চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৫২

0
266

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫২
১৪৩.
আম্মু তোমার মনে আছে।ছোট্ট বেলায় আমার যখন জ্বর আসতো।তখন তুমি আমার মাথায় পানি দিয়ে দিতে।পলিথিন, বালতি,মগ সবকিছু খাটের ওপর নিয়ে আসতে আমার কাছে ওগুলো খুব ইন্টারেস্টিং লাগত।এরপর স্লো ফ্লোতে পানির মধ্যে দিয়ে আমার মাথায় চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বিলি কাঁ*টার ব্যাপারটা ভীষণ ভালো লাগত।একটু পর পর কাঁথা টেনে একদম ঠোঁট পযন্ত ঢেকে দেওয়া অদ্ভুত আরাম লাগত।আজ-ও জ্বর আসুক।আর তুমি আমার মাথায় ওইভাবে হাত বুলিয়ে দিতেই আমি ঘুমে তলিয়ে যাই।
এই শরীরটা কা*টাছেঁড়া।সব জায়গায় বেন্ডেজ।মাথাটা যন্ত্রণা করছে।কিছু ভালো লাগছে না আম্মু।

তারজন্য জ্বর আসতে হবে না।তুই সুয়ে চোখ বুঝে থাক।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।দেখবি সব খারাপ লাগাটা সরে গেছে।অর্পণ চোখ বুঝতেই রাবেয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

অর্পন ঘুমিয়ে গেছে।রাবেয়া ছেলের মাথায় চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।আজ তার আদরের সন্তানের এই অবস্থার জন্য দায়ী তার ভাই শাফাকাত খান।বোনের সন্তানকে মেরেছে।একটিবার তার কলিজা কাপে নিই।সে কতটা নিষ্ঠুর,আর বর্বর।

পুতুল রুমে আসতেই রাবেয়া নিজের চোখের পানি তারাতাড়ি মুছে নিলো।পুতুল আম্মু এইদিকে আসো।পুতুল আসতেই ওর হাত দুটো একসাথে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

আমার অর্পন তোমায় খুব ভালোবাসে।জীবনে যা কিছু হয়ে যাক না কেন?কেউ কারো সঙ্গ কখনো ছাড়বে না।তোমাদের সুখ দেখে অনেকেই হিংসা করবে।তোমাদের সুখের পথে অনেকেই আসবে কা*টাঁ বিছাতে।তোমরা যদি নিজেদের কে শক্তভাবে একে অপরের ওপর বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা রেখে চলতে পার।জীবনটা সুখময় হবে।আমি দোয়া করি তোমরা সুখে থাকো।ভালো থাকো।রাবেয়া,পুতুলকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।পুতুল চুপচাপ তার বুকের মধ্যে মাথা রেখে চোখ বুঝে নেয়।সেই পুরনো অতীতে মায়ের সঙ্গে মিশলেই যেমন আরামদায়ক এবং শান্তি লাগত।ঠিক তেমনই এখন লাগছে।

অর্পনের ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের বউকে দেখতে পায়।উঠে বসতেই তাকে ধরে বসায়।হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করে।

এখন কেমন লাগছে?

অর্পণ আস্তে করে বলল,

ভালো।

পুতুল,আম্মু কোথায়?

হাতের ইশারা বলল,

চলে গেছে।ইমারজেন্সিতে রোগী এসেছে।

ওহ।

রাবেয়া খান বাড়িতে এসেছে।ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

এই তুই এই বাড়িতে কেন?কি গল্প শুনাতে এসেছিস?তুই আর তোর ছেলের নাটকের তো শেষ নেই।মা,ছেলের যতসব ঢং।

