবে।তা তারা যায় না।সাহায্য করবে এগুলো পচ্ছন্দ হয় না।সৎ সাথে কাজ করতে দিতে চায় না।একজনের ভালো করতে দেখলেই কথা উঠে।হয় গদি ছাড়।আর নয় হয় ম’র!সহজেই গদি ছাড়লেই অসৎসঙ্গের বসবাস।আর সৎ মানুষের সর্বনাশ।জনগনের করুন পরিহাস ঘটে।তিন শেষে খারাপ লোকগুলোই রাজত্ব করে।আর ভালো লোকের ঠাঁই হয় কবরের ঘরে।আর নয় হয় পঙ্গুতো হয়ে সারাজীবন পড়ে থাক বিছানায়।
বোরহানীবাগ মোহম্মদ নইমুদ্দিনের আট তলা বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে।আগুনের উৎসটা শুরু হয় নিচ থেকেই।তাই ওই বিল্ডিং থেকে কেউ বের হতে পারেনি।যারা চেষ্টা করেছে।তারা বেলকনিতে কিংবা দরজার ভিতরে আটকে পরে,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে।কালো বিষাক্ত ধোঁয়া অজ্ঞান হয়েছিল।দেহখানিকে আগুনে ঝলসে দিয়ে যায়।ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।এই পযন্ত সত্তুরের বেশি মৃত্যর লাশ।আর পুড়া,অর্ধশতাধিক।সরকার থেকে সাহায্য জন্য বলা হয়।তারা সাহায্য জন্য নিহত পরিবারকে দুই লাখ।এবং আহত পরিবারকে নব্বই হাজার টাকা দেওয়া কথা দেন।কিন্তু সময় বয়ে যায়।টাকা আসে না।অর্পন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মৃত্যু মিছিলটি বাড়ছে।একশ ঘর ছাড়িয়েছে।আহতদের অবস্থা আশঙ্কা জনক।আর এইদিকে তাদের পার্টির লোকেরা দুই নাম্বারি করে টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে।সে প্রতিবাদ করায় পার্টিলোকই তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।অর্পন চুপচাপ থাকবে না।সে এটার শেষ দেখে ছাড়বে।অর্পন পার্টি লোকজনের সাথে তর্কাতর্কি করে বেরিয়ে আসে।তার মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে।আল্লাহ নাম নিয়ে কাগজে লিখিত বয়ান এবং পার্টি লোকদের বিরুদ্ধে কেস করতে বের হয় প্রমাণসহ।
মেইন সড়ক পথ ধরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টায় যখন ব্যাস্ত।তখনই গুলির শব্দ শুনা যায়।অর্পনের ড্রাইভার হাতে গুলি লাগতেই ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।অর্পন নিজের হাতের মোটা ফাইলটা পিছনে রেখে গাড়ি ঘুড়াতে শুরু করে।তাকে সরাতে পারলেই কাদের লাভ হবে তা এতখনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে।
কিন্তু অর্পন আজ হার মানবে না।ড্রাইভারকে সরিয়ে নিজে গাড়ি চালাতে শুরু করে।আকাঁ বাকাঁ পথের মতো গাড়িটা ঝুটতে থাকে।কোথায়ই গাড়ি গন্তব্যে ছুটে চলছে জানা নেই।নিজেকে এই মুহূর্তে নিরাপদে রাখাটা জরুরি।তার ওপর নির্ভর করছে তার বউ,পরিবার,আপন মানুষগুলোর ভালো থাকা।তার কিছু হলে তারা ঠিক থাকবে না।চোখের সামনে মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে।বাবার বকাঝকাগুলো আজ খুব করে মনে পড়ে।বউয়ের জন্য কলিজা কেঁপে ওঠে।তাকে কথা দিয়েছিল।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক।সারাটি জীবন ছায়ার মতো পাশে রবে।অর্পন একটুও অমনোযোগ হতেই তিন রাস্তার মোড় থেকে একটা বড় গাড়ি এসে ধা*ক্কা মারে।অর্পনের গাড়িটা বারি খেয়ে উল্টে পাশের খাদে পরে গেলো।তার কয়েক সেকেন্ড মধ্যে গাড়িটা গরম হয়ে ব্লাস্ট হয়ে যায়।
১৪২.
