এই_অবেলায়_তুমি #পর্ব_৩১ লেখিকা #Sabihatul_Sabha

0
278

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

” হায় হ্যান্ডসাম”
নীল প্রথম ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে তাই নিজের মতো আবার হাঁটা শুরু করলো।
মেয়েটা দৌড়ে নীলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
নীল ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকালো।
মেয়েটা এবার নীলকে ঘুরে ঘুরে দেখা শুরু করলো। এক পর্যায়ে বলে উঠলো,’ মুটামুটি আকর্ষনীয়। যে কোনো মেরে আকর্ষণ হতে বেশি সময় লাগবে না।পুরাই চকলেট বয়।’
নীল হা করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে তো দেখতে খুবই সুন্দরী কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ে ওর সাথে ফ্লার্ট করছে..?

নীল কে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটা ওর আরো কাছে এসে বাঁকা হেঁসে ব’লে উঠলো,’ নাম কি..?
নীলঃ কেনো..!?
~আগে বলো তারপর না হয় বলছি..
নীলঃ নীল চৌধুরী।
~কিইইইই!! লাল নীল..তারপর মুখে হাত দিয়ে বললো, আমি তো রং নয় তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি..
নীল বুঝলো মেয়েটা ইচ্ছে করেই এমন করছে।
নীলঃ তোমার নাম..?
~ফাইজা..
নীলঃ আগে পিছে কিছু নেই..?
ফাইজাঃ আছে কিন্তু আমি বলতে ইচ্ছুক নই।
নীলঃ আমার ও জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ফাইজাঃ বা বাহ্ Attitude দেখে আমি তো ফিদা।
নীল মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ তোমার হাসি…
নীলঃ কয়দিন হয়েছে চিনো..?
ফাইজাঃ বলতে ইচ্ছুক নই..
নীলঃ আচ্ছা আগে বলো। আমার কাছে আশার আসল কাহিনি কি..?
ফাইজাঃ তুমি সম্পর্কে আমার বেয়াই আসতে পারি না..?
নীল কিছু বললো না চুপ করে হাঁটা শুরু করলো।
ফাইজাঃ হেই… Attitude দেখিয়ে চলে যাচ্ছো! নাম্বার টা তো দিয়ে যাও..
নীল পিছনে না ফিরেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নাম্বার দিয়ে মাহির রুমের দিকে চলে গেলো।

সবাই নিচে নূর মাহির রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে পিছনে ফিরে তাকালো।

ধূর্সরবর্নের শার্ট পড়া রুদ্রকে দেকেই থমকে গেলো। নূর আড়ঁচোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ফেললো।

রুদ্রের মনে হচ্ছে ওর সামনে এক কালো পরি দাঁড়িয়ে আছে। কালো শাড়ি, এক হাতে চুড়ি অন্য হাতে ঘড়ি, হালকা সাজে যেনো অপ্সরী লাগছে। রুদ্রের নিঃশ্বাসের প্রখরতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বুকের সেই ধুকধুকানি অন্য কথা জানিয়ে দিচ্ছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো। নূর চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালো।
নূর রুদ্রের দিকে না তাকিয়েই বললো,’কখন এসেছেন..?
রুদ্রঃ এই তো একটু আগে আসলাম। নিচে সবার সাথে দেখা করে জানলাম তুমি এখানে।
নূর চোখ তুলে রুদের দিকে তাকালো।
সাথে সাথে রুদ্রের বুকের ধুকধুকানি আরো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের মুখের উপর ঝুঁকে যাচ্ছে।
রুদ্রের উষ্ণ নিঃশ্বাস গুলো গভীর ভাবে নূরের মুখের উপর পরছিলো।

হঠাৎ দরজার কেউ বলে উঠলো, ‘ ভাই বন্ধুর বেডরুমকে আজকের জন্য নিজের পারসোনাল রুম বানাই ফেলছো নাকি..?

আচমকা অপ্রত্যাশিত কারো আওয়াজ শুনে বিদ্যুৎ ঝটকায় রুদ্রকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো নূর। লজ্জায় মাথা গুড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে গেলো।

রুদ্র এক হাত দিয়ে কপাল স্লাইড করে পিছন ফিরে দেখলো নীল ছত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

রুদ্রঃ তুই এখানে কেনো..? আর কারো রুমে ঢুকার আগে যে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটাও জানিস না!বেয়াদব!
নীলঃ আমি কি জানতাম নাকি তোমারা যেখানে সেখানে মিশনে নেমে যাও।
রুদ্রঃ অল্প বয়সে বেশি পেকে গেছিস… আমি তো শুধু নূরের চোখে কি যেনো পড়ে ছিলো তাই দেখতে ছিলাম।

নীল দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,’ চোখে কিছু পড়ে ছিলো নাকি অন্য কোথাও.. ‘

নূর রেগে বলে উঠলো,’ নীলের বাচ্চা দাঁড়া খালি তুই!

