#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ০৪
-তুই আমাকে চড় মেরেছিলি না বেটা?
চোয়ালজোড়া কঠিন থেকে কঠিনত্বর হয়ে উঠলো আরহামের। মাথা সোজা করার শক্তি নেই অথচ মুখের ভাষা কী দারুণ! আরহাম কোনোরকম কাজ সেরে মাহানুর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে অনড় হয়ে বসে রইলো। মাহানুরের রাগ খানিকটা বেড়ে গেলো। শুধু তাঁদের গাড়িতে বসে আছে বলে কোনোরূপ নিজেকে দমিয়ে রাখলো। অহনা মাহানুরের উদ্দেশ্যে বলল,
-মাহানুর ঠিক আছিস তুই?
-কোনো কথা বলবি না তুই অহনার বাচ্চা। আজ তোর জন্যে এইরকম জিরাফের মতো মানুষের হাতে আমাকে থাপ্পড় খেতে হলো।
মাহানুরের কথায় অহনা চুপ হয়ে যায়। জোবান মৃদু হেসে জিগ্যেস করলো,
-আপনারা কী চারজন কাপল?
জোবানের প্রশ্নে ভেবছেকা খেয়ে গেলো সিয়াম। ত্বরিত দেখিয়ে বলল,
-না না আমরা ফ্রেন্ড। আপনার সাথে যে বসা তার কাজিনের বিয়ের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছিলাম।
-ওওও! কী নাম আপনাদের?
-আমার নাম সিয়াম, ওর নাম মুহিব। আপনার পাশেরটার নাম অহনা আর ইনি হলো আমাদের লিডার মাহানুর আপা।
শেষের কথা মাহানুরকে দেখিয়ে অনেকটা সয়তানি করে বলল সিয়াম। মাহানুর গরম চোখে তার দিকে তাকায়। সিয়াম পুনরায় বলল,
-আপনাদের নাম কী?
-আমার নাম জোবান আর উনার নাম আরহাম।
মাহানুরের মনে হলো আরহাম নাম সে আগেও কোথায় শুনেছে। কিন্তু কার মুখে শুনেছিলো সেটা ঠিক মনে করতে পারলো না। তাছাড়াও এক নাম অনেকেরেই হতে পারে। সিয়াম প্রতিউত্তরে বলল,
-আপনারাও কী এখানে বেড়াতে এসেছেন নাকি এখানেই থাকেন?
-আমার এখানেই বাসা কিন্তু আরহাম ভাইয়ের ঢাকায় বাসা।
-ওওও!
সিয়াম আড়চোখে আরহামের পানে তাকায়। উচালম্বা বলিষ্ঠ দেহের পুরুষকে দেখে সে ছেলে হয়েও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। যদি সে মেয়ে হতো তাহলে এখন নির্ঘাত আরহাম নামক পুরুষকে দেখে ক্রাশ খেতো মনে মনে ভাবলো সিয়াম। আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-ভাই কোনো কথা বলছেন না যে? আমাদের জন্য বিরক্ত হচ্ছেন?
-না তেমনটা নয়। আমি আসলে একটু কম কথা বলি।
শক্ত কণ্ঠে জবাব দিলো আরহাম। এতক্ষন চিন্তিত থাকায় অহনা আরহামকে খেয়াল করেনি। রণরণে পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে পিছনে ফিরে তাকায় সে। শ্যামবর্ণের আরহামকে দেখে তার ছোটোখাটো বুক ধক করে উঠলো। ক্ষণেই ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়ে বসলো সে। সিয়াম আড়চোখে অহনাকে দেখে হাসলো। অতঃপর বলল,
-ওহ আচ্ছা। ভাই ঢাকায় কোথায় থাকেন?
-ধানমন্ডিতে থাকি আমি।
-ওয়াও! আমাদের সবার বাসাও ধানমন্ডিতে।
আরহাম স্বজনমূলক স্মিত হাসলো। মাহানুর হাত মুঠি করে ভাবছে এই আরহাম নামক জিরাফকে কিভাবে শাস্তি দিয়ে যাবে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা ব্রিজের সামনে এসে পরে। মাহানুর বিড়বিড় করে বলে,
-এই অহনা বা’ন্দর আমাদের কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো!
