ওহে_প্রিয় #জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৩৫

0
615

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৫
________________
দুপুর প্রায় তিনটা বাজতে চললো। হ্যাভেন বাড়ি ফিরেছে খুব ভোরে। রমার বিবৃতি অনুযায়ী প্রচন্ড বিক্ষিপ্ত চেহেরায় বাড়ি ফিরেছে সে। ছেলের চিন্তায় চিন্তায় ইদানীং রুবিনার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। সকালের খাবার খাওয়ার জন্য বেশ অনেকবার ডাকা হয়েছিলো হ্যাভেনকে কোন সাড়া দেয়নি। দুপুরেও একি অবস্থা। এবার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো সকলে। তাই ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে হ্যারি দ্রুত হ্যাভেনের রুমের লক খুলতেই দেখতে পেলো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে হ্যাভেন। দৃষ্টি তার হাতের দিকে স্থির। এক হাতে ডায়মন্ডের রিং দু’আঙুলে ধরে রেখেছে। যেটা আহির জন্য গতকাল সে কিনেছিলো। বুদ্ধি টা অবশ্য হ্যারিরই ছিলো। তার মানে আহি রিং টা একসেপ্ট করেনি? অন্য হাতে সিগারেট। পুরো ঘরময় সিগারেটের গন্ধে ম-ম করছে। আশে পাশে অগণিত সিগারেটের শেষ অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চোখ মুখে কাতরতার ছাপ৷ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল হ্যারি। অগণিত মেয়ের সাথে তারা দু’ভাই মেলামেশা করলেও হ্যাভেন কখনো এসবের ধারেকাছেও যায়নি। এক রূপসার জন্যই পাগল ছিলো সে। সেই পাগলকে ক্ষতবিক্ষত করে সত্যিকারের পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিলো মেয়েটা৷ সেই ক্ষত সাড়িয়ে ওঠতে না ওঠতেই আবারো ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে হৃদয়। হয়তো এসবের জন্য দায়ী তার ভাই নিজেই৷ তবুও এ কষ্ট যে আর সহ্য করা যায় না। ভয় হয় বড় ভয় হয় আবার কোন অঘটন ঘটে যাবে না তো? আহিকেও দোষ দিতে পারেনা৷ কোন দিকে যাবে তারা এখন? কি করে সামলাবে ভাই কে? কি করে বোঝাবে ভাবি কে? এগিয়ে গিয়ে হ্যাভেনের পাশে বসলো হ্যারি। তার উপস্থিতি টের পেয়ে রিংয়ের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই ঈষৎ হেসে বললো,

-‘ ভাগ্য আমাদের সাথে ছলনা করে না আমরা ভাগ্যের সাথে ‘?

-‘ ভাই চিন্তা করোনা ভাবি ফিরবে দেখো এখন রেগে আছে রাগ পড়ে গেলে ঠিক ফিরবে। শেষ হাসিটা তুমিই হাসবে দেখো ‘।

-‘ জানি ফিরবে। তোর ভাবি আমাকে ছাড়তে পারবে না কিন্তু যে তিক্ততা নিয়ে ও চলে গেছে সেই তিক্ততা কে কি করে বিলীন করবো আমি? যতো দিন না এই তিক্ততা বিলীন হচ্ছে ততোদিন সে ফিরবে না। কাছে থেকে নয় দূরে থেকেই তার মন জয় করতে হবে ‘।

-‘ অবশ্যই করবে ‘।

-‘ যদি না পারি ‘?

-‘ যদি ভালোবাসা থাকে সফল তুমি হবেই ব্রো আর যদি সফল না হও ভাববে এটা তোমার ভালোবাসা ছিলো না রূপসার মতোই এটাও তোমার ভুল। না তুমি ভাবির জন্য সঠিক আর না ভাবি তোমার জন্য ‘।

বুকটা ধক করে ওঠলো হ্যাভেনের। আর কোন ভুল হতে পারেনা। থাকতে পারেনা আর কোন ভুল। ভালোবাসার সংজ্ঞা সে সঠিকভাবে দিতে পারবেনা। তবে এইটুকু বলতে পারবে ঐ মেয়েটার সঙ্গে করা অন্যায় গুলো তার বক্ষঃস্থলে সূক্ষ্ম এক ব্যাথার সৃষ্টি করেছে। ঐ মেয়েটার শূন্যতা তাকে খুব করে পোড়াচ্ছে। পুড়িয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এলোমেলো করে দিচ্ছে। তার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। হাহাকার শুধু তার বুকে নয় হাহাকার নেমে এসেছে এই ঘরে, পুরো সংসার জুরে মেয়েটা হাহাকার তৈরি করে গেছে। যন্ত্রণা দিচ্ছে যন্ত্রণা হচ্ছে মেয়েটার শূন্যতা বড্ড বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সমস্ত ইন্দ্রয়শক্তি বার বার জানান দিচ্ছে আহি তোর সেই প্রিয়জন। যে প্রিয়জন তোর নিভে যাওয়া সমস্ত সত্তা কে জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আহি তোর সেই মানুষ টা যে তোর সমস্ত সত্তায় মিশে গিয়ে তোর তুইকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

