#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
~ফুপি কেমন আছো তুমি?
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?
~ আমিও ভালো আছি। কখন এসেছো তুমি?.
~একটু আগে এসেছি।তোর মুখটা এমন মলিন দেখাচ্ছে কেনো?খাওয়া দাওয়া করিস না ঠিক মতো?আগের থেকে আরো শুকিয়ে গেছিস।গায়ের রং টাও কেমন ফেঁকাসে হয়ে গেছে।
রুপা বেগম নূরের হাতে,মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত স্বরে বললেন। নূর ওর ফুপিমণির দিকে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে তাকায়।মানুষটা তাকে কতো ভালোবাসে,আদর,স্নেহ করে।যখন জানতে পারবে তারি একমাত্র আদরের মেয়ের কারনে আজ নূরের মুখের হাসি চলে গেছে। সারাদিন বাড়িটা গরম করে রাখা মেয়েটা একদম শান্ত চুপচাপ হয়ে গেছে। তখন কি মেয়ের কাজের জন্য নিজে লজ্জিত হবে?
নূর তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ” এমন ভাবে বলছো যেনো আগে আমি বিশ্বসুন্দরী ছিলাম।”
~ তুই কোনো বিশ্বসুন্দরীর থেকে কম কিসে শুনি।
রুপা বেগম নূরের গাল টেনে আদুরে গলায় বললো।নূরও তার ফুপিমণি কথা শুনে বলে উঠলো, ” ঠিকি বলেছো নারীর সৌন্দর্য তার সাদা চামড়ার মধ্যে। কালোদের এই সমাজে দাম নেই! তাদের স্থান শুধু মাত্র গল্পতেই।
তখনি আদি বলে উঠলো, ” ফুপিমণি শুধু কি সৌন্দর্য আর সাদা চামড়া থাকলেই চলবে।মানুষের গুণেই তার পরিচয়।তোমার ভাইঝির মধ্যে এমন কি গুণটা আছে শুনি?। বলি সাদা চামড়া দিয়ে কি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবে,গুণ থাকা লাগবে যা নূরের মধ্যে ছিটেফোঁটাও নেই।”
অপমানে নূরের কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।
মাহি কিছু বলতে আসলে নূর আবার বলে উঠলো, ” সেটা কজন বুঝে বলেন তো আদি ভাই।ভেবে নিবেন না আমি আপনাকে বলছি।আমি বাস্তবতাটাই বলছি। আমরা কাউকে জাজ করার আগে তার গুনগুলো খুঁজি না।মেয়ে হোক বা ছেলে,আগে তার সৌন্দর্য টাই খুঁজি। অবশ্য বাহ্যিক সৌন্দর্যটা আগে চোখে পড়ে বলেই হয়তো।তারপরেও মানুষ গুণের আগে সৌন্দর্য দেখে। গুণগুলো তো আসতে আসতে প্রকাশ পায়। তবে হাঁ অনেকের কাছে সৌন্দর্যের আগে গুণগুলো চোখে পড়ে। কিন্তু সেটা খুবই কম,দশ পার্সেন্ট বাকি নব্বই পার্সেন্ট মানুষই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। তাই বলি কি আদি ভাইয়া বাস্তবিক হন।কারন আমাদের সমাজের যে ভিন্ন রুপ তা ভুলে গেলে কি ভাবে হবে বলেন।চোখের সামনে সারাক্ষণ থেকেও তো মানুষ চেনা যায় না আজ কাল।
নূর কে জড়িয়ে ধরে আছে রুপা বেগম। নূরের কথা গুলো শুনে উনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই মেয়েটা ছোটো থেকেই খুব অগোছালো এলোমেলো কিন্তু আজ কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথাগুলো বলে দিলো। যা বলেছে সব কথাই যুক্তিসঙ্গত আর বাস্তবসম্মত।
অন্য দিকে একটু দূরে বসে ফুপি ভাইঝির আলাপন শুনছিলো ড্রয়িং রুমে সবাই।
রুদ্র এসেছে শুনার পর। রুদ্রের বাবা, চাচা,ভাই সবাই সন্ধার দিকে বাসা চলে আসে।রুদ্রের ফুপিমণি ও চলে আসে।সবাই খুব খুশি।একসাথে দুই খুশিতে বাড়ি পুরো জাঁকজমক হয়ে আছে।
মহিলারা সবাই রান্নাঘরে রান্না নিয়ে ভেস্তো আছে।আজ রুদ্রের পছন্দের সব ধরনের রান্না করা হবে।
আদি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর কে এখন যত দেখে ততই যেনো অবাক হয়ে যায়।হঠাৎ করেই যেনো মেয়েটা বড় হয়ে গেলো।কতটা গুছিয়ে কথা বলে। দিনদিন যেনো নূরকে আদির কাছে মারাত্মক সুন্দরী নারী মনে হচ্ছে। সব দিক দিয়ে পারফেক্ট মনে হচ্ছে। যেই মেয়েটাকে আগে তুচ্ছ মনে হতো। আজ যেনো সেই মেয়েটাকেই অমূল্য রত্নেরখনি মনে হচ্ছে। তাহলে কি ও ভুল করলো?
