চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৫৪

0
189

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫৪
১৪৭.
ছেলেকে মায়ের কাছে একই রুমে আলাদা বেডে শোয়াতেই তন্নীর জ্ঞান ফিরে।সে চোখ মেলে নিজের পেটে হাতটা রেখে চমকে উঠে।অন্তর তার স্বামী তাকে ধাক্কা মেরেছিল।আর তখনই প্রসব বেদনা উঠে।ব্যাথা সয্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তারপর কি হয়েছিল?পেটে হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলল,

আ..মা..র বাচ্চা।আমার সন্তান কোথায়?শেষের কথাটা চিতকার করে ব’লে।হঠাৎ চিতকার শুনে বেবির ঘুমটা ভেঙে যায়।সেও চিতকার করে কান্না জুড়ে দেয়।বেবির কান্না শুনে তন্নী আরো ছটপট করে।বেড থেকে নামতে চেষ্টা করে।এরমধ্যেই দিহান সাহেব তন্নীর চিতকার শুনে রুমে ঢুকেন।দিহান সাহেবকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,

বাবা,আমার বেবি।সন্তানের জন্য এক মায়ের আকুলতা বুঝতে পারেন।নার্সকে ডেকে বেবি কে কোলে তুলে দিতে বলেন।ছোট বাচ্চাটা তখনও কান্না করছে।তন্নী ছেলেকে দুই হাতে তুলে নিয়ে পাগলের মতো সন্তানের গালে,কপালে চুমু বসিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।

আমার সোনামানিক।আমার বাবা।মা খুব পঁচা না,তাই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।আমাকে মাফ করে দেও।তোমাকে কষ্ট আর দিব না।আর কখনো না।ছেলে,মায়ের স্পর্শ পেয়ে কান্না বন্ধ করে চেয়ে থাকে।মায়ের আদর পেতেই সেও চুপ।ছোট ছোট হাতের সাহায্যে কয়েকটা চুল টেনে ধরেছে।তন্নী ওর হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে,নিজের সন্তানকে বুকে নিয়ে বিছানায় পিঠটা লাগিয়ে বসে পড়ে।
দিহান সাহেব আর কিছু না ব’লে বাহিরে চলে যান।

এতখন থাই গ্লাসের ওইপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু অন্তর দেখছিল।স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের ওই পাশে এক মায়ের ভালোবাসা অবিরাম অন্তহীন হতে দেখেছে।তার সন্তান কি সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে?অথচ একেই বারবার এর্বোশন করাতে চেয়েছে।চেয়েছে একটি ভ্রুণ পৃথিবীতে না আসুক।সে সত্যিই পাপী।তার স্ত্রী যোগ্য স্বামী নয়।নার্সের ডাকে কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে।নিজেকে স্বাভাবিক করে তন্নীকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে প্রবেশ করে।অন্তর আসতেই তন্নী মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,

দুইদিন পরই আমাদের ডির্ভোস।এতদিন সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য।তোমার সকল অন্যায় সাথে লড়াই করেছি।
কিন্তু আজ থেকে তুমি মুক্ত।আমি মুক্ত হয়ে তোমাকে মুক্তি দিয়ে খেলাম।সন্তান তুমি কখনোই চাও নিই।আমার জন্যই তার আগমন হয়েছে।তাই তার সকল দায়িত্ব আমার।তাকে নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা নেই।ডিভোর্স পেপারে সইটা করে দিলেই আমি চলে যাব নিজ দেশের মাটিতে।আর তুমি তোমার পছন্দ মতো।যাকে তোমার পারফেক্ট লাগে তাকে বিয়ে কর।আমি তোমার যোগ্য ছিলাম।কিন্তু তার কদর করো নিই।সব সময় ব’লে এসেছো।আমার জন্য তোমার লাইফটা নাকি হেল হয়ে গেছে।এখন তুমি মুক্ত মিষ্টার অন্তর।

