#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আজ ইরিনের বিয়ে।
নূর খুব সুন্দর করে সেজেগুজে রুদ্রের দিকে তাকালো।
নূরঃ আপনার কি এখনো হয় নি??
রুদ্রঃ আমি তো অনেক আগেই রেডি হয়ে আছি।
নূরঃ তাহলে হেবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেনো। চলুন…
রুদ্রঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
নূর অবাক হয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্র ওর প্রশংসা করলো। বিয়ের পর এই প্রথম বললো ওকে সুন্দর লাগছে। না না শুধু বিয়ের পর নয়। বিয়ের আগেও কখনো রুদ্র নূরকে সুন্দর বলেনি।
নূরঃ সুন্দর করে সাজলে তো সুন্দর লাগবেই।
রুদ্র নূরের সামনে দাড়িয়ে নূরের দুই গাল আসতে করে স্পর্শ করলো।
নূর চোখ বুঝে নিলো।
রুদ্রঃ তুমি আমার চোখে সব সময় সুন্দর, অপূর্ব সুন্দরী। না সাজলে আরো বেশি সুন্দর, মায়াবতী লাগে তোমাকে। এখন দেখো মেকআপ এর নিচে তোমার মায়াবী মুখটা লুকিয়ে গেছে।
নূর চোখ বন্ধ করে আছে৷ রুদ্র কাছে আসলেই নিজেকে বেসামাল, এলোমেলো মনে হয়।
রুদ্র তাকালো নূরের লজ্জা মাখা মুখটার দিকে। গায়ে শাড়ি জড়ানো,এক লজ্জাবতী নারী ওর সামনে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর কত অপেক্ষা। কবে এই লজ্জা রাঙা মেয়েটাকে বুকে টেনে নিতে পারবে। ধৈর্য যে আর কুলোচ্ছে না।
নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে নূরের কপালের মধ্যভাগটায় দুঠোঁট চেপে দিলো। ছোটো করে চুমু খেলো। দু চোখের পাতায় পূর্ন মায়ায় আবারো ঠোঁট ছোঁয়ালো।
এক অদ্ভুত অনূভুতিতে নড়ে উঠলো নূর। শীত কাঁটা স্পর্শে যেনো সারা শরীর শিউরে উঠলো।
আসতে আসতে হাত গুলো নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। নূর লজ্জায় নড়তেও পারছে না। এত লজ্জা, এত লজ্জা আসলো কোথায় থেকে??
রুদ্র নূরের আরেকটু কাছে যেতেই দূরত্ব সুচালো নূর।ভীতু ভীতু মুখে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রের দৃষ্টি স্রেফ সামনে নূরের দিকে। আলতো করে নূরের হাতটা ধরলো রুদ্র। তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নূরকে নিয়ে।
ইরিনকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। লাল টুকটুকে শাড়ি নয়। নীল রঙের মধ্যে বেগুনি শাড়ি পাড় টা কালো। শাড়িটা ইরিনের সৌন্দর্য যেনো আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মুখে দিয়েছে হালকা সাজ। চুলের খোঁপায় বেলীফুলের মালা। আজ ইরিন কে দেখলে যে কোনো ছেলে ক্রাশ খেতে বাধ্য।
ইরিনের হঠাৎ মনে হলো। নীল কি ওকে দেখে বলবে, ” এই হরিণ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। তোমার সাথে ওই আর্মি বেডাকে ভালো লাগবে না। তোমার পাশে শুধুই আমাকে মানায়।” নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলো। একটু পর অন্য কারো বউ হবে এখন কিনা একজন পাষাণ, নিষ্ঠুর, পাথর মনের লোক কে নিয়ে ভাবছে।
