তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ০৮

0
391

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ০৮

হতভম্ব আরহাম পুনরায় আঁখিজোড়া খুলে হকচকিয়ে যায়। মাহানুর যে তার কল্পনা না এটা বিশ্বাস করতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো তার। মায়ের ডাক শুনতে পেয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। বড়দের সালাম দেয়। মাহানুরের বড়বাবার পাশে বসে সে। মেহরাব খান আর হামজা খানের সাথে ভালোই কথায় জমে উঠলো সে। আসীনের সাথে দুই একটা কাজের কথাও বলল। কথায় কথায় আরহামের মামা বলল,
-তা ভাই মেয়েকে রেখে ছেলেকে বিয়ে করাচ্ছেন যে? মেয়েও তো বিয়ের লায়েক।
মেহরাব খান মাহানুরের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলল,
-আমাদের পরিবারের মেয়ের অনেক কমতি তাই দুই ছেলেকে আগে আগে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে মেয়ে আনতে চাচ্ছি।
জয়া বেগম প্রসন্ন হলেন। আরহামও সবার সাথে কথা বলে বুঝলো ফ্যামিলি খারাপ নয়। সুনহেরার জন্য এর থেকে ভালো পরিবার হয়তো তারা পাবে না। হালকা নাস্তা পানির পর্ব শেষ হতেই সনিয়া আর আরহামের মামাতো বোন সিফা মিলে সুনহেরাকে নিয়ে আসে। অনেকক্ষণ ধরে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো মাহানুর। এখন সুনহেরাকে দেখে তার মন ভালো হয়ে যায়। আয়াসের এক পাশে আরহাম বসেছিলো। পড়াশোনার বেপারে জিগ্যেস করছিলো তাকে। আয়াস চোখের ইশারায় মাহানুরকে তার পাশে যেয়ে বসতে বলে। মাহানুর ইশারায়ই না করে দেয়। আয়াস করুণ চোখে তাকিয়ে রিকোয়েস্ট করে। না পেরে মাহানুর বসা থেকে উঠে আয়াসের আরেকপাশে যেয়ে বসে পরে। আয়াস বিড়বিড় করে বলে,
-তুই আমার সাথে থাকবি বুঝলি?
-ওকে।

সুনহেরা এসে নত মুখে সবাইকে সালাম দেয়। আরহাম নিজের জায়গা থেকে উঠে সেখানে সুনহেরাকে বসায়। মোটামুটি সব সোফায়ই মানুষজন বসে আছে শুধু মাহানুরের পাশের সোফা খালি। আরহাম ইতস্তত করে দাঁড়িয়ে রইলো। সনিয়া ভাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
-ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছো কেনো? মাহানুরের পাশে যেয়ে বসে পরো।
-না আমি দাঁড়িয়েই ঠিক আছি।
আরহামকে দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে আসীনও বলল,
-আরহাম ভাই এখানে বসে পরেন।
-আপনারা বসেন ভাই।
-আরে আসেন ভাই।
মাহানুর গোলগাল চোখে আরহামের দিকে তাকায়। আরহাম অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল তখন।আর না পেরে মাহানুরের পাশে এসে বসে সে। খানিকটা কেঁপে উঠলো মাহানুর। বুকের মধ্যে ভীষণ জোরে জোরে কেউ ঢোল পিটাচ্ছে তার। অন্যদিকে আরহামেরও একই অবস্থা। তার মতো সুপুরুষের মন অস্থির হয়ে উঠছে। হাত, পা ঘেমে যাচ্ছে। মাহানুর হাত মুঠি করে স্বাভাবিক ভাবে বসার চেষ্টা করলো। আয়াসের পিছন থেকে সুনহেরাকে বলল,
-হ্যালো নিউ ভাবি। কেমন আছো?
সুনহেরা ঘাড় ঘুরিয়ে মাহানুরের হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে তাকায়। এই মুখশ্রী সে আগেও দেখেছে মায়ের ফোনে ছবিতে। ছবিতে দেখেই মেয়েটির মিষ্টি মুখের প্রেমে পরে গিয়েছিলো সে। মাকে জোর দিয়ে বলেছি “আমার ভাইয়ের বউ এই মেয়েটাই হবে আম্মু। তার সাথেই আমার ভাইকে মানাবে।”
সুনহেরা ধীর কণ্ঠে বলল,
-আমি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?
-একদম ভালো। আমি হলাম তোমার বড় ননদ মাহানুর। তুমিও আমাকে মাহানুর বলেই ডাকতে পারো ভাবি।
সুনহেরা একটু হাসার চেষ্টা করলো। পাত্র পাত্রী আয়াস আর সুনহেরা হলেও সকলে নজর কেড়েছে মাহানুর আর আরহামের জুটি। টানটান হয়ে বসে আছে আরহাম আর একটু পর পর চুল ঠিক করছে মাহানুর। সকলের মনে একটাই কথা “কী অপূর্ব লাগছে দুইজনকে একসাথে!”

