#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
৪.
আশালতা ড্রয়িং রুমে ফোন কানে ধরে বসে আছে। তার সামনে বাসার সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে। সবার এতো উত্তেজনার কারণ হচ্ছে আশালতা এখন কথা বলছে পাত্র স্মরণের মায়ের সাথে। তারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছেন বাসায় গিয়ে ফোনে মতামত জানাবে। আয়রা নানীর কাছে বড় হয়েছে তাই নানি ওর বড় গার্জেন। বিয়ের সম্বন্ধ ও তিনিই এনেছেন। এখন রাত ৯ টা বাজে তারা ফোন দিয়েছে তার মানে এখন তাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে নাকি সেটা জানাবে।
আশালতা বললেন,,”তা আপনারা ভালোভাবে পৌঁছেছেন তো?”
স্মরণের মা বললেন,,”জি আমরা ভালোভাবে পৌঁছেছি। তা যেটা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম আপনাদের বাসায় যে আরেকটা মেয়ে দেখলাম তার নাম কি?”
আশালতা পূর্ণতার দিকে চেয়ে বললেন,,”জি পূর্ণতা কেন কিছু হয়েছে?”
” না না কিছু হয়নি উনি সম্পর্কে আপনাদের কি হয়?”
আশালতার মুখের আগায় চলে আসলো আমার ছেলের বউ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দিদান আর শশীকে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে আসতে দেখল। আপদ বিদায় হয়েছিল বাসার সবাই খুশিই হয়েছিল আবার ছেলে ওই মেয়ের হাত ধরে বাসায় ঢুকছে দেখে তার চোখ মুখ কাঠিন্য হয়ে গেল। পূর্ণতা পাশে দাঁড়ানো ছিল শাশুড়ির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। ওর নাম বলতেই ও হতচকিয়ে যায়। কিন্তু মায়ের গম্ভীর নজরে সামনে তাকানো দেখে তার দৃষ্টি বরাবর সামনে তাকাতেই দেখে দিদান শশীর হাত ধরে বাসার ভেতরে ঢুকেছে।
“ও আমার বোনের মেয়ে। আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে।”
” ও আচ্ছা স্মরণ তো আপনার নাতনিকে পছন্দ না করে পছন্দ করেছে আপনার বোনের মেয়ে পূর্ণতাকে। তার নাকি ওই মেয়েকে লাগবে সে বাসায় এসে খুব ঝামেলা করছে। আমরা এতো করে বুঝালাম দেখতে গিয়েছি একজনকে আর পছন্দ করে আসলি আরেকজনকে এটা বলাটা খুবই লজ্জাজনক। তারা অপমানিত বোধ করতে পারে কিন্তু কোন ভাবে শুনাতে পারছি না। জোর করে আমাকে দিয়ে ফোনটা করালো। কথাটা বলতে ও আমি খুব ইতস্তবোধ করছি কিন্তু ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হলো।”
তিনি থেমে আবার বললেন,,”যদি পূর্ণতার বাসা ঠিকানাটা দিতেন খুব উপকার হতো।”
“আপনার সাথে পরে কথা বলছি।” বলেই আশালতা ফোনটা কেটে দিলেন।
পূর্ণতা বলল,,”মা উনারা কি বলল?”
