#তোমাকে_চাই_নিরবধি (১০)
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓
“আরেহ্, মাষ্টার মশাই যে! কি খবর, ভালো?”
বড় ভাইয়ের কথায় ততক্ষণাৎ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না, ফারহান মল্লিক। জমিদার মহলের একমাত্র এই মানুষটাই তাকে সর্বক্ষণিক “মাষ্টার মশাই” বলে সম্মোধন করে। একালে “মাষ্টার মশাই” একটা সম্মানিত ডাকনাম। কিন্তু বড় ভাইয়ের এই ডাকনামে তা কখনো প্রকাশ পায় না। বরং মনে হয় তাকে ব্যঙ্গ করেই এ-নামে ডাকে ভাই। তার ভাবটা এমন, যেন “ফারহান মল্লিক” মাষ্টার মশাই হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নয়। সবটা বুঝতে পেরেও এসব কখনো আমলে নেয়নি, ফারহান মল্লিক। আজও নিলো না।
ভাইয়ের ব্যাঙ্গার্থক কথাবার্তায় ক্রোধিত হওয়ার কথা তার। কিন্তু তা কেন জানি হয় না সে। বরং ভাইয়ের এ জাতীয় কথাবার্তায় “মাষ্টার মশাই” খুব বড়ো রকমের বিনোদন হিসেবে উপলব্ধি করে।
ভাইয়ের কথায় অল্পস্বল্প হাসলো, ফারহান মল্লিক। তবে সে হাসি কারো দৃষ্টিগোচর হয়নি। সে ভাইয়ের কাছাকাছি এগিয়ে আসলো ধীরপায়ে। এরিমধ্যে একবার ভোজন কক্ষের চারপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি বুলালো। বড় আম্মা, আম্মাজান, চাচিজান টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে খাবারের প্লেট-বাটি নাড়াচাড়া করছে। বাড়ির কর্তারা খেয়েছে ইতোমধ্যে। এখন মহলের পুত্র-কন্যা’রা বসবে। ফারহান’কে এখানে পরখ করে ফাঁকা ঢোক গিললো, সালমা বেগম। তার চোখ-মুখ অজানা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়সড় কোনো দ্বন্ধ বেঁধে গেলো। ফারহান আজ ভোজন কক্ষে না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। সে হাতের কাজ রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুই পুত্রের মুখপানে।
তান্মধ্যে, ফারহান মল্লিক গম্ভীরতা বজায় রেখে বসলো ভাইয়ের বিপরীতমুখী কাঠের কারুকার্য শোভিত কেদারায়। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ভাইয়ের কথাখানি সম্পুর্ন উপেক্ষা করে বললো,
“বিবাহ করিয়াছি।”
এমন করে বললো,যেন কেউ তার কাছে এই কথাখানাই আগ্রহ নিয়ে শুনতে চেয়েছে। মানে বিবাহ করে যেন সে বড়সড় কোনো কার্য সম্পূর্ণ করে ফেলছে। গম্ভীর পুরুষটি’র ভিতরটায় আজ সুখী সুখী ভাব।
এই মুহূর্তে ছোট পুত্রের এহেন কথা শুনে চমকে উঠলো, বড়আম্মা। বেচারি এমনিতেই পুত্রে’র জন্য চিন্তিত। সদ্য প্রেমের বিরহে পুত্র তার ভিতর থেকে দারুণ ব্যাথিতো। কেউ না বুঝলেও মায়ের মন ঠিকই বুঝে নিয়েছে।
নিদারুণ সেই ব্যাথায়, ফারহান মল্লিক খোঁচা মে রে আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে চাইছে যেন। বড় গিন্নি, সালমা বেগম ফারহান’কে কিছু বলতে উদ্যাত হলো। এরিমধ্যে মাহাদ মল্লিক ভাইয়ের কথায় থমথম মুখে বললো,
“শুনিয়াছি সে শুভ সংবাদ।”
পরমুহূর্তেই সালমা বেগম দুই পুত্রের কথার মাঝখানে ফোড়ন কাটলো। শুকনো মুখে খানিকটা হাসি টেনে শুধালো,
“পুত্র’রা আমার! আগে খাবার শেষ করো। তারপর না হয় দু’ভাই একসাথে বসে গল্প-সল্প করলে।”
