হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২৪

0
668

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৪

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

শারাফ মাত্র থানা থেকে ফিরেছে। ছয় তলায় অবস্থিত নিজের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজার লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রতিদিনের মতো আবারো একটা নিঃসঙ্গ রাত্রি যাপন করতে চলেছে সে। এই মস্ত বড় অ্যাপার্টমেন্টে সে একাকী থাকে। বাবা মা থাকে গ্রামের বাড়িতে। কাজের সূত্রে তার একা থাকা এখানে। বাবা মাকে বলেছিল এখানে চলে আসার জন্য। কিন্ত গ্রামের এত বড় গিরস্ত রেখে ওনার আসতে পারবেন না। আর তার উপরে এই ইট পাথরের শহরে তাদের নাকি ধম বন্ধ হয়ে আসে। শারাফ এটা জানার পর থেকে আর বাবা মাকে জোর করে না এখানে এসে থাকার জন্য। তবে মাকে ফোন করলেই বলবে বিয়ে করে নে বাবা। বিয়ে করে বউকে নিয়ে থাক আমরা তো তোর কাছে আসতে পারব না তাই জলদি জলদি বিয়েটা করে নে। শারাফ এসব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে পুরো অ্যাপার্টমেন্টটায় নজর বুলিয়ে পায়ের জুতো খুলে‌ স্লিপার পড়ে ইউনিফর্মের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে নিজের রুমে যায়।

শারাফ শাওয়ার নিয়ে কিচেনে আসে। সারা দিন অফিস করে এসে এবার তাকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রান্না করতে হবে। এর কোনো মানে আছে কোথায় তার জন্য কেউ গরম ভাত রেঁধে অপেক্ষা করবে আর সে‌ আরাম করে খাবে তা না করে এখন তাকে রান্না করতে হবে। চাইলেই বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে পারত কিন্তু বাইরের খাবার আর ঘরের খাবারের অনেক পার্থক্য আছে। শারাফ রাইস কুকারে চাল বাসিয়েছে আর ডিম ভাজি করবে। ছেলেদের জন্য সহজ রান্না হচ্ছে ডিম ভাজি। এর বাইরে আর কিছু করা পসিবল না এই মুহূর্তে। শারাফ রান্না বান্না শেষ করে ডাইনিং টেবিল খাবার নিয়ে বসল। এক লোকমা মুখে তুলতেই মায়ের কথা মনে পড়ল। মাকে একটা ফোন করা দরকার। শারাফ মাকে ফোন করল। ফোনের ওপর‌ প্রান্ত থেকে ভেসে আসল সালেহা বেগমের কন্ঠস্বর।

“আব্বা কেমন আছো তুমি?”

শারাফ মুচকি হেসে বলে, “ভালো আছি আম্মা। তোমরা সবাই ভালো আছো?”

“হো আব্বা সবাই ভালো আছে। কি করো তুমি?”

“এই তো খাইতাছি।”

“কি দিয়ে খাইতাছো আব্বা?”

“এই তো গরম ভাত, ডিম ভাজি আর সাথে ঘি।”

সালেহা বেগম কন্ঠ নরম করে বলেন, “আর কিছু নাই আব্বা?”

শারাফ হেসে হেসে উত্তর দেয়, “আছে তো পানি।”

ছেলের কথা‌ শুনে সালেহা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বলেন, “একটা চড় খাবি আমার হাতে পাজি ছেলে।”

মা ছেলে দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ রইল। সালেহা বেগম পুনরায় গলার স্বর নরম করে বলেন, “একটা কথা বলব শারাফ।”

শারাফ খাবার চিবুতে চিবুতে বলে, “কি কথা?”

“তোর আপা একটা কথা বলেছিল ওই‌ দিন।”

“কি কথা বলছে আপা?”

“বলছে তোর জন্য মেয়ে দেখতে আর কত দিন এভাবে খেয়ে না খেয়ে থাকবি। এবার একটা লাল টুকটুকে বউ‌ আনার দরকার। যে তোর সবসময় খেয়াল রাখবে আর আমরাও সবাই একটু নিশ্চিন্তে থাকব।”

মায়ের কথা শুনে শারাফ থমকে যায়। ছেলেকে চুপ‌‌ মেরে যেতে দেখে সালেহা বেগম বলেন, “কি হল? আমরা কি মেয়ে দেখা শুরু করব?”

