তেমাকে_চাই_নিরবধি লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
745

“জমিদার বাড়ি’র বড় পুত্র’কে আমি অসম্ভব ভালোবাসি! এটা আর কেউ না জানলেও আপনি জানতেন, ফারহান ভাই। সবটা জেনেও তার অনুপস্থিতিতে আমায় কেন বিয়ে করলেন, ফারহান ভাই?কেনো? সে যাই হোক, আমি এই বিয়ে মানি না।
ভুলেও আমর সাথে স্বামীর অধিকার দেখাবেন না, ফারহান ভাই। আপনাকে আমি ডিভোর্স দিতে চাই, মুক্তি চাই আপনার থেকে।
কতদিন আর আমায় বন্দি করে রাখবেন? এক দিন, দুই দিন,এক বছর! একদিন না একদিন ঠিকই আমি চলে যাবো। আপনাকে আমার সহ্য হয়না! আমি মাহাদ’কে ভালোবাসি, সংসার করতে হলে তার সাথেই করবো। আমি মাহাদ’কে চাই, আপনাকে না! তাকে ছাড়া আমার দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে, ফারহান ভাই। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুকে! আমার মাহাদকে আমার কাছে এনে দিন,প্লিজ!”

সদ্য বিবাহিত স্ত্রী’র মুখে প্রাক্তনের নাম শুনে জমিদারের ছোট পুত্র “ফারহান মল্লিক” কুটিল হেসে শুধালো,

“ছি,বালিকা! সম্পর্কে এখন উনি তোমার ভাসুর হয়। আর তুমি কি-না স্বামীর সামনে ভাসুরের জন্য চোখে জল ফেলছো! জানো, এটা তোমার হাসবেন্ড’র কাছে কতটা অপমানজনক!”

লোকটার ঠাট্টা মূলক মন্তব্য শুনে কান্না থেমে যায়, ষোড়শী কুহেলিকা’র। গম্ভীর পুরুষালী ফারহানে’র কার্যে অবিশ্বাস্য নয়নে তার মুখপানে একবার তাকালো। তার বড় চাচার এই ছেলেটা, একজন অদ্ভুত মানব! তাকে সচারাচর হাসতে দেখা যায় না। সে কি-না তার সাথে মশকরা করছে। মিনিট দু-এক সময় নিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে কুহেলিকা প্রশ্ন করলো,

“আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন, ফারহান ভাই? আপনার কি মনে হয়, আমি এখন আপনার অনর্থক মূলক কথা শোনার মতো মুডে আছি?”

ফারহান তালুকদার গা ছাড়া ভাবে পালঙ্কে’র থেকে উঠে দাঁড়ালো। খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহেলিকা’র দিকে কয়েক কদম এগিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

“তুমি সম্পর্কে আমার বিয়ান নয় বউ হও! তোমার সাথে আমার ঠাট্টা করার সম্পর্ক নয়, প্রণয় আর মহব্বতের সম্পর্ক। তোমাকে দেখে আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে, বুকে উতাল-পাতাল ঢেউ বইছে, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।”

বলতে বলতে কুহেলিকা’র কাছে এগিয়ে আসলো, লম্বা চওড়া সুঠাম দেহে’র পুরুষটি। দু’জনার মধ্যে থাকা দূরত্বটুকু চুকিয়ে হুট করে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করলো, কুহেলিকা’কে। আকস্মিক ঘটনায় চমকালো, মেয়েটা! ফারহানে’র থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য শরীর মোচড়াচ্ছে। যা দেখে ফারহান বাহুবন্ধন আরো একটু শক্ত করলো। পুরুষটি চওড়া বুকের সাথে চেপে গেলো কুহেলিকা’র মাথা। মানুষটার এমন কার্য পছন্দ হলো না, কুহেলিকা কুহুর। সে ততক্ষণাৎ ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে শুধালো,

“কি করছেন ফারহান ভাই? আমায় ছাড়ুন, বলছি!”

