#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩১
________________
শ্বশুড় বাড়ি থেকে মেয়ে চলে আসার পর দু’দুবার মেয়ে জামাই বাড়িতে এলো। অথচ একবারো আপ্যায়ন করার সুযোগ হয়ে ওঠলোনা। হ্যাভেন কে আসতে দেখেই আজম খান বাজার থেকে পাকা আম, দুধ নিয়ে জলদি জলদি বাড়ি ফিরেছিলেন। সাজিও ফ্রিজ থেকে গরুর মাংস বের করে মশলা মাখছিলো৷ যদিও অনার কাছে শুনেছে ভিতরে মেয়ের সাথে জামাইয়ের ঝগরা চলছে। তবুও ভেবেছিলো আজ জামাই থেকে যাবে থেকে না গেলেও অন্তত খেয়ে যাবে। কিন্তু যখন দেখলো হ্যাভেন আহির রুম থেকে বিক্ষিপ্ত চেহেরায় বেরোচ্ছে৷ চোখে,মুখে পরিস্ফুট হচ্ছে ক্রোধ। তখন আর এগিয়ে গিয়ে জামাইকে বাঁধা দেওয়ার সাহস হলো না তাঁর। হ্যাভেন বেরিয়ে যেতেই অনা দৌড়ে আহির রুমে গিয়ে দেখলো বেচারি বিছানার একপাশে বসে আছে৷ হাঁটুতে থুতনি গুঁজে অশ্রুসিক্ত স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঝেতে। অনা গুটিগুটি পায়ে আহির পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করলো,
-‘ আপু দুলাভাই কি তোমাকে বকা দিছে ‘?
প্রশ্নটি করামাত্রই ফুঁসে ওঠলো আহি। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বোনকে ঝাড়তে শুরু করলো,
-‘ দুলাভাই মানে কিসের দুলাভাই কে দুলাভাই? এতো দুলাভাই দুলাভাই করস কেনো? যা বেরিয়ে যা রুম থেকে বেরো বলছি। চোখের সামনে থেকে যা ভাল্লাগছে না আমার সড় ‘।
-‘ আপুর জামাইকে দুলাভাই করবো না তো কি জান’পাখি,প্রাণপাখি করবো ? তুমি যদি পারমিশন দাও তাহলে আমার কিন্তু আপত্তি নাই এমপির সাথে সম্পর্কটা এবার আরো মাখোমাখোই করে ফেলবো ‘। বলেই ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে চোখ মারলো অনা।
ছোট বোনের কান্ডে হকচকিয়ে গেলো আহি।পরোক্ষণেই চোখ কটমট করে তাকালো। বোন যে বড় হচ্ছে সেই সাথে বড্ড পেঁকেও যাচ্ছে তা আর বুঝতে বাকি নেই৷ সেদিনের ফিটার খাওয়া পিচ্চি টা নাকি আজ তাঁর সাথে রসিকতা করে? রাগে ফোঁস ফোঁস করতে শুরু করলো সে। অনা বোনের রাগের মাত্রা বিবেচনা করে আর বেশী ঘাটলো না মিটিমিটি হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ তাঁর কিছুক্ষণ পরেই আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করলো সাজি। মেয়েটাকে অমন বিষন্ন মুখে বসে থাকতে দেখে বুকটা তাঁর হুহু করে ওঠলো। পরীর মতো রূপবতী মেয়ে তাঁর অথচ জীবনটা কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন। ওভাবে বিয়ে তারপর ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনা কি কম ছিলো? এতো যন্ত্রণার মাঝে উপরওয়ালা একটা সন্তান দান করেও আবার ফিরিয়ে কেনো নিলো? এটুকু বয়সে তাঁর মেয়েটাকে কেনো এতো সহ্য করতে হচ্ছে? বাচ্চা যদি পেটে এলোই আবার চলে গেলো কেনো? বাচ্চা টা থাকলে খুব কি অসুবিধা হয়ে যেতো। উপরওয়ালার লীলাখেলা বোঝা বড় দায়। গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সাজি। এগিয়ে গিয়ে মেয়ের পাশে বসে কাঁধে হাত রাখতেই আহি ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর বুকে। বাচ্চা দের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো অনবরত। সাজিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। শুধু ভাঙা আওয়াজে প্রশ্ন করলো,
