তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্বসংখ্যা_৯

0
202

#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_৯

” হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছো? ”

ওপাশ হতে মেয়েলি কণ্ঠস্বরে মুচকি হেসে উঠলো নিশাত। মোবাইল শ্রবণ পথে ভালোমতো ঠেকিয়ে বসলো বিছানায়।

” ওয়া আলাইকুম আসসালাম ননদিনী। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”

” আলহামদুলিল্লাহ্ আছি কোনোরকম। ” ম্লান সে স্বর।

” কোনোরকম আছো? কেন? এনি প্রবলেম? ”

নিশাত কিঞ্চিৎ উদ্বেগ প্রকাশ করে শুধালো। ফোনের ও প্রান্তে শিমু নামক মেয়েটি ধীরলয়ে মন খারাপির সুরে বলে উঠলো,

” ভাবী। আমার বান্ধবীটা কেমন আছে? ভালো আছে তো? ও কি আমাকে ভুলে গেছে? ”

নিশাতের মুখভঙ্গিতে পরিবর্তন এলো। একটু আগের হাসিমুখে এখন কালো ছায়া। জিভ দিয়ে আলতো করে ওপরের ঠোঁট সিক্ত করে নিলো সে। কোমল কণ্ঠে বললো,

” শিমু! উক্তি তোমাকে কি করে ভুলতে পারে? তুমি ওর ওয়ান অ্যান্ড অনলি ফ্রেন্ড। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। বাইরে জগতে ওর একমাত্র আপনজন তো তুমিই ছিলে। তোমাকে ও ভুলতে পারে বলো? না গো। ও তোমায় ভোলেনি। ভুলতে পারে না। ”

” তাহলে একটাবারের জন্যও আমার সাথে কন্টাক্ট করলো না কেন? এমনকি আমি কল দিলেও ধরছে না। ফোন সুইচড্ অফ বলছে। ”

” উক্তি তোমার সাথে কি করে কন্টাক্ট করবে বলো? ওর মোবাইল যে… ”

” কি হয়েছে মোবাইলের? ” শিমু শুধালো।

নিশাত লহু স্বরে বললো,

” ওর মোবাইলটা এ বাড়িতে। ওর হাজবেন্ড ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। ওর কাছে এই মুহূর্তে কোনো পার্সোনাল মোবাইল নেই। ”

” কিহ্! মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে গেছে! কিন্তু কেন? ” আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো শিমু।

নিশাত প্রসঙ্গ বদল করতে বললো,

” সে লম্বা হিস্টোরি ননদিনী। ছাড়ো ওসব। উক্তি’র কাছে এখন কোনো মোবাইল নেই। আর ও তো ভিডিও কল ছাড়া আমাদের সাথে কন্টাক্ট করতেও পারবে না। তাই আউট অফ কন্টাক্ট রয়েছে। আমি নিজেও তো যোগাযোগ করতে পারছি না। ”

শিমু মলিন বদনে সবটা শুনছিল। নিশাত আরো বললো,

” ভাবছি ইনশাআল্লাহ্ কাল/পরশু উক্তি’র শ্বশুরবাড়ি যাবো। ওর সাথে দেখা করবো। সে-ই যে মেয়েটা গেল। আর তো দেখা নেই। এখন কথাও হচ্ছে না। মনটা কেমন আনচান করছে। ”

শিমু প্রফুল্লকর কণ্ঠে বললো,

” ভাবী ভাবী। মাই ডিয়ার সুইট ভাবী। আমিও সঙ্গে যাবো। আমাকে নেও না! ”

নিশাত বেশ খুশি হলো প্রস্তাবে।

” হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তুমি সত্যিই যাবে? ”

” হান্ড্রেড পার্সেন্ট যাবো। দেখতে হবে না বান্ধবী আমার বিয়েশাদী করে কেমন আছে! ”

শিমু ও নিশাতের ঠোঁটের কিনারায় ঝুলে হাসির আভা। উদগ্রীব তারা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কেমন আছে তাদের উক্তি?

