হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২২

0
667

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২২

সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে কেটে গেছে দু সপ্তাহ। এই দু সপ্তাহর মাঝে কেউ কেউ নিত্য নতুন ভাবে প্রেমে পড়ছে তার একান্ত মানুষটার উপরে, কেউ আবার ভালোবাসা মানুষটির সাথে একই ছাদের নিচে থাকা সত্বেও তার সন্নিকটে যেতে পারছে না। আবার কেউ‌ সেই ভালোবাসাটা বার বার প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছে আর সেই মানুষটাও ভালবাসার মানুষটার প্রত্যাখ্যান সহ্য করে বেহায়ার মতো তার কাছে বারংবার ফিরে যাচ্ছে।

রিহান আর পাপড়ি মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিহানের চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। বার বার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে একবার রোদ্রউজ্জ্বল নীল রঙের আকাশের দিকে তো আরেক বার মাটির দিকে তাকায়। পাপড়ি রিহানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। প্রথম দেখায় রিহানকে যেমনটা দেখেছিল এখন তার থেকে কেমন নির্জীব দেখা যাচ্ছে মানুষটাকে। চোখে মুখের অবস্থা করুণ। ভালোবাসা সত্যি একটা ভয়কংর রোগ। এই রোগ ক্যান্সারের থেকেও ভয়ংকর। একবার যে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে এই রোগ থেকে চাইলেও সরে আসতে পারে না। কিন্তু পাপড়ি পেরেছিল এই রোগ থেকে সরে আসতে। যে রোগ থেকে পাপড়ি একবার সরে আসতে পেরেছে সেই রোগে সে আর পুনরায় পড়তে যায় না। পাপড়ি ঢোক গিলে উচ্চ বাক্যে বলে।

“আপনার মৌন ব্রত যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে‌ প্লিজ‌ কিছু বলুন আর আমাক যেতে দিন।”

রিহান মিহি গলায় বলে, “এত তাড়া চলে যাওয়ার।”

“হুম আমার তাড়া আছে তাই আপনার হাতে অল্প সময় আছে যা বলার জলদি বলুন।”

“তুমি এতো নি’ষ্ঠু’র কেন পাপড়ি? তোমার নামটা পাপড়ি না রেখে পাথর রাখা দরকার ছিলো কারণ তুমি পাথরের মতোই শক্ত আর পাপড়ি তো খুব নরম আর কোমল হয়। আচ্ছা তোমার কি একটুও মায়া হয় না আমার জন্য।”

পাপড়ি কাঠকাঠ গলায় বলে, “না! একটুও মায়া হয় না আপনার জন্য।”

রিহান ধরা গলায় বলে, “কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে আমি তোমাকে ভালোবাসি?”

পাপড়ি রিহানের এই‌ কথার উত্তর না দিয়েই দ্রুত রিহানের সামনে থেকে চলে যায়। রিহান পাপড়ির যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে।

“তোমার পাথরের তৈরি হৃদয়ে আমার নাম যদি না লিখেছি তাহলে‌ আমার নামও আরহাম শেখ রিহান নয় পাপড়ি।”

পাপড়ি ওরফে অবন্তি এলোমেলা পায়ে হেঁটে এসে রিকশায় কোনোমতে বসে। শ্বাসের গতি অস্বাভাবিক ভাবে চলছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। অবন্তি দু হাত আড়াআাড়ি করে শক্ত করে আকঁড়ে ধরে নিজের দু বাহু। এই‌ লোকটা কেন তার পেছনে পড়ে আছে এভাবে আটার মত? এত এত প্রত্যাখ্যান করে সে তারপরও কেন পিছু ছাড়ে না তার? আর কি করলে তার পিছু ছাড়বে এই‌ মানুষটা। এই কঠিন হৃদয়ে যে আর কারো নাম খোদাই করা সম্ভব নয়। এখনও চোখ বন্ধ করলে চোখের সামনে ভেসে উঠে ওই দিনের বিভীষিকাময় দৃশ্যটা। যেই দৃশ্যটা চাইলেও মস্তিষ্ক থেকে মুছে ফেলতে পারে না সে। রিকশাচালক পাপড়ির অবস্থা বুঝতে পেরে বলে।

“আপা আপনের কি শরীল খারাপ লাগতাছে।”

পাপড়ি ক্লান্ত গলায় বলে, “না আমি একদম ঠিক আছি। আপনি আপনি একটু তাড়াতাড়ি চালান।”

“আইচ্ছা।”

______

অবন্তি হোস্টেলে এসে ব্যাগটা রেখে বেডের উপরে রেখে ছুটে চলে যায় ওয়াশরুমে। ইভা হতভম্ব হয়ে যায় অবন্তিকে এমনটা করতে দেখে। অবন্তি শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে সারা মুখমন্ডল ঘষতে শুরু করে। মনে হচ্ছে যেন মুখের সব চমড়া তুলে ফেলবে অবন্তি। ইভার কন্ঠস্বর শুনে অবন্তি থামে।

“এই অবন্তি কি হয়েছে তোর?”

