#শান্তিসুধা
১৩.
যতই তর্জন-গর্জন করুক নুবাইদ। শান্তির কাছে এসে, শরীর স্পর্শ করে দুর্বল হয়ে পড়ল। শান্তি তার বউ। মেয়েটা দুষ্টু, মিষ্টি, চোখ ধাঁধানো সুন্দরী। অল্পবয়সী, ইঁচড়েপাকা এই বউটিকে শান্ত হয়ে ঠান্ডা মাথায় সামলাতে হবে। শান্তির নরম শরীরের উপর উবু হয়ে হাত বাড়াল সে। ডান গালটায় স্পর্শ করে শীতল কণ্ঠে বলল,
‘ এমন অশান্তি করো না শান্তি। অনেক ভালোবাসা দেবো। আদরে আদরে ভরিয়ে রাখব। শুধু শান্ত থাকো। আমাদের বৈবাহিক জীবনে সুস্থতা দাও। আমাকে ভালোবাসার ট্রাই করো। পুরো দুনিয়া পায়ের তলায় এনে দিব। ‘
নুবাইদের নরম গলায় সুযোগ পেলো শান্তি। রাগে ফুঁসে উঠে কলার চেপে ধরল শক্ত করে। কটমট করতে করতে বলল,
‘ ভেলকি দেখাবি না৷ তুই ওই মেয়ের সাথে লুতুপুতু করছিলি। নিজের চোখে দেখেছি। তোকে আমি ছাড়ব না। বাড়িতে বউ রেখে আলাদা ফ্ল্যাটে মেয়ে তুলিস। তুই একটা ক্যারেক্টারলেস! ‘
চোখ, মুখ লাল করে অত্যন্ত হিংস্র হয়ে শান্তি কথাটা বলতেই নুবাইদ ওর মুখ চেপে ধরল। কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ তোমার ভুল হচ্ছে শান্তি। আমার আটাশ বছরের জীবনে কেউ আমাকে এরূপ অভিযোগ করতে পারেনি। তুমি ভুল বুঝছ। ‘
মুখ চেপে ধরা হাতে শক্ত করে কামড়ে দিল শান্তি। আহত হয়ে হাত সরিয়ে ফেলল নুবাইদ। ঠোঁটে এখনো জখম হয়ে আছে তার। আজ আবার হাতে। কোথায় সে এই নরম ঠোঁটে, নরম শরীরে স্বামীর চিহ্ন লাগাবে। তা না মেয়েটাই বারেবারে তার শরীরে বউ সরূপ চিহ্ন দিয়ে দিচ্ছে। হতাশ নুবাইদ, ভীষণ হতাশ। বাচ্চা মেয়ে বলে ছাঁই দিয়ে ধরতেও পারছে না। যেমন ধরে ল্যাটা মাছ!
হাত সরিয়ে নিলেও নিজে সরল না। শান্তি ওর বুকে কিল, ঘুষি দিলো। এত ছটফট শুরু করল যে সামলানো কঠিন। এমতাবস্থায় আচমকা সে এক কাজ করে বসল। অশান্ত শান্তিকে জব্দ করার নতুন এক টেকনিক যাকে বলে। এই টেকনিকে কাজ না হলে শেষে বাধ্য হয়ে বউ মাইরের খাতায় নাম লেখাতে হবে। তা নয়তো উপায় নেই। এই ধানিলংকা, দজ্জাল বউ সামলাতে তাকে কঠিন হতে হবে।
শান্তির হাত দুটো চলছিল ভীষণ। নুবাইদ ওর সে হাত নিজ আয়ত্তে নিয়ে নিল। আঙুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে হাত দুটো বালিশের সঙ্গে ঠেকিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল। সে দৃষ্টি দেখে বুক ধক করে উঠল শান্তির। পাখির কিচিরমিচিরের মতো করে বকাঝকা করতে লাগল। নুবাইদের চোখের নেশা তখন ঠোঁটে এসে থেমেছে। শান্তি কিছু বুঝে উঠবার আগেই পুরুষালি ঠোঁটজোড়া ওর গালে চলে এলো। একটা গভীর স্পর্শ গেড়ে রইল যেন৷ ধুকপুক শুরু হলো বুকের মাঝখানে। সর্বাঙ্গে বয়ে গেল মাতাল করা এক শিহরণ। যে শিহরণ তার সকল রাগ,ক্ষোভ, ঘৃণা শুষে নিয়ে একরাশ ভালোলাগায় আচ্ছন্ন করে রাখল। ম্রিয়মাণ হয়ে রইল শান্তি। চোখজোড়া বুজে অনুভব করল নাফের ওর গাল ছেড়ে ঠোঁটে এগুচ্ছে। শরীর জুড়ে এক ঝংকার দিয়ে উঠল। টালমাটাল নিঃশ্বাসের তোড়ে ঠোঁট দুটো জব্দ হওয়ার আগেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নুবাইদের