#তবে_ভালোবাসো_কী
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ০৬
রাত সম্ভবত একটা বাজে। আকাশে কালো মেঘ বিরাজমান। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষন পর পরই অত্যাধিক আওয়াজে বজ্রপাত হচ্ছে। শীতল হাওয়া মাহানুরের বেলকনির জালানা দিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। নাক ডেকে ঘুমে মগ্ন মাহানুর। কিছুক্ষন ধরে অনবরত তার ফোন বেজে চলছে। ফোনের তীব্র শব্দে ঘুমের রেশ কেটে যায় মাহানুরের। চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে হাতড়ে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নেয়। আবছা চোখে নাম না দেখেই কল রিসিভ করে কানে দেয়। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
-কে বলছেন?
অপর পাশের আরহাম বুঝতে পারে সে ভুল সময়ে ফোন করে ফেলেছে। এখন সে-ই বা কী করবে! সারাদিন ব্যস্ত থাকায় সময় হয় না কথা বলার। এখনই একটু বিশ্রামের সময় তার। হঠাৎই মাহানুরের কথা ভীষণ মনে পড়ছিলো। এতো রাতে কল দিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু শেষমেষ মন ও মস্তিকের সাথে যুদ্ধ করে কল দেয়।
-কী হলো কে বলছেন বলুন?
-নাম্বার দেখো নির্বোধ।
আরহামের কষ্টস্বর শুনে বুঝে যায় এটা আর কেউ না তার একমাত্র স্বামী! ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলাতেই গন্ডার নামটা ভেসে উঠে। ভোঁতা মুখে মাহানুর বলে,
-এতো রাতে কেনো কল করেছেন?
-প্রেমালাপ পারতে।
-আপনার সাথে আমার ঝগড়ালাপ ছাড়া অন্যকোনো আলাপ মনে হয় না এই জীবনে হবে!দুর মিয়া আমার সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিলেন।
-ঘুমের থেকে আমি বেশি ইম্পরট্যান্ট ওকে।
-কেনো কল করেছেন সেটা বলুন?
-আমি তোমার এতো অপ্রিয় কেনো?
-খেজুরলাপ পারতে কল দিয়েছেন?
-এতো বেশি কথা বলো কেনো! যেটা জিজ্ঞেস করছি স্পষ্ট ভাবে সেটার উত্তর দেও।
মাহানুর একটু বিরক্তিবোধ করে। আরহাম তার অপ্রিয় নয়। এমনটাও নয় সে আরহামকে ঘৃণা করে! আরহামের সাথে তার একটু ঝগড়া হয়েছিল সেটার জন্যই মাহানুর আরহামের ওপর রাগ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাহানুর বলে,
-আপনি আমার অপ্রিয় নন।
-তাহলে? কেনো আমার জন্য এতো ঘৃণা তোমার মনে?
-আমার মনে আপনার জন্য ঘৃণাও নেই আরহাম।
আজ প্রথম মাহানুর আরহামকে তার নাম ধরে একদম ওয়াইফদের মতো বলেছে। আরহামের হৃদপিন্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। আরহামের দ্বিতীয় সত্ত্বা তাকে বলে, মেজর আরহাম চৌধুরী আপনি তাহলে আপনার ওয়াইফের মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছেন! আরহামকে চুপ থাকতে দেখে মাহানুর বলে,
-হ্যালো?
-হ্যাঁ শুনছি। তাহলে কী আছে তোমার মনে আমার জন্য?
-আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছিল তাই আমি একটু রাগ আপনার ওপর। এর বাধে অন্য কোনো কিছু নেই আমার মনে আপনার জন্য।
-বুঝেছি।
মন ক্ষুন্ন হয়ে যায় আরহামের। তার মানে মাহানুরের মনে তার জন্য কোনো ফিলিংস নেই। সে কী তবে এক তরফা ভালোবাসায় ফেঁসে গেলো!
-আর কিছু বলার আছে?
-শশুরবাড়ি গিয়েছো এই তিনমাসের মধ্যে?
-হুম, দুইবার গিয়েছিলাম। একদিন বিকেলে যেয়ে এসে পড়েছিলাম। আরেকদিন সকালে যেয়ে রাতে এসেছি। আপনাদের বাসায় ভীষণ ভালো লাগে আমার। সুনহেরা আপু আর সনিয়ার সাথে অনেক এনজয় করি আমি।
-তাই নাকি? কাল সুনহেরা ফোন দিয়েছিল আমাকে। বারে বারে শুধু একটা কথাই বলছিল জলদি মাহানুর ভাবিকে একবারের জন্য বাসায় নিয়ে এসো।
-ওহ! আপনি কবে আসবেন?
