#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৬
________________
দীর্ঘ ছয়ঘন্টা জার্নির অবসান ঘটিয়ে দিলারা ভবনে পা রাখলো আহি। গাড়িতে শ্বাশুড়ি মায়ের পাশে বসে ফোন চাপতে চাপতে একসময় মাথা ধরে আসে। ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম হয় না। অথচ রুবিনা পুরো রাস্তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসেছে। মাথায় ওড়না স্কার্ফ বাঁধায় ইয়ারফোন কানে দিয়ে গানও শুনতে পারছিলো না৷ শ্বাশুড়ি মায়ের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে বলে ইয়ার ফোন বিহীন গান শোনা বা ভিডিও দেখা কোনটাই পারছিলো না। একবার অবশ্য ভেবেছিলো স্কার্ফ খুলে তারপর গান শুনবে। কিন্তু তা করেনি হাজার হোক শ্বাশুড়ি মা বয়জ্যোষ্ঠ মানুষ। জেগে ওঠে ছেলে বউয়ের এমন ভণিতা দেখলে কি না কি কি ভেবে বসবে কে জানে। তাই চুপচাপ বসে ফেসবুক স্ক্রল, ম্যাসেন্জারে বান্ধবী দের সঙ্গে টুকটাক কথা, হিয়ার সঙ্গে টুকটাক ম্যাসেজে কথা বলেছে। পুরো জার্নিটাই বোরিং কেটেছে তার। মনে মনে বেশ ধারণাও করে নিয়েছিলো তালুকদার বাড়ির মতোন এ বড়িতেও তার সময় বেশ বোরিং কাটবে। রোবটের মতো এক জায়গায় বসে বসে বা বউ হয়ে কাজ করতে করতেই দিন যাবে। কিন্তু তার সমস্ত ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে গেলো বাড়িতে প্রবেশ করার পর। পুরো বাড়িটায় কেমন হৈচৈ রৈরৈ শুরু হয়ে গেলো। বিস্তর জায়গা জুরে দোতালা বাড়িটি দেখলেই চোখ যেনো জুরিয়ে যায়। হ্যাভেনের নানার বাড়ির লোকজনও যে বেশ প্রভাবশালী বুঝতে আর বাকি রইলো না আহির। তবে মনে একটা প্রশ্ন খুঁতখুঁত করতে লাগলো এতো বড় বাড়ির মেয়ে তাও আবার চোখ ধাঁধানো সুন্দরী। তার ব্যাপার টা না হয় আলাদা কিন্তু শ্বাশুড়ি মা’কে শ্বশুর মশাই তুলে নিয়ে গেলো কি করে? মনের প্রশ্নটা মনে চেপেই চোখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো পুরো বাড়িটা৷ তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির ওঠানে। পুরো ওঠানটাই ইট, সিমেন্ট দিয়ে পাকা করা ওঠানের ডানপাশে বিশাল বড় কাঁঠাল গাছ বামপাশে তিনটা আম গাছ তার পাশে ছোট ছোট ফুল গাছ। ফুল গাছগুলোর নাম সে জানেনা তবে মেরুন রঙের ছোট ছোট ফুল গুলো দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। পরে না হয় এই ফুলগুলোর নাম কারো থেকে জেনে নেওয়া যাবে। ফুলগুলো থেকে চোখ সড়িয়ে বাড়ির আশেপাশে চোখ বুলালো। এক কথায় ভীষণ সুন্দর বাড়িটা। পুরো বাড়িটায় বেশ যত্নের ছাপ রয়েছে। দোতলার বারান্দায়ও বেশ সুন্দর সুন্দর ফুল দেখতে পেলো। গোলাপ,নয়নতারা আরো বিভিন্ন ফুলের টব রয়েছে। মনটা কেমন ভালোলাগায় ভরে গেলো তার৷ বাড়ির বাইরে টা দেখেই জাঁকজমকপূর্ণ আমেজের ভাব পাওয়া যায় ভিতরটা দেখে অন্তর যেনো জুরিয়ে গেলো।
মামা শ্বশুর, মামি শ্বাশুড়ি, মামাতো দেবর,ননদ সবাই এসে পরিচয় হলো আহির সঙ্গে। হিয়া গতো কয়েকমাস ধরেই এখানে রয়েছে এতোগুলো দিন পর আহিকে দেখে আবেগে জরিয়ে ধরে কেঁদেই ফেললো মেয়েটা। হ্যাভেনের মামাতো বোন রিদি এক গালে হাত রেখে চোখ পিটপিট করে বললো,
-‘ বাব্বাহ ভাবি তো আমাদেরও ছাড়িয়ে গেছেরে হিয়া ভাইয়ের আমার চয়েজ আছে। আল্লাহ আমিই তো ফিদা হয়ে গেলাম ছেলে হলে নিশ্চিত বড়সড় হার্ট এট্যাক হয়ে যেতো ‘।
আহি লজ্জা পেলো। হিয়া আহির কাঁধ চেপে ধরে বললো,
-‘ দেখতে হবে না ভাবি টা কার ‘?
