#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১১.
প্রভাত হলে রুম পেয়ে গেছে এজন্য চলে যাবে পূর্ণতা আজকে জানতে পারলো সেটা। মা নাকি দুইদিন আগে থেকেই জানে এজন্যই তো বলি সব কিছু কোথায় নিয়ে যায় রুমের ভেতরে মোটামুটি ভালো জিনিস ছিল সব গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে আজকে প্রভাত চলে যাবে। পূর্ণতা স্কুল থেকে এসে ব্যাগটা রুমে রেখে ড্রেস পরিবর্তন না করেই দৌড়ে চলে আসলো প্রভাতের রুমে দেখলো রোজিনা বেগম আগে থেকে এখানে এসে সব কিছু গুছিয়ে দিচ্ছে হাতে হাতে। প্রভাত গ্যাসের চলা নিয়ে রুম থেকে বের হলো পূর্ণতা ওর পিছু পিছু আসছে।
“আপনি আজকে চলে যাবেন আমাকে আগে বললেন না কেন?”
“তোমার তো খুশি দিন আজকে। আমি তোমাকে আগে এতো খুশি দিতে চাইছিলাম না এজন্যই বলিনি।”
“আমার খুশির দিন কেন?”
“তোমার অপছন্দের মানুষটা চলে যাচ্ছে এবার তুমি শান্তিতে তোমার বাসায় থাকতে পারবে।”
“আরে ওসব তো মজা করতে বলতাম অতটাও অপছন্দ করি নাকি। এখন আমাকে পড়াবে কে? আপনার কাছে পড়ে তো অনেক অংক শিখে গেছি। এখন তো আবার আগের মতন সব ভুলে যাব।”
“তারমানে বলছো তুমি আমাকে অপছন্দ করো না?’
” বাদ দেন তো এইসব আপনি যে আজকে চলে যাচ্ছেন আমাকে আগে বলেননি কেন?”
প্রভাত গ্যাসের চুলা গাড়িতে রেখে পূর্ণতা দিকে তাকিয়ে বলল,,”স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করো আর ফ্রেশ হও যাও।”
‘কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন?”
“বললামই তো আমি চলে যাব শুনলে তুমি তো অনেক খুশি হতে এজন্যই বলিনি।”
পূর্ণতা মন খারাপ করে ওভাবে প্রভাতের পিছু পিছু ঘুরতে লাগল। আর প্রভাতকে কথা বলে জ্বালিয়ে মারল প্রভাত উত্তর দিচ্ছে তো দিচ্ছে না। পূর্ণতার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেছে প্রভাব চলে যাবে শুনে। কিন্তু পূর্ণতা খারাপ লাগাটা প্রকাশ করতে পারছে না।
যাওয়ার আগে প্রভাত একটা কথাই বলে গেল,”তোমার হিজাবটা নিয়ে গেলাম পূর্ণতা এটা আমাকে তোমার কথা মনে করাবে।”
পূর্ণতা তখন বোকা কন্ঠে বলল,,’আমাকে তো আপনি অপছন্দ করেন আমার কথা মনে করে কি করবেন? আমার হিজাব টা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে যান।”
“তুমি কি আমাকে অপছন্দ কর?”
কয়েকদিন আগেও পূর্ণতা মুখের ওপর স্বীকার করলেও এখন বলল,,”না।”
“তাহলে আমিও করি না। আমি তোমাকে বলেছি তো অপর পক্ষ থেকে যা পাই আমি সেটাই ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। আর তোমার কথা কেন মনে করব সেটা আবার যখন দেখা হবে তখন বলব।”
প্রভাত চলে যাওয়ার পর পূর্ণতার মন খারাপ করে সোফায় বসে রইল। রোজিনা বেগম ওকে ডেকে কয়েকবার বলল ড্রেস চেঞ্জ করতে কিন্তু পূর্ণতা উঠল না। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে কিছু করতে ইচ্ছে করছে না। প্রভাত যেদিন এসেছিল সেদিন ও ওর মনটা এমনি খারাপ ছিল। আজ যখন চলে গেল তখন ওর মনটা সেদিনের মতন ভীষণ খারাপ। মানুষগুলো এমন কেন এরা আসার সময় মন খারাপ করে দেয় যাওয়ার সময় মন খারাপ করে দেয় এরা কেন মনের মতো চলে না। পূর্ণতার আজকে খুশি হওয়ার কথা ছিল প্রভাত আসার পর থেকে যেভাবে তাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করেছে যা সব অপমান করেছে। কিন্তু তার চলে যাওয়ার কেন ওর বুকে ব্যথা করছে?
