#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_13
সকালের মিষ্টি সোনালী রোদের আলো মুখে আছড়ে পড়ছে। মুগ্ধ নয়নে আঁকাবাঁকা পথে দিকে তাকিয়ে আছি। সবুজ পাহাড় উঁচু ঝাঁকি লাগছে তাতে ভাইয়ার বাহুর সাথে স্পর্শ লাগছে। সাথে সাথে শিউরে উঠছি। জানালার মুখ ঢেকিয়ে বসে আছি। একদম ভাইয়ার দিকে তাকাবো না রাতের কথা ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতেছি।চোখে চোখ মিলাতে পারছিনা।
তখন গাড়ি থেমে গেল একটা পুরোনো দোতালা বাড়িতে এসে।
নামার পর জানতে পারলাম এটা রিহান ভাইয়ার দাদার বাসা। তারা আগে ঘন ঘন এখানে আসা হতো তাই একটা বাসা করে রেখেছে থাকার জন্য। আমরা ও এখানেই থাকবো।
একজন দেখাশোনার লোক আছে যে আমাদের দেখেই এগ এগিয়ে এসে চাবি দিয়ে রিহানের সাথে সাক্ষাৎ করলেন তারপর চলে গেলেন।
ইহান ভাই একা এক রুম নিয়েছে। ইলা আপুও একটা আলাদা রুম নিলো।আমি ইমা আপু আর আপু ফ্রেন্ড দিয়া তিন একটা।
রিহান ভাই তার তিন ফ্রেন্ড এক রুমে। কেউ থাকে না বাসায় দেখে কেউ বলতে পারবেনা। কারন এতো সুন্দর পরিষ্কার করা চকচক করছে সব।
বেতের চেয়ার, খাট কি সুন্দর নকশা করা আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি।
“ঊষা এখন ওইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”
আপুর কথা হেসে মাথা নেড়ে বাথরুমে ঢুকে গোসল করে ফেললাম। তোয়ালা দিয়ে মাথা মুছে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
আপু বলল,
“চল খেয়ে আসি খিদে পেট আমার চো চো করছে। দিয়া চল। এখন এতো সাজছিস কেন সবাই এখন বিশ্রাম নিবে বেরাতে বিকেলে যাব।”
দিয়া আপু সাজগোজ করতেছে। তাই ইমা আপু বিরক্ত হয়ে বলল।
“তাই কি একটু না সাজলে আমার ভালো লাগে না।”
“তোর এতো সাজ কি জন্য বলতো?আবার কাউরো উপর ক্রাশ খাইছোত।”
ভ্রু উঁচু করে বলল।
দিয়া থতমত খেয়ে বলল,, ” কক- কই না তো।”
ইমা আপু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে তাদের কথা শুনছি তখন নিচে থেকে রিফাত ভাইয়ার ডাক এলো।
আপু আর কথা না বাড়িয়ে আমাকে বলে বেরিয়ে গেল আমি ও পেছনে চলে এলাম।
খাবার টেবিলে এসে বসলাম সবাই আছে ভাইয়া নেই। আমি আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে বসে রইলাম ভাইয়া খাবে না প্রশ্ন টা মাথায় এলো কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করলাম না।
“ইহান কই?”
“এইতো আমি। ”
বলতে ভাইয়া এগিয়ে এলো আমাদের দিকে ভাইয়ার গোসল করেছে বোধহয়।
চুল থেকে টপটপ করে পানি ঘাড় ভিজে আছে হাত দিয়ে চুল নাড়াতে নাড়াতে এসে বসলো একদম আমার সামনা সামনি।বসে আমার দিকে তাকালো সাথে সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।
খাবার মাঝে একবার দিয়া আপুর দিকে নজর পরলো তিনি ভাইয়ার দিকে কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। ভাইয়া একটা দুইটা কথা বলছে আর খাচ্ছে আর ওই দিয়া খাওয়ার থেকে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে চুল ঠিক করছে আবার ভাইয়া দের কথার মাঝে নিজেও কথা বলছে এতে একবার ভাইয়া তার দিকে তাকালেই হয় কি ভাব ধরে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি বোকা হয়ে।
খাওয়া শেষে সবাই রুমে এসে বিশ্রাম নিতে চলে গেছে।আমরা ও শুয়ে আছি ইমা আপু মাঝখানে।
দিয়া আপু ডান সাইটে। আপু আবার চেপে ধরেছে দিয়াকে দিয়া কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসছে।
শেষে বলেই ফেলল,
আমার তোর ভাইকে খুন পছন্দ হয়েছে রে। আমি ক্রাশিত।
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি দিয়ার দিকে ইমা আমি গোল গোল করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ খুলে পরবে।
সাথে সাথে সটান হয়ে বসে পরলো ,
“কি বললি তুই?”
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বসে পরলাম। আমার খাবার সময় সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু পরে নিজেকেই বকেছি কারন দিয়া আপু ভাইয়ার সিনিয়র। তাই কথাটা আর ভাবি নি কিন্তু এখন তো দেখিছি সত্যি।
“তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি ইহান তোর ছোট সেটা তুই জানিস না কোন সাহসে এসব স্বীকার করছিস ছিঃ লজ্জা করে না ছোট ছেলের উপর নজর দিতে।’
“আমি খুব বেশি বড় না বুঝলি। আর আমার ওতো বয়স ও না বয়স হওয়ার আগেই আম্মুর স্কুলে ভর্তি করেছিল তাই আগে চলে গেছি। ”
“তোকে আমার খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে জানিস?”
“কেন আমি সত্যিই পছন্দ করি ইহানকে।”
“চরিয়ে তোর গাল লাল করবো আর একবার এই কথা বললে।”
দিয়া মুখ গোমড়া মুখে শুয়ে পড়লো আপু রাগে গজগজ করতে লাগলো। তারপর দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি দুঃসাহস দেখছিস ওকে নাকি আমার ভাবি বানাবো? আহাম্মক একটা।”
বিরবির করতে লাগললো আপু। তারপর শুয়ে পড়লো।
দুপুরে খাবার খেয়ে বের হলাম ঘুরতে। কাছাকাছি ঘুরা হবে আজ আশেপাশে বেড়ানো হলো। পাশেই একটা গ্ৰাম ছিলো সবাই সেখানেই গেলাম।
নতুন পরিবেশের সাথে পরিচিত হলাম। তাদের পোশাক অন্য রকম একদম।
সন্ধ্যায় আগেই ফিরে আসা হলো।
রাতে একটা বিরাট ঘুম।
পরদিন আমরা পানসি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের নাস্তা করলাম।
তারপর এলাম চা বাগান এ। বিশাল বড় বাগান। সবুজ সমাহার তার মাঝে মেয়েরা কাঁধে ঝুড়ি নিয়ে চা পাতা তুলছে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি সবাই যে যার ফোন বের করে ছবি তুলছে ইহান ভাই ফোন কথা বলছে। আমি একা ঘুরে ঘুরে দেখছি সবুজ সমাহারের মাঝে রঙিন পোশাকের মহিলা গুলোকে একটা অপূর্ব লাগছে।
ছবি তুলার আওয়াজ হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম অবাক হয়ে ইহান ভাইয়া আমার ছবি তুলছে।
আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম।
ভাইয়া এগিয়ে এসে বলল,,
“সবাই ছবি তুলছে তুই বাদ কেন?”
আমি বললাম, “আমার তো ফোন নেই আর না ছবি তুলে দেওয়ার কেউ আছে।”
ভাইয়া বলল,” ভালোই হয়েছে ফোন থাকলে পাজি হয়ে যেতি। চল আমি তোকে ছবি তুলে দেয়। যখন ফোন হবে নিয়ে নিস।”
আমি খুশি হয়ে আচ্ছা বললাম।
ভাইয়া আমার ছবি তুলে দিচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে আছি হাসি মুখ করে।
লাঞ্চ করা হলো রেস্টুরেন্টে।
তারপর আমরা গেলাম ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে। নৌকায় বসে আছি। সচ্ছ পানির উপর দিয়ে নৌকা বেয়ে চলেছে যত এগিয়ে যাচ্ছে মুগ্ধতাও বেড়ে যাচ্ছে। নীল আকাশ তার গ ঘেঁষে আছে উঁচু পাহাড় দূর থেকে এমন লাগছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছি। প্রথম সব কিছুর অনূভুতি অন্যরকম ঊষার ও সেই অবস্থা।
একজন সেই আনন্দিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হা করে সে আর কেউ না ইহান। ঊষাকে বাসায় সব সময় মন খারাপ করে থাকতে আর এখানে আসার পর থেকে ওর মুখে আনন্দ লেগে থাকে যা দেখে ওর ঠোঁটে ও ফাঁকা হয়ে যায়।
ঊষা সব কিছু মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো তখন ওর মনে হয় কেউ ওর হাত স্পশ করেছে তাকিয়ে চমকে হাত সরিয়ে নেয়। রিহান ভাইয়া। থমকে জরোসরো হয়ে গুটিয়ে বসি।
উনার হাবভাব আমার প্রথম থেকেই পছন্দ হচ্ছে না। কেমন করে যেন তাকায় থাকে ভিশন অস্থির লাগে আমার। সাথে সাথে ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
নৌকায় থেকে নামতেই ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি কিছু না বললাম।
ভাইয়া তাও সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইলো তখন এলো দিয়া আপু,
হাই ইহান!
ভাইয়া হেসে বলল, হ্যালো।
ভাইয়ার গায়ে পরা কথা বলছে হায়রে ভাব আমি তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার চোখ মুখ ও বিরক্ত লাগছে তবু ও হেসে কথা বলছে।
হঠাৎ আপু বলে উঠলো , তুমি আমাকে আপনি করে বলো কেন? তুমি করে বলো কেমন জানি লাগে।
ভাইয়া হা করে তাকিয়ে বলল, আপনি আমার সিনিয়র আপু তাই আপনি টাই ঠিক আছে।
বলেই চলে গেল।
দিয়া আপু গোমড়া মুখে তাকিয়ে আছে।
#চলবে