অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_৯

0
722

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৯

আফরোজার কথামতো তুলি চা বানালো শুভ্রর জন্যে। চা কাপে ঢেলে নিয়ে যাবে, হঠাৎ আফরোজা থামালেন। বললেন,

‘তুলি দাঁড়া তো। তোর মধ্যে কিছু একটা মিসিং। আমি বুঝতে পারছি কি। আমি নিয়ে আসছি ঘর থেকে।’

তুলি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বোকা বোকা চেহারায় মাথা দুলালো। আফরোজা গেলেন আর এলেন। হাতে করে নিয়ে এলেন এক পাতা টিপ। তুলি টিপ দেখেই অবাক হল। টিপ শাড়ির সঙ্গে তো সবসময়ই পরে তুলি। আজ একদম মনে ছিলো না। কোথায় ছিলো মন? অবশ্য ইদানিং তুলির মন একটু খুইয়ে খুইয়ে থাকে। কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হয় মনের মধ্যে। একটু অন্যরকম অদ্ভুত অনুভূতি।

আফরোজা একটা টিপ খুলে তুলির দুই ভ্রূয়ের মাঝখানে সেঁটে দিলেন। মিষ্টি হেসে বললেন,

‘শাড়ির সঙ্গে টিপ না হলে জমেই না। জানিস তুলি, এই টিপের পাতা অনেক পুরনো। আমার যৌবন কালে টিপের অনেক শখ ছিলো। শুভ্রর বাবা তো পাতার পর পাতা এনে রেখে দিত বাসায়। আমি প্রতিদিন শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরতাম। এখন আর পরি না। শুভ্রর বাবা নেই, কাকে দেখাব পরে? তবে তোর তো শুভ্র আছে। আমার এখান থেকে টিপ নিয়ে নিয়ে পরবি আর পরে শুভ্রকে দেখাবি। তারপর শুভ্রর বাবার মতো শুভ্রও তোর জন্যে পাতার পর পাতা টিপ এনে রাখবে।একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।হা হা হা!’

তুলির চোখ জলে ছলছল করে উঠল। তাদের দুজনের সর্ম্পক যেমনই হোক। অন্তত এই মায়ের জন্যে তুলির বোধকরি শুভ্রকে বিয়ে করে ভুল করেনি। মানুষটা মারাত্মক আকৃষ্ট তার সন্তানের প্রতি, তেমনই তুলির প্রতি। তুলি মৃদু হাসলো। টিপটা আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বললো,

‘চা ঠান্ডা হচ্ছে আম্মু। যাই?’
‘ওহ হা। যা যা।’

তুলি হেসে চা নিয়ে শুভ্রর রুমে গেল। শুভ্র মাত্র গোসল সেরে বেরিয়েছে। টাওয়াল সোফার উপর ফেলে রাখা। ভিজে টাওয়াল এভাবে ফেলে রেখেছেন? তুলি শুভ্রর মনযোগ আকর্ষন করার জন্য চায়ের কাপে শব্দ তুললো। শুভ্র তখন পেছনে ফিরলো। চা হাতে তুলি দাঁড়িয়ে আছে দেখে শুভ্র সঙ্গেসঙ্গে ভেতরে আসতে বললো। তুলি ভেতরে ঢুকলো। শুভ্র হাত বাড়াল। তুলি চায়ের কাপ শুভ্রর হাতে ধরালো। শুভ্র চায়ে চুমুক দিয়ে সোফায় বসলো। তুলি খানিক এগিয়ে এসে সোফা থেকে ভিজে তাওয়াল তুলে বারান্দায় মেলতে গেলো। শুভ্র চা খেতে খেতে দেখলো এসব। মনেমনে আবারও একটু করে তুলির জন্যে ভালো লাগা জন্মাল। তুলি বারান্দা থেকে ভেতরে ঢুকলে, শুভ্র ডাকলো,

‘তুলি?’