শারাফ সোজাসোজি বলে, “না মা মেয়ে ঠিক করা আছে আমার।”

সালেহা বেগম খুশি খুশি গলায় বলে, “সত্যি! কোথায় থাকে মেয়ে? তার ঠিকানা দে আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব।”

“মা মা এতটা উত্তেজিত হওয়ার কিছু হয় নি। আগে তার সাথে ভাব হোক তারপর।”

“ঠিক আছে ঠিক আছে জলদি জলদি ভাব করে নে। আর আমি গিয়ে তোর বাবাকে খবরটা জানাই‌।”

বলেই ফোন কেটে দেয়। শারাফ মুচকি মুচকি হাসচ্ছে। যাকে সে পছন্দ তার সাথে তো এখনও কথা বলে উঠতে পারি নি আর তার মা কিনা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে চাইছে। আজকে লিজা ফোন করবে সে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। লিজার ফোন নাম্বারটা দুই দিন আগে শারাফ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর কল দিয়ে উঠতে পারে নি। জারাকে দিয়ে অয়ন্তির কাছ থেকে লিজার নাম্বারটা নিয়েছে শারাফ। কিন্তু নাম্বার নেওয়ার সময় জারা যেই পরিমাণ তাকে টিজ করেছে তা বলার বাহিরে।

শারাফ খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ছয় তলার উপর থেকে পুরো শহরটা দেখা যাচ্ছে যেন। হিম পড়ছে বাইরে তাই‌ আর বেশিক্ষণ সময় না থেকে ভেতরে চলে আসে।

বেডে উপরে আধশোয়া হয়ে বসে রইল শারাফ। হাতে ফোন, ফোনের স্ক্রিনে ছলছল করছে লিজা নামটি। কল দিবে নাকি দিবে না ভেবে দুটানায় পড়ে গেল। শারাফ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সব জড়তা পেছনে ফেলে শেষমেষ কল করল লিজাকে। কিন্তু রিং হয়ে গেল কল আর ধরল না লিজা। মেয়েটা কি ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? শারাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে মাত্র দশটা বাজে। শারাফ ফোন ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।

“এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল মেয়েটা। অবশ্য গ্রামের মানুষরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।”

কথাটা বলে বেড সাইডের টেবিলের উপরে ফোনটা রেখে শুয়ে পড়ে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে, আগামীকাল আবার শুরু হবে তার কর্মজীবন।

______

শীতের সকালের মিষ্টি রোদের ছোঁয়া পেতেই জাহিনের ঘুম ছুটে যায়। জাহিন আড়মোড়া ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকায়। পিটপিট চোখে তাকাতেই সামনে ভেসে উঠে নেহালের প্রতিচ্ছবি। নেহাল পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছে সোফায় আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জাহিনের দিকে। জাহিন কিছুটা অবাক হয় নেহালের এমন দৃষ্টি দেখে। এই‌ ছেলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন তার দিকে? জাহিন তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা চোখ দুটো কচলে নিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে ভাঙ্গা গলায় বলে।

“কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার কি রুপ বেরিয়েছে নাকি যে এভাবে তাকিয়ে আছিস?”

নেহালের কোনো সাড়াশব্দ নেই। সে একই দৃষ্টিতে জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। জাহিনের‌ বড্ড বিরক্ত লাগল গতকাল রাত থেকে এই‌ ছেলেটা তাকে জ্বালিয়ে মারছে। এখন কি করতে চাইছে এই ছেলে? তার এখানে আসাটাই বড়ো ভুল হয়েছে। জাহিন বেড থেকে নামতেই মাথাটা হালকা ঘুরে উঠে। ধপ করে বেডে বসে পড়ে নিজেকে তটস্থ করে কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে নেহাল সোফা থেকে উঠে জাহিনের পাশে বসে সন্দিহান গলায় বলে।

“জাহিন তুই কি বন্ধু শারীরিক ভাবে অসুস্থ? তাহলে আমাকে নির্ভয়ে বল আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমি তোকে নিয়ে ভাল একজন ডাক্তারের কাছে যাব।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি যা তা বলচ্ছিস তুই এসব?”

নেহাল উচ্চ বাক্যে বলে, “তাহলে আমি কি বলব বল?”

