“ #পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
৮.
প্রভাত ঘাড় কাত করে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,,” তোমার কি চিৎকার করতে অনেক ভালো লাগে? জানো না চিৎকার করা স্বাস্থ্যের ও পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর?”
পূর্ণতা রাগে আগুন হয়ে প্রভাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,” আপনাকে জ্ঞান দিতে বলিনি। আপনি আমার দোলনায় বসেছেন কার পারমিশন নিয়ে?”
প্রভাত ওর কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,,” শরীরের সব এনার্জি চিৎকার করে আর মাথা গরম করেই শেষ করো। এজন্য শরীরের শুধু হাড্ডি মাংস নেই। নিজের কথা ভেবে অনন্ত রাগ আর চিৎকার কমাবে কেমন?”
পূর্ণতা মাথায় হাত দিয়ে বলল,,” আমি কি বলছি আপনি কি আমার বাংলা কথা বুঝতে পারছেন না?”
প্রভাত বলল,,” তুমি কি বাংলায় না বুঝলে অন্য ভাষায় ট্রাই করবে?”
” আপনি আমার দোলনা থেকে নামুন।” রেগে চিৎকার করে যখন ঘাড়ত্যারা প্রভাত কে থামাতে পারলো না। তখন পূর্ণতা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে ফেলল। পূর্ণতার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রভাত বলল,,” আরে কেঁদে ফেলবে নাকি? উঠছি উঠছি,!”
বলেই প্রভাত উঠে পড়ল। পূর্ণতা আঙ্গুল তুলে বলল,,” আর কখনো আমার জিনিসে হাত দিবেন না।”
প্রভাত বলল,,” তোমার জিনিস ধরার অনুমতি না পেলেও তোমাকে ধরতে পারব তাই তো?”
” মানে?”
” কিছু না তুমি বই পড়ো?”
“কিসের বই?”
” নাও পড়ে দেখো।”
বলেই পূর্ণতার হাতে প্রভাত নিজের হাতের উপন্যাস বইটা দিল।
পূর্ণতা ফেরত দিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,” নিজের একাডেমিক বই ই পড়ি না আমি নাকি এখন এইসব বই পড়ব। আপনার বই আপনি পড়েন। আমি পড়ব না।”
প্রভাত বলল,,” পড়ে দেখো ভালো লাগবে।”
” বললাম না পড়ব না। জোর করছেন কেন?”
” ওকে।”
প্রভাত চলে গেল। পূর্ণতা একাই বসে রইল।
প্রভাত ওদের বাসায় একদিন এক বেলায় খেয়েছিল। আম্মু এর পর ও কয়েকবার ওকে খেতে ডেকেছে কিন্তু আর খেতে যায় নি। এতো দিন বাইরে খেয়েছে। পূর্ণতা শুনেছে প্রভাত সিলিন্ডারের গ্যাস আনবে নিজের রান্না নিজেই করবে। পূর্ণতা আযান পর্যন্ত ছাদে কাটিয়ে নিচে আসে। প্রভাত কে বাসা থেকে কীভাবে তাড়ানো যায় সেসব ফ্রেন্ডদের কাছে শুনে এসেছিল এখন কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।মন ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয় পূর্ণতার। ডিনারের পর পূর্ণতা প্রভাতের রুমে উঁকি মারল। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে দেখা যাচ্ছে। পূর্ণতা নখ কাটছে আর ভাবছে ভেতরে ঢুকবে নাকি ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে গেল। প্রভাত পড়ায় এতোটাই মগ্ন ওকে খেয়াল করেনি। ও ভূতের মতো গিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে কি পড়ছে। ও চোখ বড়ো বড়ো করে জটিল অংক প্রভাত কে করতে দেখছে। প্রভাতের হাতের লেখার প্রেমে পড়ে গেল পূর্ণতা। ও যেমন লেখাপড়ায় অমনোযোগী তেমনি ওর হাতের লেখা ও বাজে। মাঝে মাঝে নিজের লেখা নিজেই বুঝে না বিশেষ করে পরীক্ষার হলে লাস্ট ত্রিশ মিনিট ও কি লেখে আল্লাহ জানে।
পূর্ণতা কি পরিকল্পনা নিয়ে ভেতরে এসেছিল ভুলে গেছে ও হা করে প্রভাত কে লিখতে দেখছে।
” তুমি এখানে কি করছো?”
প্রভাতের কথা শুনতেই ছিটকে উঠে পূর্ণতা। বুকে ফুঁ দিয়ে বলে,,” এমনি আপনার সাথে দেখা করতে এলাম।”
কি বলবে বুঝতে না পেরে বলল।
প্রভাত ভ্রু কুঁচকে বলল,,” আমার সাথে তুমি দেখা করতে এসেছো?”