প্রভাতের সাথে পূর্ণতার তারপরে দেখা হলো এক মাস বাদে। এই দেখা হওয়াটা নিয়ে পূর্ণতা অনেক কষ্ট করেছে। প্রভাত যখন বাসায় এসেছিল তখন ওকে কিভাবে তাড়াবে সেই নিয়ে যতটা না কষ্ট করেছে তার থেকে দ্বিগণ কষ্ট করেছে প্রভাতের সাথে কিভাবে একবার কথা বলা যায় একবার দেখা করা যায় সেই চিন্তা করে। এই এক মাসে প্রভাত কে এতো বেশি মিস করেছে পূর্ণতা বুঝতে পেরেছে মানুষটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সব সময় ঝগড়া করা বিরক্ত করা জ্বালানো যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওর এই মন খারাপ, এই মিস করাটা যখন ওর বন্ধু-বান্ধব শোনে তখন বলে তুই প্রেমে পড়েছিস। পূর্ণতার নিজেরও কেন জানি মনে হয় ও মনে হয় প্রভাতের প্রেমে পরেছে। যখন প্রভাত ওর কাছে ছিল কখনো প্রভাত কে ওর কাছে সুন্দর মনে হয়নি। কিন্তু এখন মনে হয় শ্যাম বর্ণের ওই পুরুষটার থেকে সুন্দর পুরুষ এই পৃথিবীতে আর দুটো নেই। এই পুরুষটা শুধু ওর যাকে ও জ্বালাবে, বিরক্ত করবে, যার সাথে প্রচুর ঝগড়া করবে। আবার দিনশেষে যে ওকে এত্ত এত্ত ভালোবাসা দিবে। ভালোবাসার কথা মনে হলেই পূর্ণতা লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।
পূর্ণতা রোজিনা বেগমের কাছে গিয়ে আবদার করল। ওর কয়েকদিন পরেই টেস্ট পরীক্ষা তারপরে এসএসসি পরীক্ষা প্রভাতের কাছে পড়ে ওর অনেক উন্নতি হয়েছিল কিন্তু এখন আগের মতো ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে ওর ব্রেন। প্রভাতের কাছে যদি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়া যেত অনেক ভালো হতো ওর মাকে রাজি করাতে লাগল এই বলে। যেভাবেই হোক প্রভাতের কাছে পড়ার ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়। পূর্ণতার মা তো এসব শুনে সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল কারণ তার অনেক পছন্দের প্রভাব। তিনি প্রভাতকে বাসায় ইনভাইট করল।
এক সপ্তাহ পর প্রভাত শুক্রবারে ওদের বাসায় আসবে বলল। পূর্ণতা প্রভাত আসবে শুনেই লজ্জা পেতে লাগল। আগে যখন প্রভাতের সাথে দেখা হয়েছে ঝগড়া হয়েছে তখন ওর মনে কোন অনুভূতি ছিল না। কিন্তু এখন এই এক মাসে ওর ছোট্ট মনটায় প্রভাত আষ্টে-পৃষ্টে ছড়িয়ে গেছে ভালোবাসে তাকে। এখন প্রভাত নামটা উচ্চারণ করতে হাজারো প্রেম প্রজাপতি উড়াউড়ি করে। পূর্ণতা কি পড়বে? কিভাবে সাজবে? প্রভাতের সামনে নিজেকে পরিপাটি সুন্দরী না বানিয়ে যাওয়া যাবে না।
পূর্ণতা আলমারি থেকে সবচেয়ে ফেভারিট টপসটা বের করে পরলো তারপরে সুন্দর করে সেজেগুজে প্রভাতের অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে রোজিনা বেগম মেয়েকে নতুন জামা পড়ে সেজেগুজে ঘুরতে দেখে কপাল কুঁচকে রইল
জিজ্ঞেস করলেন,,” এতো সাজগোজ কেন?
পূর্ণতা বলল,,”এমনি সাজতে ইচ্ছা করলো, ভাবছি কয়েকটা ছবি তুলে আব্বুকে পাঠাবো।”
আব্বু অনেকদিন ধরে আসে না এজন্য ওর আব্বু মাঝে মাঝেই পূর্ণতার ছবি চায়। পূর্ণতা খুব একটা ভিডিও কলে কথা বলে না ওর আব্বুর সাথে। রোজিনা বেগম শুনেই ফোন নিয়ে এসে মেয়ের ফটাফট কয়েকটি ছবি তুলতে লাগল তখনই কলিং বেজে উঠল পূর্ণতা ছবি তোলা বাদ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল দরজা খুলতে।
প্রভাত প্রথম দিনের মতো মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে এসেছে। ঢোলা ঢালা চেক শার্ট। প্রথমদিন পূর্ণতার ছেলেটাকে দেখে যতটাই আনস্মার্ট আর অপছন্দ হয়েছিল আজকে ফের দেখে পূর্ণতা মুগ্ধ হলো প্রভাতের সবকিছুই যেন ওকে মুগ্ধ করল ওই চশমা, এই ঢোলাঢালা শার্ট সব যেন পারফেক্ট। প্রভাত অনেক লম্বা গায়ের রং শ্যামবর্ণের ওর মনে হলো ছেলেদের এই গায়ের রংটায় পারফেক্ট।
প্রভাতের মুখের দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা লাজুক হেঁসে বলল,,”কেমন আছেন?”
“ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো ভেতরে আসুন না।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে ভেতরে এসে বসল। পূর্ণতা প্রভাতের পাশে এসে দাঁড়ালো রোজিনা বেগম হালকা চা নাস্তা এনে প্রভাত এর পাশে বসল।
“কতদিন হয়ে গেল চলে গেছো আর তো দেখা সাক্ষাত নাই।”
“হ্যাঁ আন্টি এদিকে আর আসা হয় না আসলে আপনার সাথে দেখা করে যেতাম। পড়ালেখা নিয়ে অনেক বিজি থাকি।”
“বুঝি তো তুমি তো আর আমার মেয়ের মতো ফাঁকিবাজ।”
পূর্ণতা অন্যদিন হলে হয়তো মায়ের কথা শুনে রাগ জেদ দেখিয়ে চলে যেতো। কিন্তু আজকে আর মায়ের কথা রাগল না ওর মায়ের কথায় ধ্যান নেই
ও প্রভাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।
পছন্দের মানুষকে দেখার মাঝেও যে কি শান্তি তা আজকে ও প্রভাতের দিকে তাকিয়ে থেকে অনুভব করছে।
কয়েকটা কথাবার্তা বলে রোজিনা বেগম পূর্ণতা কে পড়ানোর কথাটা আবার বলল। এক ঘন্টা সময় নিয়ে যেন পূর্ণতাকে একটু পড়ায়। প্রভাত সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। ছেলেটা আগের বার বাসায় থেকেও পড়াতে রাজি হচ্ছিল না এবার তো বাসায় নাই। এখন রাজি হবে নাকি টেনশনে ছিল রোজিনা বেগম। কিন্তু রাজি হওয়াতে অবাক হলো।
সন্ধ্যায় প্রভাত বলে গেল পূর্ণতা কে পাঁচটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত এক ঘন্টা পড়াবে।
পূর্ণতা প্রভাতের পিছু পিছু বাসার বাইরে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,,”আপনি কিছু বলতে চাইছিলেন?”
প্রভাত কপাল কুঁচকে বলল,,”কি?”
” চলে যাওয়ার দিন না বলে গেলেন পরের বার দেখা হলে বলবেন কেন মিস করবেন!”
“কই আমি তো তোমাকে মিস করিনি!”
পূর্ণতা অভিমানী কন্ঠে বলল,,”সত্যি একটু মিস করেননি?”
প্রভাত বলল,,”না তো তোমাকে মিস করবো কেন? যে পরিমাণ জ্বালিয়েছ আমাকে এখন তো শান্তিতে আছি জ্বালানোর কেউ নেই।”
পূর্ণতা মন খারাপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রভাত ওর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,”আগামীকাল থেকে আমি তোমাকে জ্বালাতে পড়াতে চলে আসব।”
#চলবে…
#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১২.
যথারীতি পরদিন প্রভাত পূর্ণতাকে পড়াতে আসলো। পূর্ণতা আজকেও নতুন জামা পরে সেজেগুজে আছে।
প্রভাত পূর্ণতা কে দেখেই বলল,,”তুমি যে এতো সাজতে পছন্দ করো আগে তো মনে হয়নি।”
পূর্ণতা লাজুক কণ্ঠে বলল,,”আমাকে সাজগোজ অবস্থায় দেখে আপনার ভালো লাগছে না। আমাকে কেমন দেখা যাচ্ছে?”