জাহিন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “তোকে কিছু বলতে হবে না।”

“তাহলে মিরাজ ঠিকই বলেছে তোকে কলিকাতা হারবালের ঔষধ সেবন করিয়ে তোর যন্ত্রপাতি ঠিক করাতে হবে।”

জাহিন রাগী গলায় বলে, “নেহাল তুই চুপ‌ করবি গতকাল রাত্রে যা করেছিস তার জন্য কিন্তু আমি তোকে এখনও কিছু বলে নি তাই আমাকে কিছু বলতে বাধ্য করিস না। শান্ত আছি শান্ত থাকতে দে।”

নেহাল বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলে, “তোর‌ বলার মত মুখ আছে নাকি। একজন পুরুষ মানুষ কখনই তার বউকে পাশে রেখে এভাবে নাক ডেকে ঘুমাতে পারে না। আর সেখানে যদি পুরুষ‌ মানুষটা হয় মাতাল তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু তুই মাতাল হয়েও কিছু করলি না।”

জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “আমি এতটাও মাতাল ছিলাম না তবে সেলফ কন্ট্রোল যে হারিয়েছি এটা বুঝতে পেরেছি। চাইলেই গত রাতে অয়ন্তির মাঝে আমি ডুব দিতে পারতাম কিন্তু….।”

নেহাল আগ্রহ নিয়ে বলে, “কিন্তু কি ভাই?”

“দেখ, অয়ন্তি আমার ছোট ভাইয়ের বউ হওয়ার কথা ছিল। ওনাকে আমি প্রথম থেকেই আমার ছোট ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখে এসেছি। ওনিই হয়ত আমাকে সেই নজরে দেখে এসেছেন। কিন্তু কারণ বশত আমাদের সম্পর্কটা বদলে যায়। এখন সেই সম্পর্কটা স্বাভাবিক হতে একটু তো সময় লাগবে। কিন্তু তারপরও ওনার অনেকটা কাছে গিয়েছি আমি।”

“বুঝতে পারছি তোর কথাটা কিন্তু অতিত নিয়ে পড়ে থাকলে‌ হবে না জাহিন। অয়ন্তি ভাবির সাথে তোর জুড়ি ছিল তাই বিয়েটা হয়েছে।”

জাহিন প্রসঙ্গ পাল্টে বলে, “ঠিক আছে আর ভাষণ না মেরে আমার জন্য তোর একটা শার্ট নিয়ে আয়।”

নেহাল দুষ্টু হেসে বাঁকা চোখে বলে, “আচ্ছা আনব তার আগে এটা বল গত কাল রাত্রে কি এমন হয়েছিল যার জন্য তুই ভাবির মাঝে ডুব দিতে পারলি না।”

জাহিন গম্ভীর গলায় বলে, “তুই যাবি নেহাল না হলে কিন্তু গতকাল রাত্রে যেই ঘটনাটা ঘটিয়েছিস সেটার জন্য তুই আমার হাতে রাম ধোলাই খাবি।”

নেহাল চোখ মুখ কুঁচকে বলে, “তোর মধ্যে ধৈর্যশীল পুরুষ যেন আর কেউ না হয় এইটা আমি অভিশাপ দিলাম সকল পুরুষ জাতিকে।”

বলেই হনহনিয়ে চলে যায় নেহাল। তার প্লানটা যে জাহিন এভাবে নষ্ট করে দিবে সেটা সে একদম একসেপ্ট করতে পারছে না। সকাল বেলা নেহাল রইমাকে জোর করে অয়ন্তির কাছে পাঠায় একটা নতুন শাড়ি দিয়ে। কিন্তু রইমা যখন বুঝতে পারল জাহিন আর অয়ন্তির মাঝে তেমন কিচ্ছু হয় নি তখন এত পরিমাণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল যা বলার বাহিরে। এর পর রইমা রুমে এসে নেহালকে এমন ঝারি দিয়েছে যেটা খেয়ে নেহাল দৌঁড়ে‌ জাহিনের কাছে আসে আর এসে দেখে জাহিন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। জাহিনের ঘুম দেখে মনে হচ্ছিল সারা রাত কত পরিশ্রমেই করেছে ছেলেটা যার জন্য এখন এভাবে ঘুমাচ্ছে। নেহাল তখন সোফায় বসে জাহিনের ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় ছিল।

______

নেহাল চলে‌ যেতে জাহিন সোফায় বসে পড়ে। তার গতকাল রাত্রের ঘটনা স্পষ্ট চিত্রে মনে না থাকলেও কিছু ঝাপসা ঝাপসা চিত্র মনে আছে।