নিকষকৃষ্ণ রজনী তখন। আঁধারে তলিয়ে বসূধা। বাড়ির অভ্যন্তরেও একদফা আঁধারিয়া পরিবেশ। উপস্থিত সকলের শূ’ল বিদ্ধকর চাহনি স্থির অবলা মেয়েটির পানে। চোখে ভরপুর নোনাজল। দু হাত বড় আকুলতার সহিত নাড়িয়ে যাচ্ছে উক্তি। নিজের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে। তবে আফশোস! ওর এই প্রচেষ্টা, নৈঃশব্দ্য ভাষায় কেউ এক পয়সা দাম দিলে তো! উপস্থিত তিন তিনটে নারী মূর্তি ও এক পুরুষ অবয়ব তো মজা লুটতে ব্যস্ত। মিটিমিটি হাসি, ফিসফিসানি গুঞ্জন… তীব্র অপমান করে যাচ্ছিল মেয়েটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। উক্তি আর পারছিল না। পারছিল না বোবা হয়ে এই গঞ্জনা আর সহ্য করতে। ওর দু ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে ‘ আ ‘ ‘ আ ‘ কিছু অর্থহীন শব্দ ছুটে বেরোচ্ছিল। নিজের নির্বাক ভাষায় উক্তি চিৎকার করে বলতে চাইছিল,

‘ আমি চরিত্রহীন নই। আপনারা দয়া করে আর মিথ্যা অপবাদ দিয়েন না। না না। প্লিজ! ‘

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওর এই আকুলতা, হাহাকার কারোর মন ছুঁলো না। মোমেনা বেগম, জান্নাত ও মুন্নি ভৎসনার চোখে তাকিয়ে। বাঁকা হাসছিল মারুফ। তাদের হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়ে অসহায় উক্তি। লাল টুকটুকে চোখের শুভ্র অংশ। তখনই ন্যায়ের স্বপক্ষে জোরদার খুঁটি স্বরূপ আগমন হলো মুয়ীয হাসানের। বিগত দিনের তুলনায় আজ বেশ তাড়াতাড়িই ফিরেছে সে। কাজের চাপ কম ছিল। মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত। কিছুই ভালো লাগছিল না। ফেরার পথে কি এক খালি খালি লাগছিল। বারবার মানসপটে ভেসে উঠছিল আজ সকালের সেই অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। কোনো পুরুষের সঙ্গে তার সহধর্মিণীর হাস্যোজ্জ্বল আলাপণ। অসহ্য লাগছিল মুয়ীযের। গরমে ফেটে যাচ্ছিল দেহাবয়ব। তাই তো ফিরে এলো। কিন্তু এসে এ কি দেখছে সে! অত্যন্ত করুণ অবস্থা তার একান্ত রমণীর। কান্নার ফলে ফুলো চোখমুখ। দু হাত নাড়িয়ে চাড়িয়ে তখনো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত। মুয়ীয ভাবতে পারছিল না। দেখতে পারছিল না এই মর্মান্তিক দৃশ্য। তার অবর্তমানে কি ঘটে গিয়েছে? কেন এমন করে কাঁদছে তার নৈঃশব্দ্য উক্তি? মুয়ীয ত্রস্ত পায়ে ছুটে গেল। গিয়ে দাঁড়ালো স্ত্রীর একদম ডান পাশেই। বড় হাতটির থাবা গেঁথে বসলো উক্তি’র কম্পনরত কাঁধে। কান্নায় জর্জরিত উক্তি কেঁপে উঠলো। আঁতকে উঠলো সত্তা। ভীতিকর নজর মেলে তাকালো ডানে। চোখের মণিতে আবদ্ধ হলো স্বামীর উদ্বেগ মাখা চেহারা।

” কি হইছে বউ? ”

