#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ফাইজা রেগে বোম হয়ে বসে আছে। এক বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করছে।
[ফাইজা বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে ছিলো নীলের কাছ থেকে নাম্বার আনবে। অবশ্য তখন সে নীল কে চিনতো না। তাই নীলের কাছ থেকে নানা বাহানায় নাম্বার চেয়ে ছিলো। নাম্বার পাওয়ার পর বান্ধবীদের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়েছে।
ফায়াজ আশার সময় ফাইজাকে ওদের সাথে আসতে বললে। ফাইজা বলে ছিলো ও অন্য সময় আসবে এখন সে ওদের সাথে আসবে না। ফায়াজ শুনে তো অবাক। যে মেয়ে সবার আগে যাওয়ার জন্য রেডি থাকার কথা সে মেয়ে বলছে যাবে না। ও কি সত্যি শুনছে?
রাতে সব কাজিন গ্রুপ বসে নাম্বার এ কল দিলো।
প্রথম কল রিং হতে হতে কেটে গেলো।
সব গুলো সন্দেহের দৃষ্টিতে ফাইজার দিকে তাকালো।
ফাইজা জোর করে মুখে হাসি টেনে বললো,’ আরে ইয়ার এমন এক দুইটা কল মিস যাবেই। এভাবে তাকানোর কিছু নেই। ওই লাল নীল আমার শিকার, এক বার না ধরলে দশ বার দিবো। আর ও কি ছেছড়া ছেলে নাকি যে একবার কল দিলেই ধরে ফেলবে।
একজন বলে উঠলো,’ তা ঠিক বলেছিস ওফ্ফ ছেলেটার Attitude দেখে আমি ফিদা।’
আরেক জন বললো,’ এই ছেলেকে দেখেই তোর এই অবস্থা আর যদি ধূসররঙের শার্ট পড়া ছেলেকে দেখতি তাহলে যে তোদের কি অবস্থা হতো।’
ফাইজা ভ্রু কুঁচকে বললো,’ এই মালটা আবার কে?’
~তা তো জানিনা। তুই তখন নীলের সাথে ফ্লার্ট করতে ব্যস্ত তখন নিচে ফায়াজ ভাইয়ার সাথে দেখলেম। হয়তো ভাবির ভাই হবে। ‘
ফাইজাঃ ভাবির তো কেনো ভাই নেই..’
আরেক জন রেগে বলে উঠলো, ‘ ওই এখন কি এই বেডার কথা শুনতে শুনতে রাত পার করে দিবি। যা কে দেখি নাই তার কথা বাদ। আরেক বার আসলে এই ছেলের সাথে দেখা যাবে। এবার তোর লাল নীলের কাছে কল দে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ নিরু আমার নীল মানে..? আমি শুধু বাজিতে জিতার জন্য কল দিচ্ছি। বেশি বুঝতে আসবি না।
ফাইজার কথা শুনে সবাই মিটমিট হাসছে।
ফাইজা রেগে তাকিয়ে বললো,’ শয়তানের দল এভাবে হাসলে আমি একদম কল দিবো না।’
নিরুঃ ফাইজা!! তুই কি নীলের নাম শুনে লজ্জা পাচ্ছিস..?
~আমার ও তাই মনি হচ্ছে রে নিরু।
ফাইজাঃ তোরা থাক!!
ফাইজা রেগে চলে যেতে নিলে সবাই গিয়ে সরি বলে ফিরিয়ে আনে।
আবার কল দিলো। এবার রিং হওয়ার পর পর ই কল রিসিভ হলো।
~ হ্যালোউউউ!!
এত ভাড়ি মোটা কন্ঠ শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেলো।
ফাইজা তারাতারি মোবাইল চোখের সামনে ধরে দেখলো। ভুল নাম্বারে কি ও ডায়াল করলো..? নাহ্ এটাই তো নীলের দেওয়া নাম্বার।
আবার ওপাশ থেকে বলে উঠলো,’ হ্যালোউউ কেডা আপনে কথা কননা কা..?
ফাইজাঃ সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সব গুলা গোল গোল চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখের ইশারায় বললো। কথা চালিয়ে যেতে।
ফাইজা মোবাইল কানে ধরে শুষ্ক একটা ঢুক গিলে বললো,’ কেমন আছেন লাল নীল..?
~কেডায় লাল নীল..? আমি রং বেচি না।
ফাইজাঃ লাল নীল আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো..?
~তোমার নাম কি তা..?
ফাইজা ভাবলো হয়তো নীল ঘুমের ঘুরে এমন বক বক করছে।কিন্তু কন্ঠ তো এমন না। এটা বুড়ো লুকের কন্ঠের মতো। আবার ভাবলো হয়তো নীল ওদের মতো মজা করে এমন কন্ঠ করে কথা বলছে।
ফাইজাঃ আরে আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি.. আমি ফাইজা।
~ওহহ আগে বলবেন তো। কেমন আছেন..?
