এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #extra_Part(2)

0
214

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#extra_Part(2)

আযানের শব্দ শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
সাথে সাথে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। রাত ভর ইহান ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। তাও স্বপ্নেও শুধু সেই কথা গুলো শুনেছি। যা আমাকে জরিয়ে ধরে বলেছিল।‌ আর একটু বাড়িয়ে দেখেছি ভাইয়া আমাকে বুকে থেকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,,,

“ঊষা আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। তোর ভালোবাসা ছাড়া আমি নিঃস্ব। তুই আমাকে ভালোবাসবি তো।”

ভাইয়া মায়া ভরা চোখের আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার অসহায় মুখের দিকে। এমন ভালো বলছে যেন আমি না ভালোবাসলে সে মরেই যাবে। আমি তার অক্সিজেন হয়ে গেছি যেন। আমি ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি।

তখন ভাইয়া আবার বললো,, কি হলো আমার উওর দিচ্ছি না কেন ভালোবাসবি না আমাকে।

আমি কিছু না বলে ভাইয়ের হাত অনেক কষ্ট করে ছারিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম। তখন ভাইয়ার আওয়াজ। পেছনে আসছে আর একটা কথাই বলে যাচ্ছে কি বিপদ বলুনতো? আমি চমকে উঠলাম। তখন কি করবো ভাবছি ওমনি আযানের শব্দ শুনে ঘুম ছুটে গেলো।

আমার শরীর কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম তারমানে সব স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু ভাইয়া ভালোবাসি না বললেও ওই কথা গুলো তো বলেছেন। এমন কথা কেন বললো। কেন বলবে এসব?

আমি ওরনা বালিশের কাছে থেকে নিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলাম। কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালাম। শরীর ভয়ে এখনো কাঁপছে। আমি ওই ভাবেই বাথরুমে গিয়ে ওযু করে নিলাম। নামাজ পরবো‌। আমি টুলছি। কারন ঘুম হয়নি রাত ভর স্বপ্ন দেখেছি ঘুম হবে কি করে? ওযু করে নামাজ শেষ করে নিলাম। নামাজ পরে ঘুম চলে গেছে। আমি জানালা খুললাম বাইরে একটু একটু আলো হচ্ছে। আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রাতে বৃষ্টি হ‌ওয়ায় এমন মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে আমি তা উপভোগ করছি। ফুলের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাছে পানি দেবো তাই। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম। একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছে আমি পানি দিচ্ছি আর আমার মনে হচ্ছে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভাইয়া। আমি চারপাশে কাউকে না দেখে তারাতাড়ি পানি দিয়ে চলে এলাম ভেতরে। দিন হয়ে গেছে একদম। ভেতরে এসেই লতার সাথে দেখা হলো।

“কিরে ক‌ই গেছিলি?”

আমি বললাম, “বাইরে গাছে পানি দিলাম।”

“একা গেছিলি কেন? আমিও যেতাম সাথে‌।”

“সমস্যা নাই। রান্নার যোগার কর। মাংস বের করিস।”

“মাংস কেন বড় স্যার তো মাংস খায়না।”

“চাচা জানের জন্য না ইহান ভাইয়ের জন্য বলেছি।”

আমার কথা লতা অবাক হয়ে বললো,,

” ইহান ভাইজান রে ক‌ই পাইলি সে বাসায় নাই‌।”

‘কাল রাতে এসেছে।”

“কাল রাতে( অবাক হয়ে) কখন এলো? আমি তো দশটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম তখন তো আসে নি‌।”

‘আরো পরে আসে।”

“তুই জাগানা পেলি কি করে নাকি? তোকে ভাইজান আগে বলেছিলো আজ আসবে।”

“আমাকে কি করে বলবে? আমার কি ফোন আছে।”

‘তাহলে?”

“আরে দরজা নিজেই খুলে এসেছে তার কাছে তো এক্সটা চাবি আছে।”

“হুম তাহলে জানলি কি করে আসছে?”

“উফ তুই আমায় পুলিশের মতো জেরা কেন করছিস? সকালে গিয়েছিলাম তাই দেখেছি।”

“কেন গিয়েছিলি ওই রুমে সকালে। ” সন্দেহ চোখে।

আমি রেগে চেঁচিয়ে বললাম, ” আমার ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি জেনেছি। সব কিছু তোকে কেন বলতে হবে? যা বলছি কর না হলে আমি করে নিচ্ছি‌‌।”

বলেই বালতি নিয়ে রেগে চলে গেলাম।

লতা গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আমি এসে দেখি মাংস বের করে রেখেছে। আমি কফি করে ওর হাতে দিলাম দিয়ে আসার জন্য। লতা নিয়ে চলে গেল আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।

একটু পর কফি নিয়ে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে এলো। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,

” কি হয়েছে?”

“তুই না গিয়ে আমাকে কেন পাঠালি। ভাইজান একটা ধমক দিছে আমারে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।”

আমি হকচকিয়ে গেলাম। ঢোক গিলে বললাম,

“আমি যেতে পারবো না।”

“কেন?”

‘এতো কেনোর উওর নাই ফেরত দিয়েছে ভালো হয়েছে। রেখে দে খেতে হবে না।”

‘এভাবে বলছিস কেন ভাইজান বকবে কিন্তু।”

“বকুক।”

লতা ভারী অবাক হলো আমার কথায়।
আমাকে বললো,,

“কি হয়েছে বল তো এভাবে বলছিস কেন? ভাইজান রাগ করবে বকবে জেনে ও যাবিনা।”

আমি ভয়ে কাঁপছি ভেতরে ভেতরে। ভাইয়ার সামনে আমি যেতে পারবো না। কিছু তেই না।

আমাকে ঝাকায়ে দিয়ে লতা আবার বললো।
আমি না করে দিলাম কিছুতেই যাব না। ও অবাক হয়ে আমার মুখ পানে তাকিয়ে র‌ইলো।

রান্না শেষ করেই চাচাকে খেতে দিলাম। সকাল সকাল খেতে বসে বললো,

“ইহান কখন এলো?”

আমি বললাম, “রাতে বোধহয়।আমি সকালে দেখেছি।”

মিথ্যা বললাম। চাচা খেতে খেতে ইহান ভাইয়ের অপেক্ষা করলো ভাইয়া এলো না তাই খাওয়া শেষ করে চলে গেলো অফিস এ। ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে তাই সেটা নিয়ে গেলো। বাসায় একটা গাড়ি আছে সেটা ভাইয়া ইউস করে আসার পর থেকে তাই এখন খালি পেয়ে আর নিজের তারাতাড়ির জন্য নিয়ে গেলো।

আমি বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছি। ভাইয়া খেতে এলো না কেন? আমি কফি দেয়নি তাই? নাকি উঠেই নি।
ভাবলাম কিন্তু দেখার জন্য আর তার রুমের ধারের কাছেও গেলাম না‌। গোস্ত দিয়ে আমি আর লতা ভাত খেয়ে নিলাম। তাও ভাইয়া আসে নি লতা কে পাঠাতে চাইলাম ফাজিল যাবেনা বলে টিভি দেখতে বসলো।আমি যেতে ও পারছিনা আবার ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে খেতে কেন আসছেনা।

সারে এগারোটার সময় ভাইয়া নিচে এলো। হলুদ গেঞ্জি ও নীল ট্রাউজার পরে। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট তাকে দেখেই আমার ভয় বেড়ে গেলো। আমি পেছন ঘুরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু যেতে পারলাম না। ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে আটকে বললো গম্ভীর গলায়।

“টেবিলে খাবার দে।”

আমি বললাম,, ” লতা দেবে আমি ওকে বলছি। আমার হাত ছারুন।”

“আমি তোকে দিতে বলেছি।”

বলে হাত ছেড়ে দিলো আর চেয়ার টেনে বসলো।আমি কি করবো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। তারপর মাথা নিচু করে খাবার প্লেট এ রাখলাম। ভাইয়া আমার দিকে যে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি না তাকিয়ে ও বুঝতে পারছি। আমার হাত পা কাপছে। কাঁপা হাতে খাবার বাড়ালাম। তখন ভাইয়া বললো,,

” আমাকে ইগনোর করে কিন্তু তুই পার পাবিনা। তাই এটা করার কথা চিন্তাও করছিস না। নিজের অনূভুতি যেহেতু বুঝেছি। তোকে কি করে নিজের করতে হয় আমার জানা আছে। আমাকে এরিয়ে চলতে পারবিনা তাই এসব করিস না। ”

আমি হতবুদ্ধি হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আমি তাকানো মাত্রই বললো,, “আজকে ক্ষমা করলাম। আর কখনো জানি কফি দিতে অন্য কাউকে না দেখি। মাইন্ড ইট।”

ভাইয়া বলেই চোখ সরিয়ে খাবারে হাত দিলো। আমি আমার শুকিয়ে আসা ঠোঁট ভিজিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এই মানুষটি কে আমি চিনতেই পারছিনা। এতো পরিবর্তন।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হুট করেই আমার হা করা মুখে ইহান ভাই গুস্ত পুড়ে দিলো আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়া ঠোঁট টিপে হেসে বললো,,

“হা করে কি বুঝাচ্ছিস? তোর আমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে। ওকে নে খাইয়ে দিলাম। চাইলে প্রতিদিন খাইয়ে দিতে পারি।”

আমি মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছি। লোকটা পাগল হয়ে গেছে কি সব বলছে। কেমন করে হাসছে হাসিটা অবশ্য সুন্দর কিন্তু এসব ভালো লাগছে না একদম।

আমি হাত দিয়ে পিছন গিয়ে দাঁড়ালাম। খাবারের জন্য কথা বলতে পারছি না। তাই খাবার চিবুতে লাগলাম।ভাইয়া খাচ্ছে তো আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অবাক চোখ তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।

ভাইয়া আমার মুখের খাবার শেষ করতেই বললো আরো খাবি।

আমি সাথে সাথে না করে দিলাম। ভাইয়া নিজে খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“কাজ বাদ দিয়ে পরতে বস। পরিক্ষার আর আঠারো দিন আছে কিন্তু।”

আমি মাথা নাড়লাম। ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে পেছন ফিরে সিঁড়ির কাছে গেলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাবার ঢাকতে লাগলাম। তখন ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,,

“একা না! ব‌ই নিয়ে আমার কাছে আয়। আমি পড়া দেখিয়ে দেবো।”

আমি চমকে উঠলাম। ভয় ও পেয়েছি ভেবেছিলাম ভাইয়ার চলে গেছে কিন্তু এতো দেখি যায় নাই।
আবার পড়ার জন্য তার কাছে যেতে বলছে। যার থেকে পালাতে চাই সে আরো কাছে আসছে উফফ

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here