রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৭৬| #ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

0
561

#রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৭৬|
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

হসপিটালের সামনে এসে মৃত্তিকা অর্পণের নাম্বারে কল করে৷ মিনিট পাঁচেক সময় পর অর্পণ এসে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। প্রথমে মৃত্তিকা অর্পণের কেবিনেই যায়৷ সে এখানে কেন এসেছে সেটাও জানায়৷ এক্ষেত্রে অর্পণ তাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করে। মৃত্তিকার মুখে মাস্ক লাগিয়ে মেহরাব শিকদারের কেবিনে নিয়ে যায়। কেবিনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্তিকার নিজের কাজে লেগে পড়ে৷ মহুয়া একদিন তাকে বলেছিলেন‚ মেহরাব শিকদার নিজের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুলোকে কখনোই বাড়িতে রাখেন না৷ হসপিটালে আর নয়তো নিজের দ্বিতীয় সেই বাড়িটাতে৷ যেই বাড়িটার কথা আর ঠিকানাটা মহুয়া তাকে দিয়েছিল। কিন্তু তার কাছে তো ওই বাড়ির চাবি নেই৷ আর না অর্পণ জানে ওই বাড়ির ব্যাপারে। তাই সে আগে হসপিটালেই তল্লাশি চালাতে এসেছে। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খোঁজার একপর্যায়ে এসে অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚

“কী খুঁজছিস বোন?”

খোঁজার ফাঁকে মৃত্তিকা বলল‚ “একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল৷”

“তুই শিওর সেটা এখানে আছে?”

সেই একই ভঙ্গিতে আবারও বলল‚ “থাকারই তো কথা৷”

“আমি কী হেল্প করব খুঁজতে?”

মৃত্তিকা মাথা উপর নিচ ঝাকিয়ে বলল‚ “হুম!”

“ফাইলটা ঠিক কেমন হবে?”

“একটা খুবই পুরোনো ফাইল। উপরে ❝কাঁটামুকুট❞ লিখে রাখা।”

“নামটা ভীষণ অদ্ভুত।”

“সেটা কর্মকাণ্ডও ভীষণ অদ্ভুত আর অমানবিক।”

অর্পণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল‚ “কেন?”

“এ কথা পরে বলব ভাইয়া৷ এখন হাতে সময় নেই। ওই ফাইলটা আমাদের তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে৷”

কাঙ্ক্ষিত ফাইলটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল দুজনে৷ মৃত্তিকা কিছুটা নিশ্চিত কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা সে এখানেই পাবে৷ একটু ভালো করে খুঁজতে হবে। আজই তার প্রথম আর শেষ সুযোগ। হয়তো আল্লাহ তায়াল এটাই চেয়েছিলেন তাই তো আজ মেহরাব শিকদার হসপিটালে আসেননি।

হসপিটাল থেকে সবেই বের হয়েছে মৃত্তিকা। সে যেটার খোঁজে গিয়েছিল সেটা পেয়ে গিয়েছে৷ আর মাত্র কয়েকটা দিন। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূর হেঁটে এলো সে৷ বাস স্টপেজ গিয়ে অপেক্ষা করবে বাসের জন্য। জ্যামে না পড়লে বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় মিনিট পঁচিশ সময় তো লাগবেই৷ আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে মৃত্তিকা৷ আর তো কিছুটা পথ৷ এদিকে বাড়ি ফেরার পথেই রাস্তায় মৃত্তিকাকে দেখতে পেল প্রলয়। এদিকেই একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল৷ মৃত্তিকাকে দেখতে পেয়ে নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে৷ তবে তার মুখে মাস্ক লাগানো। রাস্তার কেউ হয়তো তাকে চিনবে না শুধুমাত্র তার ভূমি কন্যা ব্যাতীত। পেছন থেকেই ডাকল মৃত্তিকাকে।

“ভূমি কন্যা?”

বহু চেনা কণ্ঠস্বরে থমকে দাঁড়াল মৃত্তিকা৷ তবে পেছন ফিরে তাকাল না। সে বুঝতে পেরেছে প্রলয় ঠিক তার পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ পেছন তাকালেই তাকে সন্দেহ করতে পারে৷ তবে এত সহজে ধরা দেওয়া তো যাবে না৷ মৃত্তিকা হাঁটতে শুরু করল প্রলয় এবার তার পথরোধ করে দাঁড়াল। এভাবে হুট করে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ায় যারপরনাই বিরক্ত হলো মৃত্তিকার৷ ভুরু যুগল কুঁচকে তাকাল প্রলয়ের দিকে৷ জিজ্ঞেস করল‚

“এ কোন ধরনের অসভ্যতা? কে আপনি?”