-সুনহেরা মা তুমি আয়াস বাবাকে নিয়ে বাগান থেকে ঘুরে এসো। তোমরা নিজেদের মধ্যেও পরিচিত হয়ে নেও।
বলল জয়া বেগম। হামজা খানও সহমত হলো তার কথায়। যেহেতু তাঁদের একা পাঠানো যাবে না তাই সাথে চললো মাহানুর। মাহানুর আগে আগে হাঁটছে আর সুনহেরা আয়াস একসাথে। বাগানের দিকটা আসতেই সুনহেরা শাড়ী ধরে বিড়বিড় করে বলল,
-দূর বা’লের একটা শাড়ী আমার ধারা আর কন্ট্রোল হচ্ছে না।
আয়াস স্পষ্ট শুনলো না সুনহেরার কথা। সুনহেরা হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-নাম কী আপনার?
-আয়াস খান।
থমথমে কণ্ঠে বলল আয়াস। সুনহেরা মুখ বাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলল,
-চশমা পরেন কেনো? কানা নাকি?
-চোখে প্রবলেম।
-তোহ কানা বললেই তো পারতেন! আজব মানুষ! যে ডাক্তার চশমা ছাড়া চোখেই কিছু দেখে না সে রোগীর চিকিৎসা কিভাবে করবে!
আয়াস থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়ে তো না যেনো আস্ত একটা ফাটাবোম! তবে দেখতে কিউট আছে। এইরকম একজনের সাথে জীবন কাটাতে আমার অসুবিধা নেই। মনে মনে ভাবলো আয়াস।

বাহিরের জায়গায় জায়গায় বাতি। বাগানের দিকটা কালারফুল লাইট দিয়ে সাজানো। তবে কেমন যেনো নির্জন। মাহানুর একজন ভৃত্যর সাথে বেশ ভিতরে চলে গিয়েছে। তার ফীল হচ্ছে সে কোনো গ্রাম অঞ্চলের জঙ্গলে এসেছে।
সুনহেরা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসার একটা জায়গায় বসে পরলো। চোখের ইশারায় আয়াসকেও বসতে বলল। আয়াস সুঠাম শরীর এলিয়ে বসলো। সুনহেরা সরু চোখে তাকিয়ে আচমকা প্রশ্ন করলো,
-কয়টা মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন?
আয়াস বিস্ময়বিমূঢ়। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে তার শরীর বরফের মতো জমে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
-মানে?
-ওরে আমার ল্যাদা বাচ্চা! আর ইউ ভা’র্জি’ন?
-ইয়েস।
-সত্যি? জিএফ নেই আপনার?
-না।
কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল আয়াস। আয়াস সুনহেরার এরূপ আচরণ দেখে একটু ভীত হয়ে গেলো। মেয়ে নাকি শান্তশিষ্ট? এই তার শান্তশিষ্ট আচরণ!
সুনহেরা মনে মনে খুশি হলো আয়াসে কথায়। আয়াসের মুখোমুখি বসে সিরিয়াসলি ভঙ্গিতে বলল,
-তো শুনুন আয়াস মিয়, এই বিয়ে আপনিও আপনার ফ্যামিলির জন্য করছেন আমিও। আমি এইযে ভালোটালো বাসার ওপর বিশ্বাসী নই। বর্তমান যুগের ছেলেরা ভালোবাসার ভ ও চেনে না শুধুই শরীর চায়! তাই মনে রাখবেন আপনিও আমাকে ভালোবাসেন না আমিও না। আর ভুলেও আমাকে ভালোবাসার মতো ভুল করবেন না। এক রুমে, এক বিছানায় আমরা থাকবো ঠিকই কিন্তু আমাকে টাচ করতে পারবেন না। আর যদি কোনোদিন জোর করেন তাহলে আপনাকে টুকরো টুকরো করে কে’টে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।

