#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২১
___________
ছাদের এক কোনায় বর্ডার ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে সাবা৷ তাঁর অতি নিকটে পাশেই আহি। দুপুরে সকলের খাওয়া-দাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা চলে। আড্ডার এক পর্যায়ে সাবা আহিকে উদ্দেশ্য করে বলে -‘ চলো ছাদে ঘুরে আসা যাক ‘।
সকলেই যখন ভয়ে আমতা আমতা করছিলো সাবা তখন হাত ধরে প্রায় জোর করেই আহিকে বসা থেকে ওঠায় এবং হিয়াকে বলে ছাদে নিয়ে যেতে। হ্যারি সম্মতি দিতেই হিয়া খানিকটা সাহস পায় এবং ম্যাম আর ভাবিকে নিয়ে যায় ছাদে। সেখানে কিছুক্ষণ থেকেই জরুরি এক কাজে নিচে চলে যায় হিয়া। এতে অবশ্য সাবার সুবিধাই হয়।
প্রাণখুলে উন্মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিচ্ছে আহি। দের বছরের বিবাহিত জীবন তাঁর অথচ আজি প্রথম ছাদে প্রবেশ করলো। বিকেলের নির্মল আবহাওয়া, আকাশের স্বচ্ছ রূপ দারুণ এক অনুভূতিতে সিক্ত করছে ওদের। বিকেলের সময়টা হয় খুবই স্নিগ্ধ। এই আরামদায়ক প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জানাশোনা হয়ে গেলে দিনের আর অন্য কোন সময়টুকুই আপনার হৃদয় হরণ করতে পারবে না।
আহি যখন প্রকৃতির সকল স্নিগ্ধতা গায়ে মাখাতে ব্যাস্ত সাবা তখন সামনে পিছনে বাম-ডানে ত্রুটিশূন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অতঃপর আচমকাই আহির ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে চিলেকোঠার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ছাদে প্রবেশের সময়ই ঘরটাতে অতি যত্ন সহকারে চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলো। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি জ্ঞান অত্যন্ত প্রখর। কারো ভালোর জন্য কারো জীবন সুখময় করে তোলার জন্য যদি ন্যায়ভাবে কপটতা করতে হয় তাঁর জন্য সে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। হ্যাভেন যদি চলে ডালে ডালে তাহলে সে পাতায় পাতায় চলবে এবং আহিকে শিরায় শিরায় চলার পরামর্শ দেবে।
চিলেকোঠার ঘরটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ভিতরে পুরোনো কিছু কাঠের আসবাবপত্র আর ভাঙা একটি চৌকি রয়েছে। সেই চৌকির একপাশে সাবা আর আহি মুখোমুখি হয়ে বসলো।
-‘ তাহলে সংসার করার সিদ্ধান্তই নিয়েছো ‘?
-‘ ম্যাম আমি নিয়েছিলাম কিন্তু পারছিনা ‘। উত্তেজিত হয়ে বললো আহি।
বিরক্তিতে ভ্রুযুগল কুঁচকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে সাবা বললো,
-‘ আমি তোমাকে ডায়েরি পড়তে দিয়েছি মানে এই নয় আবেগে গা ভাসিয়ে মধ্যরাতেই ফিরে আসবে শ্বশুর বাড়িতে। আমি তোমাকে ডায়েরিটা এজন্য দিয়েছিলাম যাতে নিজের সঠিক অনুভূতি বুঝতে পারো। ঠিক,ভুল বুঝতে পারো এবং আত্মসম্মান বজায় রেখে সঠিক একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারো। বুঝেছো নিজের ভালোবাসা কিন্তু আত্মসম্মান খুইয়িয়ে। আবার সেই ভালোবাসা টুকুও মিলিয়ে যাচ্ছে হ্যাভেনের বিশৃঙ্খল আচরণে’।