রাত দু’টো বাজে।কোনো শোরগোল নেই।অর্পন হাসপাতালে বেডে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।পা নাড়াতে পারছে না।শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কা*টাছেঁড়া দাগ।ভিতর থেকেই দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।আজ দুইদিন হয়েছে সে হাসপাতালে ভর্তি।বাড়ির কারো সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি।জিহান,রিহানের সাথে তার শেষ কথা হয়েছিল।ওরাই অর্পনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।ড্রাইভার অবস্থা ভালো নয়।সে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
বলছিলাম কি ভাই?একটিবার বাড়িতে তোমার খবরটা দেই।
অর্পন আস্তে করে বলল,
না।বাড়িতে খবর দিলে ওরা চিন্তা করবে।আর আমার মা’কে খুব ভালো করেই জানা আছে। যদি শুনে আমার এই অবস্থা।তাহলে কেঁদেকে*টে বাড়ি মাথায় তুলবে।মায়ের মনটা নরম।আদরের সন্তানের কিছু হলে ঠিক থাকে না।তারচেয়ে বরং কয়েকটা দিন যাক সবটা আমি সামলে নিব।
তোদের ভাবীর কি খবর?
ভালো নেই ভাই।তুমি আসার পর আরো চুপচাপ হয়ে গেছে।তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে।সে তোমায় প্রচুর মিস করে।তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটপট করছে।
অর্পন অস্যয়নীয় ব্যাথা সয্য করার মাঝে একটু মুচকি হাসি দিলো।কয়েক মিনিট চুপ থেকে বলল,
ওখানকার কি খবর?
ভাই তোমাকে আ*ঘাত করার পেছনে ওদের কোনো মোটিভেশন আছে।শুধু শুধু তোমাকে আঘাত করেনি।
জানি আমি।আর এসব কে বা কারা করছে?সবটা জানা আছে।ওরা চায় আমি সরে যাই।
কিন্তু আমি এত সহজে হার মানবো না।নিজের কথা ভেবে এই পথে আসা হয়নি।আমি এসেছি জনগনের কথা ভেবে।তাদেরকে একটা সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে।আর আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরবো না।এইসব বাদ দে গাড়ি বের কর!এখানে ভালো লাগছে না।বউটাকে খুব মিস করছি।গ্রামে যাব।
কিন্তু ভাই তুমি গ্রামে গেলে চাচী মা তোও এমনই জেনে যাবে।
তোরা না ব’লে জানতে পারবেনা।আপাদত সে নিজের প্রফেশন নিয়ে ব্যাস্ত আছে।রোগীর সেবা করাটাই তার ধর্ম।সে রোগীর সাথে কোনো কম্পোমাইজ করবে না।আর বউকে আমি সামলে নিতে পারব।
ওকে,ভাই ব্যাবস্থা করছি।
লেবু গাছ থেকে লেবু পারতে গিয়ে হাতের মধ্যে কাঁ*টা ফুটেছে।পুতুল বুড়ো আঙুল চেপে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।এমন সময় বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি আসতেই পুতুলের কপালে চিন্তা ভাজঁ পরে।ডান হাত ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেলো।গাড়ির দরজা খুলতেই পুতুল চমকে উঠে।হাতের লেবু ফেলে ছুটে আসে।অর্পনের গালে হাত বুলিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।এসব কি করে হয়েছে? জানতে চায়।
ভাবী আপনি প্লিজ শান্ত হন।তেমন কিছু হয় নিই।ওই ঢাকায় একটা গাড়ির সাথে ভাইয়ের গাড়ির ধাক্কা লাগে।আর তারপর গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে যায়।ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট আরকি।
