এক_ফালি_সুখ🌼 |৫| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
376

#এক_ফালি_সুখ🌼 |৫|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”নতুন মেয়ে? কই,আলাপ করিয়ে দেবেন না?”
ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করেই কথাটা বললো তূর্য। তন্নিও তার সঙ্গে সম্মতি জানালো। রাতুল মৃদু হেসে বলে,
_”হ্যা হ্যা,আগে ওদিকটায় চলো। ড্রেস চেঞ্জ করে জলদি মেকআপ ঠিকঠাক করে নাও। এখানের শুট শেষ করে বাড়ির ভেতরের শুটিং এ যেতে হবে। পাঁচদিনের মধ্যে শুট শেষ হওয়া চাই।”

তন্নি আর তূর্য সম্মতি জানিতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। তূর্যর নজর তখনও ফোন এর দিকে। ঠিক তখনি সামনে থেকে একটা মেয়েকে আসতে দেখলো, হাতে কিছু স্ক্রিপ্ট নিয়ে রাতুলের দিকেই এগোচ্ছিলো সে। তূর্য প্রথমবার খেয়াল না করলেও দ্বিতীয়বার ভালো করে তাকায় মেয়েটার দিকে।

মৌরিন রাতুলের কথা অনুযায়ী যার যে যে স্ক্রিপ্ট রয়েছে সেগুলো গুছিয়ে আবার তার কাছেই নিয়ে আসছিলো। সামনে তূর্যকে দেখে সে নিজেও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরে সেখানে।
তূর্য ভ্রুযুগল ইষৎ কুঁচকে বলতে নেয়,
_”তুমি?”

_”ঠিকঠাক করে রেখেছো তো মৌরিন?”

মৌরিন এর সামনে এসে তার হাত থেকে স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে দেখতে দেখতে বলে রাতুল। মৌরিন তূর্যর থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায়।
তন্নি মৌরিন কে একবার দেখে রাতুল এর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
_”ও কে ভাইয়া?”

রাতুল স্ক্রিপ্টগুলো থেকে চোখ সরিয়ে মৃদু হেসে বলে,
_”আলাপ করিয়ে দেই, ও হচ্ছে মৌরিন। ওর কথাই বলছিলাম তোমাদের। ইশিতার যায়গায় এখন থেকে মৌরিন ই থাকবে।”

তূর্য আর মৌরিন দুজনেই রাতুলের থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে তাকায় একে অপরের দিকে। মনে পরে যায় কয়েকদিন আগের ঘটনা।

_____
ভোরবেলায় বাড়ির পাশের রাস্তায় জগিং করতে বেড়িয়েছে তূর্য, শরীরে তার কালো রঙের হাতকাটা গেঞ্জি, সঙ্গে কালো রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। এক হাতে তার পানির বোতল। এত সকালে বয়স্ক মানুষ ছাড়া রাস্তায় তেমন কাউকে দেখা যায়না, আর সেই বয়স্ক লোকেদের তূর্যকে চেনার কথা নয়। ইয়াং জেনারেশন এর দু এক জন জন থাকলে তারা তূর্যকে চিনে ফেলে, তবে দু একটা সেলফি তুলতে খুব একটা ঝামেলা হয়না তূর্যর। বরং নিজের এই জনপ্রিয়তা নিয়ে অহংকার হয় তার।

অনেকটা সময় শেষে একটা মাঠের পাশে বেঞ্চে এসে বসে পরে তূর্য। হাতে থাকা পানির বোতলটা খুলে মাথা সামান্য ঝুকিয়ে অনেকটা পানি ঢেলে দেয় মাথার সামনের অংশে এবং মুখে। বোতলটা আটকে অন্যহাতের সাহায্যে পানিটুকু ঝেড়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। তবে কয়েক কদম পা বাড়াতেই পিছন থেকে একজন মেয়েলি কণ্ঠে ডাক দেয় তাকে, তূর্য সিওর ছিলো হয়তো তার কোনো ফ্যান দেখতে পেয়েছে তাকে,থেমে যায় তূর্য।

মৌরিন দ্রুত পা বাড়িয়ে তূর্যের সামনে এসে বলে,
_”এক্সকিউজ মি”
কথাটা বলে নিজের ফোনটা সামনে ধরে একটা এড্রেস দেখাতে চায় সে,তূর্য ভেবেছিল মৌরিন হয়তো সেলফি তোলার জন্য ফোন সামনে আনছে, তাই সে মুচকি হেসে খানিকটা ছবি তোলার ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। তা দেখে মৌরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
_”আপনি এমন করছেন কেন?”

