#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪১ (শেষ অংশ)
-‘ কেনো আপনি কি আমাকে নাইটি পড়া দেখতে পাচ্ছেন’?
নির্বোধের মতো প্রশ্ন করে মনে মনে ভীষণ লজ্জা পেলো হ্যাভেন৷ সেইসাথে আহির দেওয়া উত্তরটি শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো খুব। নিজের মতোন করে একটি উত্তর দিয়ে ভীষণ লজ্জায় ফেলতে মন চাইলো আহিকে। কিন্তু পারলো না। আহির মেজাজ যে খানিকটা চটে আছে তা তার মুখশ্রী তে চোখ বুলিয়েই টের পেলো। তাই আহির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিজোড়ায় শীতল দৃষ্টি মিলিয়ে বুঝিয়ে কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাৎ পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আহি। প্রচন্ড অপমানবোধ করলো হ্যাভেন। চোখ বুজে ছোট্ট একটি শ্বাস ত্যাগ করে বেরিয়ে গেলো সেও।
__________________
রাত তখন আটটা ছুঁই ছুঁই। রিদি নানুমনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। পাশে শশী আর শিফা বসে আছে। তারা চারজন মিলে গল্পগুজব করছে। হ্যারি,হিরা, রিমন ছাদে সাউন্ড বক্স বাজাচ্ছে। রিদির মামি, মামাতো ভাই,বোন এবং মা,চাচি,ফুপুরা টুকটাক কাজের পাশাপাশি গল্প করছে। ছোট ছোট বাচ্চা’রা হৈচৈ করছে। হঠাৎই নানুমনি হিয়ার কথা জিগ্যেস করলো। তখনি টনক নড়লো সবার। সত্যি বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ হিয়াকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পায়নি তারা। শশী চট করে হিয়ার ফোনে কল করলো তিন,চার বার বেজে কেটেও গেলো ফোনটা ধরলো না। নানুমনি তখন আহির কথাও জিগ্যেস করলো এবং ফোন করে তার ঘরে আসতে বললো। শশী আহিকে ফোন করে দেখলো নাম্বার ওয়েটিংয়ে রয়েছে। দশমিনিট বাদে আবারও কল করলো তখনো ওয়েটিং। শিফা বিষয় টাকে জটিল করার পরিকল্পনা করে ওদের থেকে দূরে সরে হ্যাভেনকে কল করে জিগ্যেস করলো,
-‘ শোনো না আমরা অনেকক্ষণ যাবৎ আহিকে কল করছি পাচ্ছি না তুমি কি একবার ট্রাই করে দেখবে’?
-‘ কথা বলার জন্য এই বাহানা ছাড়া অন্য বাহানা খুঁজে পেলি না নিশ্চয়ই? তোরা ফোন করেই পাচ্ছিস না আর আমি ফোন করে পাবো? দিবাস্বপ্ন দেখাতে আসছিস ফোন কাট’।
হ্যাভেনের ধমকে কেঁপে ওঠলো শিফা নাক,মুখ কুঁচকে সটান সটান পা ফেলে আবারো নানুমনির কাছে এসে বোনদের পাশে বসলো।
.
শিফাকে ধমক দিয়ে ফোন কেটেই আহির ফোনে কৌতূহল বশে কল করলো হ্যাভেন কিন্তু ওয়েটিং পেলো। ভ্রুযুগল কুঁচকে বাড়ির ভিতর ঢুকতে ঢুকতে ড্রাইভার তমালকে বললো,
-‘ আজ আর বাইরে যাবো না গাড়ি ওঠিয়ে রাখো ‘।
ওঠানে মানুষে গিজগিজ করছে। গ্রামের বিয়ের আমেজ টা সত্যি অসাধারণ। সব মহিলারা বিয়ের আগের রাতে একসঙ্গে বসে কাজ করে। তাদের মধ্যে চলে নানারকম হাসি-ঠাট্টা। সকলের দিকে অল্প সময় চোখ বুলিয়ে ভিতরে চলে গেলো হ্যাভেন। উদ্দেশ্য রিদির রুম কারণ সেখানেই রয়েছে আহি। রিদির রুমের দরজার কাছে যেতেই দেখতে পেলো আহি পুরো রুমে পাইচারি করছে আর হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। যতোদূর বুঝলো অনার সঙ্গেই কথা বলছে সে। তাই আর এগিয়ে গিয়ে ডিস্টার্ব করলো না। তবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আহির হাস্যজ্জ্বল চেহেরাটা উপভোগ করতে লাগলো।
.