-‘ এখন কি করবি মা? জামাই তো পিছু ছাড়ছেনা আরেকটা সুযোগ কি দিবি। তুই ছেড়ে আসায় জামাই মনে হয় সত্যি অনুতপ্ত ‘।
আহি ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো,
-‘ ঐ মানুষটা আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে আম্মু তবুও আমি তাঁর সঙ্গে সংসার করেছি। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন আমার ওনাকে খুব প্রয়োজন ছিলো যখন আমার পাশে একমাত্র ওনাকেই প্রয়োজন ছিলো তখন ওনি আমায় ছেড়ে দিয়েছে আম্মু। আমার নিজের সন্তানের হত্যাকারি বানিয়ে দিয়ে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেছে। আমি পারবোনা ঐ মানুষ টা কে মন থেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি। একটা মানুষের প্রতি এতোটা তিক্ততা নিয়ে সংসার করা যায় না আম্মু। আমি মুক্তি চাই ঐ মানুষ টার থেকে মুক্তি চাই আমি।কিছু একটা করো আমাকে ওনার হাত থেকে বাঁচাও আমি ফিরতে চাইনা ওনার কাছে একটুও ফিরতে চাইনা,কখনোই চাইনা ঐ কালো অধ্যায়কে আর গ্রহণ করতে ‘।
-‘ বেশ মা তোর সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত শুধু ভয় একটাই জামাই যা মানুষ আমরা তাঁর সাথে লড়াই করতে পারবো তো ‘?
প্রতিত্তোরে নিরব রইলো আহি। কেনো জানি তাঁর মন বলছে হ্যাভেন তাঁকে জোরজবরদস্তি করে আর নিজের জীবনে ফেরাতে চাইবেনা। কেনো জানি মনে হচ্ছে তাঁর জীবন থেকে অভিশপ্ত সেই কালো অধ্যায় সড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে কি জীবনটা এবার আলোকিত হয়ে ওঠবে তাঁর?
.
আহির বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুধু গাড়িই দেখতে পায় হ্যাভেন৷ তাঁর সাথে যে দুজন দেহরক্ষী এবং ড্রাইভার এসেছিলো তাঁদের দেখতে পেলো না। অবশ্য সেই বলেছিলো আশেপাশের দোকান থেকে চা’পানি খেয়ে আসতে৷ খুব বেশী সময় হয়নি সে বাড়ির ভিতরে গিয়েছিলো। তারমানে ওরা হয়তো কাছেই কোথাও চা’টা খেতে গিয়েছে তিনজন। তাই গাড়িতে না বসে মাথা ঠান্ডার সাথে মন ফ্রেশ করতে এদিক সেদিক হাঁটতে লাগলো। আহির বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তা৷ একহাত পকেটে গুঁজে আরেক হাতে ফোন চাপতে চাপতে ডান দিকে এগুতে থাকলো হ্যাভেন। মুখে মাস্ক পড়ায় রাতের আঁধারে লোকজন তেমন খেয়াল করবেনা তাই নিশ্চিন্ত মনেই সে হাঁটছিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হ্যারির কল পেলো৷ রিসিভ করতেই আহিকে সরি বলার পরও কি রিয়্যাক্ট করেছে জানালো হ্যারিকে। হ্যারি স্বান্তনা দিলো তাঁকে বোঝালো,
-‘অনেক গভীর অভিমান ভাঙতে একটু সময় লাগবে তুমি শুধু মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবি’মা কে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করো ‘।
-‘ কি নিয়ন্ত্রণে আনবো বল আমি বোঝালাম আমি তাঁকে মিস করছি। তাঁর প্রতি করা অন্যায় গুলো ধুঁকে ধুঁকে মারছে আমায়। তাঁকে আমার প্রয়োজন, তাঁর সঙ্গের প্রয়োজন। আমার পাশে তাঁকে প্রয়োজন। তাঁর প্রতি গভীর সুক্ষ্ম এক টান অনুভব করছি আমি প্রতিনিয়ত অথচ সে পুরো বিষয়টাকে বিদঘুটে বানিয়ে চরম অপদস্ত করে দিলো আমাকে। ভাবতে পারছিস সেদিনের শান্তশিষ্ট ঘরণী আমার কেমন পাষাণ রূপ ধারণ করেছে ‘?