অহনা তার আব্বুকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে সেখানে চলে যায়। সিয়াম মুহিবকে নিয়ে আস্তেধীরে নামে। জোবান আর আরহামের সাথে হ্যান্ডশেক করে কৃতজ্ঞ স্বরে বলল,
-অনেক ধন্যবাদ আপনাদের কে। আজ আপনারা না থাকলে আমাদের যে কী হতো! আর আবারও সরি আঘাত করার জন্য।
-চিল ব্রো। আশা করি আবার দেখা হবে।
-ইনশাআল্লাহ ভাই।
নম্র হেসে সিয়াম মুহিবকে নিয়ে হাঁটা ধরে।মাহানুরের মাথায় সেই একটা বুদ্ধি আসে। সে নামার সময় পরে যাওয়ার অভিনয় করে পাশে বসা আরহামের শার্ট বিহীন ঘাড়ে হাত রাখে। আরহাম শক্ত মুখ করে মাহানুরের পানে তাকায়। মাহানুর বাঁকা হেসে তার ধারালো আঙুলের নেইল ঢুকিয়ে দেয় আরহামের ঘাড়ের মাংসে। মৃদু জ্বালাতন অনুভব হতেই আরহাম হাত মুঠি করে ফেলে। মাহানুর নিজের হাত সরিয়ে লাফ দিয়ে নেমে যায়। এটিটিউড নিয়ে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে আরহামকে রাগাতে কয়েক পা এগিয়ে যায়।
সহসা পিছনে ফিরে মাহানুর। আরহাম সেই একই ভঙ্গিতে বসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মাহানুর অনেকটা নাটকীয় ভনিতায় বলল,
-অনেক অনেক থ্যাংক ইউ মিস্টার জিরাফ এন্ড তার ফ্রেন্ডকে। মিস্টার জিরাফের জন্য আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে আমার গালে চড় দেওয়ার দরুন এখন সারাজীবন আমার দেওয়া দাগ নিয়ে ঘুরতে হবে!
মাহানুর বাঁকা হাসলো। শয়তানি করে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলো সে। আরহাম রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গাড়ির কিনারে ঘুষি দিলো। জোবান কিছুই বুঝলো না। মাহানুরের ব্যবহার তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। আরহাম পিছনের সিট থেকে বের হয়ে জোবানের পাশে এসে বসে। ধমকের স্বরে বলল,
-কে বলেছিলো তোমাকে এতো মহৎ সাজতে? আমাকে না জিগ্যেস করে নেক্সট টাইম এইরকম কাজ করলে ভয়ংকর শাস্তি পাবে তুমি।
জোবান ঢোক গিললো। আরহাম যে প্রচন্ড রেগে আছে বুঝতে অসুবিধা হলো না তার। গাড়ি স্টার্ট দিবে তখন তার নজর পরে আরহামের ঘাড়ের দিকে। সাদা শার্টয়ে লাল রঙের তরল পদার্থ লেগে আছে। বিচলিত হয়ে বলল,
-স্যার আপনার ঘাড়ের ঐখানে শার্টয়ে তো রক্ত লেগে আছে! মেয়েটা কী তখন নেইল দিয়ে এটা করলো! কী সাঙ্গাতিক মেয়ে রে বাবাহ!
-শুধু নেইল দিয়ে করেনি হয়তো তার হাতে অন্যকোনো ধারালো জিনিস ছিল। এখন গাড়ি স্টার্ট দেও।
-কিন্ত স্যার রক্ত মুছে নিন।
-এইসব ক্ষত মেজর আরহাম চৌধুরীর জন্য কিছুই না। তুমি কথা না বলে গাড়ি চালাও জোবান।
মাহানুর হাঁটতে হাঁটতে হাতের তিনটে সেফটিপিন রাস্তায় ফেলে দেয়। তার ওড়নায় সবসময় সেফটিপিন থাকে আজও পরিহিত ওড়নায় ছিল। হাতের মুঠিতে তিনটে সেফটিপিন নিয়ে একসাথে গেঁথে দিয়েছে আরহামের ঘাড়ে। মাহানুরের সাথে লাগতে এসেছিলো এভাবেই কী সে ছেড়ে দিবে নাকি!
________________________
আঁধারে ঘেরা রাতের পর এক উজ্জ্বল সকাল। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ও মোরগের ডাকে এখানে ঘুম ভাঙে সকলের। অহনার ঘুম ভেঙেছে সেই ভোর সকালে। মাহানুরকে ডেকেছিল কিন্তু ঘুমের কারণে মাহানুর ডাকই শুনলো না। সকাল নয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে মাহানুর। রাতে বাসায় আসার পর অহনা সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাঁদের। অহনার আব্বু, আম্মু আর তার ছোট দুইবোন ছিল বাসায় বাকি সকলে বিয়েবাড়িতে চলে গিয়েছে। অহনার আম্মুকে ভীষণ ভালো লাগে মাহানুরের। নিজের ছেলেমেয়ের মতো আদর করে তাঁদের রাতের খাবার খাইয়েছে। তাছাড়াও বাড়ির অন্য সদস্যরাও অনেক আন্তরিক। অহনারা তিনবোন। সবার বড় সে তারপর কলেজে পড়ে একজন আর সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে একজন।
আরমোড়া দিয়ে বিছানা থেকে নামে মাহানুর। ঘরের মধ্যে ওয়াশরুম না পেয়ে বিরক্ত হয়ে যায় সে। একহাতে ব্রাশ নিয়ে অহনাকে কল দেয়।
-কিরে ওয়াশরুম কোথায়?