আশালতা বললেন,, মেয়ে ওনাদের পছন্দ হয়নি। সমস্যা নাই আমার নাতনির জন্য আরো বড়ো ঘর থেকে সমন্ধ আসবে। কি বলিস।”
পূর্ণতা রাগী কন্ঠে বলল,”দূর অযথাই এতো কষ্ট করে রান্না করে খাওয়ালাম সব বৃথা গেল।”
পূর্ণতা রাগে গজগজ করে চলে গেল। আয়রা মন খারাপ করবে তাই ওকে এটা ওটা বলে ওর মন ভালো করতে লাগল।
শশীকে নিয়ে দিদান রুমে এসেছে। শশী নিজের বাসায় ঠাঁই পায়নি এক রাত হোটেলে কাটিয়ে নিজের জেদ ভঙ্গ করে দিদান কে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়েছিল। বাসায় সবাইকে ফেলে পাঁচ বছর আগেই দিদানের সাথে দেশের বাইরে চলে যায়। তখন সবাই অমত ছিল তাই এখন যখন বাসায় গেছে কেউ ওকে বাসায় ঢুকতেই দেয়নি। আজকে দুজনেই বিয়ে করে এসেছে। এদিকে আশালতা আজকে প্রচুর ক্ষেপে আছে আগামীকাল পূর্ণতাকে ফেরত পাঠাবেন । অনেক হয়েছে আর না। এখানে সার্কাস বানিয়ে মেয়েটার জীবন আর নষ্ট করতে চায় না। ডিনার আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফোন কলে ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেল সোয়া দশটা বেজে গেছে। সবাই শুতে চলে যাবে এই সময় আশালতা সবাইকে ডাকল জরুরী কথা বলবে বলে। জরুরী কথা শুনতে সবাই উপস্থিত হলেও দিদান আর শশীর খবর নেই। তারা আজকে বিয়ে করে এসেছে নিজেদের বাসর নিয়ে মেতে আছে। আয়রা কে পাঠালো আশালতা দিদান আর শশীকে ডাকতে।
শশী বিরক্ত হয়ে বলল,,”তোমাদের বাসায় কি একটু শান্তিতে থাকা যাবে না? তোমাকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়েছে। এতদিন বিয়ে করিনি ভালো ছিল। এখন বিয়ে করে ফেঁসে গেলাম মনে হচ্ছে।”
দিদান আর শশী আসতেই আশালতা দিদানের দিকে চেয়ে বললেন,,”বিয়ে কবে করেছিস আমি কিছুই জানতে চাই না। তোর বউ তুই পছন্দ করেছিস তুই সংসার করবি তোর ব্যাপার। সেখানে রাগারাগি করার কোন ইচ্ছা নেই আমার। আমি পছন্দ করে তোকে পূর্ণতার সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম বিয়েটা দিয়ে মেয়েটার জীবন নষ্ট করেছি। মেয়েটাকে ধরে বেঁধে আটকে রেখেছিলাম বিশ্বাস ছিল আমার ছেলে আমার কাজের মান রাখবে। সে বিশ্বাস আমার ভেঙ্গে গেছে। তোর বাবা ১০ বছর আগেই নিজের দায়িত্ব কর্তব্য আমার ঘাড়ে চাপিয়ে পরপারে চলে গেছে আমিও যদি সেইদিন চলে যেতে পারতাম তাহলে এই দিন দেখতে হতো না। তোদের নিজের রক্ত পানি করে বড় করেছি মানুষ করেছি কিন্তু তোকে আমি মানুষ বানাতে পারিনি। ”
আশালতা পূর্ণতা হাত ধরে বললেন,,”পারলে এই অপরাধী মাকে ক্ষমা করিস আমি তোর চোখে সত্যি খুব অপরাধী তোর জীবনটা শেষ করে দিলাম।”
শশী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছে ও কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু ঘটনাটা যে খুব জটিল সেটা ও স্পষ্ট বুঝতে পারছে। ও কটমট চোখে তাকাল দিদানের দিকে দিদান মাথা নিচু করে আছে। আসল ঘটনাটা কিছুক্ষণ বাদেই পরিষ্কার হয়ে গেল শশীর কাছে। ও পাথর হয়ে বসে আছে। আশালতা কথা শেষ করে পূর্ণতা কে নিয়ে চলে গেছে। সবাই তার পর চলে গেছে বসে আছে শুধু দিদান আর শশী।
দিদান শশীর হাত ধরে বলল,,” রাগ করছো কেন? মায়ের জন্য বিয়েটা করতে হয়েছিল কিন্তু ওকে কখনোই আমি ওয়াইফ বলে মানি নি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।”
শশী ঠাস করে চড় মেরে বসল দিদান কে।
তারপর উঠে রাগে গজগজ করে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। দিদান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়ে ও রেগে বাসার বাইরে চলে গেল।
আশালতা পূর্ণতার দিকে চেয়ে বললেন,,”পাত্র তোর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”
চমকে উঠলো পূর্ণতা বিস্মিত চোখে তাকালো আশালতার দিকে। আশালতা বললেন,,”তোর বাবা মাকে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো রে জানিনা!”
পূর্ণতা চিন্তায় পড়ে গেল তার মানে এজন্যই ছেলেটা ওকে বিবাহিত নাকি জিজ্ঞেস করেছিল। ও সন্দেহ করেছিল কিন্তু তাই বলে ওকে পছন্দ করে ফেলবে এটা ও কল্পনাও করেনি। নিজের বোকামাতে নিজেই স্তব্ধ। সাথে রাগে ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। ছেলেকে হাতের কাছে পেলে যে কি করতে নিজেও জানিনা।
আশালতা পূর্ণতাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন,, কি হলো কোন রাজ্যে হারিয়ে গেলি?”