পুতুল এক্সিডেন্ট শব্দটা শুনে ভয় পেয়ে যায়। অর্পনকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না ভেঙে পরে।পুতুল জড়িয়ে ধরায় অর্পনের ব্যান্ডেজ করা জায়গায় আবার ব্যাথা লাগে।তবুও প্রিয় মানুষটির এত অস্থিরতা দেখে তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে।পুতুলের মুখটা তার বুক থেকে তুলতে চাইলেও।পুতুল মাথা তুললো না।আর না ছাড়লো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।পুতুল তাঁকে জড়িয়ে ধরতেই জিহান,রিহান অন্য দিকে তাকিয়ে রয়।বাড়ির উঠোনে এরমধ্যেই স্বাধীন,রেনু,আসে।মামা,মামীকে দেখে পুতুল তাকে ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।অর্পন এর এই অবস্থার কথা শুনে।তাকে সাবধানে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে।স্বাধীন,জিহান,রিহান সাহায্যে পুতুলের ঘরের বিছানায় তার ঠাঁই হয়।মাথার আঘাতের জায়গায় এখনো ঝিনঝিন করছে।বিশ্রাম নিলে হয়তো সেরে যাবে।পুতুল অর্পনের হাত ধরে বসে রইলো।আর অর্পন চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।একটুও পরেই ঘুমের মেডিসিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে।
আছরের আজান পরতেই অর্পন চোখ মেলে তাকায়।পুতুল নামাজ পড়ছে।ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে আবার চোখটা বুঝতে চাইলে মায়ের মুখটা দেখতে পায়।ভাবে হয়তো কল্পনা।কিন্তু তার কল্পনাকে মিথ্যে করে রাবেয়া ঠাসস করে ছেলের হাতের বাহুতে থাপ্পড় লাগিয়ে বসেন।অর্পন হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে ডাকে।
আম্মু তু…মি?
কি ভেবেছিস?মায়ের কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা লুকিয়ে যাবি।আর আমি বুঝতে পারব না।বলি তোকে পেটে আমি নিয়েছিলাম।না-কি তুই আমায় নিয়েছিলি।হারামজাদা এত বড় এক্সিডেন্ট করে আমার কাছে বলার প্রয়োজনবোধ করলো না।আমি যে তার মা সেটা তার মনেই ছিল না।মায়ের কষ্ট তুই কি বুঝবি?মায়ের কষ্ট বোঝার মতো তোর বয়স হয়েছে।আমাকে চিন্তা রাখতে আর কাঁদাতে খুব ভালো লাগে না রে।রাবেয়া ছেলেকে বকছেন আবার নিজেই ভ্যা,ভ্যা করে কাঁদছেন।পুতুলের নামাজ শেষ করে ছুটে আসে।অর্পন মায়ের রাগ ভাঙ্গতে মা,মা ব’লে ডাকতে লাগল।কিন্তু রাবেয়া থামছে না।
এই যে আমার এই অবস্থা দেখে কান্না করছো।আমার কি ভালো লাগছে বলো।
তুমি কান্না করবে ব’লেই আমি বলতে চাইনি।প্লিজ আম্মু কেঁদো না।আমার কষ্ট হচ্ছে।তাছাড়া তোমাকে খবরটা দিল কে?আমি জিহান,রিহানকে বারবার বলতে বারণ করেছিলাম।
তুই বারণ করলে কি হবে?যে খবর দেওয়ার সে ঠিকই দিয়েছে।
কে দিয়েছে?
কে আবার?আমার পুতুল মা দিয়েছে।
অর্পন হা করে তাকিয়ে রইল।
ওরেব্বাস।যার জন্য করলাম চুরি।সে দিল আইকা গলা বাঁশ।
অর্পনের রিয়াকশন দেখে পুতুল,রাবেয়ার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।অর্পন যে তার পরিবারকে পুরো বিষয়টি ইনর্ফম করেনি।তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
চলবে…
কালকে পোস্ট করতে গিয়ে দেখি ফেসবুকে ঢুকতে পারি না।টেনশনে মাথা খারাপ।আজকে আসার পর জানলাম কাহিনি করছে জু*র্কা কা*কু!