তন্নীর কথায় অন্তর চমকে উঠে।চোখ দু’টোতে বিস্ময়।যে মেয়েকে হাজার কটুক্তি করার পরেও দূরে সরে যায় নিই।আজ তার সন্তানের আগমনে তাকে মুক্তি দিয়ে দিলো।এই মুক্তি সে তো চাই নিই।সে তো সব ভুলে আগাতে চাইছিল।তবে তন্নী তাকে এ কোন মুক্তি দিয়ে গেলো।যেখানে পাপ,আপসোস ক্ষমা মিশে আছে।সব ভুলে কি আরেকটিবার সুযোগ দেওয়া যায় না।না যায় না।তন্নী একবারও তার দিকে ফিরে তাকায় নিই।নিজের সন্তানের ভাবনা হয়তো বিভোর।অন্তর এক পা,দুই পা করে পিছনে বাড়িয়ে নিতে চাইলে,তন্নী এবার তার দিকে ফিরে তাকায়।তার চোখে চোখ রেখে বলল,

কি ভেবেছিলে?তোমায় মুক্তি দিচ্ছি!হুহ,সেগুরে বালি।তোমায় মুক্তি দিব এত সহজেই!তুমি কি ভেবেছিলে?এত সহজেই তোমার পিছু ছাড়বো।মৃত্যু আগ পর্যন্ত তোমায় ছাড়ছি না।আর না আমার সন্তানের হোক নষ্ট করব।মা হিসেবে আমি সবটুকুই ভালোবেসেই করব।কিন্তু তার বাবা বিহীন সে পৃথিবীতে বড় হোক আমি তা চায় না।তার হোক তাকে আমি পাইয়ে দিব।এতে যদি তোমার সাথে আমাকে হাজারবার লড়তে হয়।তবে লড়বো।প্রয়োজন পড়লে তোমার নামে মামলা করব।আমার ছেলের প্রাপ্ত হোক থেকে বঞ্চিত করলে।তোমার নাম,দাম এক নিমিষেই বরবাদ করে দিব।তুমি আমার ছেলের সুখ কেঁড়ে নিয়ে ভালো থাকবে।তা আমি মেনে নিবো না।একজন মা হিসেবে তো কখনোই নয়।আমার সাথে করা অন্যায় ছাড় তুমি পাবে না।তার শাস্তি ভোগ করবে।একই ছাদের নিচে দুইজন থাকব ঠিকই কিন্তু তা আলাদা কক্ষে।আলাদা বেড রুমে।আমরা নামেই আর কাগজ কলমে স্বামী,স্ত্রী থাকব।কোনো মনের আদান-প্রদান থাকবে না।তোমার সামনেই তোমার বউ,বাচ্চা থাকবে।কিন্তু তুমি চাইলেও নিজ থেকে তাদের ছুয়ে দিতে পারবে না।তোমাকে আমি যখন অনুমতি দিব।তখনই সন্তানের কাছে আসতে পারবে।কিন্তু আমায় ছোঁয়া চেষ্টা করলে, কিংবা স্বামী অধিকার দেখানোর চেষ্টা করলে তোমার খবর আমি করে ছাড়ব।কথাটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নেও।তন্নী কথায় অন্তর বেকুব হয়ে গেছে।তার মুখে কোনো কথা নেই।তন্নী নিজের কথা শেষ করে আবার উল্টো দিকে ঘুরে বাচ্চাকে নিয়ে বসে রইলো।

১৪৮.
এশারের আজান পড়তেই পুতুল নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।অর্পন বউকে ফ্ল্যাটে রেখে বিল্ডিং বাহিরে আসতেই বিদ্যুৎ বেগে একটা গুলি ছুটে আসে।অল্প জন্য নিশানা ভুল জায়গায় পড়লো।অর্পন সর্তক হয়ে যায়।চোখ দু’টো চারদিকে বুলিয়ে আবার কয়েক কদম ফেলতেই তার পায়ে দিকে শুট করে।যা দেখে অর্পন সাথে সাথে সরে যায়।নিজের সামনে,পিছনে এত সন্দেহ জনক মানুষ দেখে তার কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে।নিজেকে বাঁচাতে কি করবে তা ঠান্ডা মাথায় ভেবে উল্টো দিকে ঘুরে ইউটান নিতেই ভেসে উঠে গম্ভীর কন্ঠ।কার কন্ঠ তা দেখতে পিছনে ঘুরতেই চোখের সামনে পরে একজন লম্বা চওড়া একজন পুরুষ।যার চোখের ছাওনি প্রচন্ড দূর্গর।বাম হাতে সুন্দর দামী ঘড়ি,সেই হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে দামী ব্রান্ডের সিগেরেট।অন্য হাতে রয়েছে এম আর আই গান।গায়ে বড় লেদার কালো জ্যাকেট।পায়ে কালো ব্রুট জুতা।চেয়ার সাথে কার যেন মিল রয়েছে।হ্যা এই তোও সেই মাফিয়া কিং মিষ্টার আরাভ আব্রহাম খান।

চারদিকে তার লোকেরা এসে দাড়িয়ে আছে।মাঝেই সে আর মাফিয়াটা দাঁড়িয়ে আছে।অর্পন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মাথায় গানটা পয়েন্টের ওপর রাখে।তার এই কাজে
অর্পনের মাথাটা গরম হয়ে যায়।মাথার ওপর গানটা সরিয়ে বলল,

আমার অপরাধ কি?