ফাইজা সবার দিকে তাকিয়ে ঘা জ্বালানি একটা হাসি দিয়ে আবার কথা বলা শুরু করলো।
ফাইজাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাল নীল। কিন্তু আপনার কন্ঠ এমন লাগছে কেনো.? ঠিক আছেন তো আপনি..?
~জ্বি আমি ভালা আছি।
ফাইজার মনে হচ্ছে কিছু তো গোলমাল হচ্ছে৷ কিন্তু কি..?
ফাইজাঃ আপনি তো আজকে Attitude দেখিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলেন। এক বার তো বলতে পারতেন মানবতার খাতিরে আপনাদের সাথে যাওয়ার কথা।
খট করে ফোনটা কেটে দিলো ওপাশের মানুষটা। ফাইজার মনে হলো ওকে অপমান করলো নীল। মুখের উপর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে ওই বেটা ফোন কেটেই নীলের কাছে ফোন দিলো।
~হ্যালোউউউ ভাই।
নীলঃ হুম বলো রিফাত ভাই।
রিফাত ভাইঃভাই মাইয়া কল দিছলো। কি কয় আমি তো কিছুই বুঝি না।
নীলঃ আহা রিফাত ভাই কিছু না বুঝলে চুপ করে থাকবা। সারা জীবন তো একা থেকেই কাটিয়ে দিলা। নিজের দিকে এক বার তাকিয়েছো! জীবনে বাঁচতে গেলে একটা সঙ্গি লাগে। আমি তোমাকে সেই জীবন সঙ্গিনী খোঁজে দিলাম বুঝছো। কল দিলে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবা। মাঝে মাঝে কল দিয়ে ভালোবাসার কথা বলবা।
রিফাত ভাইঃ কি যে কননা লাল নীল ভাই।এহন কি আর জীবন সঙ্গিনীর সাথে প্রেমের কথা বলার সময় আছে। বয়স তো কম হইলো না ৫৫এর উপরে হইয়া গেলো। চা বেচতে বেচতে দিন চলে যায় এই সব করার সময় কই।
নীলঃ একদম লাল নীল বলবা না ভাই তাহলে কিন্তু ওই মাইয়া আর তোমারে কল দিবো না।
রিফাত ভাইঃ ভাই মাইয়াডার কথা গুলা খুব ভাল্লাগছে।
নীলঃ তাহলে এই খুশিতে কাল কের চা ফ্রী তে দিবা।
রিফাত ভাইঃ তোমার লাইগা সব সময় ফ্রী ভাই। আর ওই মাইয়ারে আমার কইরা দিলে তোমারে ফ্রী তে বিরিয়ানি খাওয়ামু ভাই।
নীল হাসতে হাসতে কল কেটে দিলো।
আহারে বেচারি ফাইজা সামনে যে কপালে আর কি কি আছে আল্লাহ ভালো জানে। আর কারো না নীলের চক্করে পরছে বুঝতে তো হবে যার-তার কাছে নাম্বার চাওয়ার লাভ কি….
নীল শয়তানী হাসি দিয়ে “হরিণ ” নামটার উপর চাপ দিয়ে কল দিলো। আজ দুই দিন হরিণের সাথে ঝগড়া হয় না। এখন একটু কথা না বললে শান্তিতে ঘুম হবে না।
———
রুদ্র স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
নূর নড়ে চড়ে উঠলো। রুদ্র তাও চোখ সরালো না। সে এখন তার মনের রাজ্যের রাণীকে দেখতে ব্যস্ত। দিনে তো দেখার সময় পায় না৷ পেলেও তাকানোর সাহস হয় না। আগে বন্ধুদের কাছ থেকে শুনতো বিয়ের পর বাঘ ও বউয়ের সামনে বিড়াল হয়ে যায়। তাহলে কি সেও এমনটাই হয়ে যাচ্ছে..? হুরহুর করে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে রুদ্র তাকিয়ে আছে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। রুদ্র ঝুঁকে থাকার কারনে তপ্ত নিশ্বাস এসে ক্ষনে ক্ষনে নূরের সারা মুখের আঙ্গিনায় আঁচড়ে পরছে। অনেক সময় পেরিয়ে গেলে নূরকে এক হাতে আগলে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।জানা নেই ঘুম হবে কি-না তবে নিজের বউটাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখার মাঝে-ও আজ শান্তি লাগছে৷ এই মেয়েটা কি কখনো ওকে বুঝবে না। ওর চোখের ভাষা বুঝবে না। ও যে খুব চাপা স্বভাবের ছেলে মনের কথা মুখে বলতে পারে না।
———
সুনশান রাত,বাইরে চাঁদের আলোয় আলো কি তো হয়ে আছে চারপাশ। রাত ২টার ও বেশি হবে কেউ জেগে নেই এই চাঁদনী পূর্নিমার রাতে। আগে এই চাঁদনী রাত দেখলে কত স্বপ্ন বুন তো ছাঁদে বসে বসে। স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয় তাই না! আকাশটা তে থলার মতো একটা চাঁদ উঠে আছে। চারপাশ কি সুন্দর আলোয় আলোকিত করে আছে। এত এত আলোর মধ্যে ওর নিজেকে কেনো এত অন্ধকার মনে হচ্ছে। ওর মনে আলো নেই কেনো..?