আহি মাথা নিচু করে ফেললো তাঁর দুচোখ জলে ভরে এসেছে। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে গাল বেয়ে টপটপ পড়তেও শুরু করলো। তা দেখে সাবা চরম বিরক্ত হয়ে বললো,
-‘ এই মেয়ে চোখের পানি কি এতোই সস্তা যে এতো অল্পতেই অনবরত ঝড়তে থাকবে ‘।
-‘ কি করবো ম্যাম সেদিন হ্যাভেনের চিন্তায় দিশেহারা হয়েই ফিরে এসেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি ‘।
-‘ ভুল? ফিরে আসাটা কি আদেও ভুল? বিয়ে হয়েছে ওর সঙ্গে তোমার ছাড়তে চাইলেই কি এতো সহজে ছাড়া যায়? যদি বুঝতাম ওর প্রতি তোমার ফিলিংস নেই তাহলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার ছিলো কিন্তু না ওর প্রতি শুরু থেকেই তোমার গভীর এক অনুভূতি রয়েছে। একদিকে ঘৃণা অন্য দিকে ভালোবাসা গলায় কাঁটা হয়ে রয়েছে হ্যাভেন তোমার। যখনি গিলে ফেলার চেষ্টা করছো তখনি কোন না কোন ভাবে আবার উগ্রানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে। নিজের ভাবনায় নিজের সিদ্ধান্তে অটুট না থাকার কারনেই এই সমস্যার সৃষ্টি ‘।
আহি নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাবার দিকে। সাবা কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলতে শুরু করলো,
-‘ সেদিন ডায়েরিটা পড়তে এজন্যই দিয়েছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম হ্যাভেনের প্রতি তোমার অনুভূতির জায়গাটা ঠিক কি? আর দেখেও ফেললাম কিন্তু আফসোস তুমি এখনো নিজেকে সঠিকভাবে বুঝতেই পারলে না। এই ভাবছো ভালোবাসো থেকে যাবে এই ভাবছো মানুষ টা জঘন্য ঘৃণ্য একসাথে থাকা অসম্ভব এই দোটানা তোমায় এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে রেখেছে যে নিজের ব্যাক্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছো। প্রতিনিয়ত নিজের আত্মসম্মানের সাথে নিজের প্রাপ্ত অধিকারকেও বলি দিচ্ছো ‘।
-‘ অনুভূতি দিয়ে কি হবে? যেখানে হ্যাভেন আমাকে ভালোইবাসে না। সে আজো রূপসাকেই ভালোবাসে। আজো রূপসার সাথে যোগাযোগ রেখেছে। অসুস্থ হয়ে হসপিটালে থাকাকালীনই রূপসার সাথে আবার যোগাযোগ করে সে। যদিও রূপসাই আগে এসেছিলো কিন্তু সে কন্টিনিউ করেই যাচ্ছে। রূপসা জিসানকে ডিভোর্স দিয়ে হ্যাভেনের সঙ্গে থাকবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘।
-‘ তুমি এসব কি করে জানলে ‘?
-‘ সবটা শুনে নিয়েছি ওনি আড়ালে নয় আমার সম্মুখে বসে আমার পাশে শুয়েই রূপসার সাথে কথা বলে ‘।
-‘ আর তুমি এসব দেখেও চুপচাপ সহ্য করো ‘? দাঁত কিড়মিড় করে প্রশ্নটি করলো সাবা।
-‘ আর কি করবো? কি করার আছে? ঐ মানুষ টা কি আমায় গুরুত্ব দেয়? কখনো আমার ইচ্ছের মূল্য দেয় ‘?
-‘ তুমি ঐ মানুষ টাকে কতোটুকু গুরুত্ব দাও আহি ‘?
-‘ কেনো আমি গুরুত্ব দিইনি? রাতের পর রাত স্ত্রী হিসেবে তাঁর কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। সমস্ত কর্তব্য পালন করছি ‘।
-‘ হুম কাঠের পুতুলের ন্যায় ওঠছো আর বসছো। নিজের খেইই হারিয়ে ফেলেছো অন্যের খেই ধরে রাখবে কি করে ‘?
-‘ মানে ‘?