গতকাল রাত্রের ঘটনা। নেহাল ইচ্ছে করে জাহিনকে সোফার উপরে রেখে গিয়েছে যাতে করে অয়ন্তি মাতাল জাহিনকে বিছানাতে নিয়ে আসে। অয়ন্তি কিছুক্ষণ পরেই রুমে আসে। রুমে ঢুকতেই নজর পড়ে বিছানার উপরে কয়েকটা লাল গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়ে রয়েছে। তাদের কি আজ বাসর রাত নাকি যে এভাবে ফুলের পাপড়ি বিছানার উপরে ফেলে রেখেছে। এই‌ ফুলের পাপড়ি গুলা নেহালেই ফেলে রেখে গেছে।

অয়ন্তি জিহ্বা দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গিলে এগিয়ে যায় জাহিনের দিকে। যত পা এগোচ্ছে জাহিনের দিকে তত যেন অয়ন্তির এক অজানা ঘিরে ধরছে। অয়ন্তি জাহিনের দিকে ঝুঁকে কাঁধে হাত রেখে বলে।

“শুনছেন বিছানাতে গিয়ে ঘুমান। সোফায় ঘুমাতে পারবেন না ঘাড় ব্যথা করবে।”

কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরে জাহিন চোখ মেলে তাকায়। জাহিন ঘাড় কাত করেই মোহনীয় চোখে অয়ন্তির পানে তাকিয়ে রইল। বুকটা ধুকপুক করছে অয়ন্তির। জাহিনের এই চোখের চাওনি আর সইতে না পেরে অয়ন্তি নজর সরিয়ে নিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই জাহিন অয়ন্তির হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।‌এভাবে টান দেওয়াতে অয়ন্তি‌র অবাধ্য চুল গুলা সামনে এসে পড়ে। অয়ন্তির দু হাত গিয়ে ঠেকে জাহিনের বুকে। অয়ন্তি পিটপিট চোখে জাহিনের পানে তাকাল। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে, গলা শুকিয়ে আসছে। ততক্ষণে জাহিনের মাতাল করা চোখ দুটো অয়ন্তির ঠোঁট জোড়ার দিকে আটকে যায়। অয়ন্তি উঠতে নিল‌ে জাহিন আরো শক্ত করে চেপে ধরে। অয়ন্তি কিছু বুঝে উঠার আগেই জাহিন ফু দেয় অয়ন্তির মুখে। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে নেয়। সর্বাঙ্গে বয়ে গেল এক অজানা শিহরণ। জাহিনের ফু দেওয়ার কারণটা মুলত অয়ন্তির চুল গুলা মুখ থেকে সারানো কিন্তু জাহিন ব্যর্থ হল। তাই হাত বাড়িয়ে চুলগুলা হাত বাড়িয়ে কানের সাইডে গুঁজে দেয়। অয়ন্তি জাহিনের শীতল হাতের ছোঁয়া পেয়ে সাপের মতো মোচরে উঠে চোখ মেলে তাকায়। অয়ন্তিকে আরো একদফা অবাক করে দিয়ে সুঠাম দেহের অধিকারী জাহিন হুট করে ছোট্ট দেহের অয়ন্তির দু বাহু চেপে ধরে সোফার অন্য সাইডে নিয়ে তাকে শুইয়ে দেয়। অয়ন্তি হকচকিয়ে উঠে হা হয়ে জাহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। এই লোক পাগল হয়ে গেছে নিশ্চিত না হলে এমনটা কেউ করে? ভাবুক অয়ন্তির কপালে জাহিনের উত্তপ্ত পুরুষালি ঠোঁটের ছোঁয়া পড়ল। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে খামছে ধরল জাহিনের শার্টের কলার। চোখ বন্ধ করা অবস্থা বুঝতে পারল জাহিনের পরের কার্যকর্ম কি হতে চলেছে? কিন্তু অনেকটা সময় পাড় হয়ে গেছে জাহিনের সাড়া নেই। অয়ন্তি চোখ মেলে তাকাতেই জাহিন হাসল। অয়ন্তি বোকা বনে গেল। এই‌ লোক সত্যি মাতাল হয়ে গেছে না হলে বাস্তবিক এমনটা করত না। জাহিন অয়ন্তির ডান হাতটা ধরে তার বা বুকের পাশটা রেখে ভরাট গলায় বলে।

“কি অনুভব করছেন অয়ন্তি?”

অয়ন্তি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকাল জাহিনের পানে। জাহিন মুচকি হেসে বলল, “এই হৃপিন্ডের গতির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক মাত্রায় চলার কারণ কি জানেন?”