“উফ্,নড়ে না জান! একটু শান্ত হও, কুহেলিকা! কান পেতে শুনো, দেখো তোমার আগমনে আমার বুকের ভিতর কতটা ঝ’ড় বইছে!”

বলতে বলতে এক হাতে শাড়ী বেঁধ করে কুহেলিকা’র কোমড় জড়িয়ে ধরলো। প্রথমবার পুরুষালী শীতল স্পর্ষ পেয়ে শরীরে মৃদু কম্পন বইছে, মেয়েটার। নিরব হয়ে গেলো এতোক্ষণের সমস্ত চঞ্চলতা, জমে গেলো কুহেলিকা। যা পরখ করে ফারহান বাঁকা হাসলো। নিজের ঘাড় এগিয়ে দৃষ্টি রাখলো কুহেলিকা’র মায়াবী চোখে। ভিতু নয়নে কুহেলিকাও তাকালো, প্রথম বার তাদের দৃষ্টি বিনিময় হলো। হাসলো ফারহান। মিনিট দু’য়েক সময় নিয়ে কুহেলিকা’র কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে মোলায়েম কণ্ঠে শুধালো,

“শোনো, বালিকা! তোমার ললাটে শীতল পরশ একে দিয়ে জানন দিলাম, তুমি আগাগোড়া পুরোটাই আমার। বিন্দুমাত্র অন্য কারো হলে, দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো তোমায়।”

মনের মাঝে অন্য পুরুষের বাস। দেহে অন্য পুরুষের ছোঁয়া অনুভব করে হঠাৎ করেই পুনরায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো কুহেলিকা। যা শুনে ততক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে দিলো ফারহান। এতক্ষণে একটা ঘোরের মধ্যেই ছিলো সে। সজ্ঞানে ফিরতেই চমকালো! ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নিজের ঝাঁকড়া চুলগুলো দু’হাতের মুঠোয় ধরে বিড়বিড় করে বললো,

“ওহ্ নো! আর একটু হলেই কতবড় অঘটন ঘটে যেতো, আমার সমস্ত শ্রম বিফলে যেতো! ছি! আমি এতোটা নিয়ন্ত্রণহীন হলাম কি করে!”

এরিমধ্যে দরজায় করাঘাত। দু’কদম পিছিয়ে গেলো ফারহান। বললো, “কে?”

জমিদার বাড়ির একজন কর্মচারী নিচু কণ্ঠে বললো,

“মাষ্টার মশাই, আমি রহিম। আপনাকে জমিদার পিতা জরুরী তলব করেছে। কক্ষে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, বড় জমিদার হুজুর।”

দাদাজান আকবরের জরুরী তলব। মানে, এক্ষুণিই বের হতে হবে তাকে। দাদাজান’কে বড়ই মান্য করে, জমিদার বাড়ির ছোট-বড় সকলে। আবারো লম্বা শ্বাস ছাড়লো, ফারহান। বললো,

“আসছি আমি। তুমি যাও।”

নিঃশব্দে জায়গা ছাড়লো, রহিম। জমিদারের এই পুত্র’র সাথে অহেতুক একটা কথাও খরচ করা যাবে না। লোকটা সবার চেয়ে আলাদা। অকারণেই তাকে বড্ড ভয় পায় সবাই।
শহরে’র এক নামকরা পাঠশালার প্রধান মাষ্টার মশাই, ফারহান মল্লিক! বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে বিদেশী ডিগ্রী নিয়ে এসেছে, দুই বছর হলো। উওর পাড়া সহ পাঁচ গ্রাম নিয়ে, জমিদার শাহজালালের শাসন কার্য। দক্ষ হাতে পিতা আকবরের জমিদারি পরিচালনা করে, শাহজালাল। তার দুই বিবির দুই পুত্র। জমিদারের বড় গিন্নি, সালমা বেগম। তারই একমাত্র পুত্র মাহাদ।
জমিদারের ছোট গিন্নি, আয়শা খাতুন। তার একমাত্র পুত্র, ফারহান এবং একমাত্র ছোট কন্যা, কিরণমালা। দুই বিবি, দুই পুত্র, একমাত্র কন্যা’কে নিয়ে জমিদার শাহজালালের পরিবার।
উওর পাড়া গ্রামে চার বিঘা জমি নিয়ে বিশাল রাজকীয় জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ির সহ,পাঁচ গ্রামের মধ্যে একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক, ফারহান মল্লিক। গ্রামের সবার চোখের মধ্যমনি।
.
.
নিজ কক্ষে আরাম কেদারায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে নাতি’র জন্য অপেক্ষা করছেন, আকবর। এরিমধ্যে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি’কে দেখে মৃদু হাসলো। ফারহান দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে বিনয়ী কণ্ঠে শুধালো,