অবন্তি দুর্বল গলায় বলে, “কিছু হয় নি আমার ইভা।”

ইভা নরম গলায় বলে, “তুই ঠিক আছিস অবন্তি?”

“হুম আমি একদম ঠিক আছি।”

কিন্তু ইভার যেন অবন্তির কথাটা হজম হল না। ইভা আস্তে করে গিয়ে নিজের বেডে বসে পড়ে। অন্যদিকে অবন্তি দেয়াল ঘেঁষে বসে হাটুর উপরে কপাল ঠেকিয়ে বসে রইল। শীতের মাঝে এভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভেঁজার কারণে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরও শাওয়ারের নিচে ঠাঁই বসে রইল অবন্তি।

_______

গৌধুলী বেলা পেরিয়ে গেছে, আকাশ জুড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। গোটা শহর জুড়ে কৃত্রিম আলো আনাচেকানাচে জ্বলে উঠেছে। সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই জাহিন বাড়িতে চলে আসে হাত একটা নীল রঙের শপিং ব্যাগ নিয়ে। সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে জারাকে দেখে বলে।

“জারা তোর ভাবি কোথায়?”

জারা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে, “ভাবি রান্নাঘরে।”

“ওনাকে বল রুমে আসতে।”

জারা মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে তুমি যাও আমি বলছি।”

জাহিন সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। জারা গুটিগুটি পায়ে রান্না ঘরে গিয়ে অয়ন্তিকে উদ্দেশ্যে করে বলে।

“ভাবি যান আপনার সোয়ামি এসেছে। আর এসেই আপনার খোঁজ করছে।”

অয়ন্তি জারার দিকে তাকিয়ে বলে, “ওনি চলে এসেছেন এত তাড়াতাড়ি।”

জারা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “ভাই আমার বউকে ছাড়া থাকতে পারে না তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। আর মনে হয় তোমার জন্য কোনো গিফট এনেছে ভাইয়ার হাতে একটা ব্যাগ দেখলাম।”

অয়ন্তি লজ্জা পেয়ে বলে, “উফ! জারা তুমি না।”

“ঠিক আছে আর লজ্জা পেতে হবে না। তুমি তাড়াতাড়ি যাও গিয়ে দেখে আসো কেন ডেকেছে?”

“কিন্তু দাদুর চা’টা।”

“আমি দিয়ে আসব।”

অয়ন্তি মুচকি হেসে উপরে চলে যায়। নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখে জাহিন বাইরের কাপড় না চেঞ্জ করেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছে। অয়ন্তি তা দেখে মনে মনে বলে।

“এত কি ব্যস্ততা ওনার যে বাইরের জামাটা পর্যন্ত চেঞ্জ করার সময় পেলো না।”

জাহিন অয়ন্তির উপস্থিতি টের পেয়ে বলে, “অয়ন্তি‌ বিছানার উপরে দেখেন একটা ব্যাগ আছে। আর তাড়াতাড়ি এটা পড়ে তৈরি হয়ে নেন এক জায়গাতে যেতে হবে আমাদের।”

অয়ন্তি নিচু গলায় প্রশ্ন করে, “আপনি ফ্রেশ হবেন না?”

জাহিন ল্যাপটপের দিকে নজর রেখে বলে, “হব। আপনি আগে তৈরি হয়ে নিন।”

অয়ন্তি আর কিছু না বলে চুপচাপ বেডের উপর রাখা ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভেতর রাখা জিনিসটা বের করতেই চোখ দুটো বড়বড় করে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। অয়ন্তির হঠাৎ করে এমন চিৎকার শুনে জাহিন থতমত খেয়ে বলে।

“কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করলেন কেন?”

অয়ন্তি ব্যাগটা সাথে সাথে পেছনে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আসলে ব্যাগের ভেতরে।”

জাহিন কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা রেখে বলে, “কি পছন্দ হয় নি কাপড়টা?”