ফারহান মল্লিক বিপরীতে আর একটি কথাও বাড়ালো না। সে বসতেই তার খাবার এগিয়ে দিয়েছে, আম্মাজান। আয়েশি ভঙ্গিতে সে চুপচাপ খাচ্ছে। মাহাদ মল্লিকও নিজের খাওয়াতে মনোযোগী হলো। জমিদারের বড় গিন্নি স্বস্তি পেলো। সে ফোঁস করে শ্বাস টানলো। মিনিট পাঁচেক সময়ের মধ্যে ভোজন কক্ষে প্রবেশ করলো, কিরণমালা, বিন্দু, তরিকুল সবুজ। ওরা এসে নিজ নিজ চেয়ারে বসলো। একে একে ওদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে, বড় আম্মা ও রেণু বেগম। সবাই চুপচাপ। কক্ষে বাসন-কোসনের টুংটাং আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। তীব্র এই নিরবতা ভেঙে আয়শা খাতুন নিজ কন্যাকে অনুসরণ করে বলে উঠলো,
“কুহেলিকা আম্মাজান’কে একবার ডেকে আয় তো, কিরণ। মেয়েটা খায়নি এখন অবধি, তোদের সাথে এসে বসুক।”
যা শুনে ততক্ষণাৎ ফারহান মল্লিক গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো, “কুহেলিকা’র মাথা ধরেছে। তাকে এখন ডাকিতে হবে না, আম্মাজান। ওর খাবারটা বেড়ে রাখুন। যাওয়ার সময় আমি কক্ষে নিয়ে যাবো।”
আয়শা খাতুন আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। পুত্রের সিদ্ধান্ত’কে সম্মতি জানিয়ে শুধালো, “আচ্ছা রাখবো। মেয়েটা’র খুব মাথা ব্যাথা না-কি? কবিরাজ’কে সংবাদ দিয়েছো? ঔষুধ দিয়েছি কোনো?”
“আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না, আম্মাজান। চিন্তা’র কোনো কারণ নেই। তার ঔষধ তো বাড়িতেই আছে। সে এখন খানিকটা সুস্থবোধ করছে। আরামসে কক্ষে বিশ্রাম করছে। আশাকরি এবার মনের রোগ, দেহের রোগ সবকিছুই দ্রুত সেড়ে যাবে।”
ভাইয়ের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে, মাহাদের খাবারের হাত থেমে গেলো। চট করে নিচু মাথা তুলে তাকালো। আলগোছে এক পলক পর্যবেক্ষণ করলো ফারহান মল্লিক’কে। তাচ্ছিল্যের সহিত একথা আম্মাজানের বোধগম্য না হলেও, মাহাদ মল্লিক ঠিকই ধরেছে। তাছাড়া ফারহান মল্লিক চাইছে না, মাহাদের মুখোমুখি হোক কুহেলিকা। ভাইয়ের সে সূক্ষ্ম কৌশলটি ও পড়ে ফেলেছে, মাহাদ। সে চোখ ঘুরিয়ে পুনরায় নিজের প্লেটে’র দিকে তাকালো। ধ্যান দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। এমন সময় ফারহান খাসির মাংসে’র বাটিটা ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“খাবার সামনে নিয়ে এতোশত কি ভাবছেন, দাদাভাই? নিন এক টুকরো খাসির মাংস নিন। আজকে’র মাংসটা বেশ সুস্বাদু হয়েছে। একটু খেয়ে দেখুন।”
বলতে বলতে এক টুকরো মাংস নিজ মুখে তুললো, ফারহান মল্লিক। ভাইয়ের প্লেটেও নিজ হাত দিয়ে এক চামচ মাংস তুলে দিলো। মাহাদের ধ্যান ভাঙলো। ভাইয়ের হঠাৎ এই আদিখ্যেতা সুবিধা’র নয়। বিরক্তও হলো, মাহাদ। তবে কিচ্ছুটি বললো না। নিরব থাকলো কেবল।
এদের কথাবার্তার এক ফাঁকে রেণু বেগম বিন্দুকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোর ফুফুজান, বকুল কোথায়’রে বিন্দু? উনারা এখনো আসছেন না কেনো?”
বিন্দু মৃদু আওয়াজে বললো, “উনারা উনাদের কক্ষেই রয়েছে, আম্মাজান। বকুল বুবু’র কি যে হলো.. বুবু সারাক্ষণ মন খারাপ করে একা-একা বসে থাকে। আমাদের সাথে কথা বলে না, কিছু জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেয় না। একটু পরপর শুধু কাঁদে।”
বিন্দুর কথায় গিন্নি’রা খুব একটা প্রতিক্রিয়া করলো না। তারা যেন এই কান্না’র কারণের সাথে পরিচিত।
.