-আমি সঠিক বলতে পারছি না। তবে খুব দ্রুতই আসবো।
-দেরি করে আইসেন বুঝলেন?
-তোমার কথা শুনছি না আমি।
-ভালো।
-ঠিক আছে ঘুমাও তাহলে। রাখছি।
-হুম।
কল কেটে দেয় মাহানুর। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে। কী মনে করে ফোনের গেলারিতে ঢুকে আরহামের একটা ছবি দেখতে থাকে। মুচকি মুচকি হাসছে আর আরহামের ছবিতে চোখ বুলাচ্ছে। বিছানা থেকে নেমে রুমে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। আলমিরা খুলে ছোট একটি প্যাকেট বের করে। প্যাকেট থেকে একটি ছোট বক্স বের করে আয়নার সামনে যেয়ে বসে পরে। বক্সটি খুলতেই আরহামের কিনে দেওয়া নাকফুল আর কানের দুলজোড়া দেখতে পায় মাহানুর। নাকফুলটা নিয়ে আস্তেধীরে নাকে পরে ফেলে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তার মুখশ্রীতে। বিড়বিড় করে বলে,
-মাহানুর আরহাম চৌধুরী।
রক্তিম হয়ে যায় তার গাল। সচরাচর মাহানুরের চেহারায় সরম-লাজ দেখতে পাওয়া যায় না। আজ আরহামের কথা ভেবে আপনা আপনিই লাজ এসে ভর করে মাহানুরের মুখশ্রীর ওপর।
__________________🖤
রাতে ভাইদের সাথে বসে টিভি দেখছে মাহানুর। আয়াসের রুমে অবস্থান করেছে সকলেই। সেই অ্যাকশন একটি মুভি হচ্ছে। মাহানুরের মোট ভাইয়ের সংখ্যা ছয়জন। দুইজন মাহানুরের বড় এর বাদে বাকি চারটা মাহানুরের ছোট। তার বড় বাবার বড় ছেলের নাম আসীন সে বাবা চাচাদের সাথে বিজনেস সামলায়। মেজোটার নাম আয়াস সে মেডিক্যাল কলেজে পড়ছে। ছোটটার নাম আবির। মাহানুরের মেজো চাচার দুই ছেলের নাম সাদী আর সামি। সাদী ইন্টারে পড়ছে। আর সামি ও আবির দুইজনেই নবম শ্রেণীতে পরে। ছোট চাচার ছেলের নাম ফায়াজ। পিচ্চি বাবু মাত্র পঞ্চম শ্রেণীতে পরে।
এখন বিছানার কিনারে বসে একমনে মুভি দেখছে আর চিপস খাচ্ছে মাহানুর। তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে ফায়াজ। সে আবার মাহানুরের ভীষণ ভক্ত! এক সপ্তাহ আগে মাহানুরের আরহামের সাথে কথা হয়েছিল। তারপর মিস্টার ব্যস্ত মানুষ আর কল দেয়নি তাকে। অভিমানে মাহানুরও নিজের থেকে কল দেয়নি। চিপস খেতে খেতে মাহানুর বলে,
-ঐ মেজো চাচা কানাডা থেকে কবে আসবে? কিছু বলেছে এই বেপারে? (মাহানুর)
-আব্বুর আসতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে। (সাদী)
-ওওওও!(মাহানুর)
-আপু জানিস কাল কে আসবে? (আবির)
-কে আসবে? (মাহানুর)
-আমাদের বাবাদের একমাত্র জ*ল্লাদ বোন আসবে কাল। (আবির)
-কী বলিস! ফুল ফ্যামিলি আসবে নাকি জল্লাদ বুড়ি একা? (মাহানুর)
-নুর এভাবে বলিস না বোন কেউ শুনলে বকা খাবি। (আয়াস)
-আপুকে আর কে বকা দিবে! সবাই তো আমাদের বকা দিয়েই কূল পায় না!(সামি)
-ঠিক ঠিক। (আবির)
-আমার বোন ভালো তাই ওকে কেউ বকা দেয় না। তোরা শয়তানের দল তাই বকা খাস। (আসীন)
-বড় ভাইয়া তুমিই একমাত্র আমাকে বুঝো। (মাহানুর)
-হুম তুই যে কত ভালো এটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানবে না। বুঝলি শয়*তান ছেড়ি? (আয়াস)
মাহানুর মেকি হাসে। হাতে রাখা ফোনে একবার নজর বুলায়। আরহাম কী তাকে ভুলেই গেলো! কী মানুষ! বিয়ে করে নিজের বিবাহিত স্ত্রীকেই ভুলে গেলো! তাজ্জব বনে যায় মাহানুর।
আর কিছুক্ষন ভাইদের সাথে কথা বলে নিজ রুমে চলে যায়। রাতে কোনোরকম উদাসীন মনে ডিনার করে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে জালানা দিয়ে আসা সূর্যের রশ্মি মুখে পড়তেই সুন্দর ঘুমটা ভেঙে যায় মাহানুরের। আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। বাহির থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। মাহানুর সেদিকে ধেন না দিয়ে ছোট টেবিল থেকে নিজের ফোন তুলে হাতে নেয়। কাল রাতেও আরহাম কোনো কল দেয়নি। কোনো মেসেজও না!মাহানুরের তখন মন চাইলো চিৎকার করে কান্না করতে। আরহামের অবহেলা তার সয্য হচ্ছে না একদম। নিজের অনুভূতির প্রতি মাহানুর নিজেই আশ্চর্য। কেমন অনুভূতি এটা? সে তো আরহামকে পছন্দ করে না! তাহলে কেনো আরহামের অবহেলা তাকে ভীষণ ভাবে পীড়া দিচ্ছে? কেনো? তাহলে কী মাহানুর অজান্তেই নিজের স্বামীর প্রেমে পরে গেলো!