“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে মা ঘুমাই!”
চুপচাপ শুয়ে পড়ল পূর্ণতা। গতকাল রাতে ঘুমাতে পারেনি এজন্য আজকে শুতেই ঘুমিয়ে গেল। আশালতা জেগে রইল তার ঘুম আসছে না।
আরো সাত দিন থাকলো পূর্ণতা এই সাতদিন শশী আর দিদানের কম কাহিনী দেখেনি বাসার সবাই। কিন্তু পূর্ণতাকে বাসা থেকে বের না করে ওদের দুজনকে বাড়ি থেকে বের করবে না। তাই সবটাই নিরবে সহ্য করেছে আশালতা। সাত দিনে সব কাগজ রেডি হয়ে গেল। তারপর দিদান আর পূর্ণতার ডিভোর্স হয়ে গেল। ডিভোর্স হতেই শশীর মাথা ঠান্ডা হলো। পূর্ণতা সোফায় বসে কাগজটাই সাইন করে দিদানের দিকে তাকিয়ে কাবিনের টাকা চাইলো। বাসার কেউ কল্পনাও করেনি যে পূর্ণতা কাবিনের টাকা চাইবে। আশালতা বাদে সবাই চমকে উঠেছে।
কিন্তু পূর্ণতা সবাইকে আমাকে চরম সীমায় পৌঁছে দিয়ে টাকা দাবি করে বসল। দিদান ঘামছে ১০ লাখ টাকা ও এখন কোথা থেকে দেবে?
পূর্ণতা বলল,,” এতো টাকা ইনকাম করে বিদেশ থেকে এসেছেন সামান্য ১০ লাখ টাকা দিতে পারছেন না। ডিভোর্স দিয়ে দিলেন আরেকটা বউ বাসায় নিয়ে আসলেন অথচ দশ লাখ টাকা বের করতে পারছেন? টাকা না দিলে আমি কিন্তু মামলা করব আপনার নামে!”
আয়রার মা পূর্ণতার দিকে চেয়ে বললেন,,”তুমি টাকা দাবি করছো? তোমাকে কত ভালো ভেবেছিলাম! আর এখন টাকার জন্য বলছো মামলা করবে?”
পূর্ণতা বলল,,”আপনার হাসবেন্ড এখন আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে আপনি কি টাকা চাইবেন না? আপনি হয়তোবা অনেক ভালো টাকার দাবি করবেন না। কিন্তু আমি ও তো ভালো না আপু আমাকে এতো ভালো ভেবে লাভ নাই। আমরা যাদেরকে ভালো ভাবি বিশ্বাস করি তারা আসলেই কি আমাদের বিশ্বাসের যোগ্য হয়ে থাকে? আপনার ভাইকেও তো আপনার মা অনেক বিশ্বাস করেছিল সে কি তার বিশ্বাস রেখেছে? কারো প্রতি অন্ধ বিশ্বাস রাখবেন না। আমার টাকা দিয়ে দিন আমি চলে যাচ্ছি। না হলেও আমি চলে যাব ঠিকই কিন্তু মামলা কিন্তু দিয়ে যাব আপনার ভাইকে জেলের ভাত আমি খাইয়ে ছাড়বো।”
দিদানের কাছে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ছিল ও সেই টাকাটা দিয়ে বলল বাকি টাকা এক মাসের মধ্যে পাঠায় দেবে। কিন্তু শশী সেই টাকা দেওয়া নিয়ে বাসায় চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল। কিন্তু তাও পূর্ণতা নড়ছে না এজন্য শশীর যা গহনা ছিল সে সব এনে পূর্ণতাকে দিল। সব মিলে দশ লাখ টাকা হবে না কিন্তু পূর্ণতা বলল, বাকি টাকা যেন পাঠায় দেয়।
দিদান এতো দিন পূর্ণতার নির্লিপ্ত ভাব দেখে ভেবেছিল বোকাসোকা মেয়েটা। কিন্তু এতোটা চতুর ও বুঝতে পারেনি। ওভাবে ফাঁসিয়ে দিল।
#চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/