#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৫
নুহাশকে থানায় ধরে আনা হয়েছে। কোনো পুলিশ অফিসার সশরীরের গিয়ে নুহাশকে থানায় ধরে আনে নি বরং ধরে নিয়ে এসেছে জনতারা। শারাফ এই থানার এসআই হওয়াতে নুহাশকে লকআপে না রেখে জিজ্ঞাসাবাদ রুমে রেখেছে। বন্ধু হয়ে প্রাণের বন্ধুকে কি করে ওই শিকের তৈরি চার দেয়ালের মাঝে রাখবে। আগে অপরাধ প্রমাণ হোক তারপর যা করা প্রয়োজন তাই করবে। কারো মুখের কথায় শারাফ বিশ্বাস করবে না যে নুহাশ এই ঘৃণ্য কাজটা করতে পারে। আধ ঘন্টা হয়ে গেছে নুহাশকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু নুহাশ টু শব্দটা পর্যন্ত করে নি। শারাফ হাজারটা প্রশ্ন করেছে নুহাশকে কিন্তু নুহাশের মুখে কোনো কথা নেই। পাথর হয়ে বসে রয়েছে কাঠের শক্ত চেয়ারে আর দৃষ্টি বড্ড স্থির। শার্টের উপরের দুই তিনটা বোতাম ছিঁড়ে গেছে, চুলগুলা উসকোখুসকো হয়ে আছে, চেহারা কেমন শুকিয়ে গেছে। বন্ধুকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে শারাফের যেন বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কি করে বন্ধুকে এই মিথ্যা অপবাদ থেকে রক্ষা করবে বোধগম্য হচ্ছে না তার।
এগারো ঘন্টা আগে।
জাহিন নির্বাচন অফিস থেকে বের হয় সাথে খলিল তালুকদারও বের হোন। কিন্তু ওনার চোখে মুখে রহস্যময়ী এক হাসি সারাক্ষণ বিস্তার করছে ঠোঁটের কোণে। জাহিন খলিল তালুকদারের দিকে তাকাতেই খলিল তালুকদার মৃদু হেসে বলেন।
“অভিনন্দন জাহিন জীবনে প্রথম বারের মতো মানোনয় পত্র পাওয়ার জন্য। আশা করি ভবিষৎ মেয়ের হলে তোমার কাছ থেকে জনগণ ভালো কিছু পাবে।”
জাহিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল খলিল তালুকদারের দিকে। যে লোক কয়েকদিন আগে নানা কৌশলে তাকে নির্বাচনে দাঁড়ানো থেকে নামাতে চেয়েছিল সেই লোক তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে বিষয়টা কি? খলিল তালুকদার পুনরায় বলল।
“কি হল শুধু কি চেয়ে চেয়ে দেখবে আমায়, কিছু বলবে না?”
জাহিন ব্লেজারের কলার ঠিক করতে করতে বলল, “ধন্যবাদ অভিনন্দন জানানোর জন্য আর আপনাকেও অভিনন্দন।”
খলিল তালুকদার জাহিনের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ঠিক আছে তাহলে আসি।”
জাহিনও খলিল তালুকদারের হাতে হাত মিলিয়ে বলল, “হুম।”
“সাবধানে থাকবে আবহাওয়া ঠিক খুব একটা ভাল ঠেকছে না।”
কথাটা বলে রহস্যময় হেসে চলে গেলেন। জাহিনের পাশে থাকা নুহাশ বলল, “ভাই এই খলিল তালুকদারের ভাল মানুষীর হাবভাব আমার ভাল ঠেকছে না খুব একটা।”
“শয়তান ওলয়েজ ভাল মানুষীর মুখোশ পড়েই থাকে। ঠিক যেমনটা খলিল তালুকদার পড়ে থাকেন।”
কথাটা বলে জাহিন পা বাড়াতে নিবে ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠে জাহিন তাকিয়ে দেখে সাদিক এসেছে। জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলল, “কিছু বলবি?”
সাদিক উসখুস করে বলল, “আসলে একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।”
“কি কথা?”
“কেউ হয়ত তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে তাই একটু সাবধানে থাকবে।”
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেরি করল না সাদিক দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল। জাহিন অবাক চোখে সাদিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। আগে বাপ সাবধান করল আর এখন পোলা সাবধান করে গেল। কি করতে চাইছে কি এই বাপ আর পোলা মিলে? নুহাশ সন্দিহান গলায় বলল।
“ভাই কি হচ্ছে এসব কিচ্ছু বুঝতে পারচ্ছি না। আর কিসের জন্য সাবধানে থাকতে বলছে এই দুজনে।”
জাহিন কিছু বলল না শুধু তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। এবার মনে হচ্ছে তাকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে। রাজনীতিতে থাকতে হলে একটু শক্ত হতেই হবে এভাব সৎ থাকলে হবে না একটু অসৎ হতেই হবে। না হলে এই নোংরা রাজনীতির মাঠে ঠিকে থাকা সম্ভব হবে না। ভেবেছিল অন্যদের মতো কারো কোনো ক্ষতি না করে এগিয়ে যাবে কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না হবে না। কথায় আছে শক্তের ভক্ত নরমের যম।
_______
শারাফ কেস ফাইল চেক করছে এক মনে তখনই ডেস্কের উপর রাখা ফোনটা ভাইব্রেট করে। শারাফ নাম্বার চেক না করেই কল পিক করে বলে।
“আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?”
ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে মেয়েলি রাগী চিকন স্বরে কন্ঠ, “আজব আপনিই তো গতকাল রাত্রি বেলা আমাকে ফোন করেছিলেন আর এখন আমাকেই বলছেন আমি কে? আপনি কে সেটা আগে বলুন?”
শারাফ ভ্রু কুঁচকে বলে, “আশ্চর্য আমি কোন দুঃখে আপনাকে ফোন করতে যাব আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।”
“কি বাটপার লোক রে বাবা নিজেই ফোন করেছে রাত দশটার সময় আর এখন অস্বীকার করছে। নেহাতি আমি ভেবেছিলাম কোনো ইম্পর্টেন্ট কল হয়ত তাই কল বেক করেছি না হলে জীবনেও নিজের টাকা খরচ করে কল দিতাম না। যত্তসব আজাইরা মানুষ মেয়েদের রাত বিরাতে ডিস্টার্ব করার ধান্দা।”
বলেই কল কেটে দেয়। শারাফ হতবাক হয়ে বসে রইল। সে রাত বিরাতে মেয়েদের বিরক্ত করে এই কথাটাও শুনতে হল তাকে। কলটা কে করেছে সেই ব্যাপারটায় বোধগম্য হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল শারাফের। তড়িৎগতিতে ফোনের লক খুলে কল হিস্টোরিতে গিয়ে যা দেখে তাতে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে শারাফের। আজ যদি নাম্বারটা দেখে কল রিসিভ করতো তাহলে হয়ত অন্য রকম হতো ব্যাপারটা। শারাফ সাথে সাথে কল বেক করে। দুই বার রিং হওয়ার পরেই মেয়েটি কল রিসিভ করে বাজখাই কন্ঠে বলে।
“আপনি আবার আমাকে কল করেছেন? বেয়াদব ছেলে লজ্জা করে না মেয়েদের বিরক্ত করতে আপনার ফোন নাম্বার আমি পুলিশের কাছে দিব। রাত হলেই মেয়েদের জন্য ভালোবাসা উথলে পড়ে না। আর রাত হলেই সেই ভালোবাসা নিভে যায়।”
কথাটা শুনে শারাফের হাসতে ইচ্ছে হল তাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে মেয়েটা। পুলিশকে পুলিশের নাম দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে ব্যাপারটা বড্ড অদ্ভুত। আর মেয়েদের জন্য ভালবাসা উথলে পড়ে মানে কি? কথাটা মেয়েদের নয় একটি মেয়ে হবে যে মেয়েটির জন্য রাত কেন সবসময় ভালোবাসা উথলে পড়ে তার। শারাফ ঢোক গিলে গলা খাকারি দিয়ে বলে।
“আপনি আমায় ভুল ভাবচ্ছেন লিজা আমি তো শা…. ।”
লিজা নিজের নামটা শুনে অবাক হয়ে শারাফকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে, “আপনি.. আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? তার মানে আপনি আমাকে আগে থেকেই টার্কেট করে ফোন দিয়েছেন।”