উক্তি কিচ্ছু শুনতে পেল না। ওর শ্রবণ পথ তখন অবরুদ্ধ। শুধু দেখতে পেল স্বামীর অধরোষ্ঠের হালকা নড়চড়। ধীরে ধীরে দুই অক্ষি পর্দায় তমসা ছেয়ে গেল। ভারশূন্য দেহ। অক্ষম হয়ে পড়ছিল হাত-পা। মাথার ভেতরে সহস্র গুণ শক্তিশালী শব্দের তেজ। আর পারলো না। অতিরিক্ত ক্রন্দন, অসহায়ত্ব, আকুলতার দরুণ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো মেয়েটি। লহমায় ওর কোমল দেহটি ভর হারালো। লুকিয়ে পড়লো পেছন ভাগে। চোখের পলকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো মুয়ীয। তার অগ্রগামী বাম হাতের মাঝে ঠাঁই নিলো স্ত্রীর দেহের উর্ধাংশ। অচেতন মেয়েটি তখন লুটিয়ে স্বামীর বাহুতে। একদম নিষ্পাপ, নির্ভার, নিষ্ক্রিয়, নিষ্কলুষ রূপে! পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখে আতঙ্কের রেশ!
~~~

বিছানায় শায়িত অচেতন মেয়েটি। চিকিৎসক মুয়ীযের সঙ্গে টুকটাক কথা বলতে বলতে ঘর হতে বেরিয়ে এলেন। মুয়ীয আলতো করে তাদের ঘরের দরজা ভিড়িয়ে দিলো। কৃত্তিম হাসি উপহার দিয়ে বিদায় জানালো চিকিৎসককে। চিকিৎসক যতই বাড়ির বাহিরমুখো হচ্ছেন, ততই উৎকণ্ঠায় ভেঙে পড়ছে পরিবারের সদস্যগুলো। মুন্নি যেন চিৎকার করে বলতে চাইছে চিকিৎসককে, ‘ আমনে দয়া করে যাইয়েন না। আমনে গেলেই মোগো ম°রণ নিশ্চিত। ‘ দুর্ভাগ্যক্রমে মনের কথা মনেই রয়ে যায়। শুনতে পায় না কেউ। প্রস্থান করলেন চিকিৎসক। এতক্ষণে ধীরলয়ে ঘুরে দাঁড়ালো মুয়ীয। তার দু চোখে অগ্নিকুণ্ড। নি’ষ্ঠুর রূপে জাগ্রত শিরা উপশিরা। বুকের পাটাতন অস্থির ভাবে ওঠানামায় ব্যস্ত। দু’টো হাতের মুষ্টিবদ্ধতা চোখে পড়ার মতো। এতটুকু সময়ের মধ্যেই চেহারার অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়েছে। এক আকাশ ক্রোধ জমেছে ওই শ্যাম মুখখানায়।

” কেডা কি কইছে ওরে? ”

ভ’য়ঙ্কর শীতালু স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো মুয়ীয। সে স্বরের গভীরতায় ঠকঠক করে কেঁপে উঠলো মুন্নি, জান্নাত উভয়ে। মোমেনা বেগম অত্যধিক নিচু স্বরে একপ্রকার ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

” মুয়ীয, মোর বাপ! ”

মুয়ীয নিজ ঠোঁটে তর্জনী ছুঁয়ে ‘ হুশশ ‘ ধ্বনিতে মুখে অদৃশ্য সেলোটেপ লাগিয়ে দিলো যেন। মোমেনা বেগম চুপ হতে বাধ্য হলেন। দুরুদুরু কাঁপছিলো ওনার বক্ষস্থল। চেহারায় রক্তিম ভয়ার্ত আভা। মুয়ীয ঠোঁট হতে তর্জনী হটিয়ে নিলো। মাটি পিষে ফেলার মতো ভঙ্গিতে চলতে আরম্ভ করলো পদদ্বয়। খুললো কর্মঠ-খসখসে দুই হাতের মুষ্টিবদ্ধতা। দাঁড়ালো বড় ভাবীর সম্মুখে। আলতো করে ফাঁক হলো ওষ্ঠাধর। জান্নাত কিছু শোনার পূর্বেই ভয়ে মৃ°তপ্রায়। কাঁপা কাঁপা চোখে তাকিয়ে। মুয়ীয শুধালো শক্ত কণ্ঠে,