মামাতো ভাই রিমন শার্টের কলার উঁচিয়ে বললো,
-‘ আরে ইয়ার এত্তো কিউট হ্যান্ডসাম ছেলেদের ভাবিতো এমন সুন্দরীই হবে তাইনা ‘?
এবার আহি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। রুবিনা ভাতিজা,ভাতিজিকে আদর করে বড় ভাতিজা রিজভীর কথা জিগ্যেস করলো রিদির মা হুমাকে। কিন্তু হুমা কিছু বলার পূর্বেই হিয়া আহিকে ছেড়ে চোখ কটমট করতে করতে বললো,
-‘ তোমার আদরের বড় ভাতিজার কি এ বাড়ির অতিথিদের জন্য সময় আছে নাকি? তাকে রাতেই জানানো হয়েছে অন্তত আজ যেনো বাড়ি থাকে তবুও সে সকাল সকাল দেশ উদ্ধার করার জন্য বেরিয়ে গেছে ‘।
রিদি ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো৷ রিমন হিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
-‘ তার না হয় আদরের ভাতিজা তোর তো স্বাদের আদরের মামাতো বড় ভাই ‘।
রিমনের টিটকারি শুনে হিয়া ক্ষেপে ওকে মারতে গেলেই রিমন ছুটে পালালো সঙ্গে গানও ধরলো,
-‘ স্বাদের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী ‘।
হিয়া ছুটে গেট অবদি গিয়েও ধরতে পারলো না রিমন কে সকলেই হাসতে হাসতে লুটোপটি খাচ্ছে আহিও মৃদু হাসলো৷ রুবিনা বললো,
-‘ শুরু হয়ে গেলো এবার রত্না এলে বাড়িটা আর বাড়ি থাকবে না। রেশমির তো ছুটি নেই শুনলাম শিফা,শশী আসবে তো ‘?
রিদির মা হুমা বললো,
-‘ জামা-কাপড় ছেড়ে হালকা নাস্তা পানি করে ছোট আপাকে ফোন করুন আপনার ভাইকে তো বলেছিলো আগামিকালই আসার চেষ্টা করবে ‘।
.
যেহেতু শহড় থেকে এসেছে সেহেতু আগেই কেউ নানুমনির কাছে যায়নি। ফ্রেশ হয়ে জামা-কাপড় পাল্টে হালকা নাস্তা পানি করে নিলো। পাশের বাড়ি থেকে একে একে রুবিনার চাচাতো ভাই তাদের বউ এবং ছেলেমেয়েরাও এসে আহির সঙ্গে পরিচিত হলো। সকলেই বউ দেখে মুগ্ধ। জুটি ছাড়া এভাবে একা আসাতে অনেকে অনেক রকমের কথাও বললো। এ প্রথম বউ নানা শ্বশুর বাড়ি এসেছে। কোথায় দুজন একসঙ্গে আসবে তা না একা একা জুটি ছাড়া পাঠাই দিছে। রুবিনা তাদের অবশ্য বুঝিয়ে বললো বাড়ির সকল ছেলে সদস্যরা আগামিকালই এসে পড়বে। শুধু হ্যাভেন তিনদিন পর আসবে। এই নিয়েও অনেকে অনেক রকম কথা বললো। রুবিনা সেগুলোকে পাত্তা দিলো না। আহি বেশ খুশিই হলো হ্যাভেন তিনদিনপর আসবে বলে। হ্যাভেনের সামনে সব সময় বেশ ইতস্ততবোধ হতো তার এর থেকে তিনটা দিন তো রিল্যাক্স করা যাবে।
.
