#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_17
চোখ খুলে আমি ভয় পেয়ে গেলাম রুমে কেউ নেই। সারা রুমে চোখ বুলিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। কেউ নাই তাহলে আমার কপালে স্পর্শ করলো কেন? আমার হাতটা আপনা আপনি কপালে চলে গেল। কে ছিলো আর সে গেল কোথায়? ভয়ে কাঁপতেছি আমি। ঢোক গিলে ভীতু মুখ করে ভাবছি কে ছিলো? সবাই তো ঘুরতে গেছে তাহলে আমার রুমে কে এসেছিলো। কাঁপা কাঁপা গলায় কে বললাম কারো সারা শব্দ পেলাম না।
ভয়ে উঠে দাঁড়ালাম। রুম থেকে বের এলাম। কে ছিলো তখন চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে হঠাৎ শব্দ পেলাম কারো কথার। আমি চমকে উঠলাম কথা কে বলছে। বাসায় আমি একা তাহলে কথা বলতে কে? আমি আওয়াজের সেদিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। এটা তো ভাইয়ার রুম কে কথা বলছে ভেতরে ঢুকে দেখি ইহান ভাই দাড়িয়ে আছে কানে ফোন কারো সাথে কথা বলছে।
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া কথা বলতে বলতে আমার দিকে তাকালো আমাকে বিস হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফোনের লোকটাকে কিছু বলে রেখে আমার সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ভাইয়ার কথায় আমি বললাম,
ভাইয়া আপনি এখানে? আপনি যাননি?
ভাইয়া বলল, না।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন?
ভাইয়া কথা ঘুরিয়ে বলল, তুই উঠে এসেছিস কেন? তুই না অসুস্থ?
আমি স্পর্শ কিছু বললাম না,
আমি তো কারো আওয়াজ পেয়ে এলাম ভয় পেয়েছিলাম।আমি তো বাসায় একা ছিলাম তাই।
কিন্তু আপনি কেন জাননি তা বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া বলল, আমি ও হালকা অসুস্থ বোধ করছি তাই ফিরে এলাম।
আমি ভাইয়া দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনার কি হয়েছে?
এমনি মাথা ব্যথা।
আমি কফি করে দেবো।
এক চর মারবো যা শুয়ে থাক। এই শরীর নিয়ে আবার কফি করতে চাইছিস পাগল তুই।
আমি ভাইয়ার ধমক শুনে চুপ মেরে আমতা আমতা করে বললাম, আমার অভ্যস আছে তাই।
ভাইয়া কড়া চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আর বললাম না।
ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি এই স্পর্শ আমার চেনা একটু আগেও যেন এই স্পর্শ পেয়েছি তাহলে কি ভাইয়া ছিলো তখন। ভাইয়া ছাড়া তো আর কেউ নাই।
আপুরা আগেই চলে এসেছে এসেই বলল, আমি তাই নাই আবার ভাই যায় নাই তাই নাকি বেশি জায়গায় যায় নাই।
বিকেলে ভর সবাই বসে আড্ডা দিলো।
তখন একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো।
সবার সামনে দিয়া আপু ইহান ভাইকে প্রপোজ করে বসলো। আমরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছি। ইহান ভাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইমা আপু রাগে কটমট করছে।
আমার মুখটা বিষ্ময় হা হয়ে গেছে।
ইহান ভাই রেগে চোখ মুখ লাল করে সবার সামনে থেকে গটগট করে চলে গেল।
আমরা সবাই থ মেরে বসে আছি। ইমা আপু রেগে দিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
তোকে এতো মানা করা শতেও এটা কি ভাবে করলি?
দিয়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। ইহান ভাইয়ের ব্যবহার এ যে কষ্ট পাইছে তা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কি হলো কথা বলছিস না?
দিয়া আপু হাত ছারিয়ে ছুটে রুমে চলে গেল আর আমরা সবাই হা করে সব দেখছি।
রুমে এসে দিয়া আপুর কান্না দেখলাম নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে।
ইমা আপু রেগে আর কথা বলল না। সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল আমি গালে হাত দিয়ে দিয়া আপুর দিকে তাকিয়ে আছি আপুর কান্না দেখে এখন কষ্ট হচ্ছে আমার তখন ভাইয়ার কথা মনে পরলো ভাইয়া ও তো অনেক রেগে আছে। রেগে গেল তখন। ভাইয়ার জন্য কি কফি নিয়ে যাব?
ভাবতে ভাবতে উঠে কফি করলাম শরীর কাঁপছে আমার তবুও করলাম অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আমার আছে ওই বাসায় কখনো অসুস্থ তার জন্য বিশ্রাম নিতে পারিনা।
কফি নিয়ে ভাইয়ার রুমে এলাম ভাইয়া কপালে হাত রেখে বসে আছে। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে?
আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ভাইয়ার আমার উপস্থিতি টের পায়নি মনে হয়।
আমি ভাইয়াকে ডাকলাম।
ভাইয়া আপনার জন্য কফি এনেছিলাম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করেন।
ভাইয়া আমার দিকে রেগে তাকালো আমি ঢোক গিললাম। কিন্তু কেন জানি আমার এখন হাসি পাচ্ছে। খুব হাসতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া সিনিয়র কারো থেকে প্রপোজ পেয়ে এই অবস্থা।
ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,,তোকে কে কফি আনতে বলেছে?
আমি বললাম, আমি একাই আনছি খান না প্লিজ।
“এই শরীর নিয়ে এসব না করলে চলে না তাই না।
এই তুই হাসছিল কেন?
আমি মিটিমিটি হাসছি হাসি আটকাতে পারছি না। ভয় হচ্ছে তবুও হাসি আটকাতে পারছি না।
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া আপনি এতো রাগ করছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আপনার তো খুশি হওয়া উচিত।
আমার কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
হোয়াট তুই কি বলতে চাইছিস? আমার ওই আপুর থেকে প্রপোজ পেয়ে খুশি হওয়া উচিত।
হুম আপু মনে হয় সত্যি আপনাকে ভালোবাসে কাঁদছিল অনেক।
সো হোয়াট।
না এমনি বললাম।
যা এখান থেকে একদম এসব বলতে আমার কাছে আসবি না।
আপুটা সুন্দর ছিলো কিন্তু।
যাআআআআ
আমি চুপ মেরে গেলাম।কফি বারিয়ে বললাম,
এটা খাবেন না।
ইহান না করতে গিয়ে ও করলো না উষার দিকে তাকিয়ে।
ইহান হাত বাড়িয়ে কফি নিলো। ঊষা চলে গেলো।
রুমে এসে দেখি দিয়া আপু শুয়ে আছে আরেক পাশে ইমা আপু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি তো থ একটু আগে না আপু বকাবকি করলো।
আমি বিস্মিত হয়ে গিয়ে বসলাম।
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
কই গেছিলি?
ভাইয়াকে কফি দিয়ে এলাম। কিন্তু তুমি এসব একটু না রাগ করলে।
হুম কিন্তু করে কি হবে আমি তো ওকে চিনি জানি মনে কথা চেপে রাখতে পারে না বলে দিয়েছে রাগ হয়েছিল কিন্তু রেগে কি হবে? তাই বুঝালাম ওর এসব পাগলামো ভালোবাসা না জাস্ট সৌন্দর্য এর প্রেমে পরেছিলো। বুঝেছি কিনা জানি না।
পরদিন বিকেলে আমরা আগুন পাহাড় এ এলাম সবাই।এখানে অবস্থিত একটা ছোট পাহাড়। যেখানে একটু পুকুর এ থেকে প্রচন্ড বেগে গ্যাস বুদবুদ করে বের হয়ে আসছে। দেখলে মনে হবে যেন পুকুরের পানি ফুটছে।
সন্ধ্যায় পরে আমরা এলাম সেলফি ব্রিজ। এটি মূলত কাজির বাজার ব্রিজ। সুরমা নদীর উপরে এই ব্রিজটি অবস্থিত।
মানুষের গিজগিজ। আমি দিয়া আপুর সাথেই যাচ্ছি। আমার শরীর এ এখন জ্বর নেই কমে এসেছে কাল আমরা ব্যাক করলো ঢাকা সকালেই। তাই আজ রাতটাই শেষ বেরানো। হঠাৎ রিহান ভাই এলো আর হাসি মুখ বলল,
হাই ঊষা।
আমার তাকে পছন্দ না তবুও হাসি ফুটিয়ে বললাম,
কেমন আছেন ?
ভালো তোমার সাথে একটা পিক তুলি।
বলেই ফোন তাক করলো।আমি না করতে গিয়ে ও করতে পারলাম না ছেলেটা ফট করে তুলে ফেললো।
তারপর আমার দিকে ধরে বলল,
দেখো কি সুন্দর হয়েছে আমাদের কি সুন্দর লাগছে একসাথে তাইনা।
আমি তার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমাদের একসাথে মাঝে কি বলতে চাইছে।
তখন ইহান ভাইয়ের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম,
ভাইয়া রেগেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে কাছে ডাকলো। আমি ভাইয়ার রাগের কারনে না বুঝে কাছে গেলাম।
ভাইয়া সবার থেকে আলাদা একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো আমি কিছু বুঝলাম না। আমার হাত ভাইয়ার হাতের মুঠোয় ছিলো এবার হাত ছেড়ের দিলো আর ফট করে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।চোখ আমার ইয়া বড় বড় হয়ে গেছে।
ভাইয়ার চোখে মুখে আগুন ঝরছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার স্পর্শ আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
#চলবে