-দারা আমি আসছি।
ফোন রেখে বিছানায় বসে মাহানুর। দ্রুত পায়ে অহনা রুমে ঢুকে মাহানুরকে দেখে বলল,
-আমাদের বাসায় ঘরে ঘরে ওয়াশরুম নেই। একটাই ওয়াশরুম আর গোসল মানুষ পুকুরে করে।
-ওহ আচ্ছা।
-আয় আমার সাথে।
এদিকসেদিক তাকিয়ে হাঁটছে মাহানুর। বেশ বড় একটি উঠান। চারপাশে বিভিন্ন ধরণের গাছ। আশেপাশে আরো অনেক বাড়িঘর। অহনার মুখে শুনেছিলো বাড়ির পিছনে তাঁদের ধানের ক্ষেত রয়েছে সেখানে নানান ধরণের সবজিও নাকি আছে। ফ্রেশ হয়ে মাহানুর সেখানে যাবে বলে মনস্থির করলো। আশেপাশে কোথায়ও সিয়াম মুহিবকে না দেখে মাহানুর জিগ্যেস করে,
-বাঁদর দুইটায় কোথায় দেখছি না যে?
-তারা বাড়ির পিছনে ক্ষেতে গিয়েছে। তুই মুখ ধুয়ে নাস্তা করে নে তারপর তোকেও নিয়ে যাবো।
মাহানুর মাথা নাড়ালো। পুকুরপাড়ে আসতেই অহনা তাকে বালতি করে পানি তুলে দেয়। মাহানুর যেহেতু সাঁতার পারে না তাই পানির সামনে যাওয়ার আর সাহস পেলো না। ছটপট ফ্রেশ হয়ে মাহানুর বরাদ্দকৃত রুমে এসে পরে। পরিহিত ড্রেস পরিবর্তন করে আকাশি রঙের একটি সেলোয়াড় কামিজ পরে। যেহেতু এটা গ্রাম তাই শর্ট টপ্স পরলে মানুষজন তাকে খারাপ চোখে দেখতে পারে। চুল খোঁপা করে ওড়নাটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে।
অহনার দুই বোনের নাম আতিকা আর অসিয়া। দুইজনই মিশুকস্বভাবের। আতিকা আর মাহানুর একসাথে বসে নাস্তা করলো। আতিকা অহনাকে বলে,
-আপু মাহানুর আপু তোমার বেস্টফ্রেন্ড না হয়ে আমার বেস্টফ্রেন্ড হলেও পারতো। এইরকম একজন বেস্টফ্রেন্ড থাকলে আর মুড অফ হয় না।
মাহানুর তখন হালকা হেসে বলল,
-চিল আতিকা বেবি বোনের বেস্টফ্রেন্ড মানে তোমারও বেস্টফ্রেন্ড।
আতিকা মাথা নাড়ালো। অহনা কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে। অহনার মা মাহানুরকে আরেকটা পরোটা দিতে দিতে বলল,
-এই মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলেই আমি বুঝেছিলাম সে অহনার বান্ধবী কম বোন বেশি! এতো কম খাও দেখেই শরীরটা এতো চিকন আমাদের এখান থেকে বেশি বেশি খেয়ে মোটা হয়ে যাবে। বুঝলে?
-আন্টি এতো খাইয়ে মোটা বানিয়ে দিলে পরে আমাকে কেউ বিয়েই করবে না!
