#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
খুব সুন্দর করে মাহিকে নিজের হাতে সাজিয়েছে রোকেয়া বেগম। উনার খুব মেয়ের শখ ছিলো। কিন্তু ফায়াজের জন্মের পাঁচ বছর পর উনি জানতে পারেন উনি আর কখনো অন্তঃসত্ত্বা হতে পারবেন না। ওই দিন উনি খুব কেঁদে ছিলেন।
মানুষে পুরো বাড়ি গিজগিজ করছে। নতুন বউ দেখার জন্য অনেকেই তারা দিচ্ছে।
নূর আর বাকি সবাই এসেছে পাঁচ মিনিট হবে। ড্রয়িং রুমে বসে আছে। ওদের কে শরবত আর নাস্তা দেওয়া হয়েছে। নতুন অতিথিদের বিশেষ খেয়াল রাখছে ফায়াজের মামী,ফুপিমণি রা। ওদের সামনে এসে দুইটা মহিলা বসলো।
~তা তোমরা নতুন বউয়ের কেডায় কি হও..?
নূর,নীল,মিম আসতে আসতে সবাই নিজেদের পরিচয় দেয়।
~ওহ তুমি বুঝি বউয়ের বইন। তয় বড় নাকি ছোটো আমরা তো এহনও বউ দেহি নাই।তাই কইতে পারি না বউ দেখতে কেমন।
নূর বুঝলো তারা হয়তো ফায়াজ স্যারের গ্রামের আত্মীয়।
নূর মিষ্টি হেসে বললো,’ জ্বি আন্টি আমি আপুর ছোটো।’
মিম বলে উঠলো,’ আন্টি এখনো বউ দেখানো হয়নি কেনো..?’
আরেকটা মহিলা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,’ কাল বউ নিয়ে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছলো। তাই বড় ভাবি বললো বউ নাকি সকালের আগে আর কেউ দেখতে পারবো না।বলে ফায়াজ বাবার রুমে নিয়ে গেলো। এখনো বের করার কোনো নাম গন্ধ ও নাই।
আরেকটা মহিলা আদিবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার ছেলেটার জন্য ও মাইয়া খুঁজতাছি। সুন্দর পড়াশোনা জানা, ঘরের সব কাজ কাম পারে,রান্না হইতে শুরু করে সব কাজ। এমন একটা লক্ষি শান্ত সৃষ্ট মেয়ে খুজতেছি।
নীল মহিলার দৃষ্টি খেয়াল করে বলে উঠলো,’ আন্টি এমন মেয়েতো আপনি বিয়ে বাড়িতে পাবেন না। পত্রিকায় ছাড়তে হবে নিচে আপনার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিবেন। পরের দিন দেখবেন মেয়ের বাজার বসে গেছে আপনার বাসার সামনে। আমার ভাইয়ার ও এমন বউ চাই তারপর আমরাও এমনটাই করলাম তারপর দেখুন এই যে শান্ত সৃষ্ট লক্ষি ভাবিটাকে পেলাম।
মহিলাটা প্রথম প্রথম নীলের কথা বিরক্ত হলেও যখন আদিবাকে ইশারা করে নীল বললো। তখন উনি হা করে বলে উঠলো,’ এই মেয়ের কি বিয়া হয়ে গেছে??…
নীল হাসি দিয়ে উপর নিচ মাথা দুলালো।আর বিরবির করে বললো,’ শুধু এইটা না এখানের সব গুলাই বিয়াইত্তা মুখে আশি কেজি আটা,ময়দা,সুজি দিয়া প্লাস্টিক সার্জারি করছে তাই মুখে আবিয়াইত্তার সাইনবোর্ড ঝুলে আছে।’
———
রোকেয়া বেগম উনার মন মতো বউকে সাজালেন।
রোকেয়া বেগমঃ তুমি দাঁড়াও আমি আসছি। বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
তখনি রুমে প্রবেশ করলো ফায়াজ। হঠাৎ ফায়াজের আগমনে মাহি ব্যাস লজ্জা পেয়ে যায়। ওর শাশুড়ী উনার যত গহনা আছে সব দিয়ে মাহিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে নিজের সব থেকে প্রিয় সুন্দর শাড়িটা ওকে পড়িয়ে দিয়েছে। মাহি এতক্ষনে বুঝে গেছে ওর শাশুড়ী আম্মু খুবই সরল আর ভালো মনের মহিলা। কিন্তু এমন সাজে সে বাহিরে কিভাবে যাবে সেটা ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে।
মাহিকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। লজ্জা পাওয়ার মতো তো ও কিছুই করেনি। তাহলে লজ্জা কেনো পাচ্ছে?কিন্তু এই লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে ফায়াজের এত ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থমকে যাক। মাহি ওর দিকে লজ্জা মাখা মুখে তাকিয়ে থাকুক অনন্ত কাল আর ফায়াজ বার বার সেই লজ্জা মাখা মুখটা দেখে নতুন করে প্রেমে পরুক সেই কিশোর বালকদের মতো।
রোকেয়া বেগম তারাহুরো করে রুমে ঢুকে দেখে উনার গুণধর ছেলে হা করে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি খুকখুক করে কাশি দিয়ে রুমে ঢুকে মাহিকে বললেন,’ চলো বউ…
শাশুড়ী মা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আর চোখের ইশারায় সালাম করতে বলছে। লজ্জা কিছুটা ভয়ে আছে মাহি। অপরিচিত মানুষ গুলোর সামনে খুবই লজ্জা লাগছে মাহির।আবার সালাম করতে করতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। সবাই খুব প্রশংসা করলো।
নিজের রুমে এসে দেখে নূর পা ঝুলিয়ে বসে ফায়াজ স্যারের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর বাকি সবাই ওদের ঘিরে বসে আছে।
নূর মাহিকে দেখে লম্বা একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ বউ দেখা শেষ??’
আদিবাঃ সবার শেষ হলেও জিজুর মনে হয় শুরু বলেই মুচকি হাসলো।
নূরের মনে হাজার কথা আসলেও মুখে টেপ মেরে রেখেছে শতও হলেও জিজু পড়ে আগে তো স্যার ছিলো….
নূরঃ উফফ আপু কি বলবো। তোকে না অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।
আদিবাঃ আমার বেস্টি কবেই বা কালো ছিলো। সে তো সব সময় সুন্দরী।
মিমঃ তবে যা-ই বলো আপুকে আজকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে।
মাহিঃ হয়েছে আর পাম দেওয়া লাগবে না।
ফায়াজঃ তুমি কি টায়ার যে তোমাকে পাম দিবে। ওরা যা সত্যি তাই বলছে।
মাহিঃ তার মানে আপনি বলতে চান আগে আমি সুন্দর ছিলাম না..?
ফায়াজঃ এটা কখন বললাম!! আর নূর রুদ্র কোথায়..?
নূরঃ ভাইয়া বলেছে সময় করে চলে আসবে।
ফায়াজ হেঁসে বলে উঠলো,’ এখনো ভাইয়া ডাকো! এটা কিন্তু ঠিক না। তারপর আদিবা আর শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভাইয়ারা আসবে না ভাবি..?
~উনারা ও সময় করে চলে আসবে।
ফায়াজঃ আচ্ছা নিচে চলুন।
মাহিঃ রুহি আর আদি আসলো না যে.?
শুভ্রতাঃ রুহির কি হয়েছে জানিনা ননদী। ঘর থেকে রাত থেকেই বের হয় না। আর ভাই তো সকালে বের হয় আর মাঝ রাতে বাসায় আসে।
মাহিঃ ওহ..
নূরঃ মন খারাপ করিস না বুনোটা একটু পর তো আমাদের সাথে যাচ্ছিস।
মাহিঃ সত্যি!!
নূরঃ হুম.. স্যার ও যাবে।
মাহিঃ নীল কোথায়??
নীল ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখছে এমন সময় পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো, “হায় হ্যান্ডসাম”…
চলবে..
[ছোটো হয়েছে বলে লজ্জা দিবেন না।]
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।