ঠোঁট গিয়ে ঠেকল ওর কানের নিচে। ছেলেটা লাভ বাইটে অতিষ্ঠ করে তুলল যেন। ধীরেধীরে পুরো গলায় ছেয়ে গেল নুবাইদের ঠোঁটের উষ্ণ আর্দ্র চুমু। এমন বাঁধনে বেঁধে রেখেছে যে নড়তেও পারছে না শান্তি। শুনছে নুবাইদের ভারিক্কি নিঃশ্বাস, অনুভব করছে পাগলপ্রায় করা স্পর্শ গুলো। বুকের গভীরে তীক্ষ্ণ এক যন্ত্রণা হচ্ছে। শরীর জুড়ে মাতাল করা সুখ। চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়াল নিমেষে। নুবাইদ তখন ওর নরম দেহে, বুকের বিভাজনে স্বর্গীয় সুখে মত্ত।
শান্তির হৃদয় ছটফট করছে। নুবাইদ ওর হাতদুটো ছেড়ে দিয়েছে। তবুও তাকে ঠেলে দিতে পারছে না। শরীর, মন দুটোই চাইছে। আরো চাইছে৷ নুবাইদের এই স্পর্শকে চাইছে। খুব গভীর করে। নুবাইদ নিজেও নেশায় পড়ে গেছে। এ নেশা আর ছাড়াবার সাধ্য বা ইচ্ছে নেই৷ এক পলক তাকিয়ে দেখল শান্তিকে। এগিয়ে এসে কপালে চুমু খেলো। ফিসফিস করে বলল,
‘ কী লাফালাফি শেষ? কেমন জব্দ হু? ‘
শান্তি লজ্জা পেলো। ঘোরের মাথায় খামচে ধরল নুবাইদের বাহু। নুবাইদের অনুভূতি তুঙ্গে উঠল। অধৈর্য্য তার পৌরুষ বদ্ধ উন্মাদের মতো শান্তিকে বুকে টেনে নিল। এরপর হাত চালিয়ে ত্বরিত জামার চেইন খুলতে উদ্যত হতেই বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠল। বিরক্তি সূচক শব্দে থেমে গেল নুবাইদ। পরোক্ষণেই আবার অস্থিরতায় মগ্ন শান্তির কানের লতিতে প্রগাঢ় ছোঁয়ায় চুমু খেলো। শান্তির অবস্থা তখন শোচনীয়। দু-হাতে নুবাইদকে খামচে ধরেছে। বেইমান ফোনটা বেজে চলেছে তখনো। ইম্পরট্যান্ট কল হতে পারে। ভেবেই ছেড়ে দিলো বউকে। শান্তি চুনোপুঁটির মতো মুখ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। নুবাইদ উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করল। সত্যি জরুরি কল।
ফোনে কথা শেষ করে নুবাইদ শান্তিকে বলল,
‘ মিসেস শান্তিসুধা, আমরা ক’দিন এখানে থেকে যাই কী বলেন? ‘
জবাবটা এলো অনেকক্ষণ পর। থমকানো স্বরে শান্তি বলল,
‘ আমার উত্তর চাই নাফের। মেয়েটা কেন কিস করল আপনাকে।’
শান্তির ওই থমকানো গলায় একটু অবাক হলো নুবাইদ। কপালে ভাঁজ ফেলে এগিয়ে এসে বসল পাশে। বলল,
‘ তোমার ভুল হচ্ছে। ‘
শরীরে শক্তি ক্ষীণ। তবুও শান্তি রয়েসয়ে উঠে বসল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ ভুল হচ্ছে না নাফের। আমি স্পষ্ট দেখেছি। আপনিও শেষ পর্যন্ত পরকীয়ায় জড়ালেন? আপনি এক কাজ করুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে ডিভোর্স দিন। তারপর ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে নিন। তবুও পরকীয়া করবেন না। আমি খুব ঘৃণা করি এই শব্দটাকে খুব। ‘
শান্তির গলা কেঁপে উঠল। নাফের চমকে গেল ওর কাঁপা স্বর শুনে আর লাল হয়ে আসা চোখ দেখে। বিচলিত ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করে বলল,
‘ ট্রাস্ট মি শান্তি ও আমার কাজিন। হুমুর বড়ো বোন। আমরা দুজন পিঠোপিঠি। বয়সে ও আমার কিছু মাস সিনিয়রও। ওর সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিও না। ‘
শান্তি রেগে গেল। সে মিথ্যা অপবাদ কেন দেবে? স্পষ্ট দেখল, মেয়েটা চুমু দিচ্ছে নাফেরকে। এক মিনিট! মেয়েটা চুমু দিচ্ছিল। নাফের শুয়ে ছিল।তার চোখ দুটো বন্ধ ছিল। তাহলে এখন অস্বীকার করছে কেন? অস্থির চিত্তে শান্তি বলল,
‘ আপনি সত্যিটা স্বীকার করুন নাফের। আমি কিন্তু মিথ্যা সহ্য করতে পারি না৷ ‘
‘ আমি মিথ্যা বলি না শান্তি। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড তুমি সব সময় ফ্যান্টাসীতে ভুগো। তাই ভুল দেখেছো হয়তো। এটা সম্পূর্ণ তোমার কল্পনা। ‘
এ পর্যায়ে কান্নাপ্রায় হয়ে অনুরোধ করো শান্তি।
‘ আমি এতটাও অবুঝ, বোকা না নাফের। প্লিজ সত্যিটা স্বীকার করুন। আপনি যদি সত্যি স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চান। ওই মেয়ের কাছে নেক্সট আর না যান। মোট কথা পরকীয়া না করেন। আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিব৷ কোনো শাস্তি দিব না। ‘
আশ্চর্য হয়ে গেল নুবাইদ। এসব কী বলছে শান্তি? পরকীয়া করবে সে? এসব শোনাও যে পাপ। কিন্তু ওর কথা, অনুনয় শুনে তো ওকে মিথ্যা মনে হচ্ছে না। তবে কি সত্যি ফ্যানটাসী? মায়ের জীবনী থেকেই কী ভয় পায় শান্তি? পেতেও পারে। যতই হাড্ডাগাড্ডা ভাব করুক। আসলে তো বাচ্চা মেয়ে। মায়া হলো শান্তির প্রতি। বুকে জন্মানো অল্প ভালোবাসা বিস্তর, প্রগাঢ় হলো। দুহাতে কাছে টেনে বুকে আগলে নিল মেয়েটাকে। বলল,
‘ শোনো বউ, শরীরটা ভালো লাগছিল না। আমি ঘুমাচ্ছিলাম৷ মেইন ডোর লক করতে খেয়াল ছিল না। হেনা দেশে আসবে জানতামই না। আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য হুট করে এসেছে। আমি এখানে আছি জেনে তাই আমাকে এখানে এসেই সারপ্রাইজ দিল। জাস্ট ঘরে এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছে। এরপরই আমরা কফি খেতে খেতে টুকটাক কথা বলছিলাম আর তুমি এলে। ‘
চমকে উঠল শান্তি। নাফেরের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল। তবে কী সে ভুল দেখল নাকি নাফের অনেস্ট থাকলেও মেয়েটা নয়। এমন তো নয় সিনেম্যাটিক কিছু ঘটল? নাফের ঘুমে আর হেনা এসে ঘুমন্ত নাফেরকে চুমু দিলো। আর আমি এসে ওই দৃশ্যটা দেখেই ভুল বুঝলাম। না না আমি সিনেমার নায়িকাদের মতো বোকা না। আমি বুদ্ধিমতী। কিছু একটা গড়বড় তো আছেই। যা আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। ভেবেই লম্বা এক নিঃশ্বাস ছাড়ল শান্তি। মাথা তুলে একবার তাকাল নুবাইদের দিকে।
বলল,
‘ এতদিন বাড়ি কেন ফেরেননি নাফের? ‘
‘কেন বুড়োটাকে মিস করছিলে বুঝি? ‘
‘ একদম না। আপনাকে মিস করতে আমার বয়েই গেছে। ‘
কথাটা বলেই নুবাইদের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইল। নুবাইদ স্মিত হেসে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল ওকে। মাথার মধ্যিখানে চুমু দিয়ে বলল,
‘ বুড়োটাকে ভালোবেসে ফেললে নাকি শান্তি? ‘
…চলবে…
®জান্নাতুল নাঈমা