সকলের সঙ্গে আলাপচারিতা শেষে নানুমনির রুমে নিয়ে যাওয়া হয় আহিকে। নানুমনি আহিকে দেখেই হাত টেনে বিছানায় নিজের পাশে বসালো। তারপর বেশ রসালো গলায় বললো,
-‘ কি লো মেয়ে খুব নাকি দেমাগ? আমার কালামানিক রে খুব নাকি দেমাগ দেখাস? ঐ সব দেমাগ টেমাগ দূরে রাখ ধলা জামাই কালা জামাই বিভেদ কইরা কি হবো কাম তো একি। চোখ জুরাইয়া লাভ নাই বইন মন আর শরীর জুরাইলেই মেলা ‘।
রুমে রিদি আর হিয়া ছিলো নানুমনির কথা শুনে দুজনই খিলখিল করে হেসে ওঠলো। অন্য সময় বা অন্য কেউ এমন কথা বললে দু’চারটা কটু কথা বলে দিতো আহি। কিন্তু সামনের এই বৃদ্ধাকে দেখে সে যেনো কেমন হয়ে গেলো। এত্তো কিউটনেসে ভরা মুখটা দেখলে কি আর কটু কথা বলা যায়? নানুমনির বেশ অনেকটা বয়স হয়েছে গায়ের চমড়া গুলো কুঁচকে গেছে। যে হাত দিয়ে আহির হাতটা চেপে ধরে আছে সে হাতটাও খানিক কাঁপছে। ফর্সা চামড়াগুলো কুঁচকে যেয়ে নীল রগ গুলো ভেসে ওঠেছে। কথা বলার সময় টকটকে লাল ঠোঁট জোরা চৌকা হওয়াতে আরো বেশী কিউট লাগছে। সোনালি পাড়ের সাদা শাড়িটা গায়ের রঙের সঙ্গে কি সুন্দর মিশে আছে। প্রকৃতির সকল শুভ্রতাই যেনো তার মাঝে বিরাজ করছে। এই বৃদ্ধা মহিলাটি যৌবনে ঠিক কোন পর্যায়ে সুন্দরী ছিলো জাষ্ট ধারণা করতে পারলো না আহি। নানুমনি অনেক কথাই বললো আহির সঙ্গে। এও বললো, সাদা, কালোর বিভেদ শুধু এ যুগে নয় শুরু থেকেই মানুষের মাঝে এই বিভেদ রয়েছে। একসময় তারাও সাদা কালো বাচ বিচার করতো। হুমায়ুন তালুকদার যখন রুবিনাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেয়। নানুমনি নাক ছিটকেছিলো৷ তার পরীর মতো মেয়েটার কপালে নাকি অমন কালা বান্দর জুটবো? হোক নেতা জামাই নেতা দিয়ে তার কি মন,চোখ জুরাবে? ঘোর বিরোধিতা করেছিলো তারা পুরো পরিবারই। কিন্তু রুবিনার মনে মনে হুমায়ুনকে বেশ পছন্দ ছিলো। যা তারা কেউই জানতো না। সকলেই জানে রুবিনা কে হুমায়ুন ওঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু আসল কথা এই রুবিনারও অমত ছিলো না বিয়েতে। এই গোপন রহস্য নানুমনি রুবিনা,হুমায়ুন ছাড়া কেউ জানতো না। আজ প্রিয় নাতির সংসার জীবন সুখের করার জন্য এই সত্যিটা নাতি বউকে সে বলেই দিলো। এও বললো,
-‘ হাভু যখন জন্মায় তখন থেকেই আমাদের পরিবারের মন থেকে সকল কালি দূর হইয়া যায়। বাড়ির জামাই কালা বইলা জামাই অবহেলা করতে পারি কিন্তু আমার আদরের মেয়ের অংশ, বংশের প্রথম এবং বড় নাতি’কে কি আর অবহেলা করতে পারি? তখন থেকেই আমার কালামানিকরে দু’চোখে হারাই আমি। বাড়ির সবচেয়ে আদরের নাতি সে। তার মুখ ফুটে কিছু চাইতে দেরি পাইতে দেরি নাই৷ এই বয়সেও কালা মানিকের জন্যে গাছে ওঠবার কইলে গাছে ওঠতেও রাজি আমি। আমার সেই মূল্যবান রত্নরে কিনা তুই অবহেলা করস’। বলতে বলতেই চোখে পানি চলে আসে নানুমনির।