” কি হইছিল? এ টু জেড ব্যাবাক কও। ”

আঙ্গুলের সাহায্যে শাসিয়ে দিলো অগ্রীম,

” একখান মিছাও যেন বাইর না হয়। নইলে… ”

জান্নাত হুড়মুড়িয়ে বলে উঠলো,

” না না। কইতাছি কইতাছি। ”

মারুফ পাশ থেকে স্ত্রীকে বাঁধা দেয়ার বৃথা চেষ্টা চালালো। ইশারায় কোনোমতে বলতে মানা করলো। তবে লাভ হলো না। ক্ষ্যা’পা দেবরের ভাবভঙ্গি আর আসন্ন বিপদের আলামত পেয়ে জান্নাত চরম শঙ্কিত। তাই তো আজ সন্ধ্যার সমস্ত অপমানের পাই টু পাই হিসাব জমা দিলো। বললো কি করে তারা সকলে বিকেল হতেই অসহায় মেয়েটিকে হেনস্তা করে যাচ্ছিল। কি করে বাদ মাগরিব সবাই মিলে পাকড়াও করলো তাকে। কি করে অসহনীয়, অকল্পনীয়, বি’শ্রী সব শব্দের আঘাতে ক্ষ”তবিক্ষত করে দিলো উক্তি নামক অস্তিত্ব’কে। মুয়ীয প্রতিটি শব্দে বুঁদ হয়ে ডুবে। শুনছিল। অসহ্যকর অনুভূতি সহকারে সহ্য করে যাচ্ছিল। কিসব নোংরা বাক্যবাণে আঘাতের পর আঘাত করা হয়েছে তার আপন নারীকে। কি করে? উক্তি কি করে এতসব জঘন্য অপবাদ, অপমান সহ্য করলো? বাংলার আর কোনো বধূ কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার না হোক। হেনস্তা না হোক, স্বামীর অনুপস্থিতিতে, একদম অসহায় অবস্থায়। মানুষটি খিঁচে চক্ষু বন্ধ করে নিলো। বুকের ওঠানামা আরো দ্রুততর। ভয়াবহ। খর্খরে। জান্নাত আগত বিপদ সংকেত পেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। নিজেকে নিজেই দোষারোপ করতে লাগলো। অনুশোচনা হচ্ছিল মুয়ীয হাসানের বউকে দংশন করে। সে কি করে বনের রাজা সিংহের সঙ্গিনী সিংহীকে আঘাত করে ফেললো! এবার ক্ষি’প্ত সিংহ যে কলিজা টেনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলবে।

চোখ মেলে তাকালো মুয়ীয। তার চোখের শুভ্র অংশে তখন রক্ত জমাট বেঁধে অশনি সংকেত প্রদান করছে। সে ঘুরে তাকালো বোনের পানে। ছোট বোন মুন্নির পানে। মুন্নি ভাইয়ের চাহনি দেখেই কুপোকাত। জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। থরথরিয়ে কাঁপছে। ঠোঁট দু’টো ঈষৎ ফাঁক কিছু বলার অভিপ্রায়। তবে বলতে ব্যর্থ। মুয়ীয এলো সন্নিকটে।

” ভ্ ভাইয়া মুই.. ”

আর বলা হলো না। জোরালো ত্রাসকর শব্দে থমকে গেল মাঝের ঘরটি। জান্নাত দু হাতের তালুতে ঠোঁট লুকিয়ে শঙ্কামিশ্রিত চোখে তাকিয়ে। মোমেনা বেগম ও পুত্র মারুফ নির্বাক। মুন্নির বাঁ গালে চেপে বসেছে তার নরম হাতটি। লুকানোর প্রয়াস করছে অকল্পনীয় ব্যথা, পাঁচটা আঙ্গুলের দগদগে দাগ। ভাই তাকে সকলের সামনে এমনতর আঘাত করলো! চ ড় মা•রলো তাকে!

” এই মাইরডা যদি মায় ছোডোকালে দিতো, শাসন করতো। তাইলে আইজ এমন বা°ন্দরনি হইতি না। তোরে তো আইজ থে দেখতাছি না। বহুতদিন ধইরাই দেখতাছি। তোর কার্যকলাপ লক্ষ্য করতাছি। দিনকে দিন অধঃপতন হইতাছে তোর। আদরে আদরে চরম বা`ন্দর হইতাছোছ। ভালোমন্দ, ঠিক ভুল কিচ্ছু বুঝোছ না। জানোছ না। ”