“হ্যাঁ।”
” কেন আমি কি নতুন বর? আগে কখনো দেখো নি? বিকেলেও তো ঝগড়াঝাঁটি করলে।”
” হ্যাঁ করেছিলাম কিন্তু ভুলে গেছি।”
” তোমার পড়াশোনা নাই?”
” অবশ্যই আছে থাকবে না কেন?”
” তাহলে পড়া বাদ দিয়ে এখানে কি করছো?”
পূর্ণতা বলল,,” আম্মু বলল আপনি নাকি অনেক ভালো স্টুডেন্ট তাই দেখতে আসলাম ভালো স্টুডেন্ট রা কীভাবে পড়ে।”
” দেখা শেষ হলে এবার যেতে পারো।”
পূর্ণতা মুখ বেকা করে বেরিয়ে এলো। বিড়বিড় করে প্রভাত কে বকতে লাগল কি ভাব দেখালো যেন আমি উনার সাথে গল্প করতে গিয়েছি।
পূর্ণতা নিজের রুমের সামনে সটান দাঁড়িয়ে আছে কারণ পিছু থেকে ওর মা ওকে ডেকে উঠেছে।
” কোথায় গিয়েছিলে?”
পূর্ণতা চমকে উঠে বলল,” কই কোথাও না তো এমনি হাঁটাহাঁটি করছিলাম!”
” পড়া বাদ দিয়ে কিসের হাঁটাহাঁটি? সামনে তুমি মেট্রিক পরীক্ষা দেবে ভুলে গেছো? এখন অন্তত পড়ালেখা নিয়েছি সিরিয়াস হও। সারাদিন তো শুয়েই কাটালে।”
” আমি অসুস্থ ছিলাম আম্মু।”
” এখন তো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছ। পড়তে গেলেই তোমার যত বাহানা।”
“যাচ্ছি তো আম্মু। বকছো কেন?” মুখ কালো করে বলল পূর্ণতা।
” তোমার আব্বু কথা বলবে আসো।”
পূর্ণতা বলল,,” আমি তো এখন পড়ব পরে কথা বলি।”
বলেই পূর্ণতা তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেল। বাবার সাথে কথা বলার কথা শুনলেই পূর্ণতা বুক কেঁপে উঠে। ক্লাস পরীক্ষায় পূর্ণতা ২ পেয়েছে এটা নিয়ে ক্লাস ম্যাম রোজিনার কাছে কমপ্লেন করেছে। এভাবে পড়লে পূর্ণতা নিশ্চিত ফেইল করবে। রোজিনা বেগম রেগে বোম হয়ে আছে। গণিত ম্যামের কাছে প্রাইভেট পড়ে পূর্ণতা বাইরে ও টিচার আছে এতো টিউশনি করিও যদি এই রেজাল্ট শুনতে হয় মেজাজ কার না গরম হবে?
পূর্ণতা ক্লাসে ও মায়ের কাছে বিচার যাওয়ার ভয়ে পেট ব্যথার ড্রামা করল কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হলো না।
পূর্ণতার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ডেইট পড়ে গেল হুট করেই। পূর্ণতা যত বাঁদরামি করুক না কেন পরীক্ষা আসতেই ভয়ে লক্ষি হয়ে গেল। কারণ পরীক্ষা পর রেজাল্ট খারাপ হলে বাবার কাছে খবর চলে যাবে আর বাবার ধমক পূর্ণতা খেতে চায় না। এজন্য মনোযোগী হয়ে উঠলে পড়ার টেবিলে। প্রভাত কে জ্বালানোর আর কোন পন্থা অবলম্বন করল না। আপাতত পরীক্ষা নামক ঝড় থেকে বাঁচতে হবে।
অন্য সব পরীক্ষা ভালোই ছিল কিন্তু ম্যাথ পরীক্ষার দিন ঝামেলায় পড়ে গেল পূর্ণতা। ম্যাথ ওর মাথায় ধরে না বলে ও আর্টস নিয়েছে। কিন্তু তবুও এই গণিত সাবজেক্ট ওকে ছাড়ছে না। কেন রে এই সাবজেক্ট শুধু সাইন্স দের দিলেই তো হয়। কলম কামড়াচ্ছে শুধু এতো এতো অংক আর ও মোটে দুই তিনটা সহজ নিয়ম পারে। আরো কয়েকটা শিখেছিল কিন্তু টেনশনে এখন মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছে। একটা অংক ও করতে পারছে না অর্ধেক করেই গুলিয়ে ফেলছে। পূর্ণতা মায়ের কাছে গেল মায়ের ফোন চাইতে ম্যাম ও দূর্বল বলে বলেছিল বাসায় করতে না পারলে আমাকে কল করিও। ও মায়ের ফোন দিয়ে ম্যাম কে কল করে জিজ্ঞেস করবে।
পূর্ণতা কে রোজিনা বেগম নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,,” পড়া বাদ দিয়ে এখানে কি?”
” আম্মু ম্যাম কে একটু কল দিয়ে দাও একটা অংক করতে পারছি না।”
মিথ্যা বলল ও কোন অংক করতে পারছে না। একটা অন্তত করতে পারলেও শান্তি পাবে।
“সকাল হতেই পরীক্ষা এখন তুই কল দিয়ে কি এমন বুঝতে পারবি? যা নিজে যা পারিস তাই কর।”
” আম্মু দাও না।”
” ফোনে বললে তোর মতো গাধা স্টুডেন্ট কি কিছু বুঝবে?”
পূর্ণতা মুখ গোমড়া করে বলল,,” তাহলে আম্মু এখন কি করব?”
” এতো দিন কি করছিস?”
” তখন তো পারতাম এখন এতো নিয়ম করতে গিয়ে সব গুলিয়ে গেছে।”
” পারলে সেটা কেউ গুলিয়ে ফেলে?”
” না বকে নিজে করে দাও পারলে।”
” প্রভাত আছে ওকে ডেকে দেই?”
পূর্ণতা চিৎকার করে উঠল,,” না না উনাকে ডাকার কি প্রয়োজন?”
” ও ভালো ম্যাথ বুঝে। ও দেখিয়ে দিক তোকে।”
পূর্ণতা কিছু তেই প্রভাত এর কাছে ম্যাথ করবে না এমনিতেই যে এটিডিউট যদি জানে ও এতো খারাপ স্টুডেন্ট না জানি কত মজা নিবে না দরকার নেই। নিজে যা পারি তাই করি যাই।
” আম্মু আমি একাই পারব যাই ট্রাই করি। কারো দরকার নেই ওই লোকটাকে কখনোই আমার পড়াশোনা নিয়ে কিছু বলবে না।”
পূর্ণতা চলে গেল। নিজের মান সম্মান ক্ষুন্ন করতে চায় না ও।
পরীক্ষা পর ওদের স্কুল অফ। স্কুল অফ মানেই মাথায় কু বুদ্ধি ঘোরাফেরা করা। পূর্ণতা অনেকদিন যাবত প্রভাতের দেখা পায় না। ও নিজের পড়া নিয়েই আর পরীক্ষা নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিল এখন ফ্রী হতেই ওর মাথায় প্রভাতের চিন্তা এসে ভিড় করল। ও পা টিপে টিপে প্রভাতের রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। প্রভাত তখন রান্না করছিল। ও উঁকি মেরে দেখে প্রভাত কি যেন রান্না করছে। পূর্ণতা ভেতরে এসে বলল,,” কি করেন?”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে চেয়ে বলল,,” কেলাম খেলি খেলবে?”
পূর্ণতা ভ্রু কুঁচকে বলে,,” আপনি তো রান্না করছেন! কেলাম কই?”
প্রভাত বলল,,”দেখতে পাচ্ছ রান্না করছি তাও আয়োজন করে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“সুন্দর করে একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম। আপনি আমার সাথে আবার ঝগড়া করতে চাইছেন?”
“চোখ থাকতেও যদি জিজ্ঞেস করো তাহলে আর কি বলব।”
“যাইহোক কেলামের কথা যেহেতু বলেন আপনার কাছে কি কেলাম আছে?”
“কেন খেলবে নাকি?”
“হ্যাঁ খেলতাম আমার মামা বাড়ি গেলে তো মামাতো ভাই বোনদের সাথে খেলি। অনেক ভালো লাগে। আছে নাকি?”
“আছে কিন্তু তোমার সাথে খেলবো না!”
পূর্ণতা মুখটা হা করে বলল,,”কি বললেন আমার সাথে খেলবেন না?”
“না”
“কিন্তু কেন?”
“তোমার সাথে খেলার মোড নাই।”
“আমি যেহেতু বলেছি আপনাকে আমার সাথে খেলতে হবে। মনে রাখবেন আপনি কিন্তু আমাদের বাসায় থাকছেন। আমাদের বাসা থেকে আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করতে পারেন না।”
“খেলব না কি করবে?”
“আমি আম্মুকে বলে দেবো আপনি আমাকে ইনসাল্ট করেন!”
“বলে দাও আমার কি? তাও খেলব না।”
“আমি কিন্তু কান্না করে দেব!”কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল পূর্ণতা।
পূর্ণতার মুখে এক্সপ্রেশন দেখে প্রভাত হা হা করে হেসে উঠল।
#চলবে….
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/