অয়ন্তি প্রশ্নবোধক নয়নে জাহিনের পানে তাকাল। জাহিন পুনরায় ঘোর লাগা গলায় বলল, “আপনি! যে‌ আমার সংস্পর্শে আসলেই আমার হৃপিন্ডের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। কেন হয় এমনটা বলুন তো?”

অয়ন্তি বাক্যব্যয় করল না। নির্নিমেষ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল জাহিনের পানে। জাহিন এবার অধৈর্য হল যেন। শুকনো ঢোক গিলে অয়ন্তির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায়। দুজনের গরম নিঃশ্বাস একে অন্যকের মুখে আছড়ে পড়ছে। জাহিন অয়ন্তির ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে নিবে তখনই অয়ন্তি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। জাহিনের ঠোঁটের ছোঁয়া গিয়ে পড়ল অয়ন্তির গালে। কিন্তু নেশাতুর জাহিন যেন আরো পেয়ে বসেছে অয়ন্তির গলার ভাজে ভাজে অজস্র চুমু এঁকে দিচ্ছে। অয়ন্তি যেন এক অদৃশ্য বাঁধনে পড়ে গেছে। সারা শরীর অসাড় হয়ে আসছে। কিন্তু জাহিনকে আটকাতে হবে যেই লোক স্বজ্ঞানে থেকেও তাকে চুমু খাওয়ার পরে এতটা জড়তা নিয়ে কাটিয়েছে এত দিন। সেই লোক যদি জানতে পারে মাতাল অবস্থায় তার সাথে এমনটা করেছে তাহলে তো সেই লোক হয়ত আর জীবনেও তার সামনে আসবে না এই অস্বস্তি নিয়ে। অয়ন্তি জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে শক্ত পোক্ত বলিষ্ঠের দেহের জাহিনকে ঠেলে দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরাল কোনো মতে। জাহিন উন্মত্তের মতো জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। অয়ন্তি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে।

“জাহিন প্লিজ থামুন।‌ আপনি নিজের মাঝে নেই আর‌ আমি চাই না আপনি এভাবে আমার কাছে আসুন, এভাবে আমায় নিজের করে নিন, এভাবে আমার সারা অঙ্গে আপনার হাত জোড়া বিলীন হোক। আমি চাই‌ আপনি আমার কাছে সজ্ঞানে আসুন, সজ্ঞানে আপনার ভালবাসা আমাকে সিক্ত করুন। আর‌ সেই বিশেষ মুহূর্তটা সারা জীবন মনে থাকবে আমাদের দুজনের।”

অয়ন্তির কথা শুনে জাহিন থমকে যায়। কিয়ৎক্ষণ অয়ন্তির‌ মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে‌ অয়ন্তির ঠোঁটে‌ ছোট করে চুমু দিয়ে বলে।

“তাই হবে সজ্ঞানে আপনার কাছে আসব আমি, মাতাল অবস্থায় নয়।”

বলেই অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে‌ সরে এসে স্টান হয়ে দাঁড়িয়ে এলোমেলা পায়ে হেঁটে ধপ করে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অয়ন্তি গায়ে থাকা এলোমেলা শাড়িটা ঠিক করে উঠে বসে। এতক্ষণ যেন তার উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। অয়ন্তি এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত জাহিনের দিকে তাকিয়ে রইল। আজ যেন এক অন্য জাহিনের সাথে পরিচয় হল। যেই‌ জাহিন তার কাছে বড্ড ভয়ংকর।

_______

সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে জাহিন আর অয়ন্তি রওয়ানা দিলো নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। শেখ বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। অয়ন্তি সিট বেল্ট খুলে নামতে নিবে তখন জাহিন বলে।

“নুহাশকে গিয়ে বলুন ওর জন্য আমি অপেক্ষা করছি গাড়িতে।”

অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। সকাল থেকে কেউ কারো সাথে কথা বলে নি। জাহিন অয়ন্তির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। অয়ন্তি আড়াল হতেই জাহিন মাথাটা হেলিয়ে দেয় সিটের উপরে। কিছুক্ষণ পরেই নুহাশ আসল। এবার তারা দুজনে যাবে রিহানকে আনতে। অনেকদিন হয়ে গেছে। পরিবার ছাড়া আর ক’দিন থাকবে ছেলেটা। এবার এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। না হলে হয়ত আরো ভয়ংকর কোনো পরিস্থিতে পড়তে হবে।