ওই দিন পর আর মোবাইলে কোনো ফোন আসেনি৷ প্রতি দিন কলেজ যাওয়ার পথে রাস্তার আশেপাশে সব জায়গায় চোখ বুলাতো যদি এক নজর প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পায়। সেই আশায় কিন্তু না সে আর একদিন ও আসেনি।সামনে কেনো পিছনেও আসেনি। এই কয়দিন ইরিন তো ঘুমাতে পারেনি। সারা রাত দুচোখ এক করতে পারেনি। বারান্দা দিয়ে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে থেকেছে যদি কল্পনার মানুষটিকে একবার দেখতে পায় সেই আশায়। কিন্তু আশেনি সেই কল্পনার পাষাণ্ড পুরুষটি।
নীল রুম অন্ধকার করে রুমের দরজা লাগিয়ে নিচে বসে আছে। চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে হয়তো কান্না করেছে৷ কে বলেছে পুরুষ মানুষ কাঁদে না? যখন সে জানতে পারে তার প্রিয় মানুষটি, তার বেঁচে থাকা যার হাতে, তার সুখ যার চোখে, তার মনে বারোমাস বসন্তের পাখিরা গান গায় সেই মানুষটির ঠোঁটের হাসি দেখলে৷ যার অভিমানি মুখ, রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যাওয়ার মূহুর্ত গুলো মনে করে রাতের ঘুম আসে। সেই মানুষটি অন্য কারো। আর কিছুক্ষন পর সে অন্য কারো হয়ে যাবে কিন্তু নীল কিছুই করতে পারছে না।
দরজায় কড়া আঘাতে সেদিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না, উঠে দরজা খুললো না,আগের মতোই বসে আছে।
নূরঃ ওই বাটপার দরজা খুল। না হলে দুই নাম্বার চাবি দিয়ে দরজা খুলছি।
খট করে দরজা খুলে নীল বেড়িয়ে আসতেই নূর রুমে ঢুকে লাইট জ্বালালো।
নীল রুম থেকে বের হয়ে কি যেনো খুঁজছে।
নূর কিছু বলার আগেই দেখলো নীল হাতে করে চটিজুতা নিয়ে ওর দিকেই আসছে।
নূর এক হাতে শাড়ি ধরে খাটের অন্য পাশে চলে গেলো।
নীলঃ বের হ আমার রুম থেকে। না হলে চটিজুতার বারি খাবি অসভ্য মেয়ে।
নূরঃ নীল দেখ অনেক কষ্ট করে সেজেগুজে এসেছি৷ তোর কারনে কিন্তু আমার সাজটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নীলঃ আমি কি করছি যে তোর সাজ নষ্ট হচ্ছে। বের হ আমার রুম থেকে।
নূরঃ তোর রুমে আমি থাকতে আসি নি। তারাতারি রেডি হয়ে বের হ।
নীল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কোথায় যাবো??’
নূর এক গাল হেসে বললো,’ ইরিনের বিয়ে আজকে। তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
নীলঃ আমি যাবো না। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। তুই যা।
নূরঃ মেয়েটার আজকে বিয়ে আর তুই ওর শেষ ইচ্ছে টা তো রাখ।
নীলঃ ও বলেছে যেতে??
নূরঃ হুম।
নূর হাতের শপিং ব্যাগটা নীলের হাতে দিয়ে বললো, ‘ আমি চাই তুই এটা পড়। পড়বি তো?? ‘
নীল হালকা হেসে নূরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। বুকের ভেতর যে কালবৈশাখী ঝর বইছে তা বাহিরের কাউকে বুঝতে দিলো না।
নীল রেডি হয়ে নিচে যেতেই রুদ্র বললো,’ কি রে বিয়ে কি তুই কবি নাকি?? শেরওয়ানী পড়ছোস পুরাই নতুন জামাই লাগছে।’
নীল শুষ্ক একটা হাসি দিলো।
কতটা কষ্ট পছন্দের, প্রথম ভালোবাসার মানুষের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা সেটা একমাত্র সে বুঝে। যে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে।
নূরঃ ফুপিমণি ছেলেকে ফুউউ দিয়ে দাও। যত দোয়া দরুদ পারো পড়ে ফুউউউ দিয়ে দাও।
রুদ্র আর নীল নূরের দিকে তাকালো।
নীলঃ ফুউউ কেনো দিবে??