.
গতকাল এসেই বকুল বারকয়েক কুহেলিকা’র খোঁজ করেছে। মহলের সবার ভীরে কুহেলিকা’কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
কুহেলিকা ও কিরণমালা’র থেকে বকুল তিন বছরের বড়। এবার মেট্রিক পরিক্ষা দিবে মেয়েটা। বড় শান্ত স্বভাবের মেয়ে, বকুল। বোনদের ওদের বড় স্নেহ করে সে।
এর আগে মামা বাড়িতে আসলে, মেয়েটা সবার আগে ছুটে আসতো। বুবু, বুবু বলে সারাক্ষণ পিছু নিতো। এবার তাকে না দেখেতে পেয়ে, বকুল ভীষণ ভাবে স্মরণ করছে মেয়েটাকে। এক পর্যায় কিরণমালা’কে জিজ্ঞেস করলো,
“কুহেলিকা’কে কোথায়’রে কিরণ? ওকে দেখছি না যে মহলে।”
কিরণমালা খানিকটা মন খারাপ করে বললো,
“কুহেলিকা’র তো বিয়ে হয়ে গেছে, বুবু। ও ওর স্বামীর কক্ষেই রয়েছে। কক্ষ থেকে ওর বেরানো নিষেধ।”
“ও-মা! কি বলছিস কিরণ? সত্যি বলছিস তুই?”
“আমি সত্যি বলছি, বুবু।”
“কবে বিয়ে হলো ওর? আমরা তো কিছুই জানি না।”
“পরশু বিয়ে হয়েছে ওর। তুমি জানো বুবু? কুহেলিকা এখন আমার ছোট ভাবীজান। তাকে এখন ভাবীজান বলে সম্মান করতে হয়। হিহিহি!”
“মানে?”
“আরেহ্! আমাদের ফারহান ভাই, ছোট দাদা ভাইয়ের সাথেই তো কুহেলিকা’র বিয়ে হয়েছে।! এজন্যই তো সে এখন আমার ভাবীজান।”
ফারহান ভাই! ফারহান ভাই নামটা শুনেই কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো, বকুলের। তার এতক্ষণের সমস্ত কৌতূহল ধুপ করে নিভে গেলো। তার স্বপ্নের পুরুষ, বক্ষের মাঝে লুকায়িত রাজপুত্র বিবাহ করিয়াছে অন্য নারীকে। যে পুরুষটি’কে নিয়ে হাজারটা দিবাস্বপ্ন বুনেছে বকুল, সে পুরুষ আজ অন্য কারো। বকুলের চোখে জলে টইটম্বুর হয়ে আসলো। বুক ধড়ফড় করছে তার। নাহ! নাহ! এ হতে পারে না। সবকিছু মিথ্যে! ততক্ষণাৎ বকুল শক্ত কণ্ঠে কিরণমালা’কে ধমকে উঠলো। বললো,
“তুই আমার সাথে ঠাট্টা করছিস কিরণ, আমার সাথে ঠাট্টা করছিস? বল সব মিথ্যে, সব মিথ্যে।”
বুবু’র আচরণে কিরণমালা এবার বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর কণ্ঠই শুধালো,
“আমি কেনো তোমার সাথে শুধু শুধু ঠাট্টা করবো, বুবু? আমি মোটেও ঠাট্টা করছি না। আমি সত্যি বলছি সব। তোমার বিশ্বাস না হলে, বিন্দুকে জিজ্ঞেস করো। নয়তো ফারহান ভাইয়ের কক্ষে গিয়ে নিজ চোখে দেখে আসো, কুহেলিকা তার কক্ষেই রয়েছে। ”
যা শুনে হাঁটু মুড়ে ধাপ করে ছাদের মেজেতে বসে পড়লো, মেয়েটা। শেষ বিকেলে তারা মহলের ছাদে উঠেছিলো। এখন মন চাচ্ছে, এক দৌড়ে গিয়ে ছাদ থেকে নিচে লাফিয়ে ম’রে যেতে। কিন্তু, সে শক্তি তার নেই। শরীর জমে গিয়েছে। মনে হচ্ছে বিশাল এই আকাশটা তার মাথার উপর ভেঙে পড়ছে। তার নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে। উঠতি বয়সের আবেগ ভালোবাসা সবকিছু জড়িয়ে আছে ওই মানুষটাকে ঘিরে। বড় শখের, আদরের পুরুষ সে। তার পাশে অন্য নারী… আগাগোড়া পুরোটাই অন্য কারো। না আর ভাবতে পারলো না, বকুল। হাঁটুতে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আকস্মিক বুবুর কান্নায় বিচলিত হয়ে গেলো, কিরণমালা। এই কান্নার কারণ সে জানে না। ষোড়শী বোকা মেয়েটা এগিয়ে এসে বুবু’র কাঁধে হাত রেখে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধালো,
“বুবু! বুবু! ও বুবু? তোমার কি হয়েছে গো? এভাবে কাঁদছো কেনো তুমি?”
