এক_ফালি_সুখ🌼 |৯| #তাসনিম_জাহান_মৌরিন

0
349

#এক_ফালি_সুখ🌼 |৯|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
_”তুমি আমাকে শেখাবে আমার কি বোঝা উচিৎ আর কি বোঝা উচিৎ নয়?”
মৌরিন এর কথার বিপরীতে এমন প্রশ্ন শুনে মৌরিন কিছু বলে না। একটু পাশে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে তূর্যের স্ক্রিপ্টটা এনে ওর দিকে এগিয়ে দেয়। স্ক্রিপ্ট এর দিকে নজর রেখেই বলে,
_”আমার থেকে কেউ কিছু শিখতে চাইলে আমি আপত্তি করবো কেন?”

তূর্য স্ক্রিপ্টটা হাতে নেয়। কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়ে বলে,
_”একটু বেশিই বলে ফেলছো না?”

_”আমি বেশি কথা বলিনা স্যার, আর বলতে পছন্দ ও করি না। কথা বলাও একটা কাজ,যাতে শক্তি খরচ হয়। শুনেছি, এতে নাকি মানুষের আয়ুষ্কাল ও কমে যায়। অযথা আমি কেন নিজের শক্তি খরচ করে আয়ু কমাতে যাবো বলুন তো?”

প্রতিত্তরে বলার মতো কিছুই খুজে পেলোনা তূর্য। বরং সে নিজেই ভুল কথা বলেছে। মৌরিন কখনো বেশি কথাতো দূরে থাক প্রয়োজনীয় কথাটুকুও অনেক সময় বলেনা, এমনটা মনে হয় তূর্যের।
মৌরিন আর কিছু না বলেই বাকিদের স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে গেলো। তূর্য ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো মৌরিন এর দিকে। মানুষ জন্মগত ইউনিক, কথাটা সত্য। তবে মৌরিন যেন একটু বেশিই ইউনিক। তার এই শান্ত থাকাটাই আরো বেশি অবাক করে তূর্যকে।
মৌরিন কেন বাকিদের মতো করে কথা বলেনা? তার আচার-আচরণ ভিন্ন, কথাবার্তা ভিন্ন। যা তাকে সকলের থেকে আলাদা হিসেবে আখ্যায়িত করে। ইংরেজিতে যাকে এক শব্দে বলা যায় ইউনিক। একটু বেশিই ইউনিক।

তূর্য চায় মৌরিন আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই আচরণ করুক, কিন্তু সে তেমনটা করেনি। বাহ্যিক দিক থেকেতো সে বাকিদের চেয়ে পিছনে,তার রূপের আহামরি প্রশংসা কেউ কখনোই করবে না। এত পিছনে থেকেও সে যেন সবার উপরে, এমনটাই প্রকাশ পায় তার কথাবার্তায়। যা বারেবারে অস্থির করে তূর্যকে।

ডিরেক্টর রুবেল এর ডাকে চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে তূর্য। অবাক হয় সে, কাকে নিয়ে ভাবছে সে? মৌরিন এর মতো একটা সাধারণ মেয়েকে নিয়ে?

একটা লম্বা সময়ের শুট শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যত হয় সকলে। সবার আগে বেরিয়ে যায় তুর্য, এরপর একে একে সকলেই চলে যায়। মৌরিন পরের দিনের স্ক্রিপ্ট গুছিয়ে নিচ্ছিল,রাতুল ই দিয়ে রেখেছে। পরের দিনের বললে ভুল হয়, শুটটা আজ রাতের। মানে সন্ধ্যার পরপর ই শুটিং শুরু করা হবে।

রাতুল এগিয়ে এসে বসে মৌরিন এর পাশে চেয়ার এ। মুচকি হেসে বলে,
_”তুমি কিন্তু বেশ ডেডিকেটেড মৌরিন, চাইলে সন্ধ্যায় এসে গুছিয়ে নিতে পারতে এগুলো।”

_”কি দরকার ভাইয়া কাজ ফেলে রাখার? খুব বেশিতো দেড়ি হয়ে যায়নি,তাই এইটুকু এগিয়ে রাখি। পরে আমার ই সুবিধা হবে।”

_”হুম বুঝলাম। তা ক্যারিয়ার নিয়ে কি ভাবছো?”

মৌরিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফিচেল হেসে বলে,
_”কি আর ভাববো? অন্তত আরো দু বছরের আগে তো চাকড়ি পাচ্ছিনা। তাই ততদিন এই টুকটাক কাজ আর টিউশন করিয়েই কাটিয়ে দিতে হবে।”

_”টিউশন এর কথা শুনে মনে পড়লো। আমার এক বন্ধুর ছোট বোন, কলেজে পড়ে বোধ হয়। ওর জন্য একজন ফিমেল টিচার এর কথা বলেছিল আমার কাছে। কলেজ এর স্টুডেন্ট পড়াতে পারবে তো?”

_”কলেজ এর স্টুডেন্ট আমি আগেও পড়িয়েছি ভাইয়া।”

_”তাহলে হয়েই গেলো। আমি বরং তোমার নম্বরটা ওকে দিয়ে রাখবো কেমন?”

_”অবশ্যই ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ।”

_”আরে,ভাইকে কেউ থ্যাংকস বলে নাকি?”

স্মিত হাসে মৌরিন। রাতুল পুনরায় বলে,
_”বাই দা ওয়ে, তোমার সন্ধ্যায় আসতে কোনো সমস্যা হবেনা তো? তাহলে বলতে পারো।”

_”সমস্যা হতে যাবে কেন ভাইয়া? আমার বাসাও তো বেশি দূড়ে নয়, আর এটাতো আমার কাজ। সেখানে প্রয়োজন হলে আমাকে যেকোনো সময়ই আসতে হতে পারে।”

রাতুল নিজের শার্ট টা টানটান করে উঠে দাঁড়ায় এবার। ঘড়িতে সময়ে দেখতে দেখতে বলে,
_”আমি গেলাম তাহলে, তুমিও বেরিয়ে পরো।”

_”হ্যা আমারো কাজ শেষ প্রায়।”

মৌরিন এর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো রাতুল। মৌরিন ও স্ক্রিপ্টগুলো ভালোভাবে গুছিয়ে জায়গামতো রেখে চলে গেলো। সন্ধ্যায় আবার এই জায়গাতেই আসতে হবে,তখন তন্নিও আসবে।

___
শুটিং সেট থেকে বেরিয়েই দ্রুত নিজের চুল ঠিক করতে চলে যায় তূর্য। এই চুল নিয়ে আর একমুহূর্ত ও থাকা সম্ভব নয় বলেই দু দিনের শুট একদিনে শেষ করেছে।
কোনোরকম একটা লাইনে এনেছে চুলগুলো, অন্তত মানুষ দেখে যেন হাসতে না পারে এতটুকু ঠিকঠাক আছে। বিশেষ করে তন্নি সন্ধ্যায় তূর্যকে এই অবস্থায় দেখলে তো হাসতে হাসতে শুট করার কথাই ভুলে যাবে।

কলিং বেল দিতেই ইলমা দ্রুত পা বারিয়ে এসে দরজা খুলে দেন। তবে তূর্যকে দেখে তিনিও একটা বড়সড় ঝটকা খান। তা বুঝতে পেরে তূর্য ইলমার পাশ থেকে গিয়ে সোফায় বসে পরে।
ইলমা কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। এরপর তূর্যের কাছে এসে ওর চুলে হাত দিয়ে বলে,
_”এ কেমন অবস্থা করেছিস চুলের?”

_”মনের সুখে করিনি তো, শুটিং এর জন্য করেছি। বেশি খারাপ লাগছে এখনো?”

একজন মেয়ে এসে টি টেবিল এর উপর জুসের গ্লাসটা রেখে চলে গেলো। ইলমা সেটা তূর্যের হাতে দিয়ে তার পাশে বসে বলে,
_”তা কি করে হয়,আমার ছেলেকে সব কিছুতেই সুন্দর লাগে।”

গ্লাসটা হাতে নিয়ে চুমুক দেয় তূর্য। ইলমা এবার বেশ উৎসাহিত হয়ে বলে,
_”তুই বোস এখানে,আমি এক্ষুনি আসছি।”

কথাটা বলেই নিজের ঘরে চলে গেলেন ইলমা। দু মিনিট বাদে হাতে একটা খাম নিয়ে ফিরে এলেন তিনি। তূর্য গ্লাসটা টি টেবিল এ রেখে উঠে দাঁড়াতেই ইলমা এসে বলে,
_”কোথায় যাচ্ছিস? বললাম না এখানে বসতে?”