একঘন্টার বেশী সময় ধরে রিজভীর রুমে বসে আছে হিয়া। রিজভী গম্ভীর ভঙ্গিতে বেতের সোফায় বসে দৃষ্টিজোড়া স্থির রেখেছে মেঝেতে। একঘন্টা যাবৎ হিয়া অনেক কথা বললেও রিজভী শুধু একটি বাক্যই উচ্চারণ করেছে আর তা হলো,
-‘ বেরিয়ে যা রুম থেকে ‘।
কিন্তু হিয়া নাছোরবান্দা সে আজ রিজভীর থেকে সব প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে যাবেই না৷ সে প্রশ্ন গুলো হচ্ছে – তার দিকে কেনো একটিবার চেয়ে দেখে না রিজভী?, এতোগুলো বছর ধরে মনের কথা জানিয়ে আসছে সে রিজভীকে। ভালোবাসে সে ভীষণ ভালোবাসে ভীষণ চায় তাহলে কেনো রিজভী তাকে একসেপ্ট করে নেয় না। হাজার বার আই লাভ ইউ বাক্যটি শুনেও একটিবার কেনো বলে না আই লাভ ইউ হিয়া। এই যে সে আজ শাড়ি পড়েছে এখন অবদি খোলেনি৷ বার বার বলছে একটি বার পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তার দিকে তাকাতে তবুও কেনো একটিবার তাকাচ্ছে না রিজভী? তার মনে কি অন্যকারো বাস রয়েছে যদি তাই হয়ে থাকে স্পষ্ট ভাবে কেনো বলছে না? সব উত্তর তার আজ চাই, চাই মানে চাই।
বিছানায় চুপটি করে বসে ছিলো হিয়া। এক পর্যায় অধৈর্য হয়ে ওঠে গিয়ে রিজভীর সামনে মেঝেতে হাঁটু মুড়িয়ে বসে পড়লো। এবারে রিজভীর দৃষ্টি হিয়ার দিকে কিছু সময়ের জন্য পড়লেও আবারও দৃষ্টি সড়িয়ে নিলো রিজভী। খুব কান্না পেয়ে গেলো হিয়ার। ইচ্ছে করলো রিজভীর সব চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে৷ নিজেকে কোনরকমে সংযত করে বললো,
-‘ তোমার মতোন গোমড়ামুখে আর দুটো দেখিনি আমি। এতো ভাব দেখাও কেনো হুম? বাড়িতে অফিসে সবজায়গাই কি এই ভাবটা দেখাও নাকি ভাবটা শুধু আমার জন্যই বরাদ্দ ‘?
ডান পাশের দেয়ালে দৃষ্টি স্থির রেখে রিজভী উত্তর দিলো,
-‘ দেখ হিয়া বাড়াবাড়ি না করে বের হো রুম থেকে। কেউ দেখলে বিপদ ঘটে যাবে ‘।
-‘ ঘটে যাক বিপদ আজ আমি একটা বিপদ ঘটিয়েই ছাড়বো যদি না আমার করা প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাই। দেখো তুমি যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকো ক্লিয়ারলি জানাও আমাকে। চলে যাবো চিরজীবনের জন্য তোমার জীবন থেকে বিদায় নেবো আমি। কিন্তু এভাবে চুপ থেকে আমাকে শাস্তি দিও না প্লিজ ‘।
বুকটা কেঁপে ওঠলো রিজভীর। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে বললো,
-‘ হ্যাঁ আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি ‘।
চমকে ওঠলো হিয়া বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে রিজভীর দুগালে স্পর্শ করে ক্রন্দনরত কন্ঠে বললো,
-‘ আমার চোখের দিকে চেয়ে একটিবার এ’কথাটি বলো ‘।
বুকটা হুহু করে ওঠলো রিজভীর। হিয়া জোরপূর্বক রিজভীকে নিজের দিকে ফেরালো। দুজনের দৃষ্টিজোড়া স্থির হয়ে গেলো দু’জনাতে। হিয়া কন্ঠে কাতরতা মিশিয়ে বললো,
-‘ বলো অন্যকাউকে ভালোবাসো ‘?
-‘ ভালোবাসি ‘।
ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো হিয়া। রিজভীকে ছেড়ে শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো রিজভী। থমকে দাঁড়ালো হিয়া। রিজভীও দাঁড়িয়ে পড়লো হিয়ার দিকে কয়েককদম এগিয়ে গিয়ে সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললো,
-‘ এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমিতো বললাম ভালোবাসি যেটা শুনার জন্য এতোকাল অপেক্ষা করেছিস ‘।
ঠোঁট ফুলিয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠলো হিয়া। তার সে কান্নায় আরো দ্বিগুণ দূর্বল হয়ে পড়লো রিজভী আচমকাই প্রচন্ড শক্ত করে জরিয়ে ধরলো হিয়াকে। দু’জনই দুজনাতে এতোটাই মগ্ন হয়ে গেলো যে আশেপাশের আর কিছুতে কারো নজর ছিলো না। রিজভী বললো,
-‘ এই সম্পর্ক’টা কেউ মেনে নেবে না হিয়া। তুই কেনো পাগলামি করলি? কেনো আমায় এভাবে কাছে টেনে নিলি’?