গোমড়া মুখ করে তৈরি হয়ে নিচে আসে মাহানুর। আজ যেহেতু শুক্রবার তাই সকল পুরুষ মানুষই বাসায়। ড্রইংরুমে যেতেই দেখে তার একমাত্র ফুপ্পি বসে ভাইদের সাথে কথা বলছে। মাহানুর এগিয়ে গিয়ে তার বড় বাবার পাশে বসে পরে। মাহানুরের ফুপ্পি সায়েরা মাহানুরকে দেখে বলে,
-কেমন আছিস মাহানুর?(সায়েরা)
-ভালো আছি ফুপ্পি। তুমি কেমন আছো? (মাহানুর)
-ভালোই। তা জামাই কেমন? কথাবার্তা হয় তো নাকি? (সায়েরা)
-হ্যাঁ ফুপ্পি হয়। (মাহানুর)
মাহানুরের ফুপ্পি মুখ ভেংচি কাটে। মাহানুর তার একটুও পছন্দ না। মাহানুর সুন্দর ছিল বলে সবসময় সবাই তাকেই পছন্দ করতো। অথচ তার মেয়ের গাঁয়ের একটু ময়লা বলে কেউ তার দিকে তাকাতোও না। পড়াশোনায়ও মাহানুর তার মেয়ের থেকে ভালো। আবার এই বাড়ির অর্ধেক জায়গায়ই মাহানুরের নামে করে দিয়ে গেছে তাঁদের বাবা মানে মাহানুরের দাদা। আরেক জায়গায় জায়গা ছিল সেটা পুরোটাই মেয়েকে দিয়েছে। তবুও মন ভরেনি সায়েরার। এই আলিশান বাড়ি থেকেও সে ভাগ চেয়েছিল। এক আকাশ সমান রাগ তার মাহানুরের ওপর। এখন আবার মাহানুরের কিসমতেই একজন আর্মি ছিল!
-আম্মা যাও নাস্তা করে নেও তারপর বাকি কথা বলো। (হামযা খান)
-ঠিক আছে বড় বাবা। ফুপ্পি ইফতি ইরা আসেনি? (মাহানুর)
-এসেছে। ইরা সামির সাথে ছাদে গিয়েছে আর ইফতি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল তাই রুমে রেস্ট করতে গিয়েছে। (সায়েরা)
-ওহহ। (মাহানুর)
মাহানুর এবার বসা থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করতে ডায়নিং টেবিলে বসে। আয়াস আগের থেকেই বসে খাচ্ছিল। মাহানুর একটা বেড নিয়ে চা দিয়ে খেতে থাকে। আড়চোখে আয়াসের দিকে তাকায়। রাক্ষসের মতো খেয়েই যাচ্ছে আয়াস। একটার পর একটা রুটি নিচ্ছে আর খাচ্ছে। মাহানুর তার প্রিয় চকলেট মিল্ক খেতে খেতে বলে,
-ভাই আর কত খাবি? এবার অফ যা! এমনেই তো দিনে দিনে আলু হয়ে যাচ্ছিস!(মাহানুর)
-ফুড ইস মাই লাভ বুঝলি। আর কম খেয়ে তোর মতো হিরঞ্চি হবো নাকি!(আয়াস)
-তোর বউ হিরঞ্চি কু*ত্তা। (মাহানুর)
-ছি মাহানুর খান ছি! এভাবে কেউ বড় ভাইকে গা*লি দেয়? (আয়াস)
-হুম আমি দেই। বাই দে ওয়ে তোর উল্ড বি ওয়াইফকে দেখেছিস? (মাহানুর)
-কেডা? (আয়াস)
-ইফতি মহারানী। তোর উল্ড বি ওয়াইফ। (মাহানুর)
-আমারে কী পাগল কু*ত্তায় কামরায়! দরকার পড়লে সারাজীবন কুঁয়ারা থাকুম তাও ওরে বিয়ে করুম না!(আয়াস)
-ফুপ্পি তো মনে মনে চাচ্ছে ওকেই তোর গলায় ঝুলিয়ে দিতে। এমনেও ইফতির মতো স্টাইলিশ মেয়েকে কে না চায় বল? (মাহানুর)
আয়াস বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রইলো মাহানুরের দিকে। মাহানুর মুচকি হাসি দিয়ে খাচ্ছে। আয়াস অকেজো ভঙ্গিতে নিজের চুলে হাত নাড়িয়ে বলে,