বলেই তূর্যকে আবারো সোফায় বসিয়ে দেয় ইলমা। নিজেও তার পাশে বসে পরেন। তূর্য বিরক্ত হয়ে বলে,
_”আবার কি হলো আম্মু? যেতে দাও তো, আ’ম সো টায়ার্ড।”

_”যাবি তো,আগে এটা দেখ।”

বলেই হাতে থাকা খামটা থেকে একটা ছবি বের করে তূর্যের দিকে এগিয়ে দেয়। তূর্য ভ্রু কুঁচকে সেটা হাতে নিয়ে দেখে একটা মেয়ের ছবি। আবারো বিরক্তি নিয়ে মায়ের দিকে তাকায় তূর্য। ইলমা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলেন,
_”দেখ দেখ, কি সুন্দর না মেয়েটা?”

_”তোমাকে আমি বারণ করেছি আম্মু,তাও এসব মেয়ে দেখা বন্ধ করোনা কেন?”

_”দেখবো না কেন? বিয়ের বয়স হয়েছে ছেলের,আর আমি মেয়ে দেখবো না? আমার ও তো একজন সঙ্গী দরকার নাকি? সারাদিন তো বাবা ছেলে বাহিরেই থাকিস।”

_”আমার বউ এসে কিন্তু তোমার কাজ কমিয়ে দেবেনা।”

_”আমার ই বা কি এমন কাজ শুনি? সেই তো শুধু রান্নাটুকু করি। তোর বউকে আমি রান্নাঘরে যেতেও দেবো না। আমায় কোনো সাহায্য করতে হবেনা।”

তূর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
_”আমার ছেলেটাকে দেখে রাখলেই চলবে।”

আবারো খাম থেকে আরো বেশ কয়েকটা ছবি বের করে ইলমা। একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলে,
_”দেখতো,পছন্দ হয়? তোর বাবার বন্ধুর মেয়ে, মেডিকাল এ পড়ছে এখন। খুব সুন্দর দেখতে।”

ছবিটার দিকে তাকায় তূর্য। আসলেই মেয়েটা খুব সুন্দর, তবে তূর্যের খুব একটা পছন্দ না হওয়ায় বলে,
_”উম হু, আমার পছন্দ হচ্ছেনা।”

ইলমা এবার অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলে,
_”তাহলে এটা দেখ, ভীষণ মিষ্টি মেয়েটা।”

এই ছবিটাও হাতে নিয়ে দেখলো তূর্য। ইলমার এগিয়ে দেওয়া বাকি ছবিগুলোও একনজর দেখে সবগুলো ছবি ইলমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
_”এগুলো নিজের কাছেই রেখে দাও।”

ইলমা হতাশ হয়ে বলে,
_”কি বলিস? এতগুলো মেয়ের মধ্যে একটাও পছন্দ হলোনা তোর?”

উত্তর না দিয়েই উঠে নিজের ঘরে চলে যায় তূর্য। উত্তরটা নিজের কাছেই নেই। প্রতিটা মেয়েই বাহ্যিক সৌন্দর্যে একজনের থেকে অন্যজন সেরা। তবুও কোনো আগ্রহ পাচ্ছেনা তূর্য,অথচ সে চায় অতিসুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে। তাহলে কি এদের চেয়েও সুন্দর মেয়ে প্রয়োজন তার? নাকি বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহটাই কমে যাচ্ছে?

_____
বাড়িতে ফিরে গোসল করে বের হলো মৌরিন। ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়াতেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। মৌরিন এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাতুল কল করছে। সাথেসাথেই কলটা রিসিভ করে মৌরিন। ফোনটা কানে ধরে বলে,
_”আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”

#চলবে?

[দুঃখিত, আজও দিতে পারলাম না বোনাস পর্ব। কাল দেওয়ার চেষ্টা করবো।
হ্যাপি রিডিং।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here