অবাক হয় তূর্য,মুখভঙ্গি স্বাভাবিক করে নেয় সে। মৌরিন সেদিকে খেয়াল না করে ফোনে একটা অ্যাড্রেস দেখিয়ে বলে,
_”এই জায়গাটা এখান থেকে কতদূর একটু বলতে পারবেন প্লিজ? আসলে আমি গুগল ম্যাপ এ ঢুকতে পারছিলাম না।”

বোকা বোনে গেলো তূর্য, কিছুটা বিবৃতিকর পরিস্থিতি তে পরে গেলো সে। মৌরিন আবারো বললো,
_”আপনি না জানলে সমস্যা নেই,অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি।”

তূর্য একবার মৌরিন কে ভালোকরে পরখ করে নেয়। শ্যামবর্নের মেয়েটার পরনে সাদা রঙের গোল জামা, সঙ্গে সাত রঙের একটি ওড়না,কপালে কালো রঙের একটা ছোট্ট টিপ।
অসন্তুষ্ট হলো তূর্য, গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,
_”এখান থেকে সোজা গিয়ে বাম দিকে। হেটে গেলে পাঁচ মিনিট লাগবে।”

মৌরিন মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানায় তূর্যকে। এরপর তার বলা রাস্তার দিকে চলে যায়।

____
_”আর মৌরিন, ওরা হলো তূর্য আর তন্নি। এই নাটকের হিরো এন্ড হিরোইন। তূর্য,তন্নি তোমাদের কিছু দরকার হলে মৌরিন কেই জানাবে ঠিক আছে?”

মৌরিন এবার বুঝতে পারে সেদিন তূর্যের অমন অদ্ভুত আচরণ এর কারণ। তবে ও কিছু না বলেই চুপ করে থাকে। আরো অনেকে তাড়া দিলে তূর্য,তন্নি,রাতুল সহ সবাই পা বাড়ায় শুটিং স্পট এর দিকে।

মৌরিন সব ক্রিপ্টগুলো হাতে নিয়ে কার কোনটা সেটা ঠিক করছে। সামনেই মেকআপ আর্টিস্ট তন্নির মেকআপ ঠিক করছে, আরেকজন তূর্যর চুলগুলো সেট করছে। তূর্য ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করে চলেছে।
তন্নির স্ক্রিপ্টটা নিয়ে মৌরিন তন্নির কাছে এসে বলে,
_”ম্যাম আপনার স্ক্রিপ্ট এটা।”

তন্নি সামান্য হেসে স্ক্রিপ্টটা হাতে নিয়ে বলে,
_”আমায় কেউ ম্যাম বলে ডাকেনা বুঝলে, আপু বলেই ডেকো তাতেই হবে। আর তোমাকে মৌরি ডাকবো কেমন?”

স্মিত হেসে সায় দিলো মৌরিন। তন্নি তূর্যর দিকে তাকিয়ে আবারো বলে,
_”ওকে যা খুশি ডেকো,ওটা তোমার ইচ্ছে।”

মৌরিন এবার পরের স্ক্রিপ্টটা নিয়ে তূর্যর সামনে গিয়ে বললো,
_”এটা আপনার।”

একনজর মৌরিন এর দিকে তাকিয়ে স্ক্রিপ্টটা হাতে নিলো তূর্য। নিজের ফোনটা সামনে রেখে স্ক্রিপ্টটা উলটে পাল্টে দেখে নিজে নিজেই বললো,
_”রাতুল ভাই যে কাদের নিয়ে আসে কে জানে। এই সেক্টর সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণাই নেই।”

মৌরিন স্পষ্টভাষী মানুষ,তাই ইতস্ততবোধ না করে সরাসরি বললে,
_”ইনডিরেক্টলি কি আমার কথা বোঝালেন?”

