এক_চিলতে_রোদ #Writer_Nondini_Nila #Part_6

0
314

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_6

ইহান নিজের রুমে এসে মাথা চেপে ধরে বসলো। চব্বিশ বছর জীবনে প্রথম কোন নারীর প্রতি এমন অনূভুতি হচ্ছে কেন? নিজের উপর নিজের এতো রাগ হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবে না।আমার দৃষ্টি এতো খারাপ কবে হলো আগে তো এমন ছিলো না। ঊষার কাছে গেলে কেন ওর বাকিদের মতো স্বাভাবিক থাকতে পারে না। ক‌ই ইমা ইলা ওদের কাছে গেলে তো ওর এমন হয়না। ঊষা ও তো আমার বোন। তাহলে ওকে কেন আমি বোনের নজরে দেখতে পারিনা। কেন ওর কাছে গেলে আমার অন্য কিছু মনে হয়। কেন ওকে বোন ভাবতে কষ্ট হয়।
ওর কাছে গেলে আমার অদ্ভুদ কিছু অনুভূতি জন্ম হতে থাকে। যা এর আগে কখনো কোন মেয়ের কাছে গেলে হয়নি।আমার মেয়েবন্ধু ছেলেবন্ধু আগে থেকেই অনেক মেয়ের সাথে আমার ওঠাবসা হয়েছে কিন্তু তখন আমার কাউকে এমন লাগেনি’ সবার সাথে আমি নরমাল বিহেভ করেছি। সব মেয়ের কথা বাদ ফারিয়ার কাছে গেল আমার এমন লাগে না সব মেয়েদের মতো ওকেও আমি স্বাভাবিক নিতে পারি। অদ্ভুত কিছু হচ্ছে আমার সাথে যা আগে কখনো হয়নি।
বাড়িতে আসলাম আসার পরে ফারিয়ার কথা মাথায় আমার আসেনা শুধু ঊষার কথা আসে।
মাথা চেপে ধরে চুপ করে বসে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। কি হচ্ছে ওর সাথে ? ঊষার কাছে গেলে কেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা কেন?
ঊষা সম্পর্কে আমার বোন।
সেটা আমার মাথায় রাখতে হবে।
বিছানায় ফেলে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। ইহান জানে এখন কে ফোন করেছে।এক বছরে যতবারই ফারিয়া ওকে কল করেছে প্রতিবারই ইহানের বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না।সে আগের মতই ফারিয়ার নামটা ফোনের স্ক্রিনে দেখে বিরক্ত লাগলো।ফারিয়ার প্রতি এই বিরক্তের কারণ ওর আজ ও বোধগম্য হলো না। মেয়েটা ওকে এতো ভালবাসে কিন্তু ও কিছুতেই মেয়েটাকে ভালবাসতে পারছো না। এখনো ওর সঙ্গ ইহানের বরাবরের মতোই বিরক্ত লাগে।
ফোন রিসিভ করল না ফোনটা বাঁজতে বাঁজতে কেটে গেল।সাথে সাথে আবার ফোন এলো এবার নিজেকে কিছুটা সংযুক্ত করে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে নিল।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ফারিয়া অভিমানী গলাতে বললো,,
“বাড়িতে যেতে যেতে আমাকে ভুলে গেছো ইহান। এইটা কি ঠিক করছো বলো? তোমার জন্য যে একজন সারাদিন ফোন হাতে বসে থাকছে তুমি কি একটু তাকে মিস করছ না।
ফারিয়ার অভিমান গলায় কথা শুনে ও ইহানের কোন অনুভুতি হলো না। অনুভূতি শূন্য হয় এই ফোন কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথাতে এখনো ঊষার কথাই ভাবাচ্ছে।
ইহান তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না।
ইহানের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ফারিয়া আবার জিজ্ঞেস করল,,
ইরান সমস্ত চিন্তাভাবনা এক পাশে ফেলে ফারিয়াকে বলল,,
তেমন কিছু না ফারিয়া।‌আমি খুবই বিজি ছিলাম এতদিন পরে দেশে আসছি। সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমাকে আর কল করা হয় নাই সরি।
ফারিয়া মৃদু হেসে বললো,,,
ইটস ওকে বেবি আমি রাগ করিনি। কিন্তু তোমাকে খুব বেশী মিস করছি।তুমি কতো আমাকে এমনিতে মিস করো না তারওপর দেশে গেছো আমাকে আবার ভুলে যেওনা।
উত্তরেই ইহান কিছু বললোনা ফারিয়া নিজের মত বকবক করেই যাচ্ছে ইহান হু হাঃহাঃ বলে কথা শেষ করল।