রুদ্র কারো দিকে না তাকিয়ে আবিরের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তবে নূরের সবগুলো কথাই ওর মন ছুঁয়ে গেলো। কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথাগুলো বললো।আসলেই সবাই সৌন্দর্য কে আগে দেখে আর কালো মেয়েরা আমাদের সমাজে অবহেলার পাত্রী।
মাহির কোনো দিকে খেয়াল নেই সেতো তার স্বপ্নর পুরুষকে দেখতে ভেস্তো আছে। এই যে রুদ্র একটু পরপর থুতনিতে হাত রাখছে।কপালে স্লাইড করছে।সব কিছুই মাহির কাছে সুন্দর লাগছে।মাহি রুদ্রের প্রতিটি কাজেই মুগ্ধ হচ্ছে।
আবির নূর কে ডাক দিলো। নূর গিয়ে দাঁড়ালো আবিরের সামনে।
আবিরঃ আমাদের পাশে বস!
নূর কিছু না বলে দাড়িয়ে আছে।
আবির আবার বলে উঠলো, ” কি হলো আবার তোর!! বসতে বলেছি আমি!
নূর বলে উঠলো, ” কি বলবে বলো বসতে পারবো না। ”
আবির কথা না বাড়িয়ে বললো,” পড়াশোনা কেমন চলছে?
পড়াশোনার কথা শুনে নূর চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ভাল্লাগে না এই পড়াশোনা। তাও মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো, ” জ্বি ভাইয়া খুব ভালো চলছে।”
রুদ্র ঠেস দিয়ে বলে উঠলো, ” পড়াশোনা কি গাড়ি নাকি যে চলছে!? কয় চাকা ওয়ালা গাড়ি এটা?
নূর কিছু না বলে চোখ মুখ খিঁচে রুদ্রের দিকে তাকালো।নূর যতটুকু জানে রুদ্র ভাই প্রচন্ড রাগী,এরোগেন্ট আর ইগোলস্টিক মানুষ । উনার মতো জেদী তাদের পরিবারে একটাও নেই। সবার থেকে রাগ জেদ উনার বেশি আর খুবি গম্ভীর টাইপের মানুষ।আর বাসার সবার চোখের মনি কিন্তু এখন দেখছে সবি উল্টো।
এরি মধ্যে খাবারের ডাক এসে গেলো।
রুহি রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। রুদ্রকে দেখার পর থেকে আর কিছুই ভালো লাগছে না। রুদ্রের হাসি যেনো তীরের মতো গিয়ে ওর মনে গেঁথে গেছে।এখন আদিকে ও বিরক্ত লাগছে।রুদ্রকে দেখলে আশেপাশে কি হচ্ছে সব জেনো ভুলে যায়। কে জানতো বড়মামার ছোট ছেলে এতো কিউট, হ্যান্ডসাম,স্মার্ট আগে জানলে কোনো দিন ও এই আদি কে বিয়ে করতো না।নিজের কাজে নিজেই আফসোস করছে রুহি।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই যাঁর যাঁর রুমে চলে গেলো।
নূর নিজের রুমে গিয়ে গিটার হাতে নিয়ে টুংটাং আওয়াজ তুললো,
🎶তুমি না ডাকলে আসবো না…
~কাছে না এসে ভালোবাসব না..
~দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়..
~নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়..
~দূরের আকাশ নীল থেকে লাল…
~গল্পটা পুরনো…
~ডুবে ডুবে ভালোবাসি…..
~তুমি না বাসলেও আমি বাসি…”””🎶
রুদ্র নিজের বেলকনিতে বসে আছে চোখ বন্ধ করে গানটা অনুভব করছে। আর ভাবছে মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে, যা তার প্রতিটি কাজে রুদ্রকে মুগ্ধ করে।
——
ভোরবেলা,নূর ছাদে উঠেছে ব্রাশ করতে করতে। আজ কলেজ যাওয়ার ইচ্ছাটা নেই।ঘুম আসছে না তাই উঠে গেছে।রাতে খেয়ে এসে ওই যে ফোন রেখেছে আর হাত দেয়নি।,সেটাকে ঘরে চার্জ দিয়ে আসলো এখন।ব্রাশ করতে করতে দেখলো পাশের বাসার রাবেয়া আন্টির ছেলেটা কেমন ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। নূর সে দিকে না তাকিয়ে নিজের ব্রাশ করার কাজে মন দিলো।সকালের মিষ্টি বাতাসে ছাঁদে ভালোই লাগছে। মনটা ফুরফুরে লাগছে।
রাবেয়া আন্টিকে দেখলেই মনে হয় উনি উনারকলিজার ভিতরে ঢুকিয়ে নিবে।
” এই নূর এদিকে শুনে যাও”
পিছন থেকে তামিম ভাইয়া ডাকলেন তাদের ছাঁদ থেকে।
নূরঃ জ্বি ভাইয়া?