-‘ ভালোবাসি খুব ভালোবাসি আর কিছু জানিনা আমি ‘।
মাথায় পরপর তিনটা কিস করে হিয়ার গালদুটো নিজের হাতের আঁজলে নিয়ে নিলো রিজভী। কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়িয়ে বললো,
-‘ অনেক বড় ঝড় আসবে হিয়া ‘।
-‘ কিছু হবেনা দাদানকে বুঝাতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ‘।
হিয়ার এতো পাগলামি এতো কনফিডেন্সের ওপর আর কোন কথা রাখতে পারলো না রিজভী। এতো দিনের চেপে রাখা সকল অনুভূতি’কে উজার করে দিতে লাগলো তার ওষ্ঠজোড়ায় লিপ্ত হয়ে।
.
রিদির রুম আর রিজভীর রুমটি পাশাপাশি। রিদির রুমে যেতে হলে আগে রিজভীর রুম পড়ে। আর রুম থেকে চলে যেতে হলে রিজভীর রুমের সামনে দিয়েই যেতে হয়। হ্যাভেন রিদির রুমের সামনে থেকে সরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। রিজভীর রুমের দরজা লক করা থাকলেও জানালা খোলাই ছিলো। যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই রিজভী এবং হিয়াকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে হ্যাভেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না হ্যাভেন। হিয়ার প্রতি বিশ্বাস, ভরসা কোনটা না থাকলেও রিজভীর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো তার। সে বিশ্বাসে যেনো নিমিষেই ফাটল ধরে গেলো। সেই সাথে মাথায় রক্তও চড়ে গেলো। চোখ দুটো হয়ে ওঠলো রক্তিম। হিয়া তার বোন। রিজভী তার মামাতো ভাই। দুজন মানুষ দুজন মানুষ কে পছন্দ করতেই পারে তাই বলে এতোটা অধঃপতন। নিজের বোনকে কোন ছেলের সঙ্গে এমন অবস্থায় দেখলে কোন ভাই’ই সহ্য করতে পারবেনা। যদি হয় হ্যাভেনের মতোন ডেঞ্জারাস পার্সন তাহলেতো কখনোই না। প্রচন্ড হিংস্রতার সঙ্গে দরজার সামনে গিয়ে গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করলো হ্যাভেন। হতভম্ব হয়ে রিজভী,হিয়া দুজনই ছিটকে সরে গেলো। হিয়ার শরীরে কম্পন ধরে গেলো কেমন। ঘামতে থাকলো রিজভীও। তবুও চোখ বুজে হিয়াকে ভরসা দিয়ে দরজা খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে হ্যাভেন রিজভীর নাক বরাবর এক ঘুষি দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেললো। এবং ক্রমান্বয়ে আঘাত করতেই থাকলো। হিয়া চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দিলো। এতো শব্দ শুনে আহিও রুম ছেড়ে দৌড়ে বেরিয়ে রিজভীর রুমে ঢুকলো আর দেখতে পেলো হ্যাভেনের ক্ষিপ্ত রূপ। রিজভীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সমান তালে মেরেই যাচ্ছে। উপায় না পেয়ে আহি হিয়া দুজনই ছাড়াতে চেষ্টা করলো হ্যাভেনকে। এক পর্যায়ে হিয়া চিৎকার করে বললো,
-‘দাদান ওর কোন দোষ নেই আমি ওকে ভালোবাসি আমি নিজে থেকেই ওর কাছে এসেছি ‘।
চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আহির। সেইসাথে নিজেই ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। হিয়ার কথা শুনে হ্যাভেন রিজভীকে মারা স্টপ করে হিয়াকে ঠাশিয়ে এক থাপ্পড় মারলো। বিনিময়ে মেয়েটা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। হ্যাভেন আবারো ওকে ওঠিয়ে থাপ্পড় দিতে যেতেই আহি হ্যাভেনের হাত টেনে ধরলো। হ্যাভেন এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলো যে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছিলো তার তাই ক্রোধের বশে আহিকে এক ধাক্কা মেরে চিৎকার করে বললো,
-‘ এই তোর এখানে কি এখুনি বের হো রুম থেকে’।
স্টিলের মোড়ার সঙ্গে কপালে বাড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো আহি। অসহনীয় ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠলো সে।
আহির আর্তনাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় হ্যাভেন কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধতায় কাটিয়ে ছুটে গিয়ে ‘আহি’ বলেই চিৎকার করে ওঠে। হিয়াও ভাবি বলে ছুটে যায় কাছে। কিন্তু হিয়া আহিকে স্পর্শ করার আগেই হ্যাভেন হিয়াকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয় চিৎকার করে বলে,
-‘ এই ওকে একদম স্পর্শ করবিনা তুই ‘।
চলবে…
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। একদিনে দুপার্ট দিয়েছি খুশি হয়ে সন্তুষ্টজনক মন্তব্য করুন যাতে লেখায় উৎসাহ পাই৷ ইদানীং উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি কেমন। খুবই দুঃখজনক বিষয় এটি আমার জন্য।