জিজ্ঞেস করল পূর্ণতা প্রভাত ওকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলল,,”খারাপ না।”
পূর্ণতা নিজের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা গম্ভীর করে বলল,,”এটা কেমন উত্তর হলো? কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করছি একটু তো প্রশংসা করতে পারেন।”
“আমি তোমাকে পড়াতে এসেছি তোমার রুপের প্রশংসা করতে নয়!”
দাঁত কিড়মিড় করে পূর্ণতা চেয়ার টেনে বসল। প্রভাত ওর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল,,”সেজেগুজে তোমাকে যতটা না সুন্দর লাগছিল। অভিমানী রাগী চেহারায় তোমাকে তার থেকেও ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে।”
পূর্ণতা স্তব্ধ নয়নে তাকাল প্রভাতের দিকে অনিমেষ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা কিছু বলতে যাবে প্রভাত আঙুল উঁচু করে কথা বলতে মানা করে।
প্রভাত ফের বলে,,”আমি অতটাও বোকা নই যে এই পিচ্চি চঞ্চল মেয়েটার মনে ভাষা বুঝতে পারব না। তোমার মনে কি চলছে আর কেন এমন সেজেগুজে থাকো সবটাই আমি বুঝতে পারি। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে পড়াতে আসি তাহলে তোমাকে এই নিজেকে পরিপাটি করে আমার সামনে উপস্থাপন করার টা বন্ধ করতে হবে। তুমি যদি এসব করো আমি আগামীকাল থেকে আর পড়াতে আসবো না আজকে প্রথম আজকেই শেষ।”
পূর্ণতার চোখ ছলছল করে উঠলো জীবনে প্রথম ওর মনে প্রেমের দোলা লেগেছে। প্রথম কারো প্রেমে দেওয়ানো হয়েছে। কারো জন্য নিজেকে সাজাচ্ছিল আর সেই মানুষটা ওর অনুভূতি বুঝতে পেরেও এভাবে ওকে কাঁদাচ্ছে? আসবে না বলছে সে আসবে না কথাটা শুনে ওর বুকের ভেতরটা কতটা অস্থির হয়ে উঠেছে সে কি বুঝতে পারছে?
চোখের পলক পড়তেই পূর্ণতার বাম চোখের কোনা বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।
প্রভাত পিছু ঘুরে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ফের বলল,,” তুমি যদি এভাবে সেজেগুজে আমার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করো এটা খুব বাজে দেখা যায় তোমার মা কি মনে করবে ভাবো? সে ভাববে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক চলছে। আন্টি বিশ্বাস করে আমাকে তোমাদের বাসায় জায়গা দিয়েছিল। এখন তার মেয়ের সাথে যদি আমি এমন কিছু করি তাহলে ব্যাপারটা কতটা খারাপ হয় তুমি ভাবো। তোমার বয়স অল্প নরম মন। যে বয়সটা তুমি পার করছ এই বয়সটাই সবাই ভুল করে তুমি এই ভুলের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলো না।”
পূর্ণতা ডুকরে কাঁদছে। প্রভাত ওর কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” কান্না থামাও। তোমার আম্মু যদি এসব দেখে আমি কিন্তু খুবই লজ্জায় পড়ে যাব। তুমি কি চাও আমি লজ্জা পাই বা অপমানিত হই।”
পূর্ণতা কান্না থামিয়ে দিল কিন্তু ওর ফুপাঁনো কমছে না। প্রভাত ওকে পড়াতে পারছে না এই অবস্থায়। পূর্ণতা থম মেরে বসে আছে একবারের জন্য ও ওর দিকে তাকাচ্ছো না। মাথা নিচু করে বসে আছে আর ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। প্রভাত ওর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,,”আমি কি চলে যাবো?”
চলে যাবো শুনতে পূর্ণতা লাল চোখ দুটো উঁচু করে তাকালো প্রভাতের দিকে।
প্রভাত বলল,,” মুখের কি অবস্থা করেছ। কেউ এতো কান্না করে পিচ্চি মেয়ে এখনই এসবের কী বোঝো?”