মুন্নি কান্নার সুরে ডেকে উঠলো,

” ভাইয়া! ”

” চুপ। তুই কোন সাহসে মোগো ঘরে আড়ি পাতছিলি, ক। তুই জানোছ না, জামাই বউয়ের মধ্যে প্রাইভেসি থাহে? জানোছ না কারোর ঘরে ফ’খিন্নির লাহান উঁকিঝুঁকি মা রা ভালা না। মন্দ অভ্যাস। ক, জানোছ না? ”

অস্ফুট স্বরে বললো মুন্নি, গাল হতে হাত নামিয়ে,

” জা নি। ”

” তাইলে আড়ি পাতছিলি ক্যা? একে তো চোরের লাহান ব্যাক হুনছোছ। হ্যারপর আবার মায়ের কানে কানপড়া দিছোছ। ষ•ড়যন্ত্র কইরা বোবা ভাবীডারে হগলে মিইল্লা আধম*রা বানাই হালাইছোছ। ”

নিশ্চুপ সব। মুয়ীয ঝাঁঝালো স্বরে বলে গেল,

” ভুইল্লা যাইছ না মুন্নি। তুইও মাইয়া হইয়া জন্মাইছোছ। আজ নইলে কাইল পরের বাড়ি যাওয়া লাগবো। পরের সংসার করা লাগবো। হেহানে কেউ যদি চরম অপমান করে না, আঘাত করে না… সহ্য করতে পারবি না। দুঃখে কষ্টে মইরা যাইতে ইচ্ছে করবো। না পারবি কইতে, না পারবি সইতে। এইয়ার ম্যালা জ্বালা। সহ্য করা যায় না। বুকটা ফালাফালা হইয়া যায়। মনে রাহিছ। ”

মুন্নি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। চুপচাপ। মুয়ীয আস্তে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো মায়ের পানে। মোমেনা বেগম থমথমে মুখে কুলুপ এঁটে।

” তোমারে আর কি কমু? মা হও তো। মা হইয়া নিজেই যদি পোলামাইয়ার ক্ষতি চাও, তাইলে পোলামাইয়া কার কাছে যাইবো একটু সাহায্যের লেইগ্গা? কার কাছে স্নেহ, ভালোবাসা আশা করবো? হা? ”

সকলে বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে। কোনো প্রত্যুত্তর নেই। মুয়ীয স্পষ্ট এবং দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিলো সকলকে,

” ওই মাইয়া অহন আর উক্তি কায়সার নাই। মোর বউ হয়। বউ। মিসেস মুয়ীয হাসান। এই ঘর যদি আল্লাহ্’র রহমতে চলে, তয় মোর টাহায় চলে। এই ঘরের একচ্ছত্র রাজা মুই। আর ও মোর একমাত্র রানি। আইজকের পর থে মোর রানির গায়ে যদি একখান তিল পরিমাণও আঘাত লাগে না, সব ছারখার কইরা হালামু। ধ্বংস কইরা হালামু এই অশান্তি নিবাস। কথাডা মনে থাহে যেন। ও মোর বউ। হৃদয়ের রানি লাগে। ”

চওড়া প্রশস্ত বুকে হাত চাপড়ে মুয়ীয হাসান নিসংকোচে, প্রগাঢ় উচ্চ স্বরে করলো অভাবনীয় সে স্বীকারোক্তি,

” এই বুকেতে শুধু উক্তি’র বসবাস। ”

চলবে।

[ আরে বাহ্! What an unbelievable scenery!! মুয়ীয ভাই তো জাস্ট ফাটিয়ে দিলো! এ কি করলো সে, বললো সে! অভাবনীয় যে!! আই অ্যাম তো অবাক! আর বন্ধুগণ, আপনাদের কি অবস্থা? ফার্স্ট ক্লাস, জমজমাট কমেন্ট চাই কিন্তু আজ। পরবর্তী পর্ব ছুন্দত হতে চলেছে বোধহয় 🤭 ]

টাইপো কৃতজ্ঞতায় ~ রত্না আপু 🩶

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here