#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৬
#নুজাইফা_নূন
-” হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস হয় কি করে আমার অনুমতি ব্যতীত আমার রুমে প্রবেশ করার?তোমার মতো ঠকবাজ, প্রতারক মেয়ের স্থান আমার মনে বা বিছানায় কোথাও হবে না। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে।ইউ আর এ চিটার। তুমি এক্ষুনি এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাবে বলে উৎস আদ্রির হাত ধরে টানতে টানতে রুমের বাইরে বের করে দিলো।উৎস আদ্রির হাত এমন ভাবে চেপে ধরেছে যে আদ্রির হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে আদ্রির হাতে ঢুকে র’ক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু আদ্রির সেদিকে কোন খেয়াল নেই।উৎস আদ্রি কে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে যাবে তার আগেই আদ্রি ঘোমটার আড়াল থেকেই উৎসের হাত ধরে ফেললো।আদ্রির এহেন কার্যে উৎসের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। উৎস কিছু বলার আগেই আদ্রি বললো,
-” আপনি কিছু না জেনে শুনে আমাকে অপমান করতে পারেন না।আমি বিয়ের আগে থেকেই বারবার আপনাকে কথাটা বলতে চেয়েছি। কিন্তু আপনি শোনার প্রয়োজন মনে করেন নি।তখন যদি একবার আমার কথাটা শুনতেন।তাহলে আজকে দুই দুইটা জীবন নষ্ট হতো না।”
-” তোমার জীবন আর নষ্ট হলো কোথায় বলো তো?উল্টো তোমার তো কপাল খুলে গিয়েছে।ছোট বোনের হবু বর কে ছলে বলে কৌশলে বিয়ে করে নিলে। বড়োলোক শ্বশুর বাড়ি, হ্যান্ডসাম বর পেলে।আর কি চায় বলো?আমার তো মনে হয় তোমার চারিত্রিক কোনো সমস্যা আছে।হয়তো বিয়ের আগেই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলে।যার জন্য তোমার বাবা মা তোমার বিয়ে দিতে পারছিলো না।তাই তো তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই মিলে এমন ছলনার আশ্রয় নিয়েছে ।তোমাকে এমনকি তোমার পরিবার তোমার কথা আমাদের থেকে লুকিয়ে গিয়েছে।প্রথমে ছোট বোন কে দেখিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে সময় মতো তাকে সরিয়ে দিয়েছো।আর আমাকে বিয়ের আগে এই কথাটা বলার জন্য তোমার ছটফট করাটাও তোমাদের প্ল্যানের একটা পার্ট।কারণ তোমরা খুব ভালো করে জানতে আমার তখন কিছু জানার প্রতি আগ্রহ থাকবে না।আর সবটা তোমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হলো।আমিও কতো বোকা ছিলাম।তোমাদের এই নোংরা পরিকল্পনায় আমি কতো সহজে ইনভলব হয়ে গিয়েছিলাম। সবাইকে বিশ্বাস করেছিলাম। জীবনের প্রথম বার কাউকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সেটা আসলে ভালোবাসা ছিলোই না।ছিলো তোমার মতো একটা খারাপ মেয়েকে বড়লোক ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্ল্যান।”
-” আপনার ভাবনা সত্যি নয় উৎস। এরকম কিছুই হয় নি।”
-” আমি তোমার মুখ থেকে আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না বলে আদ্রির মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো উৎস।আদ্রির হাত থেকে তখন টপটপ করে র’ক্ত ঝরছে। কিন্তু দেহের ক্ষতের থেকে মনের ক্ষত তাকে বেশি পোড়াচ্ছে ।আদ্রি ঘোমটা সরিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসে পড়ে।”
__________________________________
-” জাহিদ তালুকদারের যৌথ পরিবার।মস্ত বড় ফ্লাটে দুইটা পরিবার মিলেমিশে বসবাস করে।যদিও এখন যৌথ পরিবার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা দুই ভাই জাহিদ তালুকদার আর জামিল তালুকদার এখনো সেই যৌথ পরিবারের ধারা অব্যাহত রেখেছে।জাহিদ তালুকদারের নিজের সন্তান বলতে উৎস একাই। যদিও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সালমা তালুকদারের মেয়ে উপমা । তবুও জাহিদ তালুকদার উপমা কে নিজের মেয়ের মতো করেই ভালোবাসে।তাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয়।উৎস সালামা তালুকদার কে পছন্দ না করলেও উপমা কে অনেক বেশি ভালোবেসে।বোনের সকল আবদার হাসি মুখে মেনে নেয়। তালুকদার ভিলার সবচেয়ে ছোট সদস্য সাজিন তালুকদার।জামিল তালুকদার আর ঝর্ণা তালুকদারের একমাত্র সন্তান।সাজিন সবার ছোট হওয়ার বেশ আদরের।সাজিন খুবই মিশুক। খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যায়।মাত্র কয়েক ঘন্টায় আদ্রির সাথে বেশ ভাব জমেছে তার।সাজিন বায়না করে সে আদ্রির সাথে থাকবে। ঝর্ণা তালুকদার অনেক বুঝিয়ে সাজিন কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।বিয়ের জন্য সারাদিন সবার বেশ ধকল গিয়েছে। ক্লান্ত থাকার জন্য বাড়ির সব সদস্যরা নিজেদের কাজ গুছিয়ে যার যার মতো শুয়ে পড়েছে।তখনি সাজিন গুটি গুটি পায়ে উৎসের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।সাজিন উৎসের রুমের দরজায় আদ্রি কে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে তার কাছে ছুটে আসে।আদ্রি সাজিন কে দেখা মাত্রই চোখ মুছে নিয়ে বললো,
-” তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন সাজিন?”
-” আমার ঘুম আসছে না নতুন বউ।তোমার সাথে খুব গল্প করতে ইচ্ছে করছিলো।তাই তো বাবা মা ঘুমোনোর পর আমি চুপিচুপি বিছানা ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো? উৎস ভাই তোমাকে বকেছে বুঝি?”
-” না বাবু বলে আদ্রি সাজিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তখনি সাজিন আদ্রির হাত থেকে রক্ত ঝরছে দেখে চিৎকার করে উঠে বললো,
-” তোমার হাত থেকে তো র’ক্ত বের হচ্ছে নতুন বউ।আমি এক্ষুনি ডাকছি সবাইকে।”
-” ও কিছু না বাবু। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।তোমার কাউকে ডাকতে হবে না। অনেক রাত হয়েছে। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো বাবু।”
-” তোমার তো কষ্ট হচ্ছে নতুন বউ। তুমি আমার সাথে আমার রুমে চলো।”
-” আদ্রি না যেতে চাইলেও সাজিন আদ্রি কে জোর করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।সে রাত আদ্রি সাজিনের সাথেই কাটিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দুই টা দিন পার হয়ে যায়। কিন্তু আদ্রির উৎসের সাথে একেবারে জন্যেও কথা বা দেখা হয় নি।না উৎস আদ্রির মুখ দেখেছে ।আর না আদ্রি উৎসের মুখ দেখেছে।আদ্রি এই দুই দিন আদি কে বারবার ফোনে ট্রাই করেছে। কিন্তু আদি ফোন রিসিভ করে নি। তৃতীয় দিনে আদি নিজে থেকেই আদ্রি কে ফোন করে।আদ্রি আদির সাথে কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।আর তখনি সালমা তালুকদার এসে আদ্রির কাঁধে হাত রাখে।আদ্রি চোখের পানি মুছে পেছনে ফিরে বললো,
-“কিছু বলবেন আন্টি ?”
-” আন্টি? আমার ছেলেটা এ পর্যন্ত আমাকে মা বলে ডাকলো না। তুমি ও আমাকে আন্টি বলে ডাকছো?”
-” কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে মা ডাকবো? আপনার ছেলে তো আমাকে তার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি। বিয়ের আসরে আমাকে ফেলে চলে এসেছে।একটা বার জানতেও চায় নি আমি কেমন আছি? কিভাবে আছি?আমি শুধু মাত্র তার কন্ঠস্বর শুনেছি। মানুষ টাকে এ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে নি।হয়তো এই বাড়িতে ও আমার ঠাঁই হবে না।”
-” বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে। তুমি এখন এ বাড়ির বউ।এ বাড়িতে আমার যতোটুকু অধিকার রয়েছে।তোমার ও ঠিক ততোটাই অধিকার রয়েছে। তুমি তোমার অধিকার আদায় করে নিবে।যেমন টা আমি নিয়েছি।তখন আমার পাশে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা ছিলো না। কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি। তুমি তোমার স্বামীর ভালোবাসা আদায় করে নিবে।সে বিয়েটা মানে না বললেই তো আর হয়ে যাবে না।”
-” জোর করে সব পাওয়া গেলেও ভালোবাসা পাওয়া যায় না মা।”
-” জোর করতে হবে না। তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার স্বামীর ভালোবাসা আদায় করবে।স্বামীর থেকে দূরে দূরে থাকলে কখনোই তোমাদের সম্পর্ক আগাবে না।সে যতো তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবে তুমি ততো তাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে।তোমার বাবা কল করেছিলেন। আমাকে বারবার অনুরোধ করেছেন ,আমি যেন তোমাদের ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।উৎস নিজের রুমে আছে। তুমি এক্ষুনি গিয়ে তার সাথে কথা বলো।”
-” তার কথা শোনা মাত্রই আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।আমি তার মুখোমুখি হতে পারবো না মা।”
-” তোমার বাবা তোমাদের জন্য অধীর আগ্রহে বসে রয়েছে।এখন তুমি দেখো কি করবে বলে সালমা তালুকদার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তিনি যাওয়ার পর আদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে উৎসের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।তখনি ঝর্ণা তালুকদার হাতে কফি নিয়ে উপরে আসে।আদ্রি কে দেখে তিনি আদ্রির হাতে কফির কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-” এটা উৎসের রুমে দিয়ে আসো নতুন বউ।আমার আবার সাজিন কে রেডি করে দিতে হবে। অনেক টা বেলা হয়ে গিয়েছে।”
-” ঠিক আছে কাকিমা বলে আদ্রি গুটি গুটি পায়ে উৎসের রুমে প্রবেশ করে।উৎস তখন ল্যাবটপ নিয়ে কাজ করছিলো।আদ্রি রুমের মধ্যে ঢুকে প্রথমবারের মতো নিজের বর কে দেখে চমকে উঠে। যার দরুন আদ্রির হাত থেকে কফির মগ নিচে পড়ে যায়।।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।