তুলি জবাব দেয়,

‘বলুন।’

শুভ্র মৃদু হেসে বলল,

‘এখনই সংসার গোছানোর এত ইচ্ছে?’

তুলি বুঝতে পারলো না শুভ্রর কথার অর্থ। তুলি প্রশ্ন করল,

‘সংসার গোছাচ্ছি?’

‘হু? নেক্সট টাইম থেকে ভিজে টাওয়াল আর ফেলে রাখব না। নিজেই বারান্দায় মেলে আসব। হবে না?’

শুভ্রর কথার অর্থ এখন বুঝল তুলি। সঙ্গেসঙ্গে লজ্জা পেয়ে গেলো। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বললো,

‘তেমন কিছু না। অভ্যাস নেই এভাবে। সোফা ভিজে যাবে দেখে-‘
‘ইটস ওকে। কৈফিয়ত কেন দিচ্ছ? এ ঘর তোমারই।’

তুলির কথাটা কী যে ভালো লাগলো, বলা অসম্ভব। দু চোখে কেবল শুভ্রর দিকে চেয়ে রইল। শুভ্র চা শেষ করলো। চায়ের কাপ টি টেবিলের উপর রেখে এগিয়ে এলো তুলির দিকে। শুভ্রর এগিয়ে আসা তুলি দেখল। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে তুলি এবার এক পা-ও পেছাল না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিজের জায়গায়। শুভ্র এগিয়ে এসে মুখোমুখি হলো তুলির। গাঢ় চোখে তুলির দিকে চেয়ে বললো,

‘ডু ইউ মাইন্ড, ইফ-‘

পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না শুভ্র। তার আগেই তুলি মুখ ফঁসকে বলে ফেললো,

‘নো-‘

শুভ্র অবাক হলো। বড়বড় চোখে তুলির দিকে চেয়ে তারপর হেসে ফেললো। কী অধৈর্য্য মেয়েটা! শুভ্র মুখ এগিয়ে আনলো। তুলির বুকের ভেতরটা ডিপডিপ করছে। চোখ আবেশে বুজে যাচ্ছে বারবার। শুভ্র মুখ সরাল আচমকা। হাত উঁচু করে তুলির দু ভ্রুয়ের মাঝখানে আঙুল চাপলো। তুলি সঙ্গেসঙ্গে চোখ বুজে ফেলল। শুভ্র তুলির টিপ সোজা করে দিলো। তুলি অবাক হয়ে চোখ খুললো। শুভ্র হালকা হেসে সরে দাঁড়ালো। তুলি ফ্যালফ্যাল চোখে শুভ্রর দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র মৃদু হেসে বললো,

‘টিপ সোজা করে পড়বে। বাঁকা করলেও সমস্যা নেই, এই শুভ্র স্কেল দিয়ে মেপে সোজা করে দেওয়ার জন্যে আছে।’

তুলি কিছুক্ষণ শুভ্রর দিকে এভাবেই চেয়ে রইল। শুভ্রও তাকালো। পরপর তুলির হুশ ফিরলে দৌঁড়ে ঘর থেকে ছুটে পালালো। দরজার ওপাশে এসে দরজার হাতলে হাত রেখে জোরেজোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো। শুভ্র বোধহয় তুলিকে শ্বাসকষ্ট দিয়েই মেরে ফেলবে। এমন ভাবে কথা বলে যে, তুলির দুনিয়া এফোর-ওফোঁর হয়ে যায়।

হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে শুভ্র বলে উঠে,

‘আমি তোমায় দেখতে পাচ্ছি তুলি। ইউর হাইড এন্ড সিক গেইম ইজ নট ওয়ার্কিং।’

শুভ্রর আচমকা কথায় তুলির অনুভূতি ছিটকে বের হলো। ‘আল্লাহগো’ বলে তুলি দরজার হাতল ছেড়ে দিলো। শুভ্র ওপাশ থেকে হেসে উঠল শব্দ করে।
__________________
‘না রে হবে না এবার ট্যুর। তোরা যা।’

ডাক্তার ফারহান কাকুতির স্বরে বললো,

‘ভাই ট্যুর দেওয়া লাগবেই এবার। বউ নাহলে আর খাটে জায়গা দিবে না। চল না।’

শুভ্র মাথার চুল ব্যাকব্রাশ করতে করতে বললো,

‘তাহলে বউকে নিয়ে যা। আমাকে টানিস কেন?’