প্রলয় তার মুখ থেকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাস্ক সরাল৷ এরপর আবার পড়ে ফেলল৷ আর মৃত্তিকাকে বলল‚

“কোথায় যাচ্ছিলে? চল আমি তোমাকে পৌঁছে দিই ভূমি কন্যা!”

“উফ! আপনি আবার এসেছেন? কতবার বলব আমি ভূমি নই— মৃত্তিকা!”

“তুমি যতবারই বল! আমি বিশ্বাস করছি না৷”

এই মানুষটাকে তার সবথেকে বেশি অসহ্যকর লাগছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে মৃত্তিকা বলল‚ “গো টু হেল!”

এই কথাটা বলে চলে আসতে নিলে আকস্মিক ভাবে প্রলয় তার হাতটা ধরে ফেলল৷ ঠোঁট চেপে হেসে বলল‚ “চল এক সঙ্গেই যাই?”

সঙ্গে সঙ্গেই নিজের হাতটাকে ছাড়িয়ে নিল মৃত্তিকা৷ তেজি স্বরে বলে উঠল‚ “হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি?”

প্রলয় কিছুটা কাছে এসে মৃত্তিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল‚ “সাহসটা কিন্তু আমার শুরু থেকেই ছিল।”

নিজের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে চলে যেতে উদ্যত হলো মৃত্তিকা৷ এক্ষুনি বাড়ি ফিরতে হবে৷ তনুজা হয়তো তারই জন্য অপেক্ষা করছে৷ তার বাড়ি ফেরার কথা দুপুর তিনটে। অথচ এখন সময় বিকেল ছয়টা৷ একটু একটু করে আবছা অন্ধকার নেমে আসছে মেদিনীর বুকে। এরই মাঝে তনুজা বেশ কয়েকবার কল করেছিলেন। তখন সে হসপিটালের ভেতরে থাকায় রিসিভ করতে পারেনি৷ তারউপর ফোন সাইলেন্ট করা ছিল৷ কল ব্যাক যে করবে তারও উপায় নেই৷ ফোনের ব্যালেন্স শেষ। আজই হয়তো সব ঝামেলা একই সঙ্গে আসার কথা ছিল। মৃত্তিকাকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রলয় বলল‚

“ভূমি কন্যা আমাদের সন্তান…!

প্রলয় তার পুরো কথা শেষ করতে পারল না৷ গালে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ মৃত্তিকার হাত জ্বালা করছে। তবে সে তা প্রকাশ করল না। সুশ্রী রূপে লেপে রেখেছে রুষ্টতা। এরকম কাঠখোট্টা লোকের গালে চড় মা’রা মোটেও চারটে খানি কথা না। আগের মতো এখন আর প্রলয়কে সে ভয় পায় না। মৃত্তিকা এবার চেঁচিয়ে বলল‚

“কীসের বাচ্চা? কীসের কথা বলতে চাইছেন আপনি? অনেকক্ষণ ধরেই বিরক্ত করছেন। কিছু বলছি না দেখে ভাবছেন আপনার এসব কথা শুনতে আমার ভালো লাগছে? বাঁচতে চাইলে এখান থেকে চলে যান। নয়তো আমি মানুষ জড়ো করব।”

প্রলয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে৷ এতটা নির্ভীকতা তার ভূমি কন্যার মাঝে কবে এলো? কোমল হাতের চড়টা খুব একটা জব্দ না হলেও তার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করতে কোশট হচ্ছে৷ প্রলয় ফ্যালফ্যাল করে মৃত্তিকার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে৷ আশেপাশে গুটিকয়েক মানুষ এদিকেই চেয়ে আছে৷ একটা মেয়ে একটা ছেলেকে থাপ্পড় মে’রেছে‚ এর থেকে ধামাকা আর কী হতে পারে? সেই জন্যই মজা লুটছে সকলে৷ মৃত্তিকা আশেপাশে একবার তাকাল৷ প্রলয়ের মুখে মাস্ক লাগানো বিধায় কেউ তাকে চিনতে পারেনি৷ তা নাহলে এতক্ষণে হয়তো ব্যাপারটা সব জায়গায় ছড়িয়ে যেত৷ মৃত্তিকা আর সেখানে দাঁড়াল না৷ এদিকে প্রলয় এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে৷ তার ভূমি কন্যা তাকে থাপ্পড় মা’রতে পারে এটা সে কদাপি ভাবতে পারে না৷ তবে হলো তো সেটাই। প্রলয়ের স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগল৷ সে বুঝতে পারল মৃত্তিকাকে মানানো এতটাও সহজ হবে না৷ অনেক কাঠখড় পোহাতে হবে তাকে৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান নিল প্রলয়৷ মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে তার৷ কী থেকে কী হয়ে গেল? ভালোই ভালোই এলো ভূমি কন্যার মান ভাঙাতে। কিন্তু তার কথাই তো শুনতে চায় না। কথায় কথায় ছ্যাঁৎ করে উঠছে আবার আচমকা চড়ও মে’রে বসল আজ। তবে প্রলয় মোটেও রাগ করেনি৷ এটাই তো তার প্রাপ্য৷ তার দোষের জন্যই তো দুজনের মাঝে সহস্রাধিক দূরত্ব৷ ছোটো বাচ্চাটাকেও তো সে নিজের করে পাচ্ছে না৷

রাতে…

শত জোর করার পরও প্রলয় আজ রাতের খাবার খায়নি। বারবার একই বাহানা দিয়েছে‚ তার ক্ষিধে নেই। মাধুরী বহুবার খাবার খেয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি মনে মনে ভাবছেন প্রলয় হয়তো উনার উপর কোনো কারণে রাগ করে রয়েছে। তিনি এবার ভেবে নিয়েছেন বিয়ে নিয়ে প্রলয়কে আর জোর করবেন না তিনি। ছেলে যেভাবে ভালো থাকতে চায় সেভাবেই থাকবে। যদি এক বছর আগের অতীতে ফিরে যেতে পারতেন তাহলে তিনি ভূমিকে প্রলয়ের জীবনে আবারও ফিরিয়ে দিতেন। ছেলের এই বেহাল দশা মা হয়ে উনি আর সহ্য করতে পারছেন না। এদিকে প্রলয়ের এমন ব্যবহার খেয়াল করল অর্পণ। আজ সারাদিনে একটিবারও প্রলয় তার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। হুট করে এমন পরিবর্তন নিমিষেই ধরে ফেলল সে৷ আসল কথা জিজ্ঞেস করতে প্রলয়ের ঘরে গেল। প্রলয় তখন বিছানায় বসে ছিল। অর্পণ কোনো রকমের ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করল‚

“ভাই কী হয়েছে তোমার? আজ কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷”

প্রলয়ও সরাসরি বলে ফেলল‚ “মৃত্তিকা আমাকে লোক সম্মুখে থাপ্পড় মেরেছে৷”

এহেন কথা বিষম খেল অর্পণ। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। বিছানায় বসে প্রলয়কে আবারও জিজ্ঞেস করল‚

“তুমি কী বলেছিলে যে‚ তোমাকে সোজা থাপ্পড় মে’রে বসল?”

“বাচ্চাটার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

অর্পণ এবার বুঝল মৃত্তিকার মনের অবস্থা। কাঁটা ঘাঁয়ে নুনের ছিঁটে পড়েছে চড় তো খাওয়ারই ছিল। কিন্তু অর্পণ তার ভাইয়ের উপর রাগ করতে পারল না। তার ভাই তো সত্যিটা জানেই নাই। প্রলয়ের মা’র খাবার কথাটা শুনে হাসতে ইচ্ছে করছে না। আবার খারাপও লাগছে। গম্ভীর স্বরে অর্পণ বলল‚

“মেয়ে মানুষকে উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করলে তো এমনই হবে।”

চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল প্রলয়। সে যে সত্যিটা জেনে গেছে সেটা তো অর্পণ জানেই না৷ আর জানতেও দেবে না৷ ওদের অজান্তেই সে তার ভূমি কন্যার মান ভাঙাবে৷ একটা থাপ্পড় কেন— হাজারটা থাপ্পড় খেতেও প্রস্তুত সে! তবুও তার স্ত্রী সন্তানকে চা-ই চাই।

অন্যদিকে…

অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের ভেতর পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। একাকীত্ব ঘিরে রেখেছে মৃত্তিকাকে। কিছু আর্তনাদ গলায় দলা পাকিয়ে আছে। ক্রমশ ভারাক্রান্ত। প্রলয়ের মুখে তখন বাচ্চার কথাটা শুনে শরীরের শিরা উপশিরায় র’ক্ত ছলকে উঠেছিল৷ আজ প্রলয়ের জন্যই তো তার অনাগত সন্তান ভূমিষ্ট হতে পারল না৷ প্রলয়ের প্রতি কোনো ভালোবাসাই আর অবশিষ্ট নেই। যা আছে সেটা কেবলই ঘৃণা‚ ঘৃণা আর ঘৃণা। ঘৃণা ব্যতীত কিছুই নেই৷ না সে প্রলয়কে কখনো ক্ষমা করবে আর না কখনো তার কাছে ফিরে যাবে৷ জ্বলজ্বল করতে থাকা আবছা চোখে মৃত্তিকা মেঝেই পড়ে থাকা একটা শাড়ির দিকে তাকাল। ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বলছে বিধায় শাড়িটা দেখা যাচ্ছে৷ এই শাড়ি একদিন প্রলয়ই তাকে কিনে দিয়েছিল৷ মৃত্তিকা তার হাতে থাকা লাইটার জ্বলিয়ে শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। একটু আগুনের শিখা পেতেই জ্বলে উঠল মেঝেতে পড়ে থাকা লাল শিফনের শাড়িটি। এই শাড়িটা সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভূমির পড়নে ছিল। শাড়িটি সাক্ষী ছিল সেদিন রাতের প্রতিটা আর্তনাদের। প্রতি ফোঁটা র’ক্তের সাক্ষী ছিল এই শাড়ি৷ আজও সেই র’ক্তের দাগ লেগে রয়েছে৷ মৃত্তিকা ক্রন্দনরত কণ্ঠে আওড়াল‚

“আপনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না এমপি মশাই।”

বসে বসে কাঁদতে শুরু করল মৃত্তিকা৷ অসহনীয় যন্ত্রণা গুলো ভেতরে জমা হয়ে রয়েছে। কারো সামনে কান্না করা বারণ। মৃত্তিকার কান্না সহ্য করতে পারেন না তনুজা৷ এমনিতেই তাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় থাকেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্তিকাই উনার শেষ সাহারা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কান্নার বেগ বাড়তে শুরু করল৷ এদিকে ঘুমের ঘোরে কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল তনুজার। উনার ঘুম খুবই পাতলা। অল্প আওয়াজে ঘুম হালকা হয়ে আসে৷ তনুজা আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে অকস্মাৎ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন না তিনি৷ কিছুটা বেগ পেতে হয়। তনুজা উঠেই ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। না! ঘরে মৃত্তিকা কোথাও নেই। বিছানায় শুধু সুদর্শিনী ঘুমিয়ে আছে৷ তনুজা এ ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরটায় গেলেন। অন্ধকার করে ঈষৎ কমলাটে আলো টিমটিম করে জ্বলছে৷ সেই আবছা আলোয় মৃত্তিকার আবছায়া বুঝতে অসুবিধে হলো না উনার। আবছা সেই আলো অনুসরণ করে তনুজা এগিয়ে গেলেন মৃত্তিকার দিকে৷ মেয়েকে শান্ত করতে জড়িয়ে ধরলেন। এই রাতের বেলার তার এভাবে কান্না করার কারণ বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হলো না তনুজার। তিনি মৃত্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন‚

“শান্ত হ মা।”

“নিষ্ঠুর মানুষগুলো আমার কাছ থেকে মাতৃত্বের স্বাদ কেড়ে নিয়েছে৷ আমার বাচ্চাটাকে ভূমিষ্ট হবার আগেই মে’রে ফেলেছে। উপহার দিয়েছে এক আকাশসম একাকীত্ব আর বিষণ্ণতা৷ কাউকে ক্ষমা করব না আমি৷ আর মেহরাব শিকদারকে তো আমি নিজ থেকে শাস্তি দেব৷ ওই জঘন্য লোকের শাস্তি সবচেয়ে কঠিনতম শাস্তি হবে৷ সেদিন চাইলেই কিন্তু ওরা আমাকে ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু ওরা তা করেনি। ওই দিনের কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। ক্রমশ আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়৷ রাতে ঘুমতে পারি না আমি।”

“তোর সকল কষ্ট একদিন দূর হবে৷ তুই অনেক সুখী হবি। একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবার পাবি।”

মৃত্তিকা মুখ তুলে তনুজার দিকে তাকিয়ে বলল‚ “ওসবের আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি মামনি।”

“এভাবে বলতে নেই মা৷ সৃষ্টিকর্তা সবটাই দেখছেন। তোর দুঃখও একদিন ঘুচবে।”

চলবে?…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here