#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৪
শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। চাবি পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে কলিং বেল চাপলো তুলিদের বাসার। বেশ অনেকসময় বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো শুভ্র। ঘরে কেউ নেই। শুধু তুলি আর জোবায়ের। জোবায়ের টিভিতে কার্টুন দেখছে। তুলি কলেজ থেকে এসে ঘুমাচ্ছে। দরজায় এতবার কলিং বেল বাজতে শুনে একসময় তুলি কাঁচা ঘুম থেকে উঠে খোলা চুল খোপা বাঁধতে বাঁধতে এসে দরজা খুলে দিলো। ওপাশে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুলি অবাক হলো। শুভ্রর তো এখন বাসায় যাওয়ার কথা? এখানে কেন? তুলির খোপা করা হাত নেমে আসে নিচে। সঙ্গেসঙ্গে গায়ের ওড়না মাথায় তুলে নিয়ে অপ্রস্তুত কণ্ঠে সালাম দিয়ে বলল,
‘স্যার, ভেতরে আসুন।’
শুভ্র ভেতরে একবার উকি দিয়ে দেখলো। ঘরে তেমন সাড়া-শব্দ নেই। শুধু টিভি দেখছে বসার ঘর থেকে টিভির আওয়াজ আসছে, জোবায়ের সোফায় বসা। শুভ্র ঘরে ঢুকলো না। বাইরে থেকেই বলল,
‘ঘরে কেউ নেই?’
তুলি জবাব দিলো,
‘আম্মু ফার্মেসিতে গেছে। জবুর জন্যে মেডিসিন আনতে। আর কাজের মেয়ে নিচে গেছে কী একটা কাজে।’
শুভ্র ঘরে কেউ নেই শুনে ভেতরে ঢুকতে চাইলো না। তবে ঘরের বাইরে থেকে শুভ্র এভাবে ফেরত যাবে শুনে তুলি জোরপূর্বক শুভ্রকে সোফায় এনে বসালো। শুভ্র জোবায়েরের পাশে বসলো। জোবায়ের শুভ্রকে দেখে সোজা রিমোট রেখে শুভ্রর কাছে ঘেঁষে বসল। শুভ্র এমন কাণ্ডে হেসে উঠলো। জোবায়েরকেকোলে তুলে নিজের হাঁটুর উপর বসালো।শুভ্র কোলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন আছে আমাদের জবু ব্যাটা?ভালো না মন্দ?’
জোবায়ের শুভ্রর চুল নাড়তে নাড়তে হেসে হেসে জবাব দিলো,
‘বিন্দাস আছি দুলাভাই।’
প্রথম কারো মুখে ‘দুলাভাই’ সম্বোধন শুনে শুভ্র কেশে উঠলো। আড়চোখে তুলিরো দিকে তাকালে, পাশে ঘুমঘুম চোখে শুভ্রদের দিকে তাকিয়ে থাকা তুলিও শুভ্রর দিকে চাইল। দুজনের চোখাচোখি হতেই তুলি অপ্রস্তুত হয়ে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলো। শুভ্র এসেছে, মা ফেরার আগে তাকে কিছু একটা দেওয়া উচিত। তুলি প্রথমে শরবত বানাতে বসলো।
শুভ্র নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
‘ওরে বাবা। বিন্দাস আছো? এই ওয়ার্ড শিখলে কোথা থেকে?’
জোবায়ের মাথা নেড়ে নেড়ে উত্তর দিলো,
‘দেবের ছবি থেকে শিখেছি দুলাভাই। তুমি দেবের ছবি দেখেছ? পাগলু, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, এসব দেখেছ?’
শুভ্র হালকা হাসল। আজকালের বাচ্চা এটুকু বয়সে মুভিজ দেখছে। প্রেমে গদগদ মুভি তাদের ভালো লাগছে। এদের ভবিষ্যতে কী যে হবে। শুভ্র উত্তর দিলো,
‘হ্যাঁ কয়েকটা আগে দেখেছি, স্কুলে থাকতে।’
‘তুমি স্কুলে ছিলে? এতবড় মানুষ স্কুলে পড়ে?’