নূরঃ যেনো বিয়ে বাড়ির পেত্নী, পরি, ডাইনী,পিশাচিনীদের নজর না লাগে।
রুদ্র হেসে বললো, ‘ বাহ্ তাহলে আমাকেও ফুউউ দিয়ে দাও।
নূরঃ আপনাকে কেনো??
রুদ্রঃ তুমি কি বলতে চাও? আমি সুন্দর, হ্যান্ডসাম, স্মার্ট , মেয়েরা দেখলে আকর্ষণ হবে এমন পুরুষ না?
নূরঃ মোটেও আপনি এই গুলোর একটা ও না।
নীল বাঁকা হেঁসে বললো,’ ভাই তুমি কিন্তু ঘর ওয়ালির থেকে পারমিশন পেয়ে গেছো..
নূরঃ কিসের পারমিশন?
নীলঃ এই যে বললি কোনো মেয়ে আকর্ষণ হবে না আমার ভাইকে দেখলে। আজ শুধু দেখবি আর রুচির মতো ফোলবি।ভাই তুমি রেডি তো?
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে নীলকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
নূর হাবলার মতো ওদের পিছু পিছু গেলো।
ইরিন শুধু মনে মনে নূরকে খুঁজছে আর যাই হোক সে এই বিয়ে করতে পারবে না। চোখের জলে সাজগোছ নষ্ট হয়ে গেছে।
নূর বসে আছে ইরিনের সামনে।
নূরঃ সরি কালকে খুব দরকারী কাজ ছিলো তাই আসতে পারিনি।
ইরিন রোবটের মতো বসে আছে।
নূরঃ কিছু তো বল..
ইরিন নড়েচড়ে বসলো ।
ইরিনঃ ওহ বুঝতে পেরেছি আমি।
নূরঃ তোর সাজ নষ্ট হলো কিভাবে? চোখের নিচে তো কালি পরে গেছে। ঘুম হয়নি ঠিক মতো বিয়ের চিন্তায়।
ইরিন নিচের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। আহ্ বিয়ে সে তো বিয়ে নয় বিশ পান করছি যে নো। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বললো না।
নূরঃ উনারা আসবে কখন?
ইরিনঃ কে..?
নূরঃ তোর হবু জামাই আর আমার জিজু।
ইরিনের চোখ জলে ভরে উঠলো।
ইরিনঃ হয়তো এখনি চলে আসবে।
নূর ঈগল চোখে পুরোটা সময় ইরিনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নূর বললো,’ কাউকে ভালোবাসলে ইগো, আত্মসম্মান আগে নয়, কেউ কাউকে ভালোবাসলে এত কিছু মনে রাখে না। ভাবে না সে আমাকে ভালোবাসে কি না? একটা বার পরিবারের কথাও মনে পড়ে না। পরিবার এক সময় মেনে নিবে কিন্তু মানুষটি হারালে তাকে আর পাওয়া যাবে না। সে আমাকে ভালোবাসে কি-না সেটা বড় কথা নয়। আমি তাকে আমার মনের কথা বলতে পেরেছি সেটাই বড়। না বলতে পারলে জীবনের কোনো এক সময় মনে হবে একটা বার তাকে বলেই দেখতাম! ভীষণ আপসোস হবে তখন। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। আবার কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে গিয়েও নিজের বোকামির জন্য হারিয়ে যায়।
ইরিনের গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তার কি একবার নিজের মনের কথাটা বলার দরকার ছিলো? কিন্তু সে মেয়ে হয়ে কেনো বলবে? তার কি আত্মসম্মানবোধ কিছুই নেই?
ফোনের রিংটোন এর আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো ইরিন।
নূর মুচকি হেসে বললো, ‘ হবু জামাই ফোন দিয়েছে বুঝি? আচ্ছা তোরা নিজেদের সিক্রেট কথা বল।আমি আসছি..