“দাদাজান! আসবো?”

সহাস্যে দাদাজান বললো,

” আসো। এতো দেরী করলে যে, দাদাভাই? অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আমি।

অনুমতি পেয়ে ফারহান ভিতরে প্রবেশ করলো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে রসিকতা করে দাদাজান’কে বললো,

“কক্ষে নতুন বউ। তার কাছ থেকে আসতে তো একটু দেরী তো হবেই, দাদাজান। বুঝেন নাই, নতুন বউয়ের সোহাগের ব্যাপারটা!”

নাতির রসিকতা বুঝে হাসলো, দাদাজান। দু’জন মিলে একটুখানি রসিকতাও করলো। এরপর দাদাজান নাতিকে বললো,

“দক্ষিণ পাড়ায় দুই পক্ষে’র মাঝে বিরাট দ্ব’ন্ধ লেগেছে। একজন’কে গুরুতর আ’হ’ত করা হয়েছে, আ’হ’ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি। দু’পক্ষের বিচারকার্যের দায়িত্ব তোনাকে দিলাম, দাদাভাই! তোমার বাপ-চাচা ‘রা অন্য কাজে বাহিরে আছেন। এই মুহূর্তে, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভরসা করতে পারছি না আমি। তুমি একবার গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসো, নিয়ন্ত্রণে’র বাইরে যেন না যায়। আমার এলাকায় বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করছে, কার এতো সাহস? খোঁজ নেও।”

বিরক্ত হলো, ফারহান। বললো,

“বুড়ো! আজ আমার বাসর রাত। আর তুমি কি-না সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ’কে তার বাসর ঘর থেকে ডেকে এনে, তোমার রাজ্যের কার্য হাঁচিল করছো। এই হতভাগা এক বান্দার প্রতি জমিদার পিতার এমন অবিচার!
কি আমার অপরাধ, হুজুর? আপনি কেন আমার বউকে তার স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করছেন? আমি তো কখনো আপনার বাসর ঘরে গিয়ে আপনাদের ডিস্টার্ব করিনি, দাদাজান! তাহলে, আপনি কেনো করছেন? না-কি বুড়ো বয়সে আপনার হিংসা হচ্ছে, দাদাজান!”

নাতির কথা শুনে তার চুল টেনে দিয়ে দাদাজান বললো,

“শা’লা’র লু’চ্চা ! মাএ সন্ধ্যা হলো, আর তুমি বাসর ঘরের শোকে বিলাপ করছো! এমন হলে তো, আমার নাতনী’টা কখনো খালি পেটেই রবে না।”

“উঁহু! আমি তো আমার বউকে খালিপেটে রাখবো না, দাদাজান। জমিদার বাড়ির কন্যাকে বিয়ে করছি, তাকে খালিপেটে রাখলে কি আর তার বাপ-দাদা আমায় ছেড়ে দিবে! আমার আবার জানের প্রতি বড় মায়া, বড় হুজুর!”