-‘ না হ্যারি ভুল না ভুল হতে পারেনা। আহি বড় নিষ্পাপ আহি বড় পবিত্র রে ওর মতো মেয়ে’কে ভালো না বেসে থাকা যায় না। ওর মতো মেয়েকে অবহেলায় ফেলে যে চরম ভুল আমি করেছি তার শাস্তিও চরম ভয়ানক ভাবে পাচ্ছি আর পেতে যাচ্ছি’।

-‘ কি বললো ভাবি সবটা ঠিক হয়নি বুঝেছি কিন্তু আবারো তাড়িয়ে দিয়েছে ‘?

হ্যারিকে সবটা খুলে বললো হ্যাভেন। হ্যারি সবটা শুনে যতোটা না দুঃখ পেয়েছে তার থেকে বেশি মজা পেয়েছে। ভাবা যায়? এক ঘরে থাকেনি আবার হ্যাভেন যেনো রাত করে ফিরে না যায়। আবার কোন বিপদের সম্মুখীন না হয় সেজন্য রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাবার আগে ইগো দেখিয়ে রিং ফেরত দিয়েছে তারপর বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজার সিটকেরি লাগিয়ে দিয়েছে। সকাল বেলা অনা দরজা খুলে চা দিয়েছে। হ্যাভেন সৌজন্যতাসূচক এক চুমক চা খেয়েই বিদায় নিয়ে এসে পড়েছে। হায়রে নারী জাতি! সব শুনার পর হ্যারি কয়েক মিনিট কি যেনো ভাবলো। তারপর হ্যাভেনকে বললো,

-‘ ব্রো দেবদাস হয়ে পড়ে থাকা যাবে না বরং কিভাবে ভাবি কে ম্যানেজ করা যায় কিভাবে তোমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারবে ভাবির ভাষ্যমতে তার তিক্ততাকে ভালোবাসায় ডুবিয়ে দিতে পারবে সেসব নিয়ে ভাবতে হবে শুধু ভাবা নয় সে অনুযায়ী কাজও করতে হবে ‘।

সিগারেটে শেষ কয়েক টান দিয়ে ওঠে পড়লো হ্যাভেন। কাবার্ড খুলে রিংটা রেখে দিয়ে তয়ালে নিয়ে বাথরুম যেতে যেতে বললো,