হো’হো করে হেসে ওঠলো হ্যারি বললো,
-‘ চিন্তা করো না ব্রাদার একটু পর গিয়ে একমাত্র শ্বশুড়,শ্বাশুড়ি, এবং একমাত্র শালিকাকে পটাও তোমার একমাত্র বউ, আমাদের একমাত্র ভাবি’মা না হয় ধীরে ধীরেই পটুক ‘।
দু’ভাই প্রায় দশমিনিট যাবৎ ফোনালাপে ব্যাস্ত৷ কথা বলতে বলতে কখন যে কাঁচা রাস্তার প্রায় শেষ মাথায় চলে এসেছে খেয়ালই নেই। তবে সামনে ইট গাঁথা পুল পেলো বসার জন্য দারুণ একটি প্লেস যাকে বলে। এদিকটায় বাড়িঘর তেমন দেখা যাচ্ছে না। বেশ অদূরে দু’একটা ঘর। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি গাছপালা তারপরেই চড়া পুলের পশ্চিম পাশেও বিশাল চড়া পূর্বদিক রাস্তা সে রাস্তা ধরেই ফিরে যাওয়া যাবে আহির বাড়ি। চারিদিকের মৃদু বাতাসে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো হ্যাভেনের। গ্রামের প্রাকৃতিক এই দৃশ্য তাঁর কাছে নতুন নয় বরং বেশ পুরোনো। নানাবাড়ির প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর কথা স্মরণ হলো তাঁর। সে পরিবেশ গুলো যে আরো বেশী মনোমুগ্ধকর এবং রোমাঞ্চকর। ভাবতেই সারা অঙ্গে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। চোখের সামনে ভেসে ওঠলো তাঁর খোরগোশের বাচ্চার ন্যায় সুন্দরী বধূর মুখশ্রীটা। আলতো হেসে আশেপাশে নজর বুলিয়ে হ্যারিকে বললো,
-‘ শোন হ্যারি আহির বাড়ির সামনের যে কাঁচা রাস্তা টা আছেনা? ভাবছি এটা এবার পাকা করার ব্যবস্থা করবো ‘।
-‘ বাহ বেশ ভালো আইডিয়া তো ব্রাদার এতে তোমার বেশ সুনামও ছড়াবে ‘।
হাসলো হ্যাভেন বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে চড়া খেতের অদূরে চেয়ে কি যেনো দেখার চেষ্টা করলো। কোন এক জন্তু, জানোয়ার হবে হয়তো। বেশ রাত হয়ে গেছে ফিরে যাবে বলে হ্যারির সাথে কথা শেষ করে ফোনের ফ্লাশ অন করে পিছন ঘুরবে তাঁর পূর্বেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত পেলো হাতে। ঘটনা ঠিক কি ঘটতে চলেছে বুঝতে বিন্দু পরিমাণ সময় নিলো না হ্যাভেন। ভাগ্যিস কথার বলার ছলে বার বার মাথার পিছন সাইট হাত বুলাচ্ছিলো আবার নামিয়ে নিচ্ছিলো। শেষ বার এমন করতে যেতেই অস্ত্রের আঘাত পেলো ঠিক হাতেই অর্থাৎ কেউ তাঁর মাথায় আঘাত করতে চেয়েছিলো। হয়তো শরীর থেকে মাথাটা একেবারেই বিভক্ত করার