-‘ তুমি জানো হ্যাভেন সাইকোপ্যাথিতে ভুগছে সে ট্রিটমেন্ট করাতে ইচ্ছুক নয় যার প্রতি মনের গহীনে অনুভূতি রয়েছে। যার প্রতি অধিকার রয়েছে তাঁকে সুস্থ করার কথা কখনো ভেবেছো? রাতের পর রাত দিনের পর দিন মানুষ টা কে তোমার প্রতি অধিকার খাটাতে দিয়েছো। কখনো নিজের অধিকারের কথা ভেবেছো? রূপসা ফিরে আসতে চাইছে শুনে চুপচাপ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছো। একবারো কি হ্যাভেনকে প্রশ্ন করেছো সে কেনো এমন করছে তুমি বর্তমান থাকা সত্ত্বেও ‘?
আহি নিশ্চুপ হয়ে গেলো একদম। গরমে দুজনের মুখেরই করুণ অবস্থা বেশী সময় নেই সন্ধ্যা হতে। ফিরতে হবে সাবার তাই তরান্বিত হয়ে প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলতে শুরু করলো সে,
-‘ লজ্জাবতী লতিকা ভয় কাতুরে রমণী হয়ে না থেকে নিজেকে শক্ত করো আহি ‘।
-‘ আমি নিজেকে যতোবার শক্ত রাখতে চেয়েছি ততোবার আমায় ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন ওনি ‘।
-‘ এমন শক্ত নয় আহি। তুমি নিজের পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করো। যুগ পাল্টেছে আদিম যুগে বসবাস করছো না তুমি। একটা ছেলে জোর পূর্বক তোমায় বিয়ে করেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তাঁর প্রতি ভালোবাসাও জন্মেছে। তুমি তোমার অধিকার বুঝে নাও স্বামীকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করো। কার কাছে বিচার চাইবে? কোন আইনের সহায়তা নেবে? নিজের আইন নিজের হাতেই তুলে নাও আহি। যদি একসঙ্গে থাকতে চাও ঐ মানুষ টা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন উপহার দিতে চাও নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে স্ট্রং হয়ে নিজের অধিকার এবং ভালোবাসা বুঝে নাও। আর যদি থাকতে না চাও তাহলে হিসেবটা আলাদা ‘।
-‘ আমি বুঝতে পারছিনা ‘।
-‘ নিজের আসল সত্তায় ফিরে আসো। প্রাণখুলে বাঁচো। যে খোলসটা ঘিরে রেখেছে তোমায় তা খুলে ফেলো। নিজেকে গুরুত্ব দাও নিজের অনুভূতি কে মূল্যায়ন করো। নিজের অধিকারকে বুঝে নাও। নিজের সাথে আর কোন অন্যায় হওয়ার সুযোগ দিও না। সবশেষে দেরবছর যাবৎ যে মানুষ টার সঙ্গে রয়েছো সেই মানুষ টাকে বুঝার চেষ্টা করো। তাঁর ভিতরের আসল হ্যাভেনকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসো ‘।
-‘ ওনি খুব ভয়ংকর আচরণ করে ম্যাম আমি পারিনা স্বাভাবিক থাকতে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাই ‘।
-‘ বাঘ না ভাল্লুক ওনি একটা ধমক দিলে তিনটা ধমক দিয়ে দেবে। গায়ে হাত তুলতে এলে এমনভাবে জরিয়ে ধরবে আর ছাড়বেই না। আমার এই দুটি চোখ ভুল হতে পারেনা। হ্যাভেন বাইরে থেকে পাথর হলেও ভিতরে ঠিক একদলা নরম মাটি বই আর কিছু না৷ একটা মেয়ের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে যে ছেলে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় সে কি করে স্ট্রং বা নির্দয় হতে পারে? আমি তোমাকে হলফ করে বলতে পারি তুমি যদি একটু সাহস করে ওর সাথে প্রতিবাদ করতে পারো, সেই সাথে ওকে নিজের স্বামী হিসেবে মনে প্রাণে মেনেছো, ওর প্রতি তোমার ভালোবাসা বোঝাতে পারো তাহলেই কাজ হবে সেই সাথে অবশ্যই একজন সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। এ বিষয়ে তুমি তোমার শ্বশুর মশাইয়ের সাথে কথা বলতে পারো। শুধু হ্যাভেন নয় এ বাড়িতে মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলার চেষ্টা করো। সকলকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করো। আমি তোমায় জোর করছিনা ফিরে যখন এসেছো চাইলেই স্বস্তির এক জীবন উপভোগ করতেই পারো ‘।
আচমকাই সাবাকে জরিয়ে ধরল আহি। হুহু করে কেঁদে দিয়ে বলতে লাগলো,
-‘ আপনার মতো একজন খুব প্রয়োজন ছিলো ম্যাম। আপনি বড় বোনের মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনি আমার শুভাকাঙ্খী ‘।
সাবা তাঁর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-‘ সে বুঝলাম কিন্তু এতো সুন্দরী বউ ঘরে থাকতে স্বামী বাইরে নজর দিলে সেই স্বামীকে টাইট তো দিতেই হবে ‘।
আহি মাথা তুলে চোখের পানি মুছে মৃদু হেসে বললো,
-‘ হ্যাঁ অবশ্যই আজ থেকে হ্যাভেন তালুকদার বুঝবে এই আহি ঠিক কি কি করতে পারে। উপরওয়ালা এতো রূপ দিয়েছেন স্বামীকেই যদি ধরে রাখতে না পারি এই রূপের মূল্য কি ‘?
-‘ তবে মনে রেখ যদি কখনো জানতে পারো ক্যারেক্টারলেস স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছো তাহলে সেই স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করতে দ্বিতীয় বার ভাববে না। মানুষের জীবনে এক্সিডেন্ট আনফরচিউনেটলি ঘটে যায় তাই বলে কি জীবন থেমে থাকে নাকি। জীবনকে সুন্দর সুগঠিত ভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। হ্যাভেনের ট্রিটমেন্টের ব্যাবস্থা জলদি করে ফেলো আর হ্যাঁ অল্পতে ভেঙে পড়বে না। উপরওয়ালার ওপর ভরসা রাখবে। হ্যাভেন কিন্তু সিক এটাও সবসময় মাথায় রাখবে ‘।
____________
তালুকদার বাড়ি থেকে বের হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো। হ্যারিই সাবাকে তাঁর বাসা অবদি পৌঁছে দেয়৷ সাবা যখন গাড়ি থেকে নেমে যায় হ্যারি তখন সাহস করে ডাকে,
-‘ ম্যাম ‘।
সাবা পিছন ফিরে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দেয়। এই ছেলের চোখের ভাষা বুঝতে তাঁর বাকি নেই। বাচ্চা ছেলেটার বাচ্চামো দেখলে সত্যি তাঁর হাসি পায়। তাঁর নির্মল তো ওর থেকেও বাচ্চা ছিলো তাই তো অবুঝের মতো প্রিয়জন হারানোর ভয়ে পৃথিবীর বুক থেকে নিজেই হারিয়ে গেলো। হ্যারি ইতস্ততভাবে বললো,
-‘ একজন আপনাকে ভালোবেসে পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে এরপর হয়তো আরেকজনের পালা ‘।
সাবা এগিয়ে গেলো হ্যারির দিকে। দুচোখ তাঁর চিকচিক করছে। নিজেকে সামলে নিয়ে হ্যারির গাল টেনে দিয়ে বললো,
-‘ এ পৃথিবীতে যারা প্রিয়জনকে একা করে চিরতরে হারিয়ে যায় তাঁরা কখনো কোন নোটিশ দিয়ে যায় না হ্যারি। যদি নোটিশ দিয়ে যেতো তাহলে হয়তো তাঁরা হারিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকও পেতো না। নির্মলের জিনিসে নজর দিতে নেই৷ নির্মল যেখানে তাঁর পরিহিত একটি শার্ট,বা হ্যান্ডওয়াচ অবদি কারো সাথে শেয়ার করতো না৷ নিজ ভাইয়ের সাথেও না৷ সেখানে তাঁর এতো প্রিয়জনকে কি করে শেয়ার করবে? যদিও অপূর্ণতা,অতৃপ্ততায় জর্জরিত সে আর আমি। তবুও আমরা একজন শুধুই আরেকজনার। বাসায় ফিরে যাও এসব ভাবনা থেকেও নিজেকে বের করে নিয়ে আসো ‘।
.
আউট হাউজের বৈঠক শেষ হতে রাত এগারোটা পার হয়ে গেলো। আহি দশটার দিকেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় এবং গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। তিনভাই, আর বাবা,চাচার সাথে আউট হাউজেই রাতের খাবার সেড়েছে হ্যাভেন। ঘরে ফিরে বাথরুম গিয়ে চোখে, মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে এলো। তয়ালে দিয়ে মুখ মুছে চেয়ারে রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। এলোমেলো শাড়িতে আহিকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো। শাড়িটা হাঁটুর উপরে ওঠে গেছে ধবধবে ফর্সা পা দেখে বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলো হ্যাভেন। এতো মোলায়েম শরীর কারো হতে পারে আহিকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না তাঁর। মেয়েটার সব কিছুতেই রয়েছে ভিন্নতার পরশ হয়তো ভিতরে ভিতরে প্রতিটি নারীই এক তবে বাহ্যিক দিক থেকে আহিকে ভিন্ন লাগে তাঁর। শার্ট খুলে বিছানার একপাশে রেখে শুয়ে পড়বে এমন সময় চোখ পড়লো আহির ধবধবে ফর্সা বক্ষ বিভাজনের মাঝবরাবর লাল তিলটার দিকে। এর আগে নজরে পড়লেও তেমন খেয়াল করা হয়নি। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েদের শরীরে লাল তিল আশ্চর্যান্বিত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে। তবে আহির তিলটা বেশ জায়গা মতো ভেবেই দুর্বৃত্ত হাসি দিলো। ধীর গতিতে এগিয়ে গিয়ে গভীরভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো বক্ষ বিভাজনে অবস্থিত তিলটার ওপর৷ ঘুমের ঘোরেই শিউরে ওঠলো আহি। তাঁর শিহরিত ভাব বুঝতেই হ্যাভেন আরো গভীর থেকে গভীরতরভাবে স্পর্শ করতে থাকলো। আহির ঘুম পুরোপুরি ছেড়ে গেছে। এমন উন্মাদ হয়ে কে তাঁকে স্পর্শ করতে পারে তা আর বুঝতে বাকি নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো কিন্তু এই লোককে শত বুঝিয়েও লাভ হবেনা। অনেকটাদিন পর এভাবে কাছে এলো হ্যাভেন আর বিতৃষ্ণা নয় তৃষ্ণার্ত হয়েই সাড়া দেবে আজ সে। ঘন প্রশ্বাস ফেলে মৃদু স্বরে প্রশ্ন করলো,
-‘ কখন এলেন ‘?
কথাটা বলামাএই হ্যাভেন মাথা তুলে তাঁর ওষ্ঠদ্বয় আঁকড়ে ধরলো। খানিকটা চমকালেও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে এ প্রথম সায় দিলো আহি। হ্যাভেন যখন বুঝতে পারে আহি আজ তাঁকে ফেরাচ্ছে না। অনীহা দেখাচ্ছে না, বরং নিজেও তাঁর উন্মাদনায় মত্ত হতে চাইছে ঠিক সে মূহুর্তেই ছিটকে সড়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ফোনটাও বেজে ওঠলো।
কাঁপা হাতে ফোন হাতে নিলো হ্যাভেন। আহি ওঠে বসলো হ্যাভেনের কাঁপতে থাকা হাতের দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে দেখলো রূপসার নাম্বার। মাথায় রক্ত চড়ে গেলো তাঁর আচমকাই হ্যাভেনের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে। ফোন চৌচির না হলেও সাজোরে আঘাতে বন্ধ হয়ে গেলো। এটি বোঝা গেলো হঠাৎই ফোনের বাজনা থেমে যাওয়াতে। নিঝুম রাতে আহির ভয়ানক এই কান্ড থমথমে এক পরিবেশের সৃষ্টি করলো। হ্যাভেন চোখ বড় বড় করে আহির দিকে চেয়ে আছে এইক্ষণে ঠিক কি ঘটে গেলো বোধগম্য হতে প্রায় দেড়মিনিট সময় লাগলো তাঁর ।
চলবে..
ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন।
অসুস্থতায় ভেবেছিলাম লিখবো না দু এক লাইন লিখতে গিয়ে অনেকটাই লিখে ফেললাম। কিন্তু আগামীকাল গল্প আসবেনা।