-‘ বউকে কিছুদিন একা ছেড়ে দেই কি বল আর আমিও ধুঁকে ধুঁকে মরতে থাকি যদি বেঁচে থাকি তাহলে সফল হয়েই ছাড়বো আর যদি মরে যাই কোনদিন কোন পরিস্থিতিতেই ভাবির গায়ে বিন্দু আচও লাগতে দিবিনা। আর না দ্বিতীয় কোন পুরুষ’কে কে তার জীবনে এন্ট্রি নিতে দিবি। সোজা আমার কাছে পাঠাই দিবি তারপর ওপারে বসে শালার পিণ্ড চিবাবো ‘। বলেই রহস্যময় এক হাসি দিয়ে বাথরুম ঢুকে পড়লো।
_________________
সময় প্রবহমান। কেটে গেছে দু’টো মাস। চারিদিকের নানা ব্যস্ততা কাটিয়ে কখনো সন্ধ্যার পর কখনো বা মাঝরাতে আহির বাড়ির সামনে হাজির হয় হ্যাভেন। নির্দয় আহি একটিবারের জন্যও তাকে দেখা দেয় না। শ্বশুর, শ্বাশুড়ির হাজার জোরেও হ্যাভেন আর বাড়ির ভিতরে যায় নি৷ করোনা পরিস্থিতির জন্য ভার্সিটি অফ তাই আহি একেবারেই বাড়ি থেকে বের হয় না। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সমস্ত কিছুর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছে। হ্যাভেন যতোই ম্যাসেজ করুক ফোন করুক আহির থেকে একটা রিপলাইও পায় না। যা রিপলাই করার আহির ফোন থেকে অনাই করে। হ্যাভেন যখন আসে অনা বের হয়৷ বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তার ওপাশে বাঁশের মাচা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসেই দুলাভাই শালিকা বেশ আড্ডা দেয়। কখনো কখনো অনাকে নিয়ে এলাকার আশপাশের কাঁচা রাস্তা গুলো ঘুরে বেড়ায়। অনার বেশ ভালোই লাগে। সামনে পিছনে সবসময় হ্যাভেনের দু’তিনজন চ্যালাফ্যালা থাকেই । হ্যাভেনের পাশাপাশি ইদানীং নিজেকেও বেশ ভি.আই.পি মনে হয় অনার। ইতিমধ্যে দুজনের সম্পর্ক বেশ গাঢ় হয়ে ওঠেছে। অনার নিজের কোন ভাই না থাকায় হ্যাভেনকেই সে বড় ভাইয়ের আসনে বসিয়েছে। হ্যাভেনও হিয়ার পর বোন হিসেবে অনাকে ভীষণ স্নেহ করে। অনা যখন তাকে দুলাভাই বলে ডাকে মনে তার অদ্ভুত এক ভালোলাগার শিহরণ জেগে ওঠে৷ প্রত্যেকটা পুরুষকেই বোধহয় এই দুলাভাই ডাকটা বড় আনন্দ দেয়। দুনিয়াতে অনেক রকমের ডাক রয়েছে, রয়েছে অনেক রকমের মধুর সম্পর্ক। কিন্তু শালি, দুলাভাইয়ের সম্পর্কের মাধুর্য সত্যি ভীষণ আলাদা। যদি সেখানে শালির প্রতি দুলাভাইয়ের থাকে অগাধ স্নেহ আর দুলাভাইয়ের প্রতি শালির থাকে অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। প্রায়ই দুলাভাই এর সঙ্গে আড্ডা শেষে দুহাত ভর্তি ফাস্টফুড নিয়ে ঘরে ঢোকে অনা। আহি তখন রেগেমেগে তাকে রুম থেকে বের করে দেয় ৷ আবার যখন অনা সর্বক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করে ‘ আপু দুলাভাই কতো ভালো তুমি কেনো দুলাভাইয়ের সাথে এমন করো’?,’ আপু দুলাভাই যদি ভালো হতে চায় আমাদের কি উচিত না তাকে ভালো হতে সহায়তা করা ‘? ‘আপু জানো আজ দুলাভাই এই গল্প করেছে, আজ আমি আর দুলাভাই ঐখানে গিয়েছিলাম এটা করেছি, সেটা করেছি ‘। দুলাভাই নিয়ে বোনের প্রশংসার সাথে গর্বের যখন শেষ থাকেনা আহি তখন বিরক্ত হয়ে বলে,

-‘ যা না দুলাভাইয়ের গলা ধরে কলা খা আমার কাছে আসছিস কেনো আর একবার দুলাভাই দুলাভাই করলে ঠাশিয়ে এক চড় মেরে গাল লাল করে দিব দূরে যাহ বেয়াদব’।