দীর্ঘ ছয় ঘন্টা জার্নি পর জাহিন আর নুহাশ রিহান যেই হোটেলে আছে সেই হোটেলে এসে পৌঁছায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। জাহিন গাড়ি লক করে মুখে মাস্ক পড়ে হোটলের ভেতরে প্রবেশ করে। রিসিপশননিস্টের কাছ থেকে রিহানের রুম নাম্বার জেনে লিফটে উঠে দশ তলায় যায়। রিহানের রুমের সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই এর কিছুক্ষণ পরেই দরজা খুলে দেয় রিহান।

দরজা খুলে ভাই আর নুহাশকে‌ দেখে রিহান হতভম্ব হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে জাহিনের পানে। রিহান ভয়ে শুকনো ঢোক গিল‌ কাঁপাকাঁপা গলায় বলে।

“ভা…. ভাইয়া তুমি এখানে?”

“কেন তুই কি ভেবেছিস তোকে‌ খুঁজে পাব না আমি।”

কথাটা বলে জাহিন রিহানের পাশ কাটিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে মুখ থেকে মাস্ক খুলে গম্ভীর হয়ে বলে, “বাড়ি চল‌ অনেক নাটক করেচ্ছিস এই‌ কয় দিন আর নাটক করতে হবে না।”

“ভাইয়া আমি‌ আসলে…।”

জাহিন ভাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “তোর মুখ থেকে একটা কথাও শুনতে চাই না আমি রিহান চুপচাপ তোর যাবতীয় যত জিনিসপত্র আছে সব কিছু গুছিয়ে নেয়। ওই দিনের ঘটনাটা কিন্তু আমি এখনও ভুলি নি।”

রিহান অধৈর্য হয়ে বলে, “ভাইয়া প্লিজ আজকের রাতটা এখানে থাকতে দাও আমি কথা দিচ্ছি আমি আগামীকাল বিকালের মাঝে বাড়ি পৌঁছে যাব।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “আজকে গেলে প্রবলেমটা কোথায় তোর। আজকে বাড়িতে গেলে যেই কথা আগামীকাল গেলে একই কথা।”

রিহান ছোট করে বলে, “একজনের সাথে দেখা করে যেতে হবে ভাইয়া।”

“কি বললি?”

“কিছু না! প্লিজ ভাইয়া প্লিজ আমাকে আজকের রাতটা এখানে থাকতে দাও।”

জাহিন কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইল, “ঠিক আছে আগামীকাল যেন আমি তোকে বাড়িতে দেখি।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকে‌ আগামীকাল বাড়িতে দেখবে।”

বলেই জাহিন রুম থেকে বের হয়ে যায়। নুহাশ রিহানের কাঁধে হাত রেখে বলে, “চলে আসিস আগামীকাল বাড়ির সবাই তোকে খুব মিস করে। চাইলে আজকের রাতটা এখানে থেকে তোকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু আগামীকাল একটা মিটিং থাকার জন্য সেটা হল না।”

রিহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নুহাশ চলে যায়। রিহান বেডে বসে পড়ে। নুহাশ ভাই আর ভাইয়া যে এখানে আসছে এটা মাকে কেন তাকে‌ বলল না? হয়তো মা জানে না এই বিষয়ে। রিহান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বেডে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। আগামীকাল পাপড়ির সাথে শেষ বারের মতো দেখা‌ করবে। সত্যি জোর করে ভালবাসা পাওয়া যায় সে যত চেষ্টা করুক কারো‌ মন জোর করে পাওয়া যায় না। এত দিন তো‌ পাপড়ির কাছে থেকেও ভালোবাসা আদায় করতে পারে নি। এবার না হয় দূরে গিয়ে ভালবাসা আদায় করা যায় কিনা দেখা যায়। কথায় আছে “দূরত্বেই নাকি গাঢ় হয় ভালবাসা।” এবার দেখার পালা রিহান পাপড়ির‌ কাছ থেকে দূরে সরে গেলে পাপড়ি কেমন প্রতিক্রিয়া করে।

#চলবে

রোজা রেখে কি‌ লিখছি জানি না। তাই কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসরুপ দেখবেন। আর আমার গল্প সাহিত্যের সাথে কোনো রকম ভাবে সম্পৃক্ত নয়। এটা জাস্ট আমার নিজস্ব কল্পনা।

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/830411019098697/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here