শারাফের মাথা ঘুরচ্ছে এই মেয়ে কি উল্টাপাল্টা কথা বলচ্ছে। টার্কেট ফার্কেট মানেটা কি? শারাফ কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে কনস্টেবল হান্নান করিম এসে বলেন।
“স্যার আমাদের এক্ষুণি যেতে হবে একটা আ*ত্মহ*ত্যার কেস হাতে এসেছে লা*শটা নামাতে যেতে হবে।”
শারাফ কান থেকে ফোনটা সরিয়ে বলে, “ঠিক আছে আপনি গাড়ি বের করুন আমি আসছি।”
“ইয়েস স্যার।”
হান্নান করিম চলে যান। শারাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যাপটা হাত নিয়ে লিজাকে বলে, “আপনার সাথে আমি পরে কথা বলব এখন রাখি।”
শারাফ কল কেটে দেয়। লিজা স্তম্ভিত হয়ে বলে, “কি বলল আ*ত্মহ*ত্যার কেস? এই লোক কি পুলিশ নাকি! পুলিশ হয়ে এমন অসৎ কাজকর্ম করে কি করে? অবশ্য পুলিশগুলাই এমন হয়।”
________
রিহান হোটেলের সব বিল মিটিয়ে এক্কেবারের জন্য বের হয় গেছে নিজ বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আজ কত দিন পর তার নিজ বাসভবনে ফিরে যাচ্ছে। এক দিকে বাড়ির ফেরার আনন্দ আর অন্য দিকে পাপড়ি সাথে আর দেখা না হওয়ার জন্য মনটা বড্ড বিষন্ন হয়ে রয়েছে।
চার রাস্তার মোড়ে রিহান দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে। অপেক্ষা করছে পাপড়ির জন্য। কিয়ৎক্ষণ পরেই পাপড়ির দেখা মিললেও পাপড়ি রিহানকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যেতে নিলে রিহান দৌঁড়ে এসে পাপড়ি সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
“পাপড়ি প্লিজ একটি বার আমার কথাটা শুনো।”
পাপড়ি ওরফে অবন্তি দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই। প্লিজ আপনি আমার পিছু ছেড়ে দিন।”
পাপড়ির পাশ থাকা ইভা চাপা গলায় বলে, “এত করে যখন বলছে তখন শোন না কি বলতে চায়।”
রিহান শান্ত গলায় বলে, “ছেড়ে দিবো তোমার পিছু আমি এই মুহূর্ত থেকে।”
মুহূর্তের মাঝে পাপড়ি থমকে যায়। পা দুটো স্থির হয়ে যায় কেন যেন মনে হচ্ছে এক অদৃশ্য শক্তি তার পা দুটো মাটির সাথে আঁকড়ে ধরেছে চাইলেও নড়াতে পারছে না। রিহানের কথা শুনে তো তার খুশি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বুকের মাঝে এমন ঝড় বইতে শুরু করেছে কেন? পাপড়ি জিজ্ঞাসু চোখে রিহানের দিকে তাকাল। রিহান মুচকি হেসে আবেগ নিয়ে বলে।
“চলে যাচ্ছি এই কষ্টের শহর ছেড়ে নিজের শহরে। এতদিন বিরক্ত করার জন্য সত্যি আমি দুঃখিত পারলে ক্ষমা করে দিও। আসলে কি বলত ভালোবাসা জিনিসটা তো নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম বুঝতে পারি নি। তুমিই সেই ভাগ্যবতী মেয়ে যে মেয়েটা ছিল আমার এই ছোট্ট জীবনের প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অনুভূতি। কিন্তু আমি একা ভালোবাসালে কি হবে আমার ভালোবাসার মানুষটাকেও তো আমায় ভালোবাসতে হবে। এখন সেই মানুষটা যদি আমাকে পছন্দ না করে আমায় নিয়ে তার মনে যদি কোনো অনুভূতি না সৃষ্টি হয় তাকে তো আর জোর করতে পারি না। এক তরফা ভালোবাসা সত্যি কষ্টের। আগে যখন আমার ফ্রেন্ড সার্কেল এই এক তরফা ভালোবাসা নিয়ে কথা বলত তখন আমি হেসে খুদে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম এর যন্ত্রণা কতটা প্রগাঢ়, কতটা কষ্টের। চেষ্টা করব তোমাকে ভুলে যেতে কিন্তু জানি প্রথম প্রেম এত সহজে ভুলা যায় না আর আমিও আমার প্রথম প্রেম ভুলতে চাই না। সারা জীবন তোমায় মনে রাখবে। কিন্তু তুমি আমাকে ভুলে যাবে প্লিজ কারণ আমার কথা মনে পড়লেই তোমার কষ্ট হবে আর আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। তুমি সবসময় হাসিখুশি, প্রাণবন্ত থাকো এটাই আমার চাওয়া।”