মুখ সামলে কথা বলো ভাইজান।এত বড় অন্যায় করে আবার জোড় গলায় কথা বলছো।তুমি কোন সাহসে আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছো?তুমি কি মানুষ?এতদিন অনেক অন্যায় করেছো!মুখ বুঝে সয়ে গেছি।কিন্তু এখন তুমি সব সীমা পার করে ফেলেছো।আমার সন্তানের গায়ে আঘাত করে।আমার মানিকের গায়ে হাত তুলে তুমি নিজেকে পাপের ভাগীদার করে নিয়েছো।আগেরকার মুরব্বিদের মুখে শুনতাম।মামা,ভাগ্নে যেখানে বিপদ নেই সেখানে।মামা তার ভাগ্নের গায়ে একটা আচর কাটতে দেয় না।কিন্তু তুমি আমার সন্তানের ওপর আঘাত করলে।তুমি এক মায়ের কলিজায় আঘাত করলে।তোমার লজ্জা করে না।বিন্দু মাত্র লজ্জা নেই।আমার সন্তানের গায়ে দ্বিতীয়বার আঘাত করলে আমি ভুলে যাব সম্পর্কে তুমি আমার ভাই হও।কোনো ক্ষমা তুমি পাবে না।এক মায়ের অভিশাপ নিও না।এক মায়ের অভিশাপ নিয়ে তোমার ধ্বংস ডেকে এনো না।রাবেয়া চোখের পানি নিয়ে বের হতে নিলেই রাবেয়া মা,মেয়েকে ডাকেন।রাবেয়া চোখের পানি মুছে বলল,

আমায় পিছু ডেকো না মা।তোমার ডাক ফেলে দেওয়া আমার সাধ্যের বাহিরে।তুমি যেমন তোমার সন্তানের ক্ষতি হলে হাহাকার করে মর।ঠিক তেমনই আমি মরছি ক্ষনে ক্ষনে।আমার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে। তাও আমার আপনজনদের দ্বারা।আমি মেনে নিতে পারছি না।তুমি মা হয়ে তোমার সন্তানের কথা ভাবছো।আর আমি আমার সন্তানের কথা ভাবছি।

রাবেয়া খান বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে আসে।স্বাধীনদের বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই,অসীম তালুকদারের সামনে পড়েন।স্বামী গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।তার ওই চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চোখে চোখ মিলাতে পারেনি।

তুমি কখন এলে?

কোথায় ছিলে?তুমি আজ কোনো রোগী দেখতে যা-ও নিই।মিথ্যে বলেছো।বাড়িতে আসতেই শুনতে পেলাম আমার সন্তানের সাথে এতবড় ঘটনা ঘটে গেছে।আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনটুকু করোনি।কি চলছে তোমাদের সাথে।আমার কি জানার কোনো অধিকার নেই?আমার ছেলের এত বড় ক্ষতি হলো।আর তুমি একটিবার খবর দিলে না।কি হয়েছে রাবেয়া?তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

কি লুকিয়ে যাচ্ছো আমার থেকে?আমাকে বলা যায় না।দেখ রাবেয়া আমার কাছ থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।আমি কোনোভাবে ঠিকই জেনে যাব।সেটা আজ কিংবা কাল।সেটা সময়ের ব্যাপার।তুমি বলো আমায়?কি হচ্ছে? আর আমার অর্পনের এই হাল কে করেছে।বলো আমায়।চুপ থেকো না।রাবেয়া স্বামীর বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বলতে লাগল।অসীম তালুকদার সবটা শুনে বউয়ের থেকে সরে দাঁড়ালেন।তার চোখে ক্রধের আগুন।

এসব আমায় আরো আগে কেন ব’লে না? আমার ছেলের সাথে এতকিছু হয়েছে আর আমি আজ জানতে পারলাম।আমার ছোট শালা আমার ছেলে কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।আমি কি এতটাই অর্দম যে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারবনা?তোমার ভাই নিজেকে কিভাবে?তার মাথার ওপর তার মন্ত্রী সাহেব বাবা থাকলেও,আমিও আছি আমার ছেলের পাশে।আমার ছেলের কিছুও হতে দিবনা।অর্পনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ করো।আমি ওকে এই দেশের মাটিতেই রাখব না।বউ নিয়ে দেশের বাহিরে থাকবে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।

একমাস পর….

অর্পন এখন পুরোপুরি সুস্থ।এবং আজ পুতুলকে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছছে।পুতুল জিজ্ঞেস করছে কথায় যাচ্ছি?কিন্তু অর্পন তার কথার উত্তর দেয়নি।এয়ারপোর্টে সব কাগজপত্র চেকিং করিয়ে প্লেনে উঠে বসে।

পুতুল এই প্রথম নিজের গ্রাম,এবং নিজের দেশ ছেড়ে দূরে অচেনা দেশে পা রাখতে চলেছে।নিজের অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।অর্পনের হাতটা শক্ত করে ধরেছে।প্লেন উপরে তোলার আগেই সিট বেল বেঁধে নিয়েছে।