অয়ন্তি কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। জাহিন কি তার সাথে মজা করছে নাকি, কিন্তু জাহিন তো মজা করার লোক নয় এত দিনে এটা বুঝে গেছে অয়ন্তি। তাহলে এমন হাবভাব করছে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না আবার জিঙ্গেস করছে কাপড়টা পছন্দ হয়েছে কিনা। কিন্তু অয়ন্তির মন চাইছে এই মুহূর্তে মাটির ভেতরে চলে যেতে লজ্জায়। জাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পুনরায় চিন্তিত গলায় বলে।

“কি হয়েছে অয়ন্তি কোনো সমস্যা?”

অয়ন্তি দিশেহারা গলায় বলে, “না মানে আসলে ব্যাগের ভেতরে।”

জাহিন দু কদম অয়ন্তির দিকে এগিয়ে এসে বলে, “ব্যাগের ভেতরে কি?”

অয়ন্তি দেয়ালের উপরে টিকটিকি দেখে ঠাস করে বলে দেয়, “টিকটিকি।”

জাহিন হতবাক হয়ে বলে, “টিকটিকি! ব্যাগের ভেতরে টিকটিকি আসলো কি করে? দেখি ব্যাগটা দিন তো আমার কাছে।”

জাহিন অয়ন্তির দিকে এগিয়ে আসলে অয়ন্তি দু কদম পিছিয়ে‌ উত্তেজিত হয়ে বলে, “না ব্যাগের ভেতরে টিকটিকি না নাই…. ।”

থেমে যায় অয়ন্তি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় জাহিনের দিক থেকে। জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি বলছেন আপনি এসব আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। একবার বলছেন টিকটিকি আরেক বার বলছেন টিকটিকি না নাই। দেখি ব্যাগটা দিন তো আমার কাছে।”

জাহিন অয়ন্তির কাছ গিয়ে এক প্রকার টান মেরে অয়ন্তির হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে এসে ব্যাগের ভেতর থেকে কাপড়টা নিতে নিতে বলে, “কোথায় টিকটিকি দেখি?”

জাহিন নিজের হাতে যা দেখল তাতে জাহিন চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় করে চিৎকার করে উঠে পুনরায় জিনিসটা ভেতরে রেখে দিল। অয়ন্তি অন্য দিকে ফিরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে লজ্জায় আর হতভম্বে। এমন সময় অতি ব্যস্ত হয়ে জোহরা বেগম, রুনা আক্তার আর জারা আসে জাহিনের ঘরে। মূলত পরপর জাহিন আর অয়ন্তির এমন চিৎকার শুনে তারা এসেছে। জাহিন মা, চাচি আর বোনকে দেখে সাথে সাথে ব্যাগটা নিজের পেছনে লুকিয়ে ফেলে। জোহরা বেগম শঙ্কিত গলায় বলেন।

“কি হয়েছে এভাবে দুজনে চিৎকার করলি কেন?”

জারা সোজা অয়ন্তির কাছে গিয়ে বলে, “হ্যাঁ ভাবি! কি হয়েছে তোমাদের?”

অয়ন্তি লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। সে কি বলবে তার কিছু বলার নেই! যা বলবে জাহিন বলবে আর সে নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখবে। ছেলে আর ছেলের বউকে মৌন দেখে জোহরা বেগম পুনরায় বলে, “কি হলো জাহিন চুপ করে‌‌ আছিস কেন? কি হয়েছে সেটা বলবি তো?”

জাহিন ঘাড় দু পাশে নাড়াতে নাড়াতে বিচলিত গলায় বলে, “কিছু হয় নি মা।”

“তাহলে দুজনে এভাবে চিৎকার করলি কেন? আর তোর‌ হাতে কি?”

জাহিন উচ্চ বাক্যে বলে, “কিছু না মা।”

“শুধু কিছু না কিছু বলে যাচ্ছিস।”

তারপর অয়ন্তির দিকে ফিরে বলেন, “অয়ন্তি তুমি বলো তো কি হয়েছে?”

অয়ন্তি আমতা আমতা করে বলে, “মা আসলে আমি কিছু জানি না।”

জোহরা বেগম কিছু বলতে যাবেন সাথে সাথে রুনা আক্তার বলেন, “ভাবি চলেন কিছু হয় নি যখন শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।”

“কিন্তু।”

“উফফ ভাবি চলেন তো। এই জারা তুইও চল।”

রুনা আক্তার জারা আর জোহরা বেগমকে জোর করে জাহিনের ঘর থেকে নিয়ে যান। রুনা আক্তার কিছু একটা আন্দাজ করেছেন জাহিন আর অয়ন্তির হাবভাব দেখে। তাই জাহিন আর অয়ন্তিকে নিজেদের মত থাকতে দেওয়ার সুযোগ করে দিল।