‘আরিফও যাচ্ছে কিম্তু বউ নিয়ে। তাহলে তুই বাদ যাবি কেন? ফ্যামিলি ট্যুর হয়ে যাবে, চল।’

শুভ্র আবার মানা করতে যাবে। হঠাৎ কিছু একটা ভাবলো সে। তুলির তো কয়েকদিন বন্ধ আছে সামনে পূজার জন্যে। শুভ্রর ছুটি। তুলিকে নিয়ে একটা প্ল্যান করাই যেতে পারে। সেটা হলে দুজন দুজনকে জানা ব্যাপারটা আরও ইজি হবে। তুলিরও জড়তা কাটবে, সঙ্গে শুভ্ররও। ওদের জন্যে এই ট্যুরটা হওয়া দরকার। শুভ্র তাই বললো,

‘আমি জেনে জানাচ্ছি। তোকে কালকে জানাব আমি।’
‘ওকে, জানাস কিন্তু।’

শুভ্র ফোন কেটে ল্যাপটপের স্যাটার বন্ধ করে উঠে দাঁড়াল। টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে বসার ঘরের দিকে এগুলো। বসার ঘরে যেতেই কানে গেল সিরিয়ালের শব্দ। শুভ্র বেশি একটা অবাক হলো না। তার আম্মু সিরিয়াল দেখেন, শুভ্র এতেই অভ্যস্ত। কিন্তু আম্মুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ যুগে এসেও তুলিও যে সিরিয়াল দেখে সেটা শুভ্রর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো।

শুভ্র গিয়ে ওদের সামনে গিয়ে হুট করে টিভি অফ করে দিল। সঙ্গেসঙ্গে তুলি আর আফরোজা চেঁচিয়ে উঠলেন একসঙ্গে,

‘টিভি বন্ধ করলে কেন?’

শুভ্র থমকে গেলো। পরপর বললো,

‘না, সিরিয়াল দেখা কিসের তোমাদের, হ্যাঁ? এসব দেখ আর সারাদিন এসব মানুষের উপর অ্যাপ্লাই করতে থাকো, অসম্ভব। আম্মু তুমি দেখছ, সঙ্গে তুলিকেও দেখাচ্ছ।’

তুলি মিনমিন করে বললো,

‘আমিই সিরিয়াল দেখার জন্যে টিভি অন করেছিলাম। রিপিট টেলিকাস্ট দেখিনি আমি সকালে।’

শুভ্র হতভম্ব। বললো,

‘ওয়াও। তাহলে তো বিরাট লস হয়ে গেলো তোমার। রিপিট টেলিকাস্ট দেখো নি। একটা দেবো ধরে।সিরিয়াল হচ্ছে গার্বেজ, এসব মানুষ দেখে?’

তুলি আর আফরোজা দুজন এবার একসঙ্গে বলে উঠলেন,

‘কিম্তু আমরা তো দেখি, আমরা মানুষ না?’

শুভ্র দুজনের কথায় কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। নিজেকে সামলে বললো,

‘আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করেন আমাকে।
যেটার জন্যে এসেছিলাম। তুলি, একটু রুমে আসো তো। কথা আছে তোমার সঙ্গে।’

#চলবে
বড় মন্তব্য করবেন, আমি অপেক্ষায়। ২২ তারিখ থেকে গল্প রেগুলার আসবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here