প্ল্যান ছিলো। হাতে ফিনকি দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করলো। হ্যাভেন আঘাত পাওয়া মাত্রই শত্রুপক্ষের কারো আগমন বুঝতে পেরে তাঁদের দিকে না ফিরেই পিছনে অবস্থান করা ব্যাক্তিটির পা বরাবর নিজের পা দিয়ে আঘাত করতেই হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে গেলো লোকটা। হাত ছিটকে ধারালো অস্ত্রটাও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো৷ হ্যাভেন ফোনের ফ্লাশ লোকটার দিকে না ধরে ছুড়ির দিকে ধরেই ত্বরিতগতিতে ছুড়িটা নিজ হাতে তুলে নিয়ে ফোনটা নিচে ফেলে চিৎকার করে বলে ওঠলো,
-‘ শোয়ারের বাচ্চা আজ তুই জান নিয়ে ঘরে ফিরবি না ‘।
বলেই লোকটার বুক বরাবর আঘাত করতে নিতেই লোকটা হ্যাভেনের পা বরাবর গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে ঘুষি দিলো ফলস্বরূপ হ্যাভেন লক্ষভ্রষ্ট হয়ে খানিকটা সড়ে যায় তবুও হাত থেকে ছুড়ি ফেলেনা। বাঁচার তাগিদে লোকটা আর একটু সময়ও ব্যায় করে না লাফ দিয়ে ওঠেই দৌড় লাগায়। হ্যাভেন হাতে ব্যাথায় এবং প্রচুর রক্তপাত হওয়াতে লোকটার পিছু নিয়ে বেশী দূর আগাতে পারলোনা। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই দুটো বাইক এসে লোকটাকে একটি বাইকে তুলে নিয়ে চলে গেলো। অর্থাৎ এই লোকগুলো এই এলাকার নয় বরং এরা আগে থেকেই হ্যাভেনের পিছু নিয়েছিলো৷ ঝোপ বুঝে একদম কোপ ফেলেছে। অনেক বড়সড় খেলোয়াড় বুঝতেই তাচ্ছিল্য সহকারে হাসলো হ্যাভেন। এতোবড় বিপদের সম্মুখীন হয়েও বিন্দু পরিমাণ আফসোস নেই তাঁর । সে একহাতে ছুঁড়ি নিয়ে আঘাত প্রাপ্ত রক্তাক্ত হাতটা বহুকষ্টে মুঠো করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এ রূপে তাঁকে গ্রামের কোন লোকজন দেখতে পেলে সন্ত্রাসী ভেবে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাবে হয়তো। কিন্তু উপায় নেই একা অস্র বিহীন তাঁর পক্ষে এখানে আর এক মূহুর্ত কাটানোও সম্ভব নয়।
.
গাড়ির কাছে আসা মাত্রই দেহরক্ষী শফিক,জামাল এবং ড্রাইভার তমালের দেখা পেলো হ্যাভেন। তিন’জনই এগিয়ে এসে আঁতকে ওঠা গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘ স্যার আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? আপনার হাতে কি হয়েছে স্যার ‘?