পুতুল ভয় পেও না।আমি আছি।চোখ বুঝে না থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো।দেখবে ভয় নেই।অর্পনের কথা পুতুলের কানে ঢুকলেই মস্তিষ্কে যাচ্ছে না।ভয়টা তাঁকে কাবু করেছে।পুতুলের ভয় কাটাতে অর্পন দুষ্টমী করে কানের সামনে গিয়ে বলল,

তুমি তখন জিজ্ঞেস করছিলে না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আমরা হানিমুনে যাচ্ছি।এবং দুই থেকে তিনজন হয়েই দেশে ফিরব।অর্পনের কথায় পুতুল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়।পুতুলের এমন অদ্ভুত রিয়াকশন দেখে অর্পন শব্দ করে হেঁসে উঠে।

কি দুই জন থেকে তিনজন হতে আপত্তি আছে মিসেস?অর্পনের এমন কথায় পুতুলের গাল দু’টো লজ্জায় লাল হলো।মুখটা দুই হাতের সাহায্যে ডেকে ফেলো।অর্পন,পুতুলকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।মনে মনে বলল,

আই এম সরি পুতুল।তোমাকে পুরোপুরি সত্যিটা বলতে পারলাম না।তোমার চিকিৎসা শেষ হলেই আমি দেশে ব্যাক করব।তুমি পড়ার জন্য ওই দেশের মাটিতে পড়ে থাকবে।তোমার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে যাব।আমি তোমায় নিয়ে রিক্স নিতে পারব না।ব’লেই অচেনা দেশে রেখে যাচ্ছি।দেশের এই রাজনীতির মাঠের খেলা এবং আমার মামাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া জন্যই নিজ দেশের মাটিতে ফিরে যাব।ততদিনে তোমার ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।তারপরে তুমি আর আমি মিলে আমাদের স্বপ্নের ঘর সাজাবো।

রাবেয়া এবং অসীম তালুকদার নিশ্চিত মনে বাড়িতে পা রাখলেন।কারণ ছেলে এবং ছেলের বউকে দেশের বাহিরে পাঠিয়েছেন।কিন্তু তাদের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে তাদের ছেলে অর্পন তালুকদার।তার মাথায় অন্য প্ল্যান চলছে।কি করতে চাইছে?সেটা দেশে আসলেই জানা যাবে।

তোমাকে ভালোবাসা ছিলো আমার জন্য অভিশাপ।না তোমাকে ভালোবাসতাম।আর না তোমাকে নিজের করে নিতাম।তুমি আমার লাইফটাকে হেল করে রেখেছো।

আমি তোমার লাইফটাকে হেল করেছি।না তুমি করেছো?প্রেম করার সময় মনে ছিল না।এখন আমার দিকে আঙুল তুলছো।আর এই যে আমার গর্ভে যে বেড়ে ওঠেছে।তার কথা তোমার ভাবার সময় আছে।নিজেকে কি ভাব তুমি?আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তোমার।কারণ তুমি তার পিতা অন্তর।

এই শোনো আমি তোমার এবং তোমার এই বাচ্চার দায়িত্ব আর নিতে পারব না।ওকে এর্বোশন করাতে চেয়েছি দেও নিই।এখন তুমি বুঝো।আর সর আমার সামনে থেকে।অন্তর নিজের শার্টের কলারের থেকে তন্নী হাত সরিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই তন্নী সোফায় উল্টে পড়ে যায়।পেটে আঘাত লাগতে মা ব’লে চিৎকার করে উঠে।ওয়াটার ব্রেক যেতেই অন্তর চমকে উঠে।

হায় আল্লাহ এটা কি করলাম?

তন্নী এই তন্নী।তন্নীর লিভার পেইন উঠেছে।যন্ত্রণা ছটপট করছে।এরমধ্যেই জেনিফা এবং তার হাসবেন্ড পার্টি থেকে ফিরে আসতেই এসব দেখে চমকে যান।ইমারজেন্সিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চলবে…
আসসালামু আলাইকুম।গল্পটা প্রচুর বানান ভুল থাকে।সেটা যদি ধরিয়ে দেন তাহলে এডিট করে নিতে সুবিধা হয়।রি চেক না করায় বুঝতে পারি না।অলস বাঙালি আমি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here