অনা তখন মুখ ফুলিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বোনের নামে নালিশ করে। কখনো বা আহির ফোন নিয়েই হ্যাভেনকে কল করে নালিশ করে। দুই মেয়ের কান্ড দেখে বাবা,মা শুধু মুচকি হাসে৷ আর শালি, বউয়ের কান্ড শুনে হ্যাভেন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। তার সে হাসি ঠিক কান পেতে শুনে নেয় আহি। হ্যাভেনের মুখে বরাবরই সে শুনেছে নারী বড় রহস্যময়ী। কিন্তু কই সে তো দেখছে মানবজাতি পুরোটাই রহস্যেঘেরা। তবে তার চোখে এখন সবচেয়ে রহস্যময় ব্যাক্তিটি হচ্ছে দ্যা গ্রেট হ্যাভেন তালুকদার। এই যে বার বার ছুটে আসা। এই যে তার আপনজনদের এভাবে আপন করে নেওয়া। অশান্ত হ্যাভেনের আচমকাই শান্ত রূপ। ভাবায় বড্ড ভাবায়। মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে কিন্তু এতো মাধুর্যতার সঙ্গে হ্যাভেনের পরিবর্তন? মানতে বড় কষ্ট হয়। তবুও সে মানতে চায়। ভালোবাসা যে সব পারে। বিয়ে নামক পবিত্র একটি বন্ধন এতো সহজেই কি ছিন্ন করা যায়? মানুষ তো জন্মলগ্ন থেকে খারাপ হয়ে জন্মায় না। জন্মলগ্ন থেকে কেউ অন্যায়কারী,হত্যাকারী,পিশাচ হয়ে জন্মায়ও না। একটি শিশু বাচ্চার সামনে সর্বক্ষণ মা মা করলে তার প্রথম বুলিটিই হয় মা। তেমনি বাবা,বাবা করলে তার প্রথম বুলিটি হয় বাবা। একই ভাবে প্রতিনিয়ত সে যা দেখবে, যা শুনবে পরবর্তী তে সেটাই করবে বা করার চেষ্টা করবে। আবার ফুলের কলির মতো যখন একটি জীবন কলি থেকে ফুলে রূপান্তরিত হতে যায় ঠিক সে সময়ই কেউ তাকে আঘাত করে ঝড়িয়ে দেয়। তখন তার জীবনটা হয়ে যায় বিধ্বস্ত। সেই ঝরে যাওয়া ফুলের পাপড়ি গুলো পুনরায় ফুলে পরিণত করা সম্ভব না হলেও মানুষের জীবন ফুলের মতোই গড়ে নেওয়া সম্ভব হয়৷ তবে সে পথ বড্ড কঠিন। মানুষ অনুকরণ প্রিয়। মানুষ প্রতিশোধ পরায়ণ। আর এ দুটোই মানুষের জীবন গড়ে দিতে এবং ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
____________________
হ্যাভেনের মামাতো বোনের বিয়েটা করোনা পরিস্থিতির জন্য পিছাতে পিছাতে অনেকটা সময় পিছিয়ে গেছে। ফাইনালি বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো। এ’মাসের শেষেই বিয়ে। তাই তালুকদার বাড়ির সকলকে বেশ লম্বা একটা সময়ের জন্য বাড়ি ছাড়তে হবে। যেহেতু হুমায়ুন তালুকদার থেকে শুরু করে সকলকেই বিয়েতে এট্যান্ড করতে হবে সেহেতু বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবে তার ছোট ভাই এবং চাচাতো ভাইরা৷ সবাই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বেঁকে বসেছে হ্যাভেন। সে যাবে না কিছুতেই যাবে না। রুবিনাও বেঁকে বসেছে তাকে যেতেই হবে। কিন্তু হ্যাভেন
নানান বাহানা দিচ্ছে। রুবিনা বিরক্ত হয়ে তার মা’কে কল করে জানায়। হ্যাভেনের নানুমনির বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি। এই বৃদ্ধাটি ভীষণ প্রিয় হ্যাভেনের৷ শুধু হ্যাভেন নয় হিরা,হ্যারি,হিয়া, হ্যাভেন সকলেই তাদের নানুমনি বলতে অজ্ঞান। সেই নানুমনি যখন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলো হ্যাভেনকে তখন হ্যাভেনও শর্ত দিয়ে বসলো,

-‘ আমি যাবো শিঘ্রই যাবো তবে শর্ত একটাই আমার লাইফলাইনকে যেভাবেই হোক ওখানে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ‘।

-‘সব হয়ে যাবো এই বুড়ির বয়স হইছে তো কি হইছে এই বুড়ির তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পর্কে তগোর কারো ধারণাই নাই ‘ বলেই রুবিনাকে ফোন দিতে বলে।

