এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #Part_15

0
288

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_15

পরদিন আমরা এলাম পান্থমাই ঝর্না। বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় সিমান্তের কোল ঘেষে অসম্ভব সুন্দর একটি গ্ৰাম তার নাম পান্থমাই। আর এই পান্থমা‌ই এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে পান্থমাই ঝর্না। সম্ভবত এই গ্ৰামটি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্ৰাম। এক পাশে ভারতের মেঘালয় এ উঁচু উঁচু পাহাড় আর অন্য পাশে বাংলার মায়াময় ছায়াময় শান্ত সবুজ এই পান্থমাই।
এটি ভারতের সীমানায় পরলেও খুব কাছ থেকে দেখা যায়। ছবি তোলা ভিডিও এসব তো লেগেই আছে। সবাই মুগ্ধ নয়নে সব দেখলাম।
সেখানে থেকে আমরা জাফলং জিরো পয়েন্ট।
ওপারে সারি সারি পাহাড় এপারে সচ্ছ জলের স্নিগ্ধ নদী। পাহাড়ের বুকে অবিরাম ভাবে ভয়ে চলেছে ঝর্না। নদীর বুকে স্তরে স্তরে নানা রঙের নুরি পাথর।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখছি। হাঁটু ভাঁজ করে বসে একটা পাথর ও হাতে নিলাম কি সুন্দর পাথর।
সেখানে থেকে আমরা গেলাম সংগ্ৰামপুঞ্জি ঝর্না দেখতে। জাফলং থেকে পনেরো মিনিট লাগে।

ক্লান্ত হয়ে সবাই বাসায় এসে বিছানায় কাত হয়ে পরে আছে।
আমার একটুও ক্লান্ত লাগছে না খুব ভালো লাগছে কতো কতো জায়গায় ঘুরলাম। আনন্দে আমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত থাকলেও পাত্তা দিচ্ছিনা।
আজকে রাতের আগেই ফিরেছি তাই দিন আছে এখনো।আপুর ফোন বালিশের কাছে রেখেই ঘুমিয়ে আছে।আমি ফোনটা নিয়ে দেখলাম কতো বাজে। এখন সারে পাঁচ টা বাজে আমি বিছানায় থেকে উঠে পরলাম। রুমে থেকে বেরিয়ে কি করবো ভাবছি হঠাৎ আমার চোখে পরলো ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি কি ভেবে যেন সেদিকে যেতে লাগলাম। গিয়ে দেখি একটু । এখানে এসেছে তিনদিন হয়ে গেল ছাদে যাওয়া হয়নি।আমি গুটি গুটি পায়ে ছাদে চলে এলাম। ছাদে পা রাখতেই একটা ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিলো। কি বাতাস হচ্ছে ঝড় বৃষ্টি হবে নাকি ভ্রু কুঁচকে সারা ছাদে তাকালাম। কোন ফুল গাছ নে‌ই একদম ফাঁকা কোনায় একটা এ্যালভেরা গাছের টব আছে আর কিছু নাই।
খালি পায়ে আসায় পায়ে ধূলা অনুভব করলাম।
ওইভাবেই ছাদের কোনায় চলে গেলাম। তারপর রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালাম।
হাত দিয়ে কোন রকম চুল খোঁপা করেছিলাম। বাতাসের জন্য অবাদ্ধ চুল খুলে পিঠে জরিয়ে গেল। বাধার চেষ্টা করছি পারছিনা ওরনা উড়ে যাচ্ছে। কোন রকম ওরনা গায়ে জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এই বাতাস সব অবাধ্য করে দিলেও আমার খুব ভালো লাগছে।

হঠাৎ পেছন তাকালাম মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে দেখি ইহান ভাই ছাদে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন করে যেন আমি তাকাতেই হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো তারপর এগিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
এখানে কি করছিস?
আমি বললাম, এমনি কিছু না।
কতো বাতাস হচ্ছে তাও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ভালো লাগছে বাতাস।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো। আমি ওরনা ঠিক করছি খালি। একা ভালোই লাগছিলো ভাইয়ার সামনে ওরনা হলে যাচ্ছে এখন ভালো লাগছে না।
বাতাসে ধূলা আসছে দেখছিস না।
হুম।
তাহলে নিচে যা চোখে যাবে।
সাথে সাথে আমি চিৎকার করে উঠলাম। চোখে কিছু গেছে চোখ ধরে চেঁচিয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ার তারাতাড়ি আমার দিকে ফিরে বলল,
কি হয়েছে?
চোখে কিছু পরলো।
চোখ ডলতে ডলতে। ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে এলো আমার চোখ বন্ধ তাই দেখতে পাচ্ছি না।
হাত সরা।
ভাইয়ার কথা ও স্পর্শ পেলাম। ভাইয়া আমার হাত সরিয়ে দিচ্ছে আমি শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছি।
ইহান ঊষার ওরনার কোণা দিয়ে চোখের ময়লা বের করলো।চোখ আমার জ্বলে যাচ্ছে।
হয়েছে তাকা।
আমি বললাম, না আমার চোখ জ্বলছে খুব।
একটু তো জ্বলবেই তাকা।
না।
ভাইয়া নিরাশ হয়ে আমার চোখ খুলে নিজের মুখটা কাছে এনে ফূ দিতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমার চোখের ঝালাপুরো কমে এলো। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এখনো আমার চোখে ফূ দিচ্ছে খুব কাছ থেকে। এখন আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় করছে। ভাইয়া কে এতো কাছে দেখে আমার সমস্ত ধানধারনা শূন্য হয়ে গেল। ভাইয়ার দিকে বিস হয়ে তাকিয়ে আছি। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে বাড়ি খাচ্ছে।
হুট করেই ঝরঝর শব্দ করে বৃষ্টি নেমে এলো তাতে ভাইয়া ফূ দেওয়া অফ করে আমাকে বললো,
কমেছে।
আমি মাথা নিচু করে হুম বললাম।

ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
ইশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন কি হবে?
আমি ও এগিয়ে দেখি অনেক জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড় আকাশে ঘুরুম ঘুরুম করছে। বাজ পড়ল বলে। আমি ছাদে এসেছিলাম সারে পাঁচ টায় তখন দিনের আলোই ছিলো এখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমরা কোথায় এটা?
ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা চিলে কোঠার ঘর। ঝরের জন্য ভাই এখানে এনে আমার চোখের ময়লা ফেলেছে।
ছোট একটা রুমে খালি একদম কিছু নেই। ভাইয়া খোঁজ করে অন্ধকারে এর মাঝে লাইট জ্বালালো‌।
এতোক্ষণ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখন একটু স্বস্তি পেলাম।
ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভেতরে তখনি ফট করে সব অন্ধকার হয়ে গেল। কারেন্ট চলে গেলো বোধহয় অন্ধকার হতেই আমি ভয়ে কুঁকড়ে ওঠে ভাইয়াকে বলল,
ভাইয়া আপনার ফোনের আলো জ্বালান আমি অন্ধকারে এ ভয় পায়।
বলতে বলতে এগিয়ে এলাম দরজার দিকে ভাইয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
ভাইয়া ঘাড় বাঁকিয়ে বললো ফোন তো রুমে রেখে এসেছি।
ভাইয়া কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।
তখনই বিদ্যুৎ চমকালো ভয়ে আমি চিৎকার করে ভা‌ইয়াকে জরিয়ে ধরলাম।
আমার কাজে ভাইয়া হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার যেদিকে খেয়াল নেই। আমি শক্ত করে ভাইয়াকে জড়িয়ে কাঁপছি। ভয়ে আমার জান বের হ‌ওয়ার উপক্রম।‌বাইরে বাজ পরছে আবার বিদ্যুৎ চমকে চমকে দিন হয়ে যাচ্ছে।
মরে গেলাম আমি?

আমাকে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না ভাইয়া তাই ওইভাবেই আমাকে নিয়ে ভেতরে এসে দাঁড়ালো।
তারপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
এতো ভয় পাচ্ছিস কেন আমি আছি তো তোর সাথে?
আমি কাঁপতে ছি।
ভাইয়া আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি পারছিনা। পারবো কি করে বাজ পরা থামছেই না।শেষে ইহান ঊষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই ও থামছেই না কাঁপছে ফুপাচ্ছে।
ইহান ঊষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঊষা ওর বুকের সাথে মিশে আছে।এতে ইহানের বুকে ভেতরটা কেমন যেন করে উঠছে। ঊষার গরম নিঃশ্বাস আমার বুকে পরছে। আস্তে আস্তে ঊষার ফুপানি কাঁপা কাঁপি কমে এলো ঝড় থেকে এখন বৃষ্টি হচ্ছে।
ঝড় থেকে যেতেই আমি সম্মতি পেলাম।ভাইয়ার বুকে আছি ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম তারাতাড়ি ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। লজ্জা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম অন্যদিকে ঘুরে।
তখনি বৃষ্টির ঝাপটা এসে পরলো আমার চোখে মুখে। চমকে উঠলাম । বাইরে দিন হচ্ছে তো রাত তাতে দেখলাম জানালা দিয়ে পানি আসছে।
আমি পেছাতেই ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেলাম।
ইহান সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ ঊষার পিঠের সাথে ঠেসা খেয়েছে এক পা পিছিয়ে গেলাম।
কি হয়েছে?
পানি আসছে জানালা দিয়ে।
ইহান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না ওর নাকের কাছে ঊষার চুল। যা থেকে মাতাল করা গন্ধ আসছে। ও চোখ বন্ধ করে সেই গন্ধ অনুভব করছে হুট করেই এক পা এগিয়ে এসে ও উষার কোমর জড়িয়ে ধরলো। ঊষা নিজের কোমর এ কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো।
ইহান যেন নিজে কন্ট্রোল হীন হয়ে গেছে ওর একটা ইচ্ছা জেগে উঠলো ও নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো ঊষার চুলের মাঝে। ঊষা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। কি হচ্ছে কিছু ই বুঝতে পারছেনা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here