ওহে_প্রিয় #জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৫০

0
572

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৫০
____________________
আহিকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখে ‘ওহ শীট’ বলেই চিলেকোঠার ঘর থেকে ছুটে এলো হ্যাভেন৷ উদগ্রীব হয়ে আহিকে ধরে ওঠালো। অনুরাগের স্বরে বললো,

-‘ কিভাবে হাঁটা চলা করো তুমি? একটু সাবধানে হাঁটবে তো দেখি কোথায় লাগলো? ধ্যাত… বালের প্ল্যান আমার! ‘

একদিকে হাত এবং নাকে তীব্র ব্যাথা অপর দিকে অর্ধেক শাড়ি খুলে পড়া,আবার আচমকাই হ্যাভেনের আগমন। সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস এক মূহুর্ত। হ্যাভেন ব্যস্ত ভঙ্গিতে দাঁত কিড়মিড় করে রাগ ঝাড়ছে পাশাপাশি আহির শাড়ির আঁচল কাঁধে জরিয়ে ময়লা ঝেড়ে ফেলছে। সবশেষে আহির দিকে তাকিয়ে নাকের ডগায় আলতো আঙুল ছোঁয়ালো। আহি চোখ বুঝে ভারী শ্বাস ছাড়লো,দু’চোখ বেয়ে কয়েকফোটা অশ্রু গড়িয়েও পড়লো তার। তা দেখে হ্যাভেন কিছুটা সংযত হয়ে আহিকে জরিয়ে ধরতে উদ্যত হবে তার পূর্বেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো আহি। ঠাশ করে হ্যাভেনের ডান গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। শুধু থাপ্পড় দিয়েই ক্ষ্যান্ত হলো না ক্রোধান্বিত কন্ঠে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই তৎক্ষনাৎ হ্যাভেন ক্ষিপ্ত হয়ে আহির দু’কাধ শক্ত হাতে চেপে ধরে চিলেকোঠার ঘরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড় করালো এবং চিৎকার করে বললো,

-‘ হাউ ডেয়ার ইউ আহি!’

হ্যাভেনের এহেন রূপ দেখে আঁতকে ওঠলো আহি। সব রাগ,অভিমান নিমিষেই উধাও হয়ে চোখে, মুখে ভর করলো একরাশ আতংক। এক ঢোক গিলে তোতলাতে তোতলাতে কিছু বলতে যাবে তখনি হ্যাভেনের হুঁশ ফিরলো। আহি কি করেছে এবং সে কি করতে যাচ্ছিলো মনে করতেই চোখ বন্ধ করে ক্ষণকাল চুপ রইলো। যখন চোখ খুললো দেখলো বদ্ধ চোখে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে আহি। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কাঁধ ছেড়ে দু’হাতের আঁজলে আহির চোয়াল চেপে ধরলো। চোখেমুখে গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলে বললো,

-‘ কাঁদছো কেন? ‘

উত্তর দিলো না আহি। দু’হাতে হ্যাভেনের বুক বরাবর মৃদু ধাক্কা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দু’পা এগিয়েছে মাত্র। অমনি শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো হ্যাভেন৷ আহি কাঁধে আঁচল চেপে ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। হ্যাভেন বারতি আঁচলটুকু হাতে প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে এগিয়ে গিয়ে আহির পিঠ একদম নিজের বুকে ঠেকালো। চোখ বন্ধ করে হ্যাভেনের ধরে রাখা আঁচলটুকুতে হাত রাখলো আহি। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর তীব্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত সে। হ্যাভেন ঘাড় বাঁকিয়ে তার ক্লেশবোধ পরখ করে নিয়ে বাঁকা হাসি দিলো। এবং সঙ্গে সঙ্গেই গভীরভাবে ওষ্ঠজোড়া ছুঁইয়িয়ে দিলো আহির কাঁধে। দু’হাতে নিজের শাড়ি খামচে ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো আহি। হ্যাভেন তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেতেই সে অশ্রুসিক্ত নয়ন দু’টো মেলে ধরলো। সে দৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকার সাহস হলোনা হ্যাভেনের। দৃষ্টি নত করে আহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। হাতের পিঠে ওষ্ঠ ছুঁইয়িয়ে একবার তাকালো আহির পানে। আহির অভিমানী দৃষ্টি, অভিমানী মুখশ্রী অতি সন্তর্পণে হজম করে নিয়ে পা বাড়ালো চিলেকোঠার রুমের দিকে। সেখানে গিয়ে আহি দেখতে পেলো ল্যাপটপে তাদের বেডরুমের যাবতীয় চিত্র ফুটে ওঠেছে। রাগে শরীর কাঁপতে শুরু করলো এবার আহির। ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে হ্যাভেনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। হ্যাভেন ভ্রু নাচিয়ে আহির ধরে রাখা হাতটি আরো শক্ত করে চেপে ধরলো৷ আহি কিছু বলতে উদ্যত হতেই এক আঙুলে আহির ওষ্ঠজোড়া চেপে মৃদু স্বরে বললো,

-‘ চুপপ কোন কথা নয়। বিয়ের পূর্বে প্রথম দেখার দিন গায়ে হাত তুলেছিলে পরিণামে কি পেয়েছিলে ভুলে গেছো সুন্দরী? বিয়ের পর আজ আবারও এমন দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছো এর পরিণাম কতোটা ভয়াবহ হয় এবার দেখো। ‘

ভয়ে পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসার উপক্রম আহির৷ তার ভয়’টাকে অনুভব করতে পেরে রহস্যময় এক হাসি দিলো হ্যাভেন। আহির কানের কাছে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে মৃদুস্বরে বললো,

-‘ ডোন্ট ওয়ারি জান প্রথম বারের শাস্তিটা ছিলো ভালোবাসা বিহীন, দ্বিতীয় বারের শাস্তিটা হবে ভালোবাসা মিশ্রিত। ‘

চলবে…

ছোট্ট একটি পার্ট দিয়ে দিলাম। অন্তিম পর্ব অর্থাৎ ৫০ তম পর্বের বর্ধিতাংশ আগামীকাল দেওয়ারই নিয়ত করেছি ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here