নীল দাঁত বের করে হেসে বললো,’ দাঁড়িয়েই তো আছি।তবে আমি এতটাও নির্লজ্জ নই নূর যে ছোটো বোনের রোমাঞ্চ দেখবো। এই দেখ চোখ বন্ধ করে আছি তোরা তোদের রোমাঞ্চ চালিয়ে যা।

লজ্জা পেলেও এখন লজ্জা কে পাধান্য দিলে চলবে না। না হলে এই ঠোঁট কাটা ছেলের মুখ বন্ধ হবে না নূর বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা তাই নাকি তুই দাঁড়া আমি তোকে রোমাঞ্চ দেখাইতেছি।’
নূরকে জুতা খোলতে দেখে নীল ভয়ে দিলো দৌড় নীলের পিছু পিছু নূর ও গেলো।

রুদ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,’ শালার বিয়ের আগেও প্রেম করতে পারিনি আর রোমাঞ্চ সেটা ভাবা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। কিন্তু এখন বিয়ে করেও একটু বউয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসা রোমাঞ্চ কিছুই করতে পারছি না। এই প্রকৃতি, আকাশ -বাতাস আশেপাশের মানুষ সব তার শত্রু হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

———

বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

আনিতা বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। উনার মনে হচ্ছে যেনো কত বছর পর মেয়েকে দেখেছেন।

বাসাটা আবার জীবিত হয়ে উঠলো। হাসি খুশিতে গদোগদো হয়ে উঠলো পরিবারের প্রত্যেক টা সদস্য। রুহিও নিচে নেমে এসেছে। সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে আছে। কিন্তু দেখা নেই আদির।

সবাই সবার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

আনিতা বেগম নতুন জামাইয়ের জন্য বিভিন্ন আইটেমের রান্না করতে ব্যস্ত।দুই মেয়ের জামাইর পছন্দ মতো সব রান্না করছেন। হঠাৎ মনে হলো শুধু দুই জামাইর পছন্দ মতো না। আদি,আবির,রুদ্র, ফায়াজ সবার পছন্দের রান্না করবেন উনি আজকে।

মাহি তোমার পা’য়ের পায়েল টা তো খুব সুন্দর। জিজু দিয়েছে নাকি..!?

মাহি চমকে পা’য়ে হাত দিলো। পায়েল আসলো কোথায় থেকে.!?

আদিবাঃ কি রে চুপ করে আছিস কেনো? ফায়াজ জিজু দিয়েছে তাই না..?? তুই এমন মাহি ফায়াজ জিজু তোকে গিফট দিলো একবার দেখালি ও না। এতটা পর হয়ে গেলাম এক দিনেই। আমি কিন্তু কোনো কিছু লুকাই না,গুমরে মুখ করে বললো।

মাহিঃ তুই কবি বলছিলি..?
আদিবা মিনমিন সুরে বললো, ‘ তোর কিপটে ভাই তো আমাকে কিছুই দেয়নি কি বলবো…
মাহিঃ কেনো ভালোবাসা দেয়নি..?
আদিবা হঠাৎ এমন কথা শুনে লজ্জায় এদিক ওদিক তাকানো শুরু করলো।

মাহি আবার বললো,’ তুই তো সব থেকে বেস্ট উপহারটি পেয়েছিস আদিবা..
শুভ্রতাঃ কেনো গো ননদী ফায়াজ বুঝি ভালোবাসা উপহারটা দেয়নি তোমাকে..?? দুষ্টু হেসে বললো নাকি কম হয়ে গেছে..

মাহি মনে মনে বললো,’ সবার যে সব কিছু কপালে থাকে না। আমি যে রুদ্র ভাইয়ার জায়গাটা কাউকে দিতে পারবো না। কখনো না!

আদিবাঃ আমি এমন একটা পায়েল আজকে দুপুরে নূরের পা’য়ে ও দেখেছি..

মাহি চমকে তাকালো আদিবার দিকে,

মাহির পাশে এসে নীল দাঁড়িয়ে বললো,’ ডাল মে কুচ কালা হে!

পিছন থেকে নূর বলে উঠলো, ‘ডাল কালা নাকি সাদা সেটা তুই চিন্তা না করে নিজের ভবিষ্যতে যে কালা হয়ে আসছে সেইচিন্তা কর।

নীল বিরক্ত হয়ে বললো,’ যে কোনো কথায় বাঁ হাত না ঢুকালে তোর পেটের ভাত আযম হয় না!
নূরঃ তুই যেখানে সেখানে কথা বলতে আছিস কেনো..?
নীলঃতাতে তোর কি..?
নূরঃ বেশি পকপক না করে চুপ থাক।

মাহিঃ তোরা কেনো এত টুকু একটা কথা নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছিস। চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।

নীলঃ আমি তো ভালো কথাই বলছি। তোর বোন তো এক নাম্বার বেয়াদ্দপ মহিলা।

নূর কটমট দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুই একটা ফালতু ছেলে।’

নীলঃ হ্যা ফালতু হতে পারি তোর মতো তো আর না। যেখানে সেখানে হাঁস মুরগীর মতো…
আর কিছু বলার আগেই নূর জুতা খোলে হাতে নিয়ে বললো,’ নীলের বাচ্চা দাঁড়া খালি তুই।
নীল তো জুতা দেখেই দৌড় দিলো একটু দূরে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমরা করতে পারো আর আমরা দেখে বললেই দোষ। দাঁড়াতে বলছোস ভালা কথা জুতা হাতে লস কা. বেয়াদ্দপ মহিলা..!?

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here