কথাগুলা বলে রিহান থামে। পাপড়ি নিমগ্ন হয়ে রিহানের প্রত্যেকটা কথা শুনে যাচ্ছে। রিহান চারপাশটায় নজর বুলিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারো বলে, “অনেক কথা বলে ফেলেছি প্লাস তোমার অনেকটা সময়ও অপচয় করে দিলাম তার জন্য সরি। ভালো থেকো তুমি সবসময়ের জন্য, দুঃখ যেন তোমাকে কোনো দিন ছুঁতে না পারে। আমি এখন আসি আর বিরক্ত করবে না এই রিহান নামের বাজে ছেলেটা, আর তোমার নাম ধরে মাঝ রাস্তায় ডেকে উঠবে না, আর বলবে না তোমায় ভালোবাসি কথাটা এই বাজে ছেলেটা। ভালো থেকো গুড বাই।”
বলেই হাঁটা ধরল রিহান। পাপড়ির এক নজরে রিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তার অবচেতন মন বলছে রিহান একটি বারের জন্য হলেও পেছন ফিরে তার দিকে তাকাবে কিন্তু রিহান ফিরে তাকাল না। এতে পাপড়ির বুকের বা পাশটায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করল। পাপড়ির মন বলছে দৌঁড়ে গিয়ে রিহানের হাত দুটো শক্ত করে ধরে মানুষটাকে আটকে দিতে। কিন্তু মস্তিষ্ক তার উল্টো কথা বলছে।
রিহান গাড়িতে এসে বসে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাল। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাপড়ির মুখখানা লুকিং গ্লাসে দেখা যাচ্ছে। রিহান মৃদু হাসল। রিহান জানে যে মেয়ে এতদিন তাকে দেখতে পারত না সেই মেয়ে আজ সারাক্ষণ তার কথা স্মরণ করবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম কাছের জিনিসটাকে প্রথম দিকে মূল্যায়ন না করলেও সেই জিনিসটা যখন দূরে সরে যায় তখন সেই জিনিসটার মূল্য দ্বিগুন বেড়ে যায়। রিহানও চায় পাপড়ি তার শূন্যতা বুঝুক, তার ভালোবাসা বুঝুক তার জন্য না হয় একটু দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া যাক। রিহান তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। গাড়িটা যতক্ষণ চোখের সামনে ছিল ততক্ষণ পাপড়ি তার দিকে তাকিয়ে ছিল। পাপড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইভা পাপড়ি ওরফে অবন্তির কাঁধে হাত রেখে বলে।
“রিহান ভাইয়া চলে গেল অবন্তি তোকে আর বিরক্ত করবে না।”
অবন্তি কন্ঠে ক্রোধ এনে বলে, “ভালো হয়েছে চলে গেছে এই লোক যেন আর ফিরে না আসে এই দোয়াই করি মনেপ্রাণে আমি।”
ইভা শব্দ করে হেসে বলে, “আসলেই নারী জাতির মন বোঝা বড়ই কষ্টের তারা যে কি চায় বা না চায় তারা নিজেরাই বোঝে না।”
অবন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে।”
”এই যে তুই রিহান ভাইয়া চলে যাওয়াতে রাগ দেখাচ্ছিস সেটা কিন্তু আমি বুঝতে পারছি।”
অবন্তি আমতা আমতা করে বলে, “তোকে এত বুঝতে বলেছে কে? একটু কম বোঝ।”
বলেই হাঁটা ধরল। কিন্তু মনে মনে বলছে, “সত্যি কি চলে গেছে লোকটা নাকি আমার সাথে মজা করল কোনটা?”
_________
জাহিন ফাইল চেক করছে। পৌরসভার মাঝে মোট কত হাজার মানুষ ভোটার তার লিস্টেই চেক করছে। মোট উনিশটা ওয়ার্ডে নিয়ে এই পৌরসভাটা গঠিত। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে মিলিয়ে মোট ষাট হাজার জনগণ তার মাঝে পয়ত্রিশ হাজার মানুষ ভোটার। এমন সময় নুহাশ আসে জাহিনের কেবিনে।
“ভাই এক জায়গায় যেতে হবে আমাদের?”
জাহিন ফাইল চেক করতে করতে বলে, “কোথায়?”
“বারো নং ওয়ার্ডে।”
জাহিন নুহাশের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কেন?”
“তোমাকে সালিশে বিচারক হিসেবে যেতে হবে।”
“আমাকে কেন? ওই গ্রামের কাউন্সিলর নেই?”