তামিমঃ ভাইয়া কেনো বলো? আমার বুকে লাগে?
নূর বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো, ” কেনো ভাইয়া? আমার কথা কি সুই যে এদিক দিয়ে ফুটা করে ওদিক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
নূরের কথা শুনে তামিম আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ” না,মানে তুমি কি করছো?
নূরঃ দেখছেন না মুখের ভিতর ব্রাশ করে ফেনার ফ্যাক্টরি করছি।”
তামিম এবার নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলো,” কেনো সে এই নূরকে পছন্দ করতে গেলো”
~নূর একটু সুন্দর করে কথাও তো বলতে পারো।বলে তামিম ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
——
নিচে সবাই একসাথে বসে কিসের যেনো কথা বলছে।নূর গিয়ে ওর বাবার পাশের চেয়ারে বসে পরলো।
নূরের আব্বু সাজ্জাদ সাহেব নূরকে বলে উঠলো, ” নূর তুমি কি আজকে কলেজ যাবে?
নূরঃ না আব্বু ভালো লাগছে না। আজ যাবো না।
সাজ্জাদ সাহেবঃ তাহলে তুমিও সবার সাথে চলে যেও কিছু নিজের জন্য দরকার লাগলে নিয়ে এসো কেমন।
নূরঃ আসলে আব্বু আমার তো কিছু দরকার নেই। আমি এখন যাবো না।আমার কিছু দরকার হলে পরে গিয়ে নিয়ে আসবো।
রুহি বলে উঠলো, ” এটা কেমন কথা নূর!! আমি তোর একটা মাত্র ফুপিমণি মেয়ে আবার তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আর এখন তো ভাবি আর ননদী হয়ে গেছি। তুই আমার সাথে শপিং করতে না গেলে আমিও যাবো না।তুই আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।বলে মুখ কালো করে ফেললো।
নূর মনে মনে ভাবছে ” মানুষ কতটা ড্রামা বাজ হতে পারে, রুহিকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না”
নূরের ফুপিমণি বলে উঠলো, ” আরে রুহি মা নূর তো এমনি বলেছে। নূর তো আমার আরেকটা মেয়ে। নূর যাবে না যাবে কে। তাই না নূর?
নূরঃ হুম ফুপিমণি আমি যাবো!
——
দুই ঘন্টা ধরে আয়নার সামনে বসে বসে সাজগোজ করছে মাহি। আজ প্রথম রুদ্র ভাইয়ার সাথে বের হবে। তাই কাপড় খুঁজতে খুঁজতে পুরা রুম একদম কাপড় দিয়ে শেষ। এখন আবার খুব সুন্দর করে নিজেকে সাজাতে ভেস্ত হয়ে পরেছে।
রুদ্র,আবির,আদি,নীল নিচে বসে মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করছে। আসছি আসছি বলে দুই ঘন্টা ধরে ওদের বসিয়ে রেখেছে।
যাক অবশেষে নূর নেমে আসলো। কালো থ্রি পিস পরেছে।সাথে হিজাব করা।খুব সুন্দর লাগছে নূরকে। কালো জিনিসে নূরকে একটু বেশিই মানায়।
আদি বারবার আর চোখে নূরের দিকে তাকাচ্ছে।
নূর কিছু বলবে তখন দেখে মাহি নেমে আসছে।
মাহির দিকে হাঁ করে সবাই তাকিয়ে আছে।
মাহি নিচে এসে বললো, ” কি রে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? আমাকে কি এই প্রথম দেখেছে নাকি!?
মাহির কথা শুনে হাসতে হাসতে আবির ভাই বলে উঠলো, “না রে মুটকি তোকে প্রথম দেখেনি কিন্তু তুই কি কোনো বিয়েতে যাচ্ছিস নাকি?”বলে আবার সবাই হাসা শুরু করলো।
রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ” এখন কি আমরা যাবো?,আমি কিন্তু রুমে চলে যাচ্ছি।!!
দাড়ানা আরেকটু রুহিতো এখনো আসেনি।আমি দেখে আসি, বলে আদি পা বাড়ালো রুহিকে দেখতে, তখনি উপর থেকে রুহির চিৎকার শুনা গেলো!!সবাই দৌড়ে উপরে গেলো।নিচে শুধু মাহি আছে।মাহির মুখে লেগে আছে রহস্যময় হাসি।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।