পূর্ণতা বলল,,”কাঁদিয়ে এখন বলছেন এতো কেউ কান্না করে! এভাবে আমাকে কাঁদালেন?”
“আমরা তো ফ্রেন্ড হতে পারি কেন আমাদের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হতে হবে বলতো?”
“না আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না। আমরা শুধু টিচার আর স্টুডেন্ট হতে পারি। আমি আজকে পড়তে পারব না আগামী কাল থেকে পড়ব। আপনি আজকে চলে যান আমার নিজেকে সামলাতে একটু সময় লাগবে কিন্তু আমি নিজেকে সামলে নেব। ছোট হলো আমি অতটাও আবেগে জর্জরিত নয় নিজেকে সামলাতে পারি।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা ও তাকিয়ে আছে। প্রভাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে তারপর একটা দূর্বল হাসি দিয়ে চলে গেল।
পূর্ণতা প্রভাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল।
তারপর থেকে প্রতিদিনই প্রভাত পূর্ণতা কে পড়াতে আসে। পূর্ণতা আর কখনো সেজেগুজে প্রভাতের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেনি। প্রভাতের কথা পূর্ণতা রেখেছে। আর কোন দিন পূর্ণতা প্রভাতকে ভালোবাসে বা ওর জন্য ওর মনে কোন অনুভূতি আছে সেইসব প্রকাশ করেনি। ওদের মধ্যে একটা টিচার স্টুডেন্ট এর সম্পর্ক বজায় রয়েছে। প্রভাত পড়তে আসে আর পূর্ণতা যন্ত্রের মতো পড়ে তারপর প্রভাত চলে যায়। একটা জিনিস খেয়াল করেছে প্রভাত পূর্ণতা আর আগের মতো ওকে ডিস্টার্ব করে না। শুধু পড়া নিয়ে ওর সাথে কথা বলে।
প্রভাত এসে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো পূর্ণতা, পূর্ণতা শুধু ভালো আছি বলেই থেমে যায় ওকে জিজ্ঞেস করে না।
দেখতে দেখতে পূর্ণতার টেস্ট পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিল। এর মধ্যে ওর আব্বু আসবে শোনায় গেল। পরীক্ষার মধ্যে আর প্রভাত ওকে পড়াতে আসবে না শুধু ম্যাথ পরীক্ষার দিন পড়াতে আসবে। দুই দিন পর থেকে যেহেতু পরীক্ষা তাই আজকে প্রভাতের পড়ানো শেষ আবার পরীক্ষার পর থেকে পড়াবে।
পড়ানো শেষ প্রভাব চলে যাবে তখন পূর্ণতা বলে উঠল,,”একটা কথার উত্তর দিবেন?”
প্রভাত চমকে উঠল অনেকদিন পর ওর সাথে পূর্ণতা কথা বলছে।
প্রভাত বলল,,”হ্যাঁ বলো না।”
“আপনি আমার ভালোবাসাকে রিজেক্ট করেছেন আমি আপনার মতো ভালো স্টুডেন্ট নয় বলে তাই না?”
“আমি যে খুব ভালো স্টুডেন্ট তোমাকে কে বলল?”
“ভালো স্টুডেন্ট না হলে কি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে পারতেন? আমার আম্মু কি বলে জানেন আমি তো বেশি ভালো করে লেখাপড়া করি না এজন্য আম্মু বলেছে আমি ইন্টার পাশ করলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।”
” সবার মধ্যে মেধা আছে। কেউ মেধা খরচ করে আর কেউ খরচ করে না। তুমি যদি পরিশ্রম করো অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবে। হয়তোবা তুমি আমার থেকেও ভালো কিছু করতে পারলে।”
পূর্ণতা অনেকদিন পর আবার ফের আকুতি ভরা কন্ঠে বলে উঠল,,”আমিও যদি ভালো স্টুডেন্ট হয়। আপনার মতো পড়ালেখা নিয়ে সিরিয়াস হই। তাহলে কি আপনি আমায় ভালবাসবেন?”
প্রভাত বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে পূর্ণতার দিকে।
“কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন? আপনি যদি আজকেও আমাকে ফিরিয়ে দেন আমি করে সত্যি বলছি আমি একটা পরীক্ষাও পাশ করার মতো দেব না।”
পূর্ণতার কথা শুনে প্রভাত চমকে উঠল,,”এসব কি বলছো পূর্ণতা?”
“আম্মু আব্বু সবাই যেমন আমাকে পূর্ণ বলে ডাকে আপনি ও আমাকে পূর্ণ বলুন না। ভালবেসে ছোট্ট করে পূর্ণ বলে ডাকবেন ইশ কি মধুর ডাক। দেখুন না আমাদের নামের কত মিল প দিয়ে প্রভাত প দিয়ে পূর্ণতা। আমি শুধু প্রভাতের পূর্ণ হতে চাই।”
প্রভাত রুম থেকে বের হতে গেলে পূর্ণতা ওর রাস্তা আটকে বলল,,”আমার কথার উত্তর দিয়ে যান আমি কিন্তু সত্যি টেস্টে ফেইল করব।”
প্রভাত দ্বিতীয়বারের মতো পূর্ণতা কে রিজেক্ট করে চলে গেল।
পরদিন পূর্ণতার বাবা আসলো। পূর্ণতার বাবা শাহিন আলম মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। পূর্ণতা নিজের বাবাকে মোটামুটি জমের মতো ভয় পায়। শাহিন আলম মেয়েকে স্কুল নিয়ে আসে পরীক্ষার জন্য। প্রতিদিন নিয়ে আসে নিয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে মেয়ের কাছে বেশি থাকতে পারে না একটা মাত্র মেয়ে সে মেয়েকে অনেক বেশি ভালোবাসে কিন্তু সে মানুষটা একটু রাগী প্রকৃতি। এজন্য মেয়েটা ওকে ভয় পায় সে জানে কিন্তু সে অন্য সব বাবার মতো অতটা নরম হয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে পারে না। কিন্তু বাড়িতে আসলে যতটুকু সময় পারে মেয়ের সাথেই কাটানোর চেষ্টা করে।
তৃতীয় পরীক্ষাটাই ছিল পূর্ণতার ম্যাথ পরীক্ষা সেদিন প্রভাত ওকে পড়াতে আসলো না। এদিকে পূর্ণতা যথারীতি পরীক্ষা শেষ করল। পরীক্ষার পরে ওকে নিয়ে ওর বাবা মা নানা বাড়ি চলে এলো। নানা বাড়ি থেকে দাদা বাড়ি ঘোরাঘুরি করে বাসায় আসার পর আরও এক সপ্তাহ থাকলো শাহিন আলম তারপর তিনিও চলে গেল তার কাজে। পূর্ণতার স্কুল বন্ধ ছিল না টেস্ট পরীক্ষার পর থেকে কোচিং শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু বাবা যেহেতু এতোদিন পর এসেছে একটু ঘুরাঘুরি হয়েছে এজন্য কোচিং করেনি। আসার পর ওর কোচিং করার কোন রকম ইচ্ছা নেই। ওদিকে ফেইল করবে নিশ্চিতভাবে।
পূর্ণতার পরীক্ষার রেজাল্ট দিল ও ফেইল করেছে কিন্তু কিভাবে যেন তিনটা সাবজেক্টে পাশ করে গেছে ও তো খুবই বাজে লিখেছিল পাশ করল কিভাবে। স্টুডেন্টরা ফেইল করে অবাক হয় আর ও পাশ করে অবাক হয়েছে।
আর রেজাল্টের পর ও আশা করে আছে যেকোন দিন প্রভাতের আগমন ঘটবে ওদের বাসায়। এদিকেও ফেইল করেছে ওর মাকে ও বলতে পারছে না। গার্জেন নিয়ে না গেলে ওকে ক্লাসে ঢুকতে দেবে না বলেছে। বিকেলের মায়ের কানে খবরটা চলে এলো। রোজিনা বেগম শাহিন আলম কেও বলে দিল। তারপর পূর্ণতা কে বকাঝকা করল সাথে চর থাপ্পড় দিল। পূর্ণতার ফর্সা গালে থাপ্পড় এর নীল দাগ পরে গেল।
#চলবে..
( আপনাদের লেখিকার আজ কি হলো? এতো চমক পাঠকরা কি নিতে পারবে? আজকেই গল্প শেষ করার চিন্তাভাবনা করতেছি নাকি। যাইহোক অনেকদিন পাঠকের অভিযোগ শুনলাম তাই এতো চমক দিতেই হলো? এক দিন তিন পর্ব পেয়ে তা আপনাদের অনুভূতি কি?)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/