#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_9
লতাকে দিয়ে অনেক জামা কাপড় ধুয়েছে চাচী। বোনের বাসায় যাওয়ার আগে দিয়ে গেছিলো সেই সব ধুয়ে শুকাতে দিয়ে ছাদে। ভাইয়া খেয়ে যাওয়ার পর আমি খাবার রেখে নিজের রুমে আসি অদ্ভুত আজ লতা আমার রুমে আসে না এমনিতে প্রতিদিন এসে বকবক করতেই থাকে তাই সন্ধ্যায় আগেই ওর কাছে গিয়ে দেখি মাইয়া কাঁথা গায়ে দিয়ে জড়িয়ে পড়ে আছে আমি গিয়েই বলি,
” এই লতা এই সময় শুয়ে আছিস কেন?”
লতা আদোআদো চোখ মেলে তাকায় আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ঠিক নেই আমি ওর পাশে বসে ওর কপালে হাত রাখতেই আতকে উঠি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
“ঊষা রে একটু ছাদে গিয়ে জামা কাপড় নিয়ে আয় আমি উঠত পারছি না।”
“উঠবি কেমনে তোর গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রে।এতো জ্বর বাধালি কি করে?”
“ম্যাডাম আমারে এতো জামাকাপড় দিয়ে গেছিলো তোরে নিয়ে ধুইতে।তোর তো পরিক্ষা তাই আমি একাই করছি সব তাই এই অবস্থা।”
“তুই একা কেন করলি আমিও করতাম।”
“না রে ম্যাডাম ইচ্ছে করে দিছিলো যাতে তুই পরতে না পারিস। তোর মে পরিক্ষা।”
“তাই তুমি এইভাবে একা করলি এখন তোর যে গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বর এ।”
“গরিবের আর জ্বর যার বাপ মায় খোঁজ নেয় না।তোর তো বাপ মা নাই কিন্তু আমার তো আছে। কই তারা তো আমার খোঁজ নেয়না। বাপে নিজের মতো মদ গাঁজা খাইয়া পইরা থাকে। মায় অতিষ্ঠ হয়ে আমারে ম্যাডামের কাছে দিয়ে গেছে কাজ করিয়া তিনবেলা খাইতে দিতে সেই যে দিয়া গেল আর আইলো না রে। কতো কান্দি তাগো লিগা কিন্তু আর আইলো না।”
“কান্দিস না। আমি তোর জন্য নাপা নিয়ে আসি দাঁড়া।”
“তুই নাপা কই পাবি।”
“ইমা আপু তো নাই ইলা আপুর তো বললি মার সাথে গেছে। আমি ইহান ভাইয়ের কাছে থেকে আনি।”
“দরকার নাই তোরে যদি বকে।”
“বকবো না।”
আমি উঠে ছুটে ভাইয়ার রুমের কাছে এলাম ভেতরে গিয়ে দেখি কেউ নাই গেল কোথায়? আমি বারান্দায় যায় সেখানেও নাই কি মুশকিল গেল কোথায়? ছাদে যায় নি তো!
রুমে থেকে বেরিয়ে দৌড়ে দিলাম ছাদের দিকে দ্রুত গতিতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছি তখনই উপর থেকে ইহান ভাই নিচে নামছিলো আমার সেদিকে নজর নেই আমি তারাতাড়ি উঠছি তখন সামনে কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেলাম। সামনের লোকটার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে আমি পা ছিলিপ করে নিচে পরে যেতে নেই। আমি চিৎকার করে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়েছে কেউ একজন আমার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে তারাতাড়ি। যার জন্য আমি ওই উপর থেকে সিড়ির নিচে পড়া থেকে বাঁচালাম। ভয়ে আমার হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে। আমি দুহাতে সামনের লোকটার বুকের উপর রেখে শার্ট খামচে ধরে আমি।
সামনের লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি ভয় সংযত করার চেষ্টা করে আস্তে আস্তে চোখ পিটপিট করে তাকালাম। চোখ মেলেই সামনেই ইহান ভাইয়ার মুখটা চোখে পরলো ভাইয়া আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে।সাথে গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সেই চোখে তাকিয়ে যেন হারিয়ে গেলাম। ভয় এখন লজ্জা হয়ে ধরা দিলো আমি লজ্জামাখা মুখ করে ভাইয়ার চোখের গভীর দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,, ” ভাইয়া ছারুন আমি ঠিক আছি।”
কথাটা ভাইয়ার কানে যেতেই ভাইয়া হকচকিয়ে ছেড়ে দিলো কিন্তু ভুল হয়ে গেল। আমি এখনো কিনারায় যার জন্য ভাইয়া ছাড়তেই আবার পড়ে যেতে নেয় এবার আমি ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরি। হয়ে আমি শেষ।
ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার কোমর শক্ত করে ধরে ঘুরিয়ে পাশে দাঁড় করায় আর নিজের ধরা হাত ছেড়ে দেয়।
আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু এখনো ভাইয়ের গলা ছাড়িনি। আসলে আমার ছারার কথা মনেই নেয়।
“ছার এবার পরবি না।”
ভাইয়ার কথা শুনে ভালৈ করে তাকিয়ে ফট করে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় ইশ কি লজ্জা আমি পা উঁচু করে ভাইয়ার গলা ধরে তার এতো কাছে ছিলাম। লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে লজ্জা কাচুমাচু করে বললাম আছি।
“এভাবে ছুটছিলি কেন ?এখনি তো অঘটন ঘটতো একটা?”