আহি খানিকটা বিরক্ত হলো এবং বললো,
-‘ আপনি ভুল ভাবছেন নানু আপনাকে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। আমি বাইরের সৌন্দর্য কে কখনো প্রাধান্য দেই না আর ভবিষ্যতেও দেবো না। আর আপনার কালা মানিক অতোটাও কালো নয়। তাই এভাবে বলার কিছু নেই। সে যথেষ্ট সুদর্শন শুধু তার মনটাই কুদর্শন ‘।
মাথা দুলিয়ে হাসলো নানুমনি। বললো,
-‘ মনের সৌন্দর্য মনের চোখ দিয়াই দেখন লাগে রে ছেমড়ি। তা আমি যে তোরে তুই তুকারি করতাছি কিছু মনে নিতাছোস না তো? আমার সব নাতি-নাতনিগোরেই তুই বইলা সম্বোধন করি। তুই’ই তো পরম আপনরে বইন তুই’ই পরম আপন’।
মৃদু হাসলো আহি মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে কিছু মনে করছে না৷ তাদের কথার মধ্যে হঠাৎই ফোঁড়ন কাটলো হিয়া। বললো,
-‘ জানো ভাবি আমার নানু,খালামুনি ইভেন আমার পুরো নানার গুষ্টিদেরই বেশ রূপের অহংকার। তাই তো আমার বাপ,চাচাকে সারাজীবন হেলাফেলা করেছে। এরা আমার বাপ,চাচাকে দেখে যে ভাব করে আল্লাহ জানে নিগ্রোদের দেখলে এরা কি মন্তব্য করে বসবে তুমিই বলো আমার বাপ,চাচা কি অতোই অসুন্দর ? বুঝিনা এদের সমস্যা কি মেয়ের জন্য ছেলে লাগলে শুরুতেই বলবে ছেলে যেনো দেখতে সুন্দর হয়। ছেলের জন্য মেয়ে লাগলে বলবে মেয়ে যেনো রূপে,গুনে সেরা হয়। কেনোরে চেহেরার চাকচিক্যই কি সব? আমার মনে হয় এজন্যই দাদানের গায়ের রঙ চাপা দিয়ে আল্লাহ এদের অহংকারই ভাঙতে চেয়েছে ‘।
রিদি বললো,
-‘ হ্যা গো ভাবি হাভু ভাই যদি সত্যি দেখতে খারাপই হতো অহরহ মেয়েকি তার সঙ্গে লাইন মারার চেষ্টা করতো। অন্যদের কথা না হয় বাদই দেই শিফা আপুতো এখনো হাভু ভাইয়ের জন্য নাকের জলে চোখের জলে একাকার অবস্থা করে ফেলে। তাছাড়া ফুপা ফুপুকে যতোটা ভালোবাসে ফুপু তার থেকে হাজারগুন বেশি ভালোবাসে ফুপাকে’।
হিয়া রিদির পেটে গুঁতো মেরে বললো,
-‘ এই ফাজিল দাদানের বউ এর সামনে কি বলিস এগুলো আর হাভু ভাই কি? দাদান যদি জানে ভাবির সামনে এসব নাম উচ্চারণ করেছিস তাহলে তোর দুটো কানের একটাও জ্যান্ত থাকবেনা ‘।
‘হাভু ভাই’… বাহ বেশ দারুণ একটা জিনিস পেলো প্র্যাঙ্ক করার জন্য ভেবেই মুচকি হাসলো আহি। হিয়া আর রিদির দিকে চেয়ে বললো,
-‘ আমার কাছে এইসব কথা খুবই সিম্পল হিয়া তোমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারো ‘। মনে মনে বললো, -‘এর থেকেও বড় বড় বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছি তখন যখন সামলে নিয়েছি নিজেকে এটাতো চুনোপুঁটির মতো বিষয় ‘।
নানুমনি আহির সঙ্গে আরো অনেক গল্পস্বল্প করলো৷ কথার ফাঁকে ফাঁকে এও বললো তারা যেনো দ্রুত বাচ্চা নিয়ে নেয়। একবার যখন এক্সিডেন্ট ঘটেছে তখন তারাতাড়ি বাচ্চা নেওয়াই শ্রেয়। প্রতিত্তোরে নানুমনিকে কিছু না বললেও মনে মনে বললো,