বকুল নড়লো না। কান্নার বেগ বাড়লো তার। এই মুহূর্তে দুনিয়ায় কোনো শব্দ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, আজই তার জীবনের শেষ দিন! বক্ষে তীব্র র’ক্ত’ক্ষ’র’ণ হচ্ছে। অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় ছ’ট’ফ’ট করছে মেয়েটা! মনে হচ্ছে, বারবার কেউ ভোঁ’তা ছু ড়ি দিয়ে তার হৃদপিণ্ডে হা’ম’লা করছে।
কবুল’কে বেসামাল হতে দেখে তার সাথে কেঁদে ফেললো, কিরণমালা। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে ডাকলো সবাইকে,
“ফুফুজান ও ফুফুজান! ওরে কে কোথায় আছো গো! তোমরা দেখে যাও, বকুল বুবু’র খুব কষ্ট হচ্ছে গো।”
মেয়েটার চেচামেচি শুনে ধড়ফড়িয়ে সেখানে উপস্থিত হলো, বাড়ির গিন্নি’রা ও জাহানারা। বিপর্যস্ত মেয়ে’কে দেখে বিচলিত হলো মা। নিজ কন্যাকে বক্ষে জড়িয়ে ধরে জানতে চাইলো,
“আম্মা? ও আম্মা? কি হয়েছে তোমার, কি হয়েছে তোমার? কষ্ট হচ্ছে, কোথায় কষ্ট হচ্ছে আম্মা?”
কোনো জবাব আসলো না। ততক্ষণাৎ মেয়ে’কে হাতেহাতে ধরে কক্ষে নিয়ে আসলো, উনি। তার পিছনে পিছনে সকলে।মেয়ের এই কান্না সম্পর্কে তিনি ততক্ষণাৎ অবগত না হলেও, পরে যখন শুনলো কুহেলিকা’র বিয়ে হয়েছে। আর বিয়েটা হয়েছে ফারহান মল্লিকে’র সাথেই। চটকরে কারণ স্পষ্ট হলো তার। মেয়ের জামাই হিসেবে তিনিও জমিদারের ছোট পুত্র’কে দারুণ পছন্দ করতেন। এবার মনে মনে ভেবে রেখেছেন, এক ফাঁকে আব্বাজানের সাথে এদের বিয়ের কথাবার্তা তুলবেন। তা আর হলো না। উনি মনে মনে ভীষণ ব্যাথিত হলেন। আব্বাজান এতো বড় একটা কাজ করলো অথচ একটিবার তাদের জানালো। একই সাথে রাজপুত্র, রাজ্য হাতছাড়া হলো। চাপা রাগে ফুঁসছে, জাহানারা। তবে কাউকে বুঝতে দিলো না সেসব। সেই যে শেষ বিকেলে মেয়ে’কে নিয়ে কক্ষে ঢুকেছেন আর একটিবার মা-মেয়ে বের হয়নি কোথাও। বার কয়েক মহলের গিন্নীরা তাদের ডেকেছেন। কিন্তু প্রতিবারই একটা অযুহাত দেখিয়েছেন তিনি। মেয়ে’র মাথা ধরেছে, মেয়েলী সমস্যা, পেটে ব্যথা, শরীর খারাপ এ জাতীয় কথাবার্তা।
চলবে……
[আইডি রেস্ট্রিকশনের জন্য কোনো পোস্ট করতে পারিনি। এই পর্বটা দুইবার লিখতে হয়েছে। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। আগামীকালও গল্প পাবেন।]
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/