আমি হকচকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
তারপর আমতা আমতা করে বললাম,
” আসলে আমি….
“আসলে কি?”
ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
ভাইয়া নিজের কন্ট্রোল করে বলল,,
“এখান থেকে পরে গেলে কি হতো ভাবতে পারছিস?”
“সরি আমি বুঝতে পারিনি। আসলে লতার চিন্তায়?”
ইহান ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন? লতার কি হয়েছে?”
“লতার খুব জ্বর ওষুধ লাগবে তাই।”
“আচ্ছা চল।”
বলেই ভাইয়া নিচে নেমে গেল।আমি কি মনে করে ছাদে গেলাম তারপর জামা কাপড় তুলে নিচে আসলাম।
ভাইয়া ড্রয়িং রুমে বসে আছে আমি যেতেই বললো “চল।”
আমি আগে যাচ্ছি ভাইয়া পেছনে।ভেতরে এসে ভাইয়া আমার হাতে একটা সিরিজ এর মতো কিছু দিলো এটা দিয়ে জ্বর মাপে তা জানি কিন্তু নামটা কি? বাবার মাঝে ভাইয়া বলল,,
“থার্মোমিটার দিয়ে দেখ তো কতো জ্বর।”
আমি শুনেই ওইটা লতার মুখে দিলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।লতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।ভাইয়া দেখে ট্যাবলেট দিয়ে চলে গেল।
“এই তুই এখনো।”
“আমার না ইহান ভাইজান রে দেখলেই লজ্জা লাগে।”
লতার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালাম তারপর ওকে ওষুধ খাইয়ে চলে এলাম চাচা চলে এসে। ইমা আপু ও এসেছে।
কাল বাংলা তাই অতো না পরলেও চলবে। রুমে এসে পরে আবার সবার খাবার রেডি করলাম দশটায়। লতার খাবার রুমে দিয়েছি।
সবাই নিজেদের মতো খেয়ে চলে গেলে আমি রান্না ঘরে গিয়ে খেতে লাগি তখন হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে চমকে মাথা তুলে দেখি ইহান ভাইয়া রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এখানে কি করছে ভেবে পাচ্ছি না আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমার তাকানো দেখেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে আমার জন্য এক কাপ কফি করে দিস রুমে।
বলে আমার উত্তর এর অপেক্ষা না করে হনহন করে চলে যায়।ভাইয়ার মুখটা কেমন রাগি লাগছিল কিন্তু কেন?
ধুর ছাই থাক গা আমি খাওয়া শেষ করে কফি করে ভাইয়ার রুমে আসি। ভাইয়া রুমে নেই গেল কই।
তখন ভাইয়া বারান্দায় দেখে আমাকে ডেকে উঠে,
আমি ধীর পায়ে বারান্দায় আসি।
ভাইয়া কফি নিয়ে চুমুক দেয় আমি চলে আসতে গেলে ভাইয়া ডেকে উঠে,
চমকে উঠে বলি কি? আমার হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা ভাইয়ার কাছে এলেই এমন হয় কেন? ভাইয়া আমাকে কেন ডাকলো?
” কিছু বলবেন?”
ভাইয়া কফি পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো আর আমার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” তুই শুধু ডাল দিয়ে ভাত খাচ্ছিলি কেন?”
হকচকিয়ে ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম।এটা জিজ্ঞেস করার জন্য কি ডাকছে ভাইয়া।
“কেন কি হয়েছে?”
“কি হবে মাছ, মাংস থাকতে শুধু ডাল কেন খেলি।”
“এমনি!”
“তোকে কি মা খেতে মানা করেছে?”
আমি ছলছল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। চাচী মানা করেনি কিন্তু খেতেও দেয়নি যেমন আমার আর লতার জন্য কখনো মাছ বেশি দেওয়া হয় না। বাসার সবার মধ্যে যদি কেউ না খায় তখন ওইটা বাঁচে আর আমি আর লতা তখন একজন খাই। আজকে চাচী তিন টুকরা মাছ রেখে গেছিলো। রাতে সবাই একটা করে শেষ আমরা কি খাব?
আর মাংস খেয়েছি কিন্তু গোছত ছিলো না জুল আর ডাল খেয়েছি।
ইহান তাকিয়ে আছে ঊষার দিকে। ও বারান্দা অন্ধকার করে বসে ছিলো তবুও হালকা আলোয় দেখতে পাচ্ছে ঊষার চোখের জল তা দেখেই ওর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে।এই জল কিছু তেই ও সহ্য করতে পারে না। কিছু বলার আগেই ঊষা দৌড়ে বেরিয়ে এলো।ইহান ঊষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
#চলবে