ইরিন খপ করে নূরের হাতটা ধরে বললো,’ বেশি পাকনা হয়ে গেছিস না? চুপ করে এখানে বস।
নূরও আর উঠলো না। চুপ করে বসে আছে।
প্রথম রিং হতে হতে কেটে গেলো।
দ্বিতীয় রিং হওয়ার পর ইরিন ফোন কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে পাঁচ মিনিট কি কথা বললো নূরের জানা নেই। হঠাৎ ইরিনের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। বিকট শব্দে ফোনের গ্লাসটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
নূর অবাক হলো ইরিনের কাজে৷
ইরিনের আম্মুর শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে।
একদিক দিয়ে লোকে ছি!ছি! করবে। অন্য দিক দিয়ে মেয়েকে আর কোনো ভালো পাত্র বিয়ে করতে চাইবে না । বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েকে কোন ভালো পরিবার নিজের ছেলের বউ করে ঘরে তুলতে চাইবে।
নূর চুপচাপ সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃ ছেলে কি বলেছে আসতে পারবে না?
নূরঃ হুম।
ইরিননের চাচারাও মিটিং বসেছে৷
ইরিন চুপটি করে ঘরের কোনে বসে আছে।
নূর নীলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
কিছু মহিলা বলা বলি করছে। নিশ্চই মেয়ের কোনো খারাপ রেকর্ড ছেলে পক্ষ পেয়েছে তাই বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে ।
আবার কেউ বলছে, ‘ বাপ ছাড়া আর কতটুকুই ভালা হইবো। পুলা কি এমনি এমনি মানা করছে নাকি।
নানা জনে নানা ধরনের কথা শুনাচ্ছে।
হঠাৎ ইরিনের বড় চাচা বলে উঠলো,’ আমাদের পাশের বাড়ির হাবলুর বউ মারা গেছে কয় দিন আগে। ওই ছেলে রাজি থাকলে ওর সাথে ইরিনের বিয়ে দিবো।
নূর চমকে উনার দিকে তাকালো। এটা কোন হাবলু? সেই হাবলু নয়তো? যে আগে ইরিন কে রাস্তা ঘাটে বিরক্ত করতো?
আর এই ছেলে তো ভালো না। নিজের বউ কে মদ খেয়ে এসে পিটাইতে পিটাইতে মেরে ফেলছিলো৷ উনারা এমন ছেলের সাথে ইরিনের বিয়ে কিভাবে দিতে চায়? সম্পত্তির লোভে?
হাবলুকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে খুশিতে নাচতে নাচতে পাঞ্জাবি পরে রেডি।
নূর মনে মনে ভেবে উঠলো,’ ওরা জানলো কিভাবে বিয়ে যে ভাঙবে? আর মনে তো হয় এই হাবলু আগে থেকেই রেডি হয়ে আছে। নূরের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
নূর পাশে তাকিয়ে দেখে নীল নেই।
গেলো তো মাথাটা গরম হয়ে। এই গাধা কে এই মূহুর্তে দরকার আর সে উধাও। এখন কি হবে? সব প্লেন যে একদম পানির মতো বেসে চলে গেলো। সে কিভাবে বিয়ে আটকাবে সব তো রেডি হয়ে গেছে। ও কি নিজেই ইরিনের জীবনটা নরক বানিয়ে দিলো। চোখ থেকে গাল বেয়ে বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর নিজের ও খারাপ লাগছে এত সুন্দর, হাসিখুশী একটা মেয়ের কপালে কি না এমন ছেলে জুটলো। দেখতেই চার বাচ্চার বাপ লাগছে। আর কি বিশ্রী হাসি সাথে হলুদ দাঁত।ওয়াক থুঃথুঃ
দরজা খট করে খোলে রুমে কেউ প্রবেশ করলো।
ইরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। তার কপালে শেষ এই নেশাখোর ছেলেটা জুটলো। ওই হাবলুর তিনটা বাচ্চা আছে।
ইরিন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো যুবকটি ওর দিকেই আসছে।
ইরিন হাতটা লুকিয়ে ফেললো।
যুবকটি ইরিনের সামনে এসে গালে থাপ্পড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো। ইরিনের চোখের পানি গুলো দু’হাতে যত্ন করে মুছে দিলো।
ইরিন তাকিয়ে আছে ওর মনে হচ্ছে স্বপ্ন সব কল্পনা । যেই পুরুষ কে এত দিন মনে প্রানে চেয়েছে একবার সামনে আসুক। কিন্তু এই নিষ্ঠুর পুরুষ আসে নি। তাহলে জীবনের শেষ মূহুর্তে কেনো এসেছে? তামাশা দেখতে? এক অসহায় মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটা দেখতে। তাহলে আরেকটু সময় নিয়ে আসতো।
নীল ইরিনকে জড়িয়ে ধরলো । ইরিন জমে গেছে, কান্না বন্ধ হয়ে গেছে।
নীল আসতে আসতে নিজের হাতটা ইরিনের পিছনে লুকানো হাতটার উপর রাখলো।
ইরিন রোবটের মতো হয়ে আছে। নরছে ও না।
ইরিনের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে ওকে ছেড়ে দিলো।
ছুরিটার দিকে তাকিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললো।
ইরিনের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইরিনের বড় চাচা রেগে বলে উঠলো,’ এই ছেলে তুমি কে? আমাদের ঘরের মেয়েকে এভাবে ধরে নিয়ে এসেছো কেনো?? দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই মনে হচ্ছে।
এবার যেনো কানাঘুষা আরো বেড়ে গেলো।
নীল ইরিনের হাত ছাড়লো না। শক্ত করে ধরে বললো,’ আমি ওকে বিয়ে করতে চাই….
ইরিন চমকে তাকালো নীলের দিকে। সে কি করুনা করছে ওর অবস্থা দেখে?
ইরিন কিছু বলতে গেলে। নীল হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললো,’ আমি এখানে বড়দের সাথে কথা বলছি তুমি কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে না।’
ইরিনের আরেক চাচা বললো,’ তোমার পরিচয় কি? আর দেখো না ইরিনের বিয়ে তো আমরা ঠিক করে ফেলেছি।
নীলঃ আন্টি কোথায়?
আরেক চাচা বললো,’ বেয়াদব ছেলে তো।চিনো আমাদের কে? ওর হাত ছাড়ও নইলে হাত কাইটা ফেলামু।
নীল উনার কথা শুনে নূরের দিকে হাসি দিয়ে তাকালো।
ভাই এই পুলা কেডা। দেখেন আমরা ভয় দেখাই আর পুলা হাসে। আমার তো কিছুই সুবিধার লাগছে না।যা করার তারা তারি করেন।
নূর ইরিনের চাচার সামনে গিয়ে বললো,’ নীল হলো চৌধুরী বাড়ির ছেলে। চৌধুরী বাড়ি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা অবশ্যই আছে। আপনি কি কথা বাড়াবেন?’
চৌধুরী বাড়ির ছেলে শুনে চমকে উঠলো। চৌধুরী বাড়ির ছেলেদের সম্পর্কে সবাই জানে। এখন ওদের ফিরিয়ে দিলে যদি ওরা একদম ঘুরায় গিয়ে হাত দেয় তাহলে একদম সব যাবে। তাই অনিচ্ছুক হয়েও রাজি হতে হলো।
খুব জলদি বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলো।
সবাই বউ নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।হাজার বলেও নীলকে ওদের বাড়িতে না নিয়ে নতুন বউ নিয়ে চৌধুরী বাড়ির দিকে গাড়ি চলছে।
নীল, রুদ্র, ইরিনের মনে বাড়িতে গেলে কি ঝর হয় তা নিয়ে ভয় কাজ করছে। কিন্তু নূরের মুখে কোনো চিন্তার ছাপ নেই। গাড়িতে বিয়ের গান লাগিয়ে বিন্দাস এনজয় করছে।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।