শেষের কথাটা একটু ভয়ংকর ভাবে বলল সুনহেরা। আয়াস সুনহেরার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
-তো আপনি বিয়ে না করলেই তো পারেন।
-না। আপনার ফ্যামিলি আমারও পছন্দ হয়েছে আবার আপনিও ভোলাভালা আছে আমার কথায় নাচাতে পারবো।
-সিরিয়াসলি! আপনি সুস্থস্ববল মানুষ?
-অবশ্যই। আরেকটা কথা বিয়ের পর কোনোদিন যদি আপনার আপসোস হয় তাহলে বলবেন আমি আপনাকে নিজ দায়িত্বে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আর সবাইকে আমার দোষই বলবো।

আয়াস কিছু বলার ভাষায় হারিয়ে ফেললো। আশ্চর্য নয়নে শুধু তাকিয়ে রইলো স্মুখীন বসা তরুণীর দিকে। সুনহেরা কড়াচোখে তাকিয়ে পুনরায় বলল,
-এখন আপনার ফ্যামিলিকে যেয়ে বলবেন মেয়েকে আপনার পছন্দ হয়েছে বুঝলেন?
আয়াস কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ালো। সুনহেরা মুচকি হেসে আয়াসের গাল টেনে দিয়ে বলল,
-ডেটস মাই গুডবয়।
___________________________
লাল রঙের একটি বিদেশী ফুলে নজর আটকে যায় মাহানুরের। মুগ্ধ হয়ে একটু ঝুঁকে ফুলটা দেখতে থাকে সে। সময় নিয়ে ফুল দেখা শেষ হলেই পিছনে ফিরতে যাবে আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয় সে। তৎক্ষণাৎ একজোড়া শক্ত, বলিষ্ঠ হাত এসে আঁকড়ে ধরে তার কোমর। মাহানুর বড় বড় চোখ করে সামনে তাকায়। আরহামকে দেখে রাগে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আরহামকে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। মাহানুরের ধাক্কায় একটুও নড়লো না আরহাম। সেই আগের ভঙ্গিতেই মাহানুরকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মাহানুরের ক্ষীণ শক্তি আরহামের মতো পুরুষের কাছে কিছুই না। আরহাম নিজেই মাহানুরকে ছেড়ে একটু দূরে যেয়ে দাঁড়ায়। মাহানুর পরিহিত ওড়না ঠিক করে আরহামের দিকে তাকায় না। সামনে পা বাড়িয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আরহাম তার একটি হাত চেপে ধরে। মাহানুর কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই হাত ছেড়ে দিয়ে সে বলে,
-ওরা দুইজন কোথায়?
-এটা জিগ্যেস করার জন্য হাত ধরার প্রয়োজন নেই দূরত্ব বজায় রেখেও বলা যায়। তারা আরো পিছনে হয়তো।
