#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_১০
#নুজাইফা_নূন
-“আদির মধ্যে কি এমন আছে , যা আমার মধ্যে নেই?আমরা দুজনেই টুইন।দেখতে ও একই রকম। বাবা মা ছাড়া আমার আত্মীয় স্বজনেরা আমাদের দুজনকে গুলিয়ে ফেলে। এমনকি প্রথম বার আমার মুখ দেখে আপনি ও আমাকে আদি মনে করেছিলেন।তাহলে কেন আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে পারছেন না উৎস?”
-” আদ্রির এমন প্রশ্নে অতি দ্রুত ব্রেক কষে উৎস।উৎস আদ্রির অশ্রুভেজা নয়নের দিকে তাকাতেই আচমকা বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।আদ্রির চোখের পানি সহ্য হলো না উৎসের।উৎস পকেট থেকে রুমাল বের করে দিয়ে আদ্রির হাতে দিয়ে বললো,
-” জেনে শুনে বিষ পান করেছো তুমি।এখন যতোই গলা জ্বলুক কান্না কাটি করে কোনো লাভ হবে না। তুমি খুব ভালো করে জানতে এই বিয়েটা হলে আমাদের তিন তিন টা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। তবুও তুমি বিয়েটা করেছো।এখন চোখের পানি ফেলে কোনো লাভ হবে না।”
-” জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না উৎস।আদি তো একটা বারের জন্যও আপনার কথা ভাবে নি।তাহলে আপনি কেন আদির কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছেন? আর আমাকে ও কষ্ট দিচ্ছেন?”
-“সন্ধ্যে কন্যা কে যদি আমি ভালোবাসতাম।তাহলে হয়তো তাকে আস্তে আস্তে ভুলে গিয়ে নতুন করে সবটা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম আমি তাকে ভালোবাসি নি।আমি তার মায়ায় পড়েছি।আর মায়া বড্ড খারাপ জিনিস।না দেয় ভুলে থাকতে।আর না দেয় ভালো থাকতে।আমি আদির পেছনে লোক লাগিয়েছি।সে যদি পাতালেও থাকে। তবুও আমি পাতাল খুঁড়ে হলেও তাকে বের করে নিয়ে আসবো।আমার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে তাকে। দাঁড়াতেই হবে।তোমার বাড়ির যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য এটাই।আদি কে খুঁজে বের করা।”
-” প্রতিত্তরে আদ্রি কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। ঘন্টা খানেক পর তারা নিজেদের গন্তব্যে এসে পৌঁছালো।আদ্রি গাড়ির মধ্যে থেকেই দেখতে পেলো তার বাবা মা , আত্মীয় স্বজন সহ আরো অনেকেই তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।উৎস গাড়ি থামাতেই আদ্রি দরজা খুলে দৌড়ে গিয়ে সজল খন্দকার কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আদ্রি কে কান্না করতে দেখে তিনি আদ্রি কে বুকের সাথে চেপে ধরলেন।তার চোখ থেকেও দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।তিনি সন্তর্পণে চোখের পানি মুছে আদ্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-” কেমন আছিস মা?”
-” আদ্রি কিছু বলার আগেই আদ্রির নানি এগিয়ে আদ্রি কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললো,
-” আমার শরীর ভালা না থাকায় আদুর বিয়েতে আইতে পারি নাই।তয় শুনছিলাম আদুর নাকি মেলা বড়লোক বাড়িতে বিয়া হইছে।দেখছিস না আদু কতো দামি শাড়ি, গয়না পিন্দে আছে।একদম রানীর নাহাল লাগছে আমার আদু কে।এতো বড়লোক বাড়িতে বিয়া হবার পরেও কেউ খারাপ থায়ে নাহি?”
-“আদ্রি তার নানীর কথা শুনে চোখের পানি মুছে বললো, তুমি ঠিকই বলেছো নানী।আমি অনেক ভালো আছি। ঠিক ততোটাই ভালো আছি।যতোটা ভালো থাকার কথা আমার ছিলো না।”
-” দোয়া করি সারাজীবন সুখে শান্তিতে সংসার কর। সোয়ামী সোহাগি হ। তার কথায় আদ্রি মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,আমার কপালে স্বামীর আদর ভালোবাসা নেই গো নানী।”
-” আদ্রি কে নিয়ে সবার এতো আদিখ্যেতা দেখে রাগে গজগজ করতে লাগলো উৎস।উৎস দরজা খুলে বের হতেই সবাই উৎস কে ঘিরে ধরলো।উৎস না চাইতেও দাঁতে দাঁত চেপে সবার সাথে মত বিনিময় করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো।আদ্রির বিয়েতে তেমন আত্মীয় স্বজন না আসলেও আদ্রি আসবে শুনে আদ্রির কাজিন , নানী , ফুফু সহ আরো অনেকেই এসেছে। তাদের সর্বমোট তিন টা রুম।আদ্রির রুম বাদে বাকি দুইটা রুমে মেহমান গিজগিজ করছে।আদ্রি অন্য রুম খালি না পেয়ে উৎস কে নিজের রুমে নিয়ে আসে।উৎস আদ্রির রুমে প্রবেশ করতেই তার মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে।আদ্রির রুম টা একদম পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা।রুমে তেমন কোন আসবাবপত্র নেই।একটা খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি, একটা পড়ার টেবিল। টেবিলের উপর পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রাইটারের গল্পের বই ও রয়েছে।উৎস বই পত্র দেখেই বুঝতে পারলো আদ্রি পড়ুয়া মেয়ে।উৎস কে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে আদ্রি বললো,
-” জানি আমাদের এখানে থাকতে আপনার কষ্ট হবে। কিন্তু একটু মানিয়ে নিবেন ।আর একটা কথা।আপনি যে আমাকে পছন্দ করেন না।এটা আপনি আমি জানি।অন্য কেউ তো জানে না।আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ।আপনি এই ব্যাপার অন্য কাউকে বুঝতে দিবেন না। অন্তত যে কটা দিন আমরা এখানে আছি।একটু ভালো ব্যবহার , একটু ভালো করে কথা বলবেন আমার সাথে। তাহলেই হবে।”
-” আদ্রির কথায় উৎস ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে লাগেজ থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। উৎস ফ্রেশ হতে গিয়ে একেবারে শাওয়ার নিয়ে নেয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনি যখন উৎস চেঞ্জ করতে যায়।উৎস চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখে সে তাড়াহুড়ো করে শার্ট প্যান্ট এর বদলে আদ্রির জামা , সেলোয়ার নিয়ে এসেছে।উৎস কি করবে ভেবে না পেয়ে নিজের চুল টেনে ধরে কিছুক্ষণ ওয়াশরুমে পায়চারি করতে থাকে।দেয়ালে ঘুষি দেয় নিজেকে শান্ত করার জন্য। কিন্তু উৎস নিজেকে শান্ত করতে না পেরে দরজা খুলে দেখে আদ্রি শাড়ি চেঞ্জ করে একটা সুতি থ্রিপিস পরেছে। অনেক মায়াবী লাগছে তাকে দেখতে।উৎস আদ্রি কে ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে ভাবতেই হুট করে আদ্রির সাথে তার চোখাচোখি হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ উৎস বোকার মতো ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।উৎসের এহেন কার্যে আদ্রি যেন বোকা বনে যায়।আদ্রি কিছু একটা ভেবে ওয়াশরুমের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
-” এই আপনি কি আমার চেঞ্জ করা দেখছিলেন?”
-” আশ্চর্য! আমি তোমার চেঞ্জ করা দেখতে যাবো কেন?”
-” তাহলে দরজা খুলে আপনি উঁকি দিচ্ছিলেন কেন?আপনি নিশ্চয়ই আমার চেঞ্জ করা দেখছিলেন।এখন ধরা পড়ে মিথ্যা কথা বলছেন।”
-” আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আমি তোমার চেঞ্জ করা দেখতে যাবো।বাই দ্যা ওয়ে তুমি তো জানতে আমি ওয়াশরুমে আছি। তবুও রুমের মধ্যে কেন চেঞ্জ করছিলে?”
-“আদ্রি মনে মনে বললো, সত্যিই তো।এই ব্যাপার টা আমার মাথাতেই ছিলো না। ভেবেছিলাম উনার দেরি হবে।এই সুযোগে আমি চেঞ্জ করে নিতে পারবো। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বে কে জানতো?
-” কি হলো? কথা বলছো না কেন?”
-“আমি আপনাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।আমার রুম , আমার ইচ্ছা।”
-“উৎসের ইচ্ছে হলো আদ্রির গালে কষে দুইটা থা’প্প’ড় দিতে। কিন্তু উৎস নিজেকে শান্ত করে বললো, কুল ডাউন উৎস।কুল ডাউন। বেশি মাথা গরম করলে আজ তোর ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। শ্বশুর বাড়ি এসে বউয়ের জামা, সেলোয়ার পরে ঘুরতে হবে।উৎস গলার স্বর নিচু করে বললো,
-” আদ্রি।”
-” উৎসের মুখে আদ্রি নাম শুনে আদ্রির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। অন্য রকম ভালোলাগা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো তাকে।আদ্রি তোতলাতে তোতলাতে বললো,জ্বি বলুন।”
-” আমার একটা হেল্প করতে হবে।”
-” আপনি বললে আমি আমার প্রাণ টাও আপনাকে দিয়ে দিতে পারি উৎস।”
-“আপাতত প্রাণ দিতে হবে না।প্যান্ট দাও।”
-” মানে?”
-” আমি ভুলে শার্ট প্যান্ট এর বদলে তোমার সেলোয়ার কামিজ নিয়ে এসেছি।”
-” কথাটা শোনা মাত্রই আদ্রি হাসতে হাসতে বললো,
ভালোই তো হয়েছে। আজকের মতো সেলোয়ার কামিজ পরে ঘুরুন।”
-” এটা কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে আদ্রি বলেই উৎস সাবান শ্যাম্পু নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।সাবান গিয়ে দরজার সামনে পড়ে।ঠিক তখনি আদ্রি শার্ট প্যান্ট নিয়ে দরজায় টোকা দেয়। উৎস গিয়ে দরজা খুলে দেয়।আদ্রি উৎসের হাতে কাপড় দেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সাবানের উপর পা পিছলে গিয়ে উৎসের গায়ের উপর পড়ে।উৎসের পায়ের তলায় ও শ্যাম্পু ছিলো।উৎস ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আদ্রি কে নিয়ে নিচে পড়ে যায়। না চাইতেও কিছু সময়ের জন্য দুজনের অধর এক হয়ে যায়।।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।