কথা শেষে দাদা-নাতি দু’জনই প্রাণ খুলে হাসলো। অতঃপর দাদাকে আশ্বাস দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করলো, ফারহান। বাহিরে বের হওয়ার আগে আবারে আসলো একবার নিজের কক্ষেে।
.
.
রাত এখন আনুমানিক সাতটা। বিশাল রাজকীয় কক্ষের চার কোনায় চারটা হারিকেন জ্বলছে। হারিকেনে’র আগুনে’র লালচে আলোয় চিকচিক করছে কক্ষ খানা। তারই মাঝে কক্ষের এক কোণায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে এখনো কাঁদছে, কুহু। ফর্সা ত্বকে লাল রঙের একখানা সুতীর শাড়ীতে মেয়েটাকে,অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মেয়েটার ডাগর ডাগর আঁখি, কোমড় ছাড়ানো লম্বা কেশ, গোলগোল ফর্সা মায়াবী মুখটায় কতশত মায়া! সদ্য বিবাহিত স্ত্রী’র নজরকাঁড়া রুপে দূর থেকে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে, ফারহান। আফসোস! এই রুপে নজর দিলে ধ্বং’স অনিবার্য।

নিজেকে ধাতস্ত করে কক্ষে প্রবেশ করলো ফারহান। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“সারাদিন কিচ্ছুটি খাওনি। টেবিলে তোমার জন্য খাবার রেখে দেওয়া হয়েছে, খেয়ে নেও কুহু। আমি বাহিরে যাচ্ছি। সাবধানে থেকো।”

তার কথা কর্ণপাত করলো না মেয়েটা, আগের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো, ফারহান মল্লিক’কের। কার এতো বড় সাহস, জমিদার পুত্র ফারহান মল্লিক’কের কথা অমান্য করার! পাঁচ গ্রামের কারো সে সাহস আছে? নেই তো! সেখানে পুঁচকে একটা মেয়ে, তাকে অমান্য করছে। ইহা তার জন্য, বড়ই লজ্জা জনক! ফারহান এগিয়ে আসলো, শক্ত হাতে কুহেলিকা’র বাহু ধরে বসিয়ে দিলো পাশে রাখা কারুকার্য শোভিত এক আরাম কেদারায়। টেবিল থেকে খাবার এনে মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শক্ত কণ্ঠে হুকুম করলো,

” কান্না থামাও!খাওয়া শুরু করো, কুইক।”

ফুঁসে উঠলো কুহেলিকা বালিকা। বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় সে। ততক্ষণাৎ উচ্চ স্বরে বললো,

“আমি খাবো না এই খাবার। কেনো খাবার নিয়ে এসেছেন আপনি? আমি আপনার কাছে খেতে চেয়েছি? বলছি না, আমার সাথে কোনো অধিকার দেখাবেন না। আপনাকে আমার সহ্য হয় না! একদম না! আমার থেকে দূরে থাকুন আপনি।”

কথা শেষ হতেই হাত থেকে প্লেট ভর্তি ভাত তরকারি ছুঁ’ড়ে ফেলে দিলো, কুহেলিকা। মুহূর্তেই, ভাত গুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো, কাঁচের প্লেটটা ঝনঝন শব্দে ভে’ঙে গুঁ’ড়ি’য়ে গেলো। তরকারি’র ঝোল কিছুটা ছিটিয়ে পড়লো ফারহানে’র গায়ে। এতক্ষণ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও এবার আর স্থির থাকতে পারলো না ফারহান। মুহূর্তেই কুহুর নরম গালে পড়লো একখানা থা’প্প’ড়। এতটুকুতেই থেমে নেই পুরুষটি। শক্ত হাতে গলা চেপে ধরলো মেয়েটার।

চলনে….

#তেমাকে_চাই_নিরবধি

লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

[প্রিয় পাঠক! নব্বই দশকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছি, আপনাদের। সবাই পেজে রেসপন্স। আপনারা সাপোর্ট না করলে, এগোতে পারবে না। কেমন লাগছে নতুন গল্প? অবশ্য মন্তব্য করবেন…. ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here