শুভ্র জোবায়েরের বাচ্চামো কথায় হেসে ফেললো,
‘স্কুলে আমি ছোটবেলায় পড়েছি। এখন তো আমি বড় হয়ে গেছি। এখন আমি আর স্কুল পড়ি না।’
জোবায়েরের মাথায় আপাতত এসব ঢুকছে না। দূর থেকে তুলির চোখ রাঙানো দেখে সে আপাতত নিশ্চুপ হয়ে গেছে। জোবায়ের এখুনি এত এত দেবের ছবি দেখেছে শুনলে তুলি জোবায়েরকে আস্ত আস্ত চিবিয়ে খাবে। টিভির ডিশের লাইন কেটে দিবে আব্বুকে বলে। তাই জোবায়ের আর কথা বাড়ালো না। তুলি শরবত এনে শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিলো। শুভ্র শরবত হাতে নিলো। খেতে খেতে প্রশ্ন করলো,
‘আন্টি কখন আসবেন?’
তুলি শুভ্রর মুখোমুখি সোফায় বসা। তুলি উত্তর দিলো,
‘ফার্মেসি কাছেই। এখনি চলে আসার কথা।’
বলতে বলতে কলিং বেল বাজল। তুলি উঠে দরজা খুলে দিলো। সোফায় বসা শুভ্রকে দেখে ইয়াসমিন অবাক হয়েছেন। তুলিকে ফিসফিস করে বললেন,
‘শুভ্র কখন এলো?’
তুলি জবাব দিলো,
‘কিছুক্ষণ আগে।’
‘তুই জানতি?’
তুলি মায়ের এমন কথায় বিরক্ত হলো। তাদের সম্পর্ক কী এমন জানিয়ে বাড়িতে আসার মতো? তারা কী একটা প্রেমের সম্পর্কে আছে? মা-ও না। মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কথা বলে। তুলি বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো,
‘তোমার কী মনে হয়? স্যার আমাকে জানিয়ে আসতে পারেন?’
ইয়াসমিনের হুশ ফিরলো এবার। শুভ্রর দিকে চেয়ে বললেন,
‘ওহ, তুই কিভাবে জানবি। শুভ্র তো তোর সঙ্গে তেমন কথাই বলে না। আচ্ছা, শুভ্রর সঙ্গে বসি গিয়ে। চা বসিয়েছিস?’
‘হ্যাঁ, চা পাতা দিব এখন।’
‘আচ্ছা বানিয়ে নিয়ে আয়। তিনকাপ আনিস। তুই, আমি আর শুভ্র। মজা করে আনিস। শুভ্রর সামনে তোর চা খুব ভালো হয়, এমন প্রমাণ রাখতে হবে। দ্রুত যা।’
ইয়াসমিন কথাটা বলে বোরকা না খুলেই শুভ্রর পাশে গিয়ে বসেন। শুভ্র ইয়াসমিনকে দেখে সোফা থেকে উঠে সালাম করে। ইয়াসমিন শুভ্রর এমন নম্র ব্যবহারেই খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠেন। হাত বাড়িয়ে শুভ্রকে বসতে বললেন। শুভ্র ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো, ইয়াসমিন উত্তর দিলেন। একপর্যায়ে চা এলো। তুলি চা সার্ভ করল সবাইকে। শুভ্র চা পছন্দ করে খুব। দিনে তিনবেলা চা ম্যান্ডেটরি শুভ্রর জন্যে। এর বেশি হলেও মন্দ হয়না। চায়ের বেলায় শুভ্র খুব চুজি। চায়ে ডুবানো চিনি বা দুধ, লিকার কোনোটাই পছন্দ না। চায়ে তিন উপাদানের পরিমাণ এর একটা রাশিও থাকতে হয়। শুভ্র তখনই চা খেতে পারে। তবে আজকের চা-টাও শুভ্রর বেশ লাগলো। শুভ্রর গা চাঙ্গা হয়েছে। মেডিকেল থেকে আসার পর এই একটা চায়ের খুব দরকার ছিলো। শুভ্রর চা পছব্দ হয়েছে, সেটা তুলি বুঝতে পারলো। তুলি চা খেতে খেতে শুভ্রর দিকে বারবার তাকাচ্ছে। শুভ্র একবার তাকালো, সঙ্গেসঙ্গে তুলি চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইয়াসমিন শুভ্রকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছেন। শুভ্র বেশ সুন্দর উত্তর দিচ্ছে। শুভ্রকে একসময় ইয়াসমিন জিজ্ঞেস করলেন,
‘শুভ্র, তুলি পড়া পারে তো ঠিকঠাক মেডিকেলে? না পারলে কিম্তু ধরে পেটাবে ওকে, ঠিকাছে? আমি তোমায় পারমিশন দিচ্ছি।’
ইয়াসমিনের কথায় শুভ্র মাথা নিচু করে হেসে উঠলো। তুলি মায়ের দিকে বড্ড বিরক্তি নিয়ে তাকাল। মা কাকে কী বলছে? শুভ্র এমনিতেই তুলিকে যেমনে পারে বকে। সেখানে তাকে তুলিকে পে টানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অসহ্য! তুলি মায়ের দিকে রাগ রাগ চোখে তাকাল। ইয়াসমিন মেয়ের তাকানো দেখে শব্দ করে হেসে ফেললেন। শুভ্র চা শেষ করে টেবিলের উপর রাখল। এবার কথা তুললো,
‘আন্টি, আম্মু একটু শপিং-এ যাবেন আজ। তুলিকে নিয়ে যেতে চাইছেন। যদি আপনার অনুমতি থাকে, তাহলে আমি তুলিকে নিয়ে যাবো।’
তুলি অবাক হয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্রো স্যার এজন্যে এসেছেন তাহলে? ইয়াসমিন বললেন,
‘আফরোজা যেতে বলেছে, আমি আর এতে কী বলব? নিয়ে যাও। রাত হওয়ার আগেই দিয়ে যেও আবার। আফরোজা আর তুমি নাহয় আজ রাতে আমাদের বাসায় খেয়ে নাও, শুভ্র।’
শুভ্র হালকা স্বরে বলল,
‘অন্যদিন এসে খেয়ে যাব আন্টি। আজ না। রাতের দিকে একটু কাজ আছে। আমি তুলিকে বাসায় পৌঁছে দিবো, চিন্তা করবেন না।’
তুলিকে ইয়াসমিন রেডি হতে বললেন। তুলি রুমে গেলো। ইয়াসমিন খানিক পর শুভ্রকে জোবায়েরের পাশে বসিয়ে রুমে এলেন। তুলি তখন কাপড় বের করছে। ইয়াসমিন এসে গদগদ হয়ে বললেন,
‘এই তুলি, শাড়ি পড়িস না কেন? শুভ্রর ভালো লাগবে।’
তুলি একটা ভালো দেখে সালোয়ার কামিজ বের করতে করতে বললো,
‘তুমি পাগল হয়ে গেছো আম্মু? শুভ্র স্যারের সামনে আমি শাড়ি পড়ে হাঁটব? অসম্ভব।’
ইয়াসমিন শুনলেন না। জোরপূর্বক নিজের একটা শাড়ি এনে তুলিকে পরিয়ে দিলেন।তুলি প্রতিমার মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে। এই অবস্থায় শুভ্রর সামনে দাড়াবে কিভাবে? তুলি লজ্জায় হাপিত্যেশ করে উঠল। হইহই করে বললো,
‘আম্মু আমার অদ্ভুদ লাগছে। শাড়ি পরব না আমি। খুলে ফেলি প্লিজ।’
ইয়াসমিন এ কথা শুনে একটা ভয়ানক ধমক দিলেন তুলিকে। তুলি চুপ হয়ে গেল একদম। ইয়াসমিন তুলির পার্সে কিছু টাকা রেখে পার্স তুলিকে দিলেন। তারপর বসার ঘরে তুলিকে নিয়ে চললেন। শুভ্র বসে আছে সেখানে। শাড়ি পড়ে শুভ্রর সামনে দাঁড়ালে তুলি লজ্জায় মরে যাবে। বুকত কাঁপছে তুলির। কাপুনিতে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে নিজের মধ্যে।
#চলবে
আমার হাত গল্প লেখায় কাঁচা। একটা পর্ব বেশ সময় লাগিয়ে লিখি আমি। সেজন্যে অনেকটাসময় লেগে যায় পর্ব আপলোড করতে। অপেক্ষা যারা অধীর আগ্রহে করছেন, তাদের কে সরি। আমার দোষ না এটা, কিম্তু আমি চেষ্টা করছি দ্রুততমে একটা পর্ব লিখে শেষ করার। আমাকে সময় দিন। ভালো থাকবেন❤️