বারান্দায় দিয়ে পাশের বাসার ছাঁদটা দেখা যায়।
আসার পর শুনলো রাবেয়া আন্টির ছেলে বউ নিয়ে বাসায় উঠেছে। ছাঁদের দিকে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেলো এক কিশোর কিশোরীর দিকে। চাঁদের আলোয় তাদের মুখটা ভেসে উঠেছে। জোছনা রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে ভালোবাসা,ভালোবাসায় রঙ্গিন হয়ে উঠছে এক কিশোরীর মন আর তার ভালোবাসায় কাপড়ের মতো জড়িয়ে আছে এক প্রেম তৃষ্ণারত কিশোর। আহ্ ভালোবাসা আজ ওর জীবন টাও এমন জোছনা রাখতে মতো আলোকিত হতে পারতো, ওই কিশোর কিশোরীর মতো একি চাদরে মোড়ানো যেতো কিন্তু ওর ভাগ্যে যে অন্য কিছু লেখা। নিয়তি ওর সাথে খুব নিষ্ঠুরতম খেলা খেলেছে। আজ তার ভালোবাসার মানুষটি নিজের বোনের স্বামী।
” অন্যের ভালোবাসা দেখলে কি ভালোবাসার তৃষ্ণা কমে না-কি বাড়ে..?”
মাহি এত রাতে ফায়াজের কন্ঠ শুনে চমকে পিছন ফিরে তাকালো।
এক হাত প্যান্টের পকেটে রেখে মুখে বরাবরের মতো মুচকি হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ।
মাহিঃ আপনি এখনো ঘুমান নি..?
ফায়াজঃ নিজের বউ যখন অন্য কারো ভালোবাসা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখায় ব্যস্ত তখন নিজে শান্তিতে ঘুমাই কিভাবে..?
মাহি ভড়কে গেলো এই লোক কি দেখেছে আমি ওদের, ছি!ছি!ছি! কি লজ্জা, কি লজ্জা।
ফায়াজ মাহির মুখের উপর ঝুঁকে বলে উঠলো, ‘ শুধু কি অন্যের ভালোবাসা দেখবে না-কি নিজেও ট্রাই করবে..? আমি কিন্তু খুব ভদ্র ছেলে এখন ও কোনো নারী ছোঁয়া পাইনি।
মাহি এদিক ওদিকে তাকিয়ে কথা ঘোরানোর জন্য বলে উঠলো,’ আজ চাঁদ টা খুব সুন্দর না..?
ফায়াজঃ আমি বাহিরের চাঁদের খবর তো বলতে পারি না। তবে আমার সামনের চাঁদ টাকে খুব সুন্দর লাগছে।
মাহি ফায়াজের চোখের চাহনিতে থমকে গেলো। এই চাহনিতে অন্য কিছু বলছে। মাহি ফায়াজের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে রুমে চলে গেলো।
মাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়াজ এক দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এক দিন না এক দিন সব ঠিক হবে৷ আজ যেই চোখে কাউকে না পাওয়ার কষ্ট । এক দিন সেই চোখে আমাকে কাছে পাওয়ার বেকুলতা থাকবে।আর সেই দিনটা বেশি দুরে নয় খুব জলদি আসবে।
সামনের ছাঁদে তাকিয়ে মুচকি হাসলো এমন একটা পূর্নিমার রাত ওই কিশোর কিশোরীর মতো খুব জলদি ওদের জীবনেও আসুক।
———
সকালে রুদ্র হসপিটাল যাওয়ার জন্য রেডি হলো। নূর কলেজ যাওয়ার জন্য।
রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।
নূর রেডি হয়ে ইরিনের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য বেগ হাতে নিলো। ইরিন নূরকে তারাতাড়ি কলেজ আসতে বলতেছে। কাল সে তার ফোন দেওয়া সেই আগুন্তকঃ কে ধরে ফেলেছে।
নূর বের হতে নিয়ে দরজার সাথে কপালে ব্যথা পেয়ে কপালে হাত দিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ব্যথা পেয়েছে।
রুদ্রঃ এত সময় লাগে বের হতে। আর এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো..?
নূরঃ শখে দাঁড়িয়ে আছি।
রুদ্রঃ কপালে কি হয়েছে? হাত কেনো? দেখি…
রুদ্র নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিলো..
“ভাই রুম থাকতে যেখানে সেখানে তোমাদের রোমান্স না করলে হয় না। কখনো বন্ধুর বেডরুমে কখনো দরজার সামনে বলি আমরা তো সিঙ্গেল মানুষ আছি এটা ভেবে ও তো চলতে পারো। এই গুলো দেখলে আমাদের ও একটা বউ যে নাই সেই কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। ”
নূরের আর বুঝতে বাকি নেই এই বদমাশ ছেলেটা কে হতে পারে !?
নূর রেগে রুদ্র কে সরিয়ে নীলের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো।
নীলঃ একদম জুতা খুলবি না! নিজেরা করতে পারস আর আমি বললেই জুতা খুলছ..….
চলবে..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।