রক্তলাল চোখে গম্ভীর মুখোভঙ্গিতে গাড়িতে ওঠে বসলো হ্যাভেন। শফিক গিয়ে হ্যাভেনের পাশে এবং জামাল ড্রাইভারের পাশে বসলো। শফিক দ্রুত ওয়াটার বোতল বের করে হ্যাভেনকে আঘাতপ্রাপ্ত হাতটি ধুয়ে নিতে বললো। হ্যাভেন বিনাবাক্যে বোতল নিয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে হাত ধুয়ে ফেললো। হাতের পিঠে সাদা অংশ বেরিয়ে গেছে ধোয়ার পর আবারো রক্ত ঝড়তে দেখে শফিক নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে হ্যাভেনের বাম হাত বেঁধে ফেললো। হ্যাভেন গম্ভীর ভঙ্গিতেই চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিলো সিটে।শফিক,জামাল দু’জনই ভয়ার্ত চোখ,মুখে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। অথচ হ্যাভেনের বুকে বয়ে চলেছে তীব্র ঝড়। শত্রুপক্ষদের নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় অনেক রয়েছে। এ মূহুর্তে তাঁর মন, মস্তিষ্ক জুরে শুধু আহিকে নিয়েই কৌতূহল জাগছে। আজ যদি সে নিজেকে রক্ষা করে না ফিরতো আহি কি তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁকে ক্ষমা করে দিতো ? আজ তাঁর কিছু একটা হয়ে গেলে আহির আঁখিদ্বয়ে কি দেখা মিলতো বাঁধভাঙা অশ্রুকনাদের? নাকি সে নতুনভাবে নিজেকে সাজাতো? আবারো স্বপ্ন বুনতো কোন এক স্বপ্নপুরুষের? হাতের ব্যাথায় একটুও খেয়াল নেই তাঁর তবে বুকের ভিতর যে চিনচিনে এক ব্যাথা তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ এখন সেখানটায়। এমন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েও তাঁর মনে শুধু কয়েকটি প্রশ্নই জাগ্রত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর খবরে কতোখানি পুড়বে আহি? এ পৃথিবীর বুক থেকে সে যদি বিলীন হয়ে যায় সাবা ম্যামের মতোন সেও কি আত্মত্যাগ করতে পারবে? নাকি সেদিনের বর্ননাকৃত স্বপ্নপুরুষ,রূপকথার রাজকুমারের জন্য অপেক্ষা করবে যে কিনা পক্ষিরাজের পিঠে চড়িয়ে তাঁকে নিয়ে যাবে নিজ রাজ্যে? নিঃশ্বাস আঁটকে এলো হ্যাভেনের। বুকের ভিতর টায় কেমন এক অস্থিরতা। একি অনুভূতি! একি দহন! একি অস্থিরতা ক্রমশ আক্রমণ করছে তাঁকে? বাইরের শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও ভিতরের এই অনুভূতি,অস্থিরতা, দহন নামক শত্রুপক্ষদের থেকে নিজেকে কি করে রক্ষা করবে? এদের থেকে রক্ষা পেতে হলে তো আহি নামক মহিয়সী নারীটির ভীষণ প্রয়োজন তাঁর । সেদিন আহির বলা প্রতিটি বাক্যই হ্যাভেনের মস্তিষ্কে আবারো বাড়ি খেতে লাগলো। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে শুরু করলো কেমন৷ বার বার নিজের মনেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকলো তাঁর স্বপ্নপুরুষ তাঁর রূপকথার রাজকুমার কি সে হতে পারবেনা? সে কি পারবেনা তাঁর সমস্ত ভুল শুধরে নতুন ভাবে নতুন করে শুরু করতে? ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিতে তাঁর সুন্দরী কে? পথভ্রষ্ট পথিক যেমন সঠিক পথ ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ঠিক তেমনি মরিয়া হয়ে ওঠেছে হ্যাভেন। সে কি ফিরে যেতে পারবে সঠিক পথে? আহি কি একটি সুযোগ দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেবে তাঁর দিকে? এ বিশ্বে যতোবার পুরুষ বিপথে গিয়েছে ততোবারই কোন না কোন এক নারী তাঁকে সু’পথে ফিরিয়ে এনেছে। নারী-পুরুষের সংঘাত যেমন সৃষ্টি করেছে ধ্বংস লীলা। নারী-পুরুষের সমঝোতায় তেমনি গড়ে ওঠেছে সুন্দর, সুগঠিত পরিপূর্ণ একটি জীবন।
চলবে..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন।