#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23
আচমকা ভাইয়া আমার হাত স্পর্শ করতেই আমি শিউরে উঠি। হকচকিয়ে মাথা থেকে হাত সরিয়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার মুখ ও হাতের দিকে তাকিয়ে। ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই আমার হাত নিজের বুকে চেপে ধরেছে। আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কি ঘুমিয়ে পরলো নাকি? ঘুমের মধ্যে কি ভুলে আমার হাত টেনে ধরেছে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালো করি করে।
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। বুঝতে না পেরে আমি কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে নিচু করে বললাম,
” ভাইয়া আপনি কি জেগে আছেন?”
ভাইয়ার কাছে বসে মাথায় কাছে বসে ছিলাম তাই কথাটা কানে ভালো মতোই গেলো সাথে সাথে চোখ মেলে আমার চোখের দিকে তাকালো।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। আর ফট করেই আমার হাত ছেড়ে বুকে থেকে সরিয়ে দিলো।
আমি বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া বলল,
“তুই যা এখানে থেকে।”
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। নরছি না যেতে কেন বলছে আর হাত বা ধরলো কেন জিজ্ঞেস করবো। হুম করি করতে যাব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
“যেতে বললাম তো তোকে। আমি ঘুমাবে এখন যা তুই।”
বলেই ঘার বাঁকালো।আমি ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে চমকে বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম।
ভাইয়া অন্য দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি কিছু ই বুঝতে না পেরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে চলে এলাম। দরজার কাছে এসে পেছন ঘুরে দেখি ভাইয়ার নেশাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম সাথে ভাইয় চোখ সরিয়ে নিলো।
আমি হতভম্ব হয়ে নিজের রুমে এলাম।
বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভেবে চলেছি কিন্তু কোন কিনারা খোঁজে পেলাম না।
গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম। না পেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙল সকালেই।বাসায় আজ থেকে বিয়ের কাজ শুরু হবে। কাল গায়ে হলুদ আজ বাসা সাজানো স্টেজ রান্নার যোগার সব হবে।
ঘুম থেকে উঠে আমি বারান্দায় চলে এলাম বাগানে হলুদের স্টেজ হবে।
বাইরে এসে চা কফি করে নিলাম।চাচি চাচা সবাই উঠে গেছে তারা সোফা বসে কি যেন হিসাব করছে আমি তাদের চা দিলাম। লতা রান্নার যোগার করছে।আমি চা নিয়ে ইমা আপু ইলা আপু কে দিয়ে ইহান ভাই এর রুম এ এলাম চাচি জানতে পারলে বকবে তাও এসেছি ভাইয়ার সাথে আমার কথা আছে।তাকে বলতে হবে আমি বিয়ের দুইদিন কোচিং যাব না সেটা যেন জানিয়ে দেয়।ভাইয়া বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ দেখা যাচ্ছে লজ্জায় লাল নীল হয়ে দরজা শব্দ করে আওয়াজ করে ঢুকলাম ভাইয়া জেগে গেলো আর উঠে বসলো ঘুমে তাকাতে পারছে না। আমি বললাম,
আপনার কফি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে কফি নিলো।আমি কফি দিয়ে চলে আসি সব সময় আজ তা না করে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে কিভাবে বলবো ভাবছি।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকালো কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
“কিছু বলবি?”
আমি ওরনার কোণা আগুলে পেছাতে পেছাতে বললাম, ” আমি দুইদিন কোচিং এ যাব না।”
“কেন?”
আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
” আপুর বিয়ের আর আমি তা রেখে কি কোচিং এ যাব।”
“হুম যাবি সমস্যা কই। ” শান্ত গলায় বললো।
‘এ্যা , হা হয়ে চোখ বড় করে।
ভাইয়া বলল, “একদিন ছুটি নিয়ে দেব আজ কাল যেতেই হবে আমি নিয়ে যাব তোকে। হলুদ এর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই আসতি পারবি।”
আমি গোমড়া মুখে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। ধুর কোথায় ভাল্লাগে না। কাজ ও তো আছে এই নিয়ে যে কি করবে চাচি আমাকে আল্লাহ মালুম জানে।
সকালের নাস্তা শেষ করে বাইরে চলে এলাম আমি আর লতা স্টেজ সাজানো হচ্ছে আমরা উজ্জ্বল মুখ করে তাকিয়ে দেখছি। হাতে হাতে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। আরেকপাশে কয়েকজন লোক খাবার তৈরির আধা, রসুন বাটছে। পিঁয়াজ কুচি করছি। সব রেডি করছে। গেট সাজানো হচ্ছে। বাতি ফুল, ক্যান্ডেলা দিয়ে সাজাচ্ছে।
দুপুরের রান্না করতে হলো না যাদের রান্নার জন্য আনা হয়েছে তারাই রান্না করলো সেই খাবার সবাই গেলো। বাসা ভেতরেও সাজানো হচ্ছে আমাদের কাজ নেই এখন অনেক লোক আছেই তারাই সব করছে।
বিকেলে,,
ভাইয়া গেটের কাছে ছিলো কি যেন বলে দিচ্ছিলো লোক গুলো মাথা নাড়ছে। আমি আর লতা সেখান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি আর এটা ওটা বলছি।
তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার আর লতার সামনে এসে দাড়ালো। আমরা হকচকিয়ে গেলাম।
“ঊষা তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোর কোচিং যেতে হবে তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।”
বলেই চলে গেলো।
আমি রাগ করে চলে গেলাম। রেডি বলতে চুল ভালো করে বেঁধে আর মুখ ধুয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চাচির দেখা তখন আমার দিকে অড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
” এমন ফিটফাট হয়ে কই যাস।”
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
” এতো কাছের মধ্যে তুই কোচিং যাচ্ছিস? খুব ভার বেরেছে তোর। রুমে এগুলো রেখে কাজ কর।”
“চাচি কাজ সবাই তো করছে। আমি আর কি করবো।”
“ও কাজ পাচ্ছিস না চল তোকে কাজ দেই।”
“কিন্তু আমি তো কোচিং এ যাচ্ছি। পরে করে দেয়।”
“না এখন ই করবি আর কোথা ও এখন যাওয়া হবেনা তোর।”
আমার কথা চাচি শুনছে না ধমক দিয়ে দিলো আমি রুমে যাচ্ছি মাথা নিচু করে তখন কোথা থেকে ভাইয়া এসে ডাক দিলো।
“ঊষা তারাতাড়ি চলো। এতো সময় লাগছে কেন?”
আমি থমকে গেলাম একবার চাচির দিকে তো একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
ভাইয়া চাচির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আম্মু ও এখন কোচিং এ যাবে।তোমার এতো দরকারি কাজ থাকলে কাজের লোকদের বলো।”
“ইহান ঊষা কোথাও যাবে না। আমার কাজ করবে। তুই জোর করিস না।”
“সরি আম্মু আমি তোমার কথা মানতে পারলাম না। তুমি লতাকে বলো।”
আমার দিকে তাকিয়ে আসতে বললো আমি চুপ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।চাচির সামনে আমার যাওয়ার সাহস নাই। ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এলো।চাচি কটমট করে তাকিয়ে রইলো।
গাড়িতে বসে,
আজকে না গেলেই ভালে হতো।এতো কাজ বাসায় কিছু তো করা দরকার।
ড্রাইভ করতে করতে বললো,
“তুই কি কাজ না করলে কাজ থেকে যাবে।এতো লোক রাখা হয়েছে তাদের বদলে তোর কাজ এগিয়ে দিতে হবে এতো কাজ শিখে গেছিস।”
শক্ত গলায় বলল।আমি ভাইয়া বাম গালে দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলছে কথাটা।
” না আসলে তা না।”
ঢোক গিলে বললাম।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। কোচিং নামিয়ে দিলো আমি নেমে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে বের এলাম। একাই যেতে হবে ভাবছি। কিন্তু টাকা তো নাই টাকার কথা ভুলে গেছি। এখন যাব কি করে।নিচে এসেই দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন চাপছে।ভাইয়া আকাশি রঙের শার্ট ও ব্রাউন প্যান্ট পরেছে।
আমি বিস্মিত হয়ে এগিয়ে এলাম ভাইয়া কি এতো সময় এখানেই ছিল। নাকি চলে গেছিল আবার এসেছে।
আমি এগিয়ে এসে বললাম,” আপনি যাননি।”
ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না।
গাড়িতে উঠে বসলো।আমিও আর কিছু না বলে উঠে বসলাম।
সারা রাস্তা আর কোন কথা হলো না আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কথা না বলে কি থাকা যায় কিন্তু ভাইয়া তো বলে না তাই কষ্ট হলেও চুপ করেই থাকলাম। বাসায় আসার পর চাচি তার রুমে নিয়ে আমাকে সারা রুম পরিস্কার এর দায়িত্ব দিলো।আটটা পর্যন্ত সেখানেই রইলাম।ক্লান্ত হয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম না খেয়ে।এগারোটার দিকে জাগানা পেয়ে উঠে বাইরে এসে খাবার খুঁজে একটু খাবার পেলাম। তারপর খেতে লাগলাম। খিদে পেয়েছিলো অনেক। এক লোকমা মুখে দিতেই হাত জ্বলে উঠলো।
হাত কেটে ফেলেছি কাজ করতে গিয়ে হয়েছে এটা। পেটে খিদে হাত ব্যাথা কি করবো।এখন আমার চোখে জল চলে এলো।জ্বালা হাত দিয়ে আবার খাবার মুখে দিলাম কিন্তু কষ্ট আমি শেষ পারছি না। তখন দরজা খুলে কেউ ভেতরে এলো তাকিয়ে দেখি ইহান ভাই।
নীল ট্রাউজার ও কালো গেঞ্জি করে এলোমেলো চুলে ভেতরে এলো।আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকালো ভাইয়া এখানে কেন কোন দরকার নাকি?
ভাইয়া এগিয়ে এসে বলল,
“কি হয়েছে হাতে দেখি?”
বলেই আমার সামনে থেকে খাবার সরিয়ে নিজে বসে পরলো আমার সামনে আর হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। আমি কেঁপে উঠে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া জানলো কি করৈ আমার হাতে আঘাত পেয়েছি।
বিষ্ময় ভড়া চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার এঁটো হাত নিজের হাতে নিয়ে দেখছে তার হাতেও খাবার লাগছে সেদিকে খেয়াল নেই।
#চলবে