-আরহাম ভাইয়ার সাথে কাল কথা হয়েছিল।(আয়াস)
মাহানুরের মুখের হাসি বিলুপ্ত হয়ে আগ্রহের দেখা মিললো। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-সত্যি? কী বললো সে? (মাহানুর)
-বাহ্! মাহানুর খান তিনমাস ধরে যার নাম শুনলেই রেগে লাল হয়ে যেত আজ সে এতো বিচলিত হয়ে তার কথা জিজ্ঞেস করছে! স্ট্রেঞ্জ! (আয়াস)
-বেশি কথা বলবি না একদম। কী বলেছে সে? ভালো আছে? (মাহানুর)
-তুই প্রেমে পড়েছিস নুর! (আয়াস)
-আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না বুঝলি। (মাহানুর)
-এটা তোর সম্পূর্ণ ভুল ধারণা নুর। আর আরেকটা কথা, মাথার থেকে উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দে। একজন খারাপ তার মানে সবাই যে খারাপ হবে এইরকম কোনো কথা নেই। আরহাম ভাই একজন শুপুরুষ। শুধু শুধু নিজের মনের অনুভূতি গুলো মাটি চাঁপা দিয়ে রাখিস না। (আয়াস)
মাহানুর কিছু বললো না। বসা থেকে উঠে তার রুমে চলে যায়। অস্থির হয়ে কিছুক্ষন রুমে পায়চারি করে। তার মন মস্তিক কেমন জানো অগোছালো হয়ে গিয়েছে। ঘড়ির কাঁটা তখন ১১ টা ৩০ মিনিটে। মাহানুর একবার ভাবলো আরহামকে কল দিবে। পরমুহূর্তে কিছু একটা ভেবে ফোন বিছানায় ফেলে দেয়। তখনই মাহানুরের রুমে প্রবেশ করে ইফতি। ইফতি মাহানুর সমবয়সী। ইফতি ফেইল করায় পড়াশোনায় মাহানুরের এক বছর পিছিয়ে। অত্যাধিক এই স্টাইলিশ মেয়ে মাহানুরকে ক্ষেত ছাড়া কিছুই মনে করে না। মাহানুর ইফতিকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
-কিরে নুর, কেমন আছিস?
-একটু বেশিই ভালো। তুই?
-আমিও ভালোই আছি। শুনলাম আর্মির সাথে নাকি বিয়ে হয়েছে?
-শুনেছিস যখন আবার জিজ্ঞেস করছিস কেনো?
-আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না তোর জামাইকে? আমি তো দেখতে চাই তোর মতো ক্ষেতের কপালে কেমন ছেলে জুটলো!
মাহানুর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে ইফতির পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে নিলো। ইফতি কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে মাহানুরের রুমের নরম তুলতুলে সোফায় বসে পরে। মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
-রুমের কালার আর চেঞ্জ করলি না! কত বিচ্ছিরি দেখায়।
-তোর থেকে ভালোই দেখায়!
-ইন্সাল্ট করলি?
-একদম না। তুই হলি কুইন এলিজাব্যথা তোকে কী আমি অপমান করতে পারি!
-কুইন না হলেও, কুইনের থেকে কমও না আমি!
-অবশ্যই! তবে আমার জানা মতে কুইনরা এইরকম ছেঁড়াফাঁড়া জিন্স পেন্ট আর এইরকম ফকিরা গেঞ্জি পরে না!
-স্টাইল বুঝিস তুই?