“আছে কিন্তু তোমাকেও শামিল হতে হবে এতে। কাউন্সিলর নিজে আমাকে ফোন করে বলেছে তোমাকে যেতে।”
জাহিন চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ। একদম মন চাইছে না যেতে কিন্তু সামনে নির্বাচন না গেলে অনেক কথা উঠবে। তাই সিদ্ধান্ত নিলো সে যাবে। কিন্তু কে জানত তার এই সিদ্ধান্তটা কাল হয়ে দাঁড়াবে নুহাশের জন্য।
সালিশির কাজ শেষ করে নুহাশ আর জাহিন বাড়ি ফেরার পথে রওনা দিল। কিন্তু মাঝ পথে আসতেই টায়ার পাংচার হয়ে যায়। আশেপাশে কোনো মেকানিকের দোকানও নেই। কিন্তু আসার পথে একটা মেকানিকের দোকান পড়ে। তাই নুহাশেই চলল মেকানিক আনতে। জাহিন নুহাশের সাথে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নুহাশ তার সাথে জাহিনকে যেতে বারণ করল।
মেকানিক আসলো কিন্তু যেই যন্ত্রটা নিয়ে আসার কথা সেটা না এনে অন্য একটা যন্ত্র নিয়ে আসল। মেকানিক আবারো ছুটে চলল যন্ত্রটা আনতে। কিন্তু বিশ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু মেকানিকের আসার নাম নেই। নুহাশের বড্ড রাগ উঠল আজ যদি সে পারত টায়ার চেঞ্জ করতে তাহলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না। শেষমেষ আধঘন্টা পর আসলো মেকানিক, তাদের দোকানে নাকি ঝগড়া শুরু হয়ে গিয়েছিল তাই আসতে দেরি হয়েছে।
সন্ধ্যা হওয়ার পথে। জাহিন গাড়িতে বসে আছে। তার ফোনের স্ক্রিনে ছলছল করছে অয়ন্তির হাস্যজ্জ্বল একটা ছবি। ছবিটা তুলা হয়েছিল তাদের বউ ভাতের দিন। জাহিন তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা ছবিটা জুম করল। জুম করতেই অয়ন্তির লালচে রঙের ঠোঁট জোড়া ফোনের সম্পূর্ণ স্ক্রিনে ফুটে উঠে। মনে পড়ে যায় ওই দিনের রাতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা। জাহিন আনমনেই নিজের ঠোঁটের উপরে হাত রেখে ঢোক গিলে সাথে সাথে ফোনটা বন্ধ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাস। আর তার এখন এই অলস মস্তিষ্কে উদ্ভট চিন্তা ভাবনা আসছে। হঠাৎ করেই জাহিনের সামনে একটা কাল রঙের গাড়ি এসে থামে। এভাবে তার সামনে গাড়ি ব্রেক করাতে জাহিন রেগে চিৎকার করে বলে।
“আরে দেখেশুনে গাড়ি ব্রেক করবেন তো চোখ কি পকেটে নিয়ে হাঁটেন নাকি?”
গাড়ি থেকে নেমে আসে নেহাল। জাহিন অবাক হয়। তার আগেই বোঝা উচিত ছিল এই ফালতু কাজটা এই নেহাল ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। নেহাল হাসতে হাসতে বলে, “কেমন চমকে দিলাম দোস্ত তোকে?”
জাহিন কিচ্ছু বলল না চুপ করে রইল। নেহাল উঁকি দিয়ে পাংচার হয়ে যাওয়া টায়ারটা দেখে বলে, “টায়ার পাংচার কেস দেখা যায়। তুই চাইলে আমি তোকে লিফট দিতে পারি।”
জাহিন নাকচ করে বলে, “তোর যাওয়া তুই যা আমি আমার গাড়ি করে যেতে পারব।”
এর মাঝে নুহাশ বলে উঠে, “ভাই তুমি চলে যাও নেহাল ভাইয়ের সাথে আমি পরে আসছি।”
“না না আমি তোর সাথে যাব ঠিক তো হয়েই গেছে প্রায়।”
নেহাল জাহিনের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে, “এতো ডং না ধরে চলত। যেতে যেতে তোকে কয়েকটা টোটকা শিখিয়ে দিবো।”
জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “টোটকা! কিসের টোটকা?”
নেহাল দুষ্টু হেসে বলল, “রোমান্টিক হওয়ার টোটকা ভবিষ্যতে যেন কাজে লাগাতে পারিস। আর সেই টোটকা কাজে লাগানোর পর যেন একটা সুমিষ্ট ফলাফল জানতে পারি আমি।”
জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠল। আজ তার খবর আছে। এই নেহাল আজ তার বেহাল অবস্থা করেই ছাড়বে। এ এমন ব্রেইন নিয়ে কি করে যে এলএলবি নিয়ে পড়ে উকিল হলো আল্লাই জানে। সারাক্ষণ মাথায় শুধু এসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা।
#চলবে
গত পর্বে আমি একটা কথা ভুল লিখছি “জন্ম মুত্যৃ বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে” তার জন্য আমি সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী।