#আশার_হাত_বাড়ায় |১২|
#ইশরাত_জাহান
🦋
এক এক করে কোর্ট থেকে বেড় হতে থাকে সবাই।ঠিক তখনই মিডিয়া এসে ঘেরাও করে রাখে ফারাজ ও অহনার দিকে।শ্রেয়া ও তার পরিবার ঘাবড়ে যায়।ফারাজের ইশারা পেয়ে শ্রেয়াকে নিজের পিছনে আড়াল করে অন্য জায়গা দিয়ে চলে যায় অর্পা।মিডিয়ার সামনে শ্রেয়া আসা মানে ফারাজকে এখন বিপাকে পড়া।কোম্পানির লোকজন এই বিষয়ে জেনে যাবে।তাই ফারাজ চায় না মিডিয়ার কোথাও শ্রেয়ার নাম আসুক। শ্রেয়াদের একটি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রন্ট সিটে বসে অর্পা।মিরাজ গাড়ি স্টার্ট করবে ওমনি শ্রেয়ার নজরে আসে অহনার দিকে কিছু মহিলা এগিয়ে আসছে।অর্পাকে প্রশ্ন করে,”ওখানে কি হচ্ছে?”
অর্পা মৃদু হেসে বলে,”বড়ভাই কি ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নাকি?পরকীয়ার শাস্তি মেয়েদের আইনে না থাকুক নিজের তরফ থেকেও তো দেওয়া যায়।সেই ব্যাবস্থা চলছে।”
রিমলি আতঙ্কের সাথে বলে ওঠে,”আমি দেখতে চাই।গাড়ি চালাবেন না প্লিজ।যার জন্য আমার আপুর এই অবস্থা তার শাস্তি দেখতে ইচ্ছা করছে।”
মিরাজ গাড়ি চালালো না।মহিলা কমিটি থেকে কয়েকজন মহিলা এসে অহনার মুখে কালি মাখতে থাকে।দলবদ্ধ হয়ে বলে,”ব্যাভিচার নারী সমাজের ক্ষতি,ব্যাভিচার নারী সমাজের ক্ষতি।”
এ যেনো এখন মিছিল শুরু হয়েছে।হাত উচু করে অহনাকে নিয়ে স্লোগান চালিয়ে যাচ্ছে মহিলারা।হঠাৎ এক মহিলা এসে জুতার মালা পড়িয়ে দিয়ে বলে,”জালিম মায়েদের এর থেকেও বড় শাস্তির প্রয়োজন।কিন্তু সাধ্যের বাইরে করে আইন ভঙ্গ করতে চাই না।লজ্জা থাকলে এরপর থেকে নোংরা পথে চলবি না।”
অহনার মুখ এবার নিচু হয়ে গেলো।ফারাজ ঠোঁটে জিতে যাওয়া হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।মিমির হাত ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে থাকে অহনার শাস্তি।এই সবকিছু ভিডিও করছে মিডিয়ার লোকজন।ফেইসবুকে লাইভ চলছে।নজর এড়ায় না জিনিয়া ও বাকি সদস্যের।অহনার মা অহি মুখে কাপড় গুঁজে কান্না করতে থাকেন।জিনিয়া এসে তার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলে,”পার্টি তো আমরাও করি।ফ্রীডম তো আমাদেরও আছে।তোমার মেয়েকে আমার বৌমা করেছিলাম এই দিন দেখার জন্য?তোমার আর তোমার স্বামীর অনুরোধে বিয়ে হয়েছিলো ওদের।নাহলে আমরা তো ভালো ভালো ফ্যামিলি থেকে মেয়ে দেখতাম।আমার কপালটা আসলেই খারাপ।অযোগ্য বৌমা পেয়েছি।”
কথাগুলো বলে কপাল চাপড়াতে থাকে জিনিয়া।সামনে অসহায় হয়ে দাড়িয়ে আছে অহনার মা।তার আরেক পরিচয় তিনি ফারাজের কাকি।অহনার বাবা ও ফারাজের বাবা দুই ভাই।তাদের ইচ্ছা ছিলো অহনা ও ফারাজকে বিয়ে দেওয়ার।অহনার ও ফারাজের মতামতে হয় এই বিয়ে।কিন্তু অহনা যে গোপনে এসব কাজ করে বসবে এটা কেউ বুঝতে পারেনি।লজ্জায় অহি এখন দাঁড়াতে পারছে না সেখানে।দৌড়ে চলে যায় নিজের ঘরে।শাশুড়ির অপমানে কোনো প্রকার প্রতিবাদ করল না অতসী।সে নিজের মতো দিব্যি গ্রিন টি নিয়ে ফেইসবুকে ভিডিও দেখছে।কে কি করল তার যায় আসে না।
ফারাজের সামনে একজন সাংবাদিক এসে প্রশ্ন করে।ফারাজ প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দিতে থাকে।তারপর সাইড কাটিয়ে চলে আসে নিজের গাড়ির দিকে।মিমি কান্না করছে।কিন্তু জোরে জোরে না। পাপার কষ্ট হবে তাই সে শুধু চোখের পানি ফেলে ফোফাতে থাকে।শ্রেয়ার চোখ শুধু মিমিতেই আবদ্ধ।মিমির কান্না করা চোখমুখ দেখে খারাপ লাগছে তার।তাই মিরাজকে বলে,”মিমিকে আমাদের সাথে রাখলে ভালো হতো।স্যার তো নিজের মতো ব্যাস্ত থাকবে।আমরা নাহয় মিমিকে নিয়ে রাখলাম।”
শ্রেয়ার কথাগুলো শুনে অর্পা চলে যায় ফারাজের কাছে।মিমিকে নিয়ে আসে।গাড়িতে উঠতেই মিমি বসে শ্রেয়ার পাশে।মিমির দুই চোখের পানি মুছে দেয় শ্রেয়া।এক হাত দিয়ে মিমিকে আকড়ে ধরে।মিমি শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর মিষ্টি এক হাসি উপহার দেয়।
বাসায় এসে শ্রেয়ার ঘরগুলো খুঁটিতে দেখছেন সৃষ্টি বেগম।ঘর দেখতে দেখতে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”আমি তোর অফিসটা দেখব।দেখতে হবে না তুই কোথায় কাজ করিস।”
হেসে দেয় শ্রেয়া।মাকে জড়িয়ে বলে,”সব হবে মা।তুমি চিন্তা করো না।”
রিমলি এবার হামি দিয়ে বলে,”অনেক হয়েছে।এখন একটু ঘুমাবো।যে জার্নি গেলো আজ!”
রিমলির অলসতার ভঙ্গি দেখে হেসে দেয় সবাই।সৃষ্টি বেগম বিরক্ত হয়ে হাত ধরে টান দেয় রিমলির।বলেন,”দরজা জানলা খোলা আছে।তাড়াতাড়ি ওঠ।কোন জায়গায় কোন পুরুষ মানুষ থাকে বলা যায় না।”
“চিন্তা করো না তো মা।এদিকটায় তেমন কেউ আসে না।ড্রাইভার আংকেলের বউ অনেক ভালো।আমার অনেক খোঁজ খবর নেয়।তার মেয়ের জীবন দিয়ে সে অনেক কিছু বুঝেছে।এখন তাই আমাকে মেয়ের মতো আগলে রাখে।হুট হাট আমার এদিকে কোনো ছেলে মানুষ আসা বারণ।”
বলে ওঠে শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম শ্রেয়ার মুখে হাত রেখে বলেন,”তারপরও নিজেদের বিপদে আপদে তো নিজেদেরকেই বাঁচাতে হবে।আজকাল যে মেয়েরা রক্ষা পায় না। আর তোর যে বোন!সারাক্ষণ উড়ে বেড়ায়।কোন ছেলে যে আছে এ মেয়ের কপালে আল্লাহ ভালো জানে।”
মুখ ভেংচি দেয় রিমলি।সৃষ্টি বেগম আবার রাগ দেখান।হেসে দেয় শ্রেয়া ও অর্পা।
******
রনিকে জেলে ঢুকিয়ে নিজের স্থানে আসে শিহাব।এখন সে রিলাক্স আছে।কিছু একটা মনে পড়তেই কল করে ফারাজকে।ফারাজ কল রিসিভ করতেই শিহাব বলে,”আর ইউ ওকে ব্রো?মিমির কি অবস্থা এখন?”
ফারাজ বলে ওঠে,”মিমিকে নিয়ে মিরাজ আর অর্পা ঘুরে বেড়াচ্ছে।আমি একদম ঠিক আছি।”
“আজকে বাসায় আসো।মা তোমার জন্য রান্না করেছে।শুধু তুমি না মিমিকেও নিয়ে আসো।”
কপালে দুই আঙ্গুল স্লাইট করতে করতে ফারাজ বলে,”ওকে,এমনিতেও আজ বাসায় যাওয়ার মুড নেই।মামা মামীকে বলে দিস আসবো।”
বলেই কল কেটে দেয় ফারাজ।হেলান দেয় সোফায়।পুরুষ মানুষ বলেই নিজেকে স্ট্রং রেখেছে সব জায়গায়। হৃদয়হরণ যে তারও হয়েছে এটা বোঝার মতো কেউ নেই।টাকা থাকলেও মানসিক শান্তি তার ভিতর নেই।এই যে শ্রেয়া যার টাকা পয়সা না থাকলেও অনেক সাপোর্ট থেকেছে।এখন মন খুলে মুক্ত বাতাসে হাসিখুশি আছে। আর ফারাজ সে তো নিজের যোগ্যতায় যুদ্ধ করে জিতে গেলো।কিন্তু দিনশেষে সেও একা হয়ে গেলো।মিমিকে সাথে করে আনেনি কারণ এখন মিমির মধ্যে অহনার জন্য কষ্ট লুকিয়ে রাখা আছে।সেই কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে যদি মিমি সবার সাথে আনন্দ করে।মেয়েকে নিয়ে খুব সিরিয়াস ফারাজ।কপালের উপর এক হাত রেখে নিজেকে নিজে বলে,”আমার দুনিয়া আমার মেয়ে আর আমার মেয়ের দুনিয়া আমি।আমার জীবনের এক অধ্যায় শেষ তো আজ থেকে নতুন অধ্যায় শুরু।আমার মেয়েকে নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে শিখবো আমি।”
*****
শ্রেয়া ও সৃষ্টি বেগম মিলে রান্না করছিলেন।রাতে খাবে সবাই।অর্পা মিমি ও রিমলি মিলে খেলা করছে।মিমি এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে।সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলছে।ফারাজ তার গাড়ি নিয়ে এসেছে।মিরাজের গাড়ি দেখতে পেয়ে সেখানে নিজে গাড়ি থামিয়ে দেয়।শ্রেয়ার বাড়ির সামনে এসে দরজায় টোকা দেয়।যদিও দরজা খোলা ছিলো।সৃষ্টি বেগম প্রাকৃতিক বাতাস বেশি পছন্দ করেন।তাই দরজা খোলা রেখেছেন। ফারাজকে দেখে মিমি দৌড়ে যায়। ফারাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমরা এখনই চলে যাবো পাপা?”
মিমিকে জড়িয়ে ধরে ফারাজ বলে,”হ্যাঁ মা।তোমার শিহাব কাকু ফোন করেছিলো।আজকে আমাদের ওখানে যেতে বলেছে।”
সৃষ্টি বেগম এগিয়ে এসে বলেন,”রাতের খাবারটা খেয়ে যাও বাবা।”
“আমার মামা মামী আজ দাওয়াত দিয়ে রেখেছেন।আমি হ্যাঁ করেছি ওনাদের।তাই এখন সম্ভব না। পরে একদিন হবে।”
কথাগুলো বলে অর্পার দিকে তাকিয়ে ফারাজ বলে,”তুমি যাবে আমাদের সাথে নাকি মিরাজ আসবে?”
“ও এসে আমাকে নিয়ে যাবে।মামী কল করেছিলো।আমি যাবো না আজ।”
“আচ্ছা।আজ তাহলে আসি।”
মিমি হাত দিয়ে টাটা দেখিয়ে দিলো সবাইকে।শ্রেয়া নিজেও হাত দিয়ে টাটা দেখিয়ে বিদায় দিলো।
ফারাজ ও মিমি চলে যেতেই শ্রেয়ার ফোনে কল আসে।মিসেস তানহার কল এসেছে।শ্রেয়া রিসিভ করতেই বলে ওঠে,”তোমার ডিভোর্সের কাগজ রেডি। কাল এসে সই করে দিও।”
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শ্রেয়া বলে,”ওকে,আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
“ইটস মাই ডিউটি ডিয়ার।”
শ্রেয়ার কথা শুনে সৃষ্টি বেগম বলেন,”কি হয়েছে?”
“ডিভোর্সের কাগজ রেডি। কাল সই করে দিতে হবে।সবকিছু কত দ্রুত হয়ে গেলো।”
অর্পা এসে শ্রেয়ার পাশে দাড়িয়ে বলে,”সে যাই হোক।শেষ ভালো যার সব ভালো তার।”
বলেই শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে অর্পা।সৃষ্টি বেগম কৃতজ্ঞতা জানায় অর্পাকে।সবাই আনন্দ করতে থাকে।মিরাজ আসার পর চলে যায় অর্পা।
সবাই চলে যাওয়ার পর এবার একটু ফোন হাতে নিলো রিমলি।উদ্দেশ্য তার গল্প পোস্ট করা।ভালোভাবে গল্প রিচেক দিয়ে পোস্ট করে দিলো ফেইসবুকে।সাথে সাথে একটি লাভ রিয়েক্ট আসে।রিমলি চেক করে দেখে আইডির নাম শিহাব হাসান।একটা ছবিও নেই আইডিতে।শুধু আছে ব্লার ছবি দেওয়া।আবার কিছু ছবি অন্ধকার রাস্তায় মুখ লুকিয়ে রাখা।বিড়বিড় করে রিমলি বলে ওঠে,”ফ্যাক আইডি নাকি বুঝব কিভাবে?ফেইসবুকে একটা ছবিও নেই।ছেলে মানুষ তাও আবার পুলিশ সে কি না পিক দেয় না আইডিতে।আবার মেয়েদের ম্যাসেজ করে!”
চলবে…?