ফারিয়া ইহানের গার্লফ্রেন্ড। এক বছর ধরে ওদের রিলেশন চলছে। ফারিয়ার বাড়ি ও বাংলাদেশে কিন্তু ওরা ফ্যামিলি সহ বিদেশে থাকে। ইহান ওইখানে যাওয়ার পর ফারিয়ার সাথে সাক্ষাৎ ফারিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয়।একদিন হুট করেই ফারিয়াকে প্রপোজ করে বসে সাথেসাথে না করে দেয় কারণ ফারিয়া প্রতি ওর কোন আকর্ষন ছিল না কখনই ওকে সেই হিসেবে দেখেনি সবসময় একজন ভালো বন্ধু হিসেবে দেখেছে।ফারিয়া মানতে নারাজ বাবা-মা একমাত্র মেয়ে হ‌ওয়ায় খুব আদরের হয়। এটা মানতে পারে না একদম ভেঙে পড়ে তবুও আমি মানতে পারিনা কারন ওর উপর আমার কোন অনুভূতি কাজ করে না।ও আমার হাতে-পায়ে ধরে বলে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না কিন্তু আমি ওকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় দেখ ফারিয়া আমি তোমাকে শুধু একজন বন্ধু ভাবি এর থেকে বেশি কিছু আমি ভাবতে পারবোনা তোমাকে বন্ধু থেকে বেশি আমার কখনোই বেশি মনে হয় না।

ফারিয়া আমার হাত ধরে বলে,,,কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক বেশি কিছু ভাবি অন্তর থেকে ভালবাসি। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিনই হৃদয়ে স্থান পেয়েছো কিন্তু বলতে পারিনি ভেবেছি তোমার সাথে থেকে বন্ধু করে তোমার মনে জায়গা করে নেব। কিন্তু এতদিন আমি তোমার মনে একটু জায়গা করে নিতে পারিনি।এটা আমি মানতে পারছিনা তুমি আমাকে গ্রহণ করো প্লিজ আমি বাঁচতে পারব না তোমাকে ছাড়া।
নাকের জল চোখের জলে এক করে কেঁদে ভালবাসি বলেছিলো। তবুও আমি ওকে ফিরিয়ে দেয়। শুধু বন্ধু হিসেবে সাপোর্ট করে চলে এসেছি ভালবাসতে পারিনি।কেন যেন ওর প্রতি আমার ভালোবাসা টা আসেনি একজন বন্ধু হিসেবে যতটুক ভালোবাসা দরকার ততটুকু এর বেশি আমি করতে পারিনি।
সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ায় পর অতিরিক্ত ভেঙে পড়ে আর জেদের বশে ফারিয়া মারাত্মক ডিসিশন নেয় সেটা হল সুইসাইডের করার চেষ্টা করে। এইটা শুনে আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠে আমি ছুটি ওর হসপিটালে গিয়েছিলাম।
সেখানে যাওয়ার পর আমাকে সম্মুখীন হতে হয় অপমানের। সাথে দোষারোপ করতে থাকে এই অবস্থার জন্য দায়ী আমি ফারিয়ার কিছু হলে উনি আমাকে ছাড়বেন না।
কি করবো বুঝতে পারিনা। ফারিয়া আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয় আর তারপর এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমি ফারিয়াকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে এক্সসেপ্ট করি।একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমি ফারিয়ার প্রপোজ একসেপ্ট করি।কিন্তু ওর জন্য আমার মনের কোণে একটু ভালোবাসাও তৈরি হয় না। ফারিয়া জোর করে আমার হাত ধরে ঘুরে আমার কাঁধে মাথা রাখতো তবু আমার দিক থেকে অনুভূতি শূন্য। ওকে আমি বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতেই পারি না।
আমি খুব একটা দেখা করতাম না লেখাপড়ার চাপে এসব বলে ওর সাথে দেখা করাটা কমিয়ে দিলাম। ওদের পাশে আমার বাসা ছিল আমি সেইটাও সরিয়ে নিলাম কারণ এখন ওর অবস্থিত আমার বিরক্ত লাগত।
বাসা সরিয়ে আনার তিন মাস পর ওর সাথে দেখা করি তাও আমাকে ব্ল্যাকমেল করে দেখা করায়। দেখা হলেই জড়িয়ে ধরার জন্য কিস করা সুযোগ খুজতো আমি অনেক কষ্টে এসব থেকে বাচতাম।বিয়ের আগে আমি এসব কিছুই করতে চাইনা।এইসব বলতাম। কিন্তু ফারিয়া অন্য ধরনের। ও চাইতো অনেক কিছু করতে সাথে অন্য গার্ল ফ্রেন্ড বয় ফ্রেন্ড কে আমাকে দেখা তো। তারা তাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে খুব ফ্রি রাস্তাঘাটে চুম্বন করছে জড়িয়ে ধরছে। বিদেশ অবশ্য এসব রাস্তাঘাটে চলে। বিয়ের আগেই তারা বেড পার্টনার হয়েছে অনেকবার। অনেকবার আমাকে দিয়ে করাতে চেয়েছে কিন্তু আমাকে ফারিয়া বাগে আনতে পারত না।

দেশ আসা দুই মাস আগে তো আমাকে বলে ফেললো ফারিয়া,,
তুমি এখন ও আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারো নাই তাই না ইহান।
আমি সাথে সাথেই মাথা নেড়ে হ্যা বলাই জানিয়ে দিতেই ফারিয়া যেন বিষ্ময়ে চমক সীমায় পৌঁছে গেল।
তুমি এত তাড়াতাড়ি স্বীকার করতে পারলে।
যেটা সত্যি সেটা বলতে আমি কখনোই সংকোচ করিনা।
রাগ করে ফারিয়া এক সপ্তাহ আমার কথা বলিনি।ও ভেবেছিলাম হয়তো নিজে থেকে ফোন দিবো! কিন্তু আমার ওর সাথে দূরত্ব করতেই পছন্দ করি। আমি আর কথা বলার বা রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ফোন বা দেখা করার চেষ্টাও করিনি। আমি আরো এক সপ্তাহ শান্তিতে ছিলাম। এক সপ্তাহ পরে সে নিজেই এসে সব মিটমাট করে চলে যায়। সাথে অভিমান করে বলে,,
তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না ইহান। আমার কা কমতি বলো আমি যথেষ্ট সুন্দরী অনেক আমার জন্য পাগল তাহলে কেন বন্ধুর থেকে বেশি ভাবতে পারছো না।
আমি নির্বাক হয়ে ছিলাম কি বলবো‌।
তারপর আমাদের দেখা হয় না। শেষ দেখা এয়ারপোর্টে হুট করে এসে কেঁদে কেটে মুখ লাল করে ফেলে। আমি কেন বাংলাদেশে যাচ্ছি। বলে বলে মাথা খেয়ে ফেলে।
আমি একটা কথায় বলি। আমার তো যেতেই হবে এটা তো আমার দেশ নয় এখানের কিছুদিনের অতিথি মাত্র আমি।
তাহলে আমার কি হবে?
সেটা তুমি জানো।
আমার জন্য যদি আমাকে বাংলাদেশ যেতে হয় আমি তাই যাব। অপেক্ষা কর আমি খুব শিগ্রই দেশে আসব।
না আসলেও সমস্যা নাই।
কি বললে?
কিছু না বাসায় যাও।
আমি ওর সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়।

#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। কালকে একজন কমেন্ট করেছিলেন নায়ক-নায়িকার বয়সের ডিফারেন্স কত।
ইহানের বয়স ২৪। ঊষার বয়স ১৬। এবার আপনারাই ডিফারেন্স করে নেন। ধন্যবাদ সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here