-আমি মাহানুর খান। মাহানুর খান এমনেই মাশাআল্লাহ। তাই তাকে আর কোনো ছেলেকে আকিষ্ঠ করতে এইরকম ড্রেসাপ করার প্রয়োজন পরে না। বুঝতে পেরেছিস?
রাগে কটমট করতে করতে মাহানুরের রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইফতি। মাহানুর বিছানায় বসে হাসতে হাসতে শেষ।
_________________🖤
বিকেলে মাহানুররা সবাই মিলে প্ল্যান করল বাহিরে ঘুরতে বের হবে। কিন্তু দুপুর থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। মন খারাপ করে সব বিচ্ছুরা একসাথে আয়াসের রুমে বসে রইলো। ইফতি সোফায় বসে ফোনের মধ্যে ঢুকে আছে। তার সবার মাঝে ভীষণ বোরিং লাগছে। আয়াস মুখ ছোট করে বলে,
-তাহলে এখন বিকেলের প্লানিং কী নুর? (আয়াস)
-সেটাই তো ভাবছি। আকাশের যে অবস্থা বাহিরেও যাওয়া যাবে না। কখন বৃষ্টি নেমে পরে কে জানে!(মাহানুর)
-এখন আমরা বাসায়ই থাকি রাতে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবো। আমার তরফ থেকে ট্রিট। (আসীন)
-ইয়াহু মজা হবে! (রুমে উপস্থিত সকলে একসাথে চিৎকার করে বলে)
-বড় ভাই ভাবি কোথায়? সে কেনো আমাদের সাথে জয়েন হয় না? (মাহানুর)
-ও ওর ইগো নিয়ে বসে থাকুক। আমি তো আছি আর কী লাগে। (আসীন)
-আপু চলো না আমরা ক্রিকেট খেলি সবাই মিলে? (আবির)
-হুম গুড আইডিয়া! চলো সবাই এইরকম ওয়েদারে ক্রিকেট খেলতে সেই হবে। (মাহানুর)
সবাই মিলে বাড়ির আঙিনায় উপস্থিত হয়। দুই দল করা হয়। এক দলের ক্যাপ্টেন আয়াস আরেক দলের আসীন। মাহানুর আয়াসের দলে। কিছুক্ষনের মধ্যেই জমে উঠে তাঁদের খেলা। বাচ্চাদের চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে বড়রাও বেরিয়ে আসে। হামযা খান তো বাচ্চাদের সাথে সেও চিৎকার করতে থাকে। হাজেরার বুক ভরে যায় সবাইকে এতো হাসি খুশি দেখে। মনে মনে দোয়া করে তাঁদের পরিবারটা জানো সবসময় এইরকমই থাকে। কারো নজর না লাগুক। মাহানুর দৌড়ে গিয়ে তার বাবা আর চাচাদেরও নিয়ে আসে। সবাই মিলে খেলায় মশগুল। ইফতি খেলছে না। এক কিনারে বসে ফোন টিপছে।
তাঁদের খেলার মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। মাহানুর দ্রুত তার বাবা চাচা আর পিচ্চি বাচ্চাদের শাসনের স্বরে ভিতরে চলে যেতে বলে। তারা সবাই বাধ্য হয়ে ভিতরে চলে যায়। মাহানুর, আয়াস, আবির, সামি, সাদী, ইরা মজা করে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। হাজেরা রামিশা কয়েকবার তাঁদের বললো জ্বর হবে ভিতরে এসে পড়তে। কিন্তু তারা পুরো আঙিনায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। সময় তখন পাঁচটা বাজে। বৃষ্টি অনেকটাই কমেছে। ভিজে টইটুম্বুর হয়ে আঙিনার দোলনায় বসে দুলছে মাহানুর। পিছনে ধাক্কা দিচ্ছে সাদী। পিঙ্ক কালার বড় ফ্রক পরনে মাহানুর। ওড়না সুন্দর করে বুক থেকে কোমরে বাঁধা। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটা গুলোকে অনুভব করছে। তখনই কালো রঙের একটি গাড়ি প্রবেশ করে তাঁদের বাসার সদর দরজা দিয়ে। গাড়ির আওয়াজ শুনে মাহানুর চোখ খুলে সেদিনকে তাকায়। অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে যায় সে। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-এটা না ঐ গন্ডারের গাড়ি?
গাড়ি পার্ক করার সাথে সাথেই মাহানুরের বাবা ছাতা নিয়ে বের হয়। গাড়ির থেকে বেরিয়ে আসে আরহাম। ছাতা করে শশুরের সাথে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আড়চোখে একবার মাহানুরের দিকে তাকিয়েছিল সে। বিস্মিত বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে মাহানুর।
>>>>চলবে।