-‘ বাচ্চা তো অনেক দূরের ব্যাপার সংসার টা আদেও ঠিকভাবে গড়ে ওঠবে কিনা তাই তো জানিনা ‘।
__________________
দু’দিনের মাথায় মাঝরাতে গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো আহির। রিদির পাশে শুয়েছিলো সে। সন্ধ্যার দিকে বেশ কয়েকবার হাঁচি আর কাশতে দেখেছিলো রিদি আহিকে। এবার জ্বর বুঝতে পেরেই মাঝরাতে ওঠেই মায়ের রুমে দরজা ঠকঠক করলো দরজা খুলে হুমা ঘুমজড়ানো কন্ঠে বললো,
-‘ কিরে এতো রাতে শরীর খারাপ লাগছে? জ্বর টর বাঁধালি? একশবার বলছি রিদি সামনে বিয়ে এবার একটু নিজের খেয়াল টা রাখ ‘ বলেই কপাল গলা চেক করে আবারো বললো,
-‘ কোথায় শরীর তো ঠান্ডাই ‘।
-‘ উফফ আম্মু তুমি আমাকে কিছু বলতে দেবে? জ্বর আমার না ভাবির গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে ফার্স্ট এইড বক্স দাও আপাতত নাপা খাওয়িয়ে দেই। ফুপিকেও জানিয়ে যাই জ্বরের কথাটা ‘।
-‘ হায় হায় হায় রে সর্বনাশ করছে ও রিদি করোনা টরোনা হলো না তো আল্লাহ রিদি তুই আর ওরুমে যাস না। তোর সামনে বিয়ে জ্বর টর বাঁধাস না ‘।
-‘ উফফ বিরক্ত করোনা তো আম্মু মূর্খের মতো কথাও বলো না জ্বর হলেই করোনা হইছে করোনা হইছে মিছিল করা লাগবে কেনো সামনে থেকে সড়ো। হুদাই আলাপ একটা ‘।
-‘ মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনিস না মা। তুই ওঘরে যাবিনা তোর ফুপুকে আমি ডেকে তুলি তাও তুই যাবিনা। তোরে আমার কসম রিদি মায়ের অবাধ্য তুই হবিনা একটামাত্র মেয়ে তুই আমার’। বলেই নাক টানতে শুরু করলো হুমা।
রিদি পড়ে গেলো বিপাকে হুমাও মেয়েকে জোর করে রুমে ঢুকিয়ে বললো,
-‘ বাবার পাশে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড় আমি তোর ফুপুকে পাঠাচ্ছি ‘।
.
ফজরের আজানের সময়ই হ্যাভেনকে জানানো হয় আহির ধুম জ্বর। এ খবর শুনে হ্যাভেনের বুকটা ধক করে ওঠে। সেবারের জ্বরে অনেক বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে তাদের জীবনে। আবারো সেই জ্বর। আহির জ্বরটাকে সে স্বাভাবিক নিতে পারলো না। এই জ্বরের কারণেই তাদের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে তারা হারিয়েছে ছোট্ট একটা প্রাণকে। তাদের অংশকে। তারওপর করোনা পরিস্থিতি তে এমন জ্বর বাঁধানো ঢাকা থেকে তারা টাংগাইল গিয়েছে। এই জ্বরটাকে সবাই স্বাভাবিক চোখে নেবে না। আবার সবার মন মানসিকতাও এক নয়। আহির খেয়াল রাখার জন্য সেখানে তেমন কেউ নেই তার মায়েরও বয়স হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড টেনশন নিয়েই ভোরে বেরিয়ে পড়লো হ্যাভেন। কথা ছিলো রাতে তিন ভাই এক সঙ্গে যাবে কিন্তু হ্যারি, হিরাকে রেখেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লো হ্যাভেন।
চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। একটু ব্যাস্ততার মাঝে এ পার্ট লিখেছি। অগোছালো হলেও মানিয়ে নেবেন।