হ্যাভেন বাঁকা হেসে মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে দেয়। চোখ,মুখ উজ্জ্বলতায় ভরে ওঠে তার। দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের পাশাপাশি থাকার এর থেকে ভালো সুযোগ আর দুটো হতে পারে না। দুজন মানুষ শুধু বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করলেই হয় না৷ বরং একে অপরকে চেনা,জানার প্রয়োজন আছে। এই যে তারা দুটো বছর এক সঙ্গে ছিলো কিন্তু এটা কি সত্যি এক সঙ্গে থাকা হয়েছে? দু’বছরে সে জানতেই পারেনি তার সহধর্মিণীর প্রিয় খাবার কি? প্রিয় রঙ কি? পছন্দের জায়গা কোথায় পাহাড় না সমুদ্র? জোৎস্নার রাত্রি কেমন লাগে তার? একাকি সময় কাটাতে ভালো লাগে না সকলের সঙ্গে হৈহৈ রৈরৈ করতে ভালো লাগে? এ’কমাসে অনার কাছে টুকটাক শুনেছে তবে বেশি কিছু তো না। প্রিয় রঙ, প্রিয় খাবারের বাইরে আর কিই বা জানে সে? জানতে হবেনা? ভালোবাসেতো সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে হবে তো। তাহলে এসব না জানলে কি করে চলবে? মনের দূরত্ব ঘোচাতে হবে না? অবশ্যই হবে। কিন্তু তার অভিমানি রমণী সে সুযোগ টা দেবে তো?
.
এ প্রথম রুবিনা তালুকদার আহিদের বাড়িতে পা ফেললেন। পাড়াপড়শিরা আশপাশ থেকে ওকি ঝুকি মারছে। সকলেরই চোখ ছানাবড়া। যেনো পুরোনো যুগের জমিদার গিন্নির পা পড়েছে বাড়িতে। চেহেরায় ফুটে ওঠেছে আলাদা এক মাধুর্য আলাদা এক দাম্ভিকতা। তার রূপ, দাম্ভিকতায় সকলেই মোহিত হয়ে গেলো। ঠিক যেমন প্রথম দর্শনে আহি মোহিত হয়েছিলো। আহির রূপে সকলেই যেমন মুগ্ধ হয়ে যায় তার শ্বাশুড়ির রূপেও সমান মুগ্ধ হলো সকলেই। রুবিনা তালুকদার আহির দু’হাতে ধরে অনুরোধ করলেন তার মা ভীষণ অসুস্থ। আল্লাহ না করুক আজ তার মা মারা গেলে সে আহিকে কখনোই ক্ষমা করবেনা। কারণ তার মা আদরের নাতি বউকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন। আহি যাতে বিশ্বাস করে তাই ভাইয়ের মেয়েকে ভিডিও কল করে মায়ের সঙ্গে আহিকে কথাও বলিয়ে দিয়েছে। সত্যি নানুমনি অসুস্থ পা পিছলে পড়ে গিয়ে কোমড়ে বেশ আঘাত পেয়েছে। সব শুনে দেখে আহি নিশ্চুপ। আহির বাবা,মা রুবিনাকে আপ্যায়ন করলেও সে এক গ্লাস পানি অবদি মুখে তুললো না। আহি যদি তার সঙ্গে যেতে রাজি হয় তাহলেই সে আতিথিয়েতা গ্রহণ করবে নয়তো না। রুবিনার জেদের কাছে আহি মাথা নত করলো না। বরং একজন বৃদ্ধার মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য যেতে রাজি হলো কিন্তু শর্ত দিলো সে হ্যাভেনের সঙ্গে এক ঘরে রাত কাটাতে পারবেনা৷ সে শুধুই নানুমনিকে দেখতে যাবে এবং তাকে দেখা দিতে যাবে। যেহেতু হ্যাভেনের সঙ্গে তার বোঝাপড়া চলছে সেহেতু সঠিক অনুভূতি দু’জনের দিক থেকে দু’জন যতোদিন না অনুভব করবে। যতোদিন না মন বলবে হ্যাভেন তাকে নিখুঁত ভালোবাসে, নিখুঁত সম্মান করে ততোদিন সে হ্যাভেনের জীবনে ফিরবে না। রুবিনা আহির সমস্ত শর্তই মেনে নিলেন। আহিও স্বস্তির শ্বাস ফেললো। এ’কমাসে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। একটু দূরে যাওয়া, দূরে কোথাও সময় কাটানো সত্যি তার জন্য প্রয়োজন ছিলো। পাড়াপ্রতিবেশীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে তার মা এবং বোন জাষ্ট হাঁপিয়ে ওঠেছে। রোজই কেউ না কেউ এসে ছলে বলে কৌশলে ভিতেরের খবর জানার চেষ্টা করে। বিয়ের পর দু’বছর বাবার বাড়িতে আসেনি বলে এই নিয়ে পাড়াপড়শিদের যেমন কৌতূহলের শেষ ছিলোনা তেমনি এতোগুলো মাস ধরে মেয়ে বাপের বাড়ি এসে থাকছে। জামাইও আসেনা এই নিয়েও নানারকমের কৌতূহল তাদের। সময়ে,অসময়ে বাড়ি বয়ে এসে ছলে বলে কৌশলে ভিতরের কথোপকথন বাহিরে আনার চেষ্টা করে। জীবনটা একেবারে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে এই প্রতিবেশীগুলা। কোনভাবেই মনে শান্তি মেলাতে পারছিলো না আহি৷ তাই হুট করে এসে শ্বাশুড়ির দেওয়া প্রস্তাবটা তার মন্দ লাগলো না। এবার দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে কোথাও গেলে বেশ ভালোই হবে। মনও ভালো হবে সেই সাথে রোজ রোজ আর এই বিরক্তিকর পরিস্থিতি তেও পড়তে হবে না। তবে এর আগে হ্যাভনকে কানে গুঁতিয়ে বলেও দিতে হবে,

-‘ ডিয়ার হাজব্যান্ড এই আহি সবার জীবনে ফিরলেও ভুলেও ভাববেন না আপনার জীবনে ফিরেছে তাই দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন হুহ ‘।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here