জাহিন আড় চোখে বার বার তাকাচ্ছে অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তিও আড় চোখে দেখচ্ছে জাহিনকে। এক সময় দুজনের চোখের সাথে চোখ মিলে যাওয়াতে দুজনেই থতমত খেয়ে অন্য দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়। অয়ন্তির বড্ড অস্বস্তি লাগছে জাহিনের সামনে থাকতে তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আলমারি থেকে শাড়ি আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বলে।

“আমি তৈরি হয়ে আসছি জারার রুম থেকে।”

কথাটা বলে অয়ন্তি এক প্রকার দৌঁড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। অয়ন্তি চলে যেতেই জাহিন ধপাস করে বেডে বসে পড়ে। কি বাজে একটা সিচুয়েশনে পড়তে হল তাকে আজকে। এই একত্রিশ বছর বয়সের জীবনে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতে কোনো দিন পড়তে হয় নি তাকে। আর পড়বেই বা কি করে আগে তো আর বিয়ে করে নি। জাহিন ব্যাগ থেকে পুনরায় কাপড়টা বের করে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা ধরে চোখের সামনে ধরল। একটা পাতলা ফিনেফিনে কাল রঙের নাইটি। জাহিন এক নজরে নাইটি টার দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল।

“আজ তোর জন্য অয়ন্তির সামনে আমাকে এমন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়তে হল। মেয়েটা কি ভাবল আমার সম্পর্কে? ইস! আচ্ছা অয়ন্তি আবার এটা ভাবছে না তো, যে আমি তার জন্য এটা এনেছি। কিন্তু আমি তো শাড়ি এনেছিলাম ওনার জন্য। তাহলে এটা আসলো কোথা থেকে?”

জাহিনের বাড়িতে আসার আগের ঘটনা। জাহিন যখন বাড়ি ফিরছিল তখন নজর পড়ে ফুটপাতের একটা বাচ্চার উপরে যার গায়ে কাপড় বলতেই নেই আর এই ঠান্ডার মাঝে বার বার নিজের দু হাত দিয়ে আকঁড়ে ধরছে কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছুই হচ্ছে না। জাহিনের বড্ড মায়া লাগল বাচ্চাটাকে দেখে তখন জাহিন গাড়ি সাইড করে বাচ্চাটার কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে মলে ঢুকে আর মল থেকে কিছু গরমের কাপড় কিনে দেয় আর সাথে কিছু টাকাও দেয়। জাহিন বাচ্চাটাকে কাপড় কিনে দিয়ে মল থেকে বের হতে নিবে তখনই নজর পড়ে একটা শাড়ির উপরে আর শাড়িটা দেখার পরেই অয়ন্তির কথাটাই মাথায় আসলো। তাই জাহিন ভাবল অয়ন্তির জন্য শাড়িটা নিয়ে যাবে কিন্তু কে জানত এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। কিন্তু মাঝখানে একবার জাহিনের সন্দেহ হয়ে ছিল ব্যাগটা তেমন ভারি না হওয়াতে। আর ব্যাগটা চেক করতে নিলে নেহাল ফোন করে আর ব্যাপারটাও সম্পূর্ণ ভাবে মাথা থেকে চলে যায় জাহিনের।

জাহিন নাইটি’টা হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বিতৃষ্ণা নিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে, “নিশ্চয়ই কারোর ব্যাগের সাথে‌ আমার ব্যাগটা চেঞ্জ হয়ে গেছে।”

______

অয়ন্তিকে জারা সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে বলে, “মাশআল্লাহ ভাবি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ভাইয়া তোমার দিকে থেকে নজর সরাতেই পারবে না আজকে।”

অয়ন্তি লাজুক হাসল আর বলল, “কিন্তু এসময় কোথায় যাবেন ওনি আমাকে নিয়ে?”

“ভাইয়া বলে নি তোমাকে কোথায় যাবে?”

“না।”

“ভাইয়ার বন্ধু মানে নেহাল ভাইয়ার আজকে ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। প্রতি বছরেই আমার যাই কিন্তু এবার তুমি আর ভাইয়া যাবে।”

“তোমরা যাবে না কেন?”

“তুমি আর ভাইয়া গেলেই হবে। চলো ভাইয়া হয়ত অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”

অয়ন্তি ঢোক গিলে নিচের ঠোঁট জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে নেয়। কি করে সে জাহিনের সামনে যাবে? সে তো‌ লজ্জায় মরেই যাবে। অয়ন্তিকে নিয়ে জারা ভাইয়ের ঘরে আসে। জাহিন সবে মাত্র কোটটা পড়েছে। জারা ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল।

“ভাইয়া দেখত ভাবিকে কেমন লাগছে দেখতে?”

জাহিন বোনের গলার স্বর শুনে সামনের দিকে ফিরে তাকায়। জাহিন অয়ন্তিকে দেখে থমকে গেল। মেয়েটাকে সাজলে একদম অন্য রকম। নীল রঙের শাড়ি, চোখে গাঢ় কাজল, ঘন রেশমি চুলের গোছা বা কাঁধের উপরে এনে রেখেছে। জাহিন মুগ্ধ নয়নে অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু একটা মিসিং হওয়াতে অয়ন্তির এই সাজটা পরিপূর্ণ লাগছে না জাহিনের কাছে। এদিকে অয়ন্তি মাথা নিচু করে রেখেছে। জাহিনের দিকে তাকাতে বড্ড অস্বস্তি ফিল হচ্ছে তার। কিন্তু তারপরও অয়ন্তি সকল জড়তা পেছনে ফেলে জাহিনের দিকে চোখ তুলে তাকায়। জাহিনের মুগ্ধ চোখ জোড়ায় আটকে যায় নিজের চোখ জোড়া। এদিকে জারা নিরব দর্শকের মত ভাই আর ভাবির চোখাচোখি প্রেমময় খেলা দেখে গলা খাকারি দিয়ে বলে।

“ভাইয়া ভাবি আমি এবার আসি। আর‌ তোমরাও রওয়ানা হয়ে‌ যাও না হলে দেরি হয় যাবে তোমাদের নেহাল ভাইয়ার বাড়িতে যেতে।”

জাহিন আর অয়ন্তি জারার কথা শুনে হকচকিয়ে উঠে। জারা হাসতে হাসতে ঘর থেকে প্রস্থান করে। জাহিন আর অয়ন্তি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল একই জায়গাতে। অয়ন্তি নিচু গলায় বলে।

“যাবেন না।”

“যাবো কিন্তু তার আগে একটা কাজ কমপ্লিট করতে হবে।”

কথাটা বলেই জাহিন বেলকনির দিকে চলে যায়। অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বেলকনির দিকে‌ তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরেই জাহিন দুটো গোলাপ ফুল নিয়ে এল। একটা সাদা আরেকটা লাল। অয়ন্তি বুঝতে পারছে না এই রাত্রি বেলা ফুল দিয়ে কি করবে লোকটা? জাহিন অয়ন্তির সামনে এসে দাঁড়াল। অয়ন্তি প্রশ্ন করে।

“ফুল! ফুল দিয়ে কি করবেন?”

জাহিন মজা করে বলে, “কোনো এক নারীর রেশিম কালো চুলের ভাজে ফুল দুটো গুঁজে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসলাম।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল জাহিনের পানে। কোনো এক নারী মানে? কে সেই নারী যে নারীর চুলের ভাজে জাহিন ফুল গুঁজে দিতে চাইছে এই সন্ধ্যাবেলায়। জাহিন অয়ন্তির ভাবনা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের দিকে আর কিছু একটা খোঁজে বের করে নিয়ে অয়ন্তির কাছে আসলো। জাহিনকে নিজের নিকটে আসতে দেখে অয়ন্তি দু কদম পিছিয়ে যায় তা দেখে জাহিন ভরাট গলায় বলে।

“স্থির হয়ে দাঁড়ান।”

জাহিনের কথা অনুযায়ী স্থির হয়ে দাঁড়াল অয়ন্তি। জাহিন অয়ন্তির কাঁধের দিকে হাত বাড়াতেই‌ অয়ন্তি মাথাটা হালকা পেছনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কি করতে চাইছে জাহিন এই মুহূর্তে, ওই দিনের মতো কি আবার! অয়ন্তির ভাবনার মাঝে টের পেল তার চুলের ভাজেই জাহিন আলতো হাতে ফুল গুঁজে দিচ্ছে। জাহিন ফুল দুটো গুঁজে দিয়ে ক্লিপ দ্বারা আটকিয়ে দিয়ে বলল।

“নাও পারফেক্ট। এবার সম্পূর্ণ সাজটা পরিপূর্ণ হল।”

অয়ন্তি হাত দ্বারা ফুল দুটো‌ স্পর্শ করল। জাহিন পুনরায় বলল, “চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

জাহিন কথাটা বলে ওয়ালেট আর গাড়ির‌ চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ল। অয়ন্তি দৌঁড়ে গিয়ে দাঁড়াল আয়নার সামনে। আয়নার উপরে পড়া নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইল। সত্যি তার সাজটা পরিপূর্ণ হল চুলের ভাজে ফুল দুটো‌‌ গুঁজে দেওয়াতে।

#চলবে______

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/830411019098697/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here