আরহাম ধপ ধপ পা ফেলে মাহানুরের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। এই মেয়ের মুখে সবসময় রাগ এঁটেই থাকে নাকি! মনে মনে ভাবলো আরহাম। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-এতো ভালো পরিবারের মেয়ে তুমি হবে আমার কল্পনাতেও ছিল না!
-আমার ভাইয়ের হবুবউয়ের ভাই যে মিস্টার অভদ্র ওরফে একজন জিরাফ হবে এটাও আমার কল্পনাতে ছিল না।
একই ভঙ্গিতে বলল মাহানুর। আরহাম শুধু তাকিয়ে থাকলো। প্রথমদিন এই মুখটা দেখে কতই না রাগ হয়েছিলো তার অথচ আজ তার মন চাচ্ছে শুধু এই মুখশ্রীর দিকেই তাকিয়ে থাকতে। নিজের চিত্তের বাসনা শুনে মাথা ধরে এলো আরহামের। না কোনোভাবেই এইরকম জংলী মেয়ের প্রেমে সে পরতে পারে না। কোনোভাবেই না।
মাহানুর বিরক্ত হয়ে বলল,
-আর কিছু জিগ্যেস করবেন নাকি যাবো?
-সুনহেরার বিষয় কিছু কথা ছিল আমার।
-বলেন?
-আমি আজ রাতেই আবার চলে যাবো। বিয়ের তারিখও হয়তো এই মাসেই ফালানো হবে আর আমার আসতে দেরিও হতে পারে। তুমি যেহেতু আয়াসে বোন তাই আমি তোমাকে ভরসা করে বলছি। আই হোপ তুমি একজন ফ্রেন্ডের মতো সুনহেরা আর আয়াসকে বুঝাবে। অ্যাকচুয়ালি আমার বোন একটু অন্যরকম।
মাহানুর আরহামের কথা কিছুই বুঝলো না। না বোঝার ভনিতায় বলল,
-মানে?
-সুনহেরা অকারণেই ছেলেদের বেশি একটা পছন্দ করে না। ওর জীবনের উদ্দেশ্যই ডাক্তার হয়ে মানুষকে চিকিৎসা দিবে। বিয়েসাদির প্রতি কোনোরূপ আগ্রহ তার নেই। এখনও ফ্যামিলির খুশির জন্যেই বিয়েতে মত দিয়েছে সে।

নিঃশাস ত্যাগ করলো আরহাম। মাহানুর শান্ত মুখে সবটা শুনছে। আরহাম পুনরায় বলল,
-তোমাদের ফ্যামিলি আর আয়াসকে আমাদের সবার অনেক পছন্দ হয়েছে তাই বিয়েটা হয়তো হয়ে যাবে। তুমি একটু আয়াসকে বুঝাবে যেনো সুনহেরাকে একটু সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে আর সুনহেরাকেও আয়াসের প্রতি ফীল আনার চেষ্টা করবে। আমার হয়ে এই কাজটা করে দিও। প্লিস।
-হয়েছে এতো প্লিস বলতে হবে না। এখানে আমার ভাই ভাবীর ভবিষ্যতের কথা আমি কেনো পিছিয়ে থাকবো! আর আমার ভাই আয়াস যথেষ্ট সুপুরুষ। সে আপনার বোনকে বুঝবে আর তাকে আগলেও রাখবে।
আরহাম কুটিল হাসলো। ক্ষণেই মাহানুর পুনরায় পূর্বের মতো রাগী চোখ করে বলল,
-আমার ভাই ভাবীর বিষয় আলাদা তবে আপনি ভুলে যাবেন না আপনি আমার দুই চোখের দুশমন। আমাকে থাপ্পড় মেরেছেন!
-আমিও ভুলবো না তুমি আমার ঘাড়ে কী করেছো। সময় হোক সুদে আসলে প্রতিশোধ নিয়ে নেবো।
আরহামের শেষের কথাটা শুনতে পেলো না মাহানুর। বড় বড় