#তোমাকে_চাই_নিরবধি-১২
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓
ধ’র্ষি’তা মৃ’ত কন্যাকে বুকে জড়িয়ে জমিদার বাড়ির গেইটের সামনে বসে আহাজারি করছে এক, বাবা। কন্যার মা কপাল চাপড়িয়ে আঁচলে মুখ গুঁজে বিলাপ করছে,
“আল্লাহ গো! আমার সোনার কন্যার এমন স’র্ব’না’শ কেডায় করলো? ওরা আমার মাইয়াডারে আমার থাইকা এমনে কাঁইড়া নিলো? আমার কপাল পু’ড়’লো গো, আমার কপাল পু’ড়’লো! ওরা বাঁচতে দিলো না আমার ময়না’রে! ওরা আমার কোল খালি কইরা দিলো!”
এরিমধ্যে গ্রামের এক মুরব্বি মহিলা তহুরা বেগম’কে খোঁচা দিয়ে বিকৃত মুখে বললো,
“আগেই কইছিলাম, এতো সুন্দর মাইয়া ঘরে রাইখো না বউ। পরপুরুষের নজর লাগবো, ছেমড়িডারে বিয়া দিয়া দেও। হুনলে না তো আমার কথা…
এখন তোমার মাইয়া তো একটা পাপ। বেগানা পুরুষ তারে ছুঁইয়া দিছে! হেয় বেডা মাইনষের লগে আ’কা’ম-কুকাম ক’র’ছে। ছ্যাহ্! এই মাইয়ার তো নরকেও ঠাঁই হইবো না! যাও, জলদি জলদি মাটি চাপা দিয়া দেও। পাপ যতো কূলে রাখবা, ততো দূর গন্ধ ছড়াইবো।”
“ওমন কইরা বলবেন না গো, চাচিজান! ওমন কইরা বলবেন না! আমার মাইয়া পাপ নয়,আমার মাইয়া আস্ত একটা ফুল। পাপীরা আমার গোলাপে ক’ল’ঙ্ক লাগাইছে,আমার গোলাপ নিষ্পাপ!”
ভরদুপুরে বিরাট শোরগোল লেগেছে, জমিদার বাড়ির গেইটের কাছে। ময়নার আকস্মিক এমন মৃ’ত্যু’তে গ্রামবাসীর ভিড়। মেয়েটার আত্মীয়-স্বজনরা হৈহল্লা করছে। গতকাল রাতভর নিখোঁজ ছিলো রহমান মিয়ার একমাত্র কন্যা, ময়না। সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি মেয়েটার। অবশেষে আজ দুপুর বারোটার নাগাদ নদীর পাড়ে ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত অবস্থায় লা+শ পাওয়া গেলো মেয়েটার। সর্ব অঙ্গ উ’ল’ঙ্গ ছিলো তার। লা-শ পেয়ে কাপড় জড়িয়ে দিয়েছে, মা। লা+শে’র সারা অঙ্গে জ’খ’ম। কা’টা’ছেঁ’ড়ার অসংখ্য দাগ। কোনো এক ন’র’পি’শা’চ শারীরিক, যৌ’নি’ক নানান অত্যাচার দিয়ে মে’রে’ছে মেয়েটাকে। ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক সে মৃ’ত্যু! রহিম মিয়া সাধারণ এক কৃষক। ময়না এলাকার এক ভদ্র মেয়ে। তাদের শত্রু নেই। আর না ছিলো সেভাবে মেয়েটার প্রতি কারো ঝোঁক। যুবতী মেয়েটা হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো।
এসব কি থেকে কি হয়ে গেলো? কে তুলে নিলো নিরীহ এই কন্যাকে? কেই বা আবার জানে মে’রে দিলো মেয়েটাকে? সেসব কারো বোধগম্য হলো না।
তাই তো, বিচার নিয়ে জমিদার মহলে যাওয়ার জন্য উতলা সবাই। গেইটে পাহারারত সৈন্যরা তাদের কিছুতেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এ নিয়ে গ্রামবাসী বেশ ক্ষে’পে’ছে। উচ্চ স্বরে কয়েকজন সাহসী শিক্ষিত লোক মিলে ডাকছে,
“জমিদার হুজুর!ও জমিদার হুজুর! দেইখা যান, আপনার শান্তিপূর্ণ নগরে লা+শ পড়েছে এক কন্যার! খালি হইলো এক মায়ের কোল। নিরীহ মেয়েটার সাথে কে করিলো এই অবিচার? আমরা এর বিচার চাই,হুজুর। আমরা বিচার চাই! অপরাধীর কঠিন শাস্তি চাই!”
.
.
জমিদার শাহজালাল, ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বৈঠকখানায় আরাম কেদারায় বসেছে কেবল।
তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে, এক ভৃত্য। এরমধ্যে বৈঠকখানায় প্রবেশ করলো, জাবেদ মল্লিক। দুই ভাই পাশাপাশি চেয়ারে বসে চা পান করছে। সেই সাথে টুকটাক আলোচনা করছে।
বাইরের চেঁচামেচি এখন অবধি তাদের বোধগম্য হলো না। এরিমধ্যে মাথা নিচু করে সেখানে উপস্থিত হলো ভৃত্যা, বাসন্তী। তিন দিন স্বামীর মৃ+ত্যু’র জন্য তাকে গ্রামে থাকতে হয়েছে। জরুরী তলবে, আজ সে মহলে হাজির। সদ্য বিধবার সাজ তার সারা অঙ্গে। নাক ফুল, চুড়ি খুলেছে, সাদা কাপড়ে রাঙিয়েছে নিজেকে। বাসন্তী’র সাথে রয়েছে তার পনেরো বছরের কন্যা,যমুনা। মা-মেয়ে দু’জনই মাথা নিচু করে সালাম দিলো জমিদার শাহজালাল’কে। জমিদার মশাই বাসন্তী’কে একবার আলগোছে পর্যবেক্ষণ করো জানতো চাইলে,
“গ্রাম থেকে কখন আসিয়াছো, বাসন্তী?”
“কেবলই আইছি হুজুর।”
“ওখানকার কি খবর, ভালো তো?”
“হ ভালো।”
যমুনা মহলে নতুন এসেছে। এর আগে পরে কখনো বোধহয় এখানে আসেনি সে। দাদির সাথে গ্রামে থাকতো মেয়েটা। বাবা মা’রা যাওয়া পর তাকে একা গ্রামে রাখার সাহস করেনি, বাসন্তী।
মায়ের আঁচল ধরে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ানো কিশোরী’কে দেখে জমিদার মশাই জানতে চাইলো,
“মেয়েটা কে-রে বাসন্তী? কি হয় তোর?”
বাসন্তী ভয়ে ভয়ে বললো,
“হুজুর এইডা আমার ছেড়ি, যমুনা। আমার ছেড়িডারেও এবার লগে কইরা লইয়া আইছি, হুজুর। আমার লগে মহলে থাকবে, কাম-কাইজ করবে। ওরে কোনো বেতন দেওন লাগবে না, হুজুর। শুধু আমার সাথে থাকুক। আমগো তো আর কেউ রইলো না, গ্রামে ওরে একা রাখতে ডর লাগে আমার। আমগো উপর দয়া করুন, হুজুর! আমার ছেড়িডারে তাড়ায় দিবেন না আপনারা! আমি ছাড়া ওর আর কেউ নাই।”
বলতে বলতে জমিদারে’র পায়ের কাছে বসে কেঁদে উঠলো, বাসন্তী। কতো অসহায় শুনালো সে কান্না! যা শুনে জমিদার মশাই গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“হয়েছে, হয়েছে। পা ছাড়। তোর কন্যাকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছিস, বেশ করিয়াছিস। যা তোরা অন্ধর মহলের ভেতরে যা।”
বাসন্তী স্বস্তি পেলো। অনুমতি পেয়ে পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, সে। পরমুহূর্তে মেয়ে’কে বললো, “এই ছেড়ি যা হুজুরের পা ছুঁইয়া সালাম কর।”
“থাক থাক লাগবে না। তোরা এখন ভেতরে যা।”
এদের কথপোকথনের মধ্যেই হন্তদন্ত পায়ে বৈঠক খানায় প্রবেশ করলো, জাফর। নিচু কণ্ঠে জানালো,
“হুজুর! নিখোঁজ রহিম মিয়ার কন্যার লা-শ পাওয়া গিয়াছে আজ নদীর তীরে। ধ’র্ষ’ণ করিয়া মা’রা হইয়াছে, মেয়েটাকে। লা+শ সহিত বিচার নিয়া তাহার মাতাপিতা আসিয়াছে, আপনার দরবারে। মহলের সামনে বেশ শোরগোল চলছে।এলাকাবাসীরাও বড় ভীর করিয়াছে।”
চমকে উঠলো, জমিদার শাহজালাল। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। তার কাছে অবিশ্বাস শোনালো যেন, সব। এতো বড় অঘটন তার রাজ্যে! লজ্জা জনক, বড় লজ্জা জনক ঘটনা! এতো সাহস কার? তার গ্রামের মেয়ে নিয়ে বাজিমাত! ভাবা গেলো না আর। পরমুহূর্তে উনি উওেজিত হয়ে বললো,
“কি বলিতেছো তুমি, জাফর? কই দেখি, চলো যাই ঘটনাস্থলে।”
ভাইকে থামিয়ে দিয়ে জাবেদ মল্লিক বললো,
“আপনি উত্তেজিত হইবেন না, ভাইজান। আপনি এখানেই থাকুন, ওখানে কি হইয়াছে আমি দেখিতেছি।”
জমিদার শাহজালাল আর গেলো না সেখানে। তাকে রেখেই কর্মচারী’কে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো, জাবেদ মল্লিক। গেইটের কাছে জাবেদ মল্লিকে দেখে পুনরায় একটা হৈচৈ পড়লো সেখানে। উনি হাত উঁচু করে সবাইকে শান্ত হতে বললো। ভীর ঠেলে এগিয়ে গেলো, ঘটনাস্থলে। উনাকে দেখে আরেক দফা কান্নায় ভেঙে পড়লো,তহুরা বেগম। জাবেদ মল্লিকের পা জড়িয়ে ধরে কাকুতি-মিনতি কণ্ঠে জানান দিলো কন্যার পিতা,
“আমার স’র্ব’না’শ ঘটিয়াছে, ছোডু হুজুর। আমার মাইয়াডা আর বাঁইচা নাই গো, হুজুর। ওরা আমার মাইয়াডারে মা’ই’রা ফালাইছে। আপনাদের শাসন কার্যলয়ে এ কোন দূর্দশা, হুজুর ! আমি এর নায্য বিচার চাই, হুজুর! আমার কন্যার বিচার চাই!”
ততক্ষণাৎ নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে গর্জে উঠলো, জাবেদ মল্লিক। হুংকার দিয়ে বললো,
“কিসের বিচার চাইছো তুমি, রহিম মিয়া? তোমার কন্যা দেখাশোনার দায়িত্ব তোমাদের, আমাদের না। রাতদুপুরে কে কোথায় গেলো, এসব দেখাশোনার জন্য জমিদাররা সারাক্ষণ বসে থাকে না। তাদের হাতে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। তোমার কন্যা ঘর ছেড়ে রাত-বিরেতে আকাম-কুকাম করে বেড়াবে, নিখোঁজ হয়ে থাকবে। আগেপাছে সেসব খোঁজ কি তোমরা রাখিয়াছো? তোমার কন্যা তো ন’ষ্টা, চরিত্রহীন!
এমন ন’ষ্টা নারীর মৃ’ত্যু তো অনিবার্য! এরা সমাজের নি’কৃ’ষ্টতম নারী! এরা পাপ! এদের মৃ’ত্যু’ই উত্তম!
এই পাপ নিয়ে তুমি জমিদার মহলে কেনে এসেছো, রহিম মিয়া? তোমার এতো বড় সাহস! শান্তিপূর্ণ জমিদার বাড়িতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছো, তুমি? জানো এর শাস্তি তোমার জন্য কতটা ভয়ংকর? এক্ষুণি তুমি তোমার কন্যার মৃ’ত’দে’হ নিয়ে এখান থেকে বিদায় হও, নয়তো পা’পি’ষ্ঠ পিতা-মাতাকেও কন্যার সাথে বিদায় করে দিবো আমি। এর কোনো বিচার নেই, বিচার করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
“আপনার দোহাই লাগে, ছোডু হুজুর!এমন অবিচার করবেন না আমগো লগে। আমার মাইয়া ভালা, ম্যালা ভালা মাইয়া আমার। আমার মাইয়া ওমন খারাপ নয়। হেরে কেউ কিডন্যাপ করছে, জোর কইরা তুইলা নেছে। হে কোনো পাপ করে নায়। আমার ময়না কোনো পাপ করতে পারে না। ওই তোমরা হুজুররে কও?আমার ময়না ভালা। তোমারা তো চিনো আমার ময়নারে, তোমরা দেখছো না আমার ময়নারে? কও, আমার ময়না ভালা না?”
অসহায় রহিম মিয়া পুনরায় বিলাপ করতে করতে জাবেদ মল্লিকের পা জড়িয়ে ধরে, কান্নায় ভেঙে পড়লো। ততক্ষণাৎ তার বুকে লা+থি দিয়ে সরিয়ে দিলো, জাবেদ মল্লিক। ছিঁটকে খানিকটা দূরে চিঁত হয়ে পড়ে গেলো লোকটা। পাথর দিয়ে বাঁধানো জমিদার বাড়ির পাকা রাস্তায় আঘাত পেয়ে, নাক দিয়ে গলগল করে র’ক্ত বেরিয়ে গেলো তার। ছোট হুজুরের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে, উপস্থিত সাধারণ গ্রামবাসী ভয়ে কাঁপছে! ছোট হুজুরের দিকে কারো চোখ তুলে তাকানোর সাহস হলো না!
তান্মধ্যে আকাশ ভুবন কাঁপিয়ে আ’র্ত’না’দ করলো, রহিম মিয়া।
“আল্লাহ গো!”
ঠিক তক্ষুণি পিছন থেকে তাকে শক্ত হাতে ধরলো, ফারহান মল্লিক। আলতো হাতে র’ক্তে’র ক্ষ’ত স্থানটা চেপে ধরলো। হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
“চাচাজান!”
তার সাথে সাথে পিছন থেকে শোনা গেলো আরো একটি শক্ত কণ্ঠস্বর।
চলবে……
#পর্বঃ১২ ( প্রথম অংশ)
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
[জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যথায় ভুগেছি এতোদিন। এজন্যই পর্বটা দিতে এতো লেট হয়েছে। তার জন্য দুঃখিত আমি! এখানো পুরোপুরি সুস্থ নই আমি, অনেকটা মাথা ব্যথা নিয়ে কয়েকঘন্টা বসে এতটুকু লিখেছি। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন! আমার সুস্থতার জন্য সবাই মন থেকে একটু দোয়া কইরেন, প্লিজ! কেনো জানি, অসুখ আমার পিছু ছাড়ে না!]
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/