স্ক্রিপ্ট এর দিকে চোখ রেখেই তূর্য বললো,
_”এমন ভাবার কারণ?”

মৌরিন মৃদু হেসে বলে,
_”মানুষের কথার ধরণ দেখে বোঝা যায় এগুলো। কিন্তু আপনি ভুল কিছু বলেননি, এই সেক্টর সম্পর্কে আমার আসলেই তেমন কোনো ধারণা নেই। খুব একটা নাটক ও দেখা হয়না, তাই অ্যাকটর দেরও তেমন চিনিনা।”

আড়চোখে মৌরিন এর দিকে তাকালো তূর্য। মৌরিন কিছুটা থেমে নিজে থেকেই বললো,
_”তবে আমি যেহেতু এখানে অভিনয় করতে আসিনি। তাই এসব বিষয় খুব একটা ম্যান্ডেটরি বলে তো আমার মনে হয়না।”

শুটিং শুরু করার জন্য ডাক পরলো সবার। মৌরিন ও সেদিকেই চলে গেলো। ফলে তার কথার বিপরীতে আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না তূর্য। অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামালো না তূর্য। আরো অনেক কাজ আছে তার, এসব ক্ষদ্র ব্যক্তিবর্গ নিয়ে চিন্তা করার ইচ্ছে তূর্যর নেই। সে নিজে যেই মাপের মানুষ, তার চিন্তাভাবনাও হবে সমান মাপের মানুষদের নিয়ে, এটাই তূর্যের ধারণা।

____
শুটিং এর স্থানে খুব একটা কঠিন কাজ করতে হয়নি মৌরিনকে, প্রথম দিন বলে বাকিরাও ওকে সাহায্য করেছে কাজগুলো বুঝে নিতে। সবাইকেই বেশ ভালো মনে হয়েছে মৌরিনের, বিশেষ করে তন্নি তো ভীষণ মিশুক। রাতুল ও খুব হাসিখুশি মানুষ।
সেখানে কেবল একজন কেই ব্যতিক্রম মনে হয়েছে মৌরিনের,আর সেই ব্যক্তি হলো তূর্য। ভিতরটা যে তার অহং এ ভরপুর এটা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি মৌরিনের। আর অহংকারী ব্যক্তিরা আর যাই হোক মানুষ হিসেবে ভালো হতে পারেনা, এই বিষয়েও অনেকটা নিশ্চিত মৌরিন।

বিকেলের দিকে শুটিং সেট থেকে বাড়ি ফিরে আসে মৌরিন। আসরের নামায পরে কিছুটা বিশ্রাম নেয় সে। এরপর মাগরিব এর নামায পরে চারতলায় চলে আসে নিহা নামের মেয়েটিকে পড়ানোর জন্য। কথা ছিলো নিহাই এসে পড়ে যাবে, তবে তার মা পরবর্তীতে এসে বলেছেন মৌরিনকে যেতে। নিহার বাবা একটু শহরের বাহিরে গেছেন, আর তার নাকি একা বাসায় থাকতে ভয় করে। মৌরিনও আপত্তি করেনি। সময়মত চলে যায় নিহাকে পড়ানোর জন্য, নিহাও খুব মিষ্টি মেয়ে। আর তার মা’ও ভীষণ আন্তরিক। প্রথম দিন গল্প করেই কাটিয়ে দিলো তারা, আগামী দিন থেকে পড়াশোনা শুরু করবে।

আধাঘণ্টা গল্প করে নিহাদের বাসা থেকে বের হলো মৌরিন,নিচে নামতে যাবে তখনি মনে পরে এই বাড়িতে ওঠার পর ছাঁদে যাওয়া হয়নি। বিল্ডিং টা চারতলা, পাঁচতলায় ছাঁদ। তাই নিচে না গিয়ে ছাঁদটা দেখে আসার জন্য উপরে যায় মৌরিন, তালা দেওয়া থাকলে আবার ফিরে আসবে নাহয়।

#চলবে?

[লো প্রেশার এর কারণে হাত এত পরিমানে কাঁপছিল যে লিখাই অসম্ভব হয়ে পরেছিল। ইফতার এর পর এইটুকু লিখেছি।
গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here