মাহানুরের কথায় শব্দ করে হেসে ফেললো আতিকা আর অহনা। অহনার মা মুচকি হেসে বলল,
-আরেকটু মোটা হলে তখন আরো সুন্দর লাগবে।
খাওয়া শেষ হতেই অহনা মাহানুরকে নিয়ে বের হয়। বিকেলে তারা অহনার চাচার বাসায় যাবে তাই এখন একটু ঘুরাঘুরি করবে। বাড়ির পিছনে আসতেই মাহানুরের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কত সুন্দর বড় ক্ষেতে একপাশে ধান চাষ হচ্ছে। আরেকপাশে শুকনো জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সবজি। পাশেই টিনের কয়েকটা ঘর। সেখানে পালিত ছাগল, মুরগি, গরু, হাস রাখা হয়।
মাহানুর আরেকটু এগিয়ে গেলো। চোখ জুড়িয়ে যায় তার। ফুরফুরে মনে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় মুহিব একটা বাছুরের পিছনে দৌড়াচ্ছে আবার বাছুর মুহিবের পিছনে দৌড়াচ্ছে। মাহানুর বুকে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। ভালো একটা স্থানে তারা চারজন বসে পরে। সিয়াম ক্যামেরা দিয়ে প্রকৃতির ছবি তুলছিলো। পুকুর থেকে শুরু করে গাছের সবজি গুলোও ক্যামেরায় বন্দি করছে সে। অহনার ছোট বোন আসিয়া গাছ থেকে টাটকা টমেটো পেরে দেয় মাহানুর। মাহানুর সেটা খেতে খেতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সিয়ামকে চেঁচিয়ে বলে,
-ঐ সিয়াইম্মা এখানে এসে আমার কয়টা ভালো ভালো ছবি তুলে দে।
-দারা আসছি।
মাহানুর মুরগির বাচ্চাদের নিয়ে শয়তানি করছে আর সিয়াম ক্যান্ডিড পিক তুলছে। হঠাৎই মুরগির বাচ্চার মা ধেয়ে আসে মাহানুরের দিকে। ভয় পেয়ে মাহানুর আশেপাশে না তাকিয়ে খিচে দৌড় দেয়। সিয়াম হাসতে হাসতে সবটা ভিডিও করছে। মাহানুর চিৎকার করে বলল,
-অহনা বাঁচা আমাকে এই মুরগি আজ আমাকে ছাড়বে না।
-তার বাচ্চার সাথে লাগতে গিয়েছিলি এখন বুঝো মজা!
হাসতে হাসতে বলল অহনা। মাহানুর দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে সামনে কেউ আছে নাকি সেটা আর খেয়াল করছে না। একসময় মুহিব সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে ধাক্কা দেয়। হঠাৎ ধাক্কায় নিজেকে সামলাতে না পেরে মুখ থুবলে নিচে পরে মুহিব। ভাগ্য খারাপ থাকায় গরুর গো’ব’রের ওপরে পরে সে।
সিয়াম ক্যামেরা অফ করে হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরে। অন্যদিকে অহনারাও অট্টহাসিতে ফেঁটে পরেছে। মাহানুর মেকি হাসি দিয়ে পিছনে ফিরে। আস্তে আস্তে উঠে বসে মুহিব। গোলাপি রঙের শার্ট এ গো’ব’রের ছোঁপ ছোঁপ দাগ লেগে রয়েছে, মুখে সাদা ধুলোর কারণে ফর্সা হয়ে গিয়েছে। মাহানুর এগিয়ে আসতে নিলে গন্ধে ওয়াক শব্দ করে উঠলো। একটু পিছনে যেয়ে নাকে ওড়না চেপে বলল,
-বন্ধু, জান, কলিজা ঠিক আছিস তুই?
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল মাহানুর। মুহিব একবার দূরে সিয়ামের দিকে তাকালো তারপর মাথা ঘুরিয়ে মাহানুরের দিকে তাকায়। মুহিবের মুখ দেখে না চাইতেও ফিক করে হেসে উঠলো মাহানুর। মুহিব সেটা দেখে ভোঁতা মুখে বলল,
-মাহানুরের বাচ্চা!!!!!! তুই আজকে শেষ।
মাহানুর কোনোরকম হাসতে হাসতে পুনরায় দৌড়ায়। মুহিবও উঠে তার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে উঁচু স্বরে বলল,
-এখন পালাচ্ছিস কেনো বা’ন্দ’রের নানী!তোকে আজ আমি পঁচা পুকুরে চুবাবো।
মাহানুরকে আর কে পায়। দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায় সে।
________________________
অটোতে বসে আছে মাহানুর সহ সকলে। এখন তারা অহনার চাচার বাসায় যাচ্ছে। আজ হলুদ কাল বিয়ে পরের সকালে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। অহনা গতরাত থেকে কয়েকবার রিদের আইডিতে ঢুকেছে। কোনো মেসেজ দেয়নি দেখে অহনার মনে অভিমান জন্ম নেয়। না চাওয়ার সত্ত্বেও সে মন খুলে আনন্দ করতে পারছে না। কেমন যেনো একটা অস্থিরতা কাজ করছে অহনার মনে। সিয়াম অহনার মাথায় মৃদু চাপর দিয়ে বলল,
-কিরে রিদের কথা ভাবছিস নাকি?