তোকে শেষ করার সুপারিশ এসেছে।তুই এখন আমার হাতে মরবি।আরাভ গুলিটা করতে নিলেই পুতুল সামনে এসে দাড়ায়।স্বামীকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাথা নাড়িয়ে বারবার বলতে লাগল।

আমার স্বামীকে মারবেন না।তার কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়না।নিজের কথাটা না বলাটা পাপ।আজ পুতুল নিজের ওপর অসন্তুষ্ট।আল্লাহকে কাছে অভিযোগ তার।কেনো তাঁকে এতোটাই অসহায় বানিয়েছে।তার গলায় কথা বলার সুর টুকু কেনো পেলো না?অতিরিক্ত ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

পুতুল অজ্ঞান হয়ে যেতেই অর্পন চমকে উঠে।ডাক্তার বারবার ব’লেছিল।তাঁকে কোনো খারাপ পরিবেশের উপস্থিত না করানো হয়।কারণ ছোট বেলার যে ট্রমাগুলো সে দেখেছে।এবং দেখে যাচ্ছিলো।এতে তার অবস্থা খারাপ হয়েছে।তার মনে বিশাল ক্ষত রয়েছে।

পুতুলের এমন অবস্থায় অর্পন বসে পড়ে।তুমি যেখানে আসতে বলবে আমি আসব।কিন্তু এখন আমার বউয়ের পাশে থাকাটা জরুরি।মেন্টালি শোক পেয়েছে।যা এই মুহূর্তে ক্ষতি কারক।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আমি কথা দিচ্ছি।আগামীকাল সূর্য উঠার আগেই আপনার সামনে আত্মসম্মপণ করব।আপনার যদি তাতে সন্দেহ হয়।আপনি আমার সাথে আপনার বডিগার্ড কিংবা আপনি নিজে থাকতে পারেন।আমার তাতে কিছু বলার নেই।আরাভ খান অর্পনকে যেতে দেয়নি উল্টো তার গাড়িতে করে রওনা হয় হাসপাতালে।

অর্পণ,পুতুলকে কোলে তুলে নেয়।হাজার ডাকলেও সারা দেয়নি।অর্পন কোনো দিশা পায়না।পাগলের মতোও বউকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়।ডাক্তার পুতুলের কন্ডিশন বুঝতে পারছে না।এমন হলো কি করে?অর্পন পুরোটা খুলে বলতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

রুমের বাহিরে অর্পন টেনশন করছে।তার পায়চারি পরক্ষ করছে আরাভ।একটা মেয়ে এবং তার ওপর সে অর্পন তালুকদারের বিয়ে করা বউ।বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে নিয়ে টেনশনে পায়চারি করছে।সবগুলো দেখে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সে বউ পাগল ছেলে।এমন হ্যাংলামী আদোও তার জীবনেও সম্ভব নয়।কারণ সে নারী জাতিকে প্রচন্ড ঘৃনা করে।এসব নারীদের জন্য তার মনে কোনো ফিলিংস আসে না।এরা ছলনাময়ী হয়।এদের মায়ার ফাঁদে আরাভ খান কোনোদিনই পা দিবে না।আরাভ মুখটা গম্ভীর শক্ত করে অন্য দিকে ঘুরিয়ে তাকায়।এসব মেলোড্রামা তার দেখতে একটুও ভালো লাগছে না।সে হাটতে হাঁটতে বলল,

সময় মতো তার কাছে আত্মসমর্পন করতে।না হলে কথার খেলাফ করার জন্য কোনো অর্পসণ সে রাখবে না।নিজ গার্ডকে ইশারা কিছু ব’লে নিজের দামী বি এম ডাবলিও গাড়িতে বসে পড়ে।একটানে ছুটে চলে নিজ অজানা গন্তব্যে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here