-তোর মুন্ডু।
তেড়া জবাব অহনার। মুহিব আর মাহানুর ফোন নিয়ে কিছু একটা করছে। সিয়াম পুনরায় বলল
-তো কার কথা ভাবছিস এতো মনোযোগ দিয়ে?
-ভাবার মানুষের অভাব আছে নাকি!
হঠাৎ কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে অহনা সুর টেনে বলল,
-ওহ হো আমি তো কাল রাতের সেই সুপুরুষের কথা ভাবছি। ইসসস কী তার বডি!
মাহানুর ফোন থেকে মুখ তুলে অহনার দিকে তাকায়। অহনার মুখশ্রী চিকচিক করছে সেই পুরুষের কথা ভাবায়। মাহানুর গাঢ় কণ্ঠে বলল,
-উইযে জোবান যে ঐটার কথা বলছিস নাকি!বাহ্! তোর পছন্দ আছে!
অহনা ত্বরিতগতিতে বলল,
-না না ঐ জোবান না। আরহাম নাম ছিল যার তার কথা বলছি আমি। তোর সাথেই তো বসেছিলো। প্রথমে আমি খেয়াল করিনি যখন নজর পরলো তখন আমার দৃষ্টি ফেরানো কঠিন হয়ে পরছিলো।
মাহানুর অহনার কথায় তোয়াক্কা করলো না। কিছু শুনেনি এমন ভনিতায় বসে রইলো। সিয়াম অহনার কথায় মুগ্ধ স্বরে বলল,
-এটা সত্যি ভাই! ছেলে হয়েও তার বডি ফিটনেস আর চেহারার আকৃতি দেখে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
-মানুষটাই এমন শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চায় কিন্তু কেমন যেনো গম্ভীর স্বভাবের ছিল। না জানে কত মেয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সে।
মাহানুরের বিরক্ত এবার সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়। ব্যাগ থেকে ইয়ারফোন বের করে কানে চেপে বসে। মুহিব তাঁদের কথা শুনে আগ্রহী হয়ে বলল,
-আমিই দেখতে পারলাম না সেই বড় কলিজাওলা ছেলেটাকে!
-তুই সঠিক মোমেন্টে ম’ই’রা-ই থাকিস এটা নতুন কিছু না।
________________________
নতুন ছাত্রদের আজকের মতো ট্রেনিং শেষ করে মাত্রই নিজের বরাদ্দকৃত রুমে আসলো আরহাম। ঘামাক্ত কায়ায় আটসাট হয়ে লেগে রয়েছে পরিহিত শার্ট। এক রুমে দুইজন করে থাকে। তার রুমমেট জোবান। রুমের চাবি দিয়ে তালা খুলে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ভিতরে প্রবেশ করে সে। পুনরায় দরজা লাগিয়ে ইউনিফর্ম শার্টয়ের বোতাম খুলতে খুলতে পা বাড়ায়। দুইপাশে দুইটা সিঙ্গেল বেড, দুইটা কাবাড, একটা বড় সাইজের দেয়াল আয়না, একটি সোফা আর দুইটা চেয়ার। রুমের সাথে এটাচ করা একটা ওয়াশরুম আর একটা কিচেনরুম।
শার্ট খুলে সেটা আছড়ে ফেলে বিছানায়। ফুল করে ফেন চালিয়ে ফেনের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে থাকে। গরমে অসহ্য হয়ে গায়ে সাদা রঙের সেন্টগেঞ্জিটিও খুলে ফেলে। কোমরে হাত দিয়ে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশাস নিলো। টানটান হয়ে দাঁড়ানোর ফলে পেটের সিক্সপ্যাক স্পষ্ট হয়ে গেলো। হাতের ফুলে উঠা পেশী গুলো ভেসে উঠলো। পেটানো কোমর, পিঠে ধরা দিলো অসংখ্য আঘাতের দাগ।
দু পা এগিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে আয়নার স্মুখীন যেয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখতে দেখতে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে। আকস্মিক তার নজর পরে ঘাড়ের তাঁজা ক্ষতের দিকে। মাথা কিছুটা বাঁকা করে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে থাকে। গর্তের মতো হয়ে আছে ছোট ছোট তার পাশেই নেইলের আঁচড়। আরহাম কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল,
-মেয়ের সাহস আছে বলতে হবে! আরহাম চৌধুরীর শরীরে তার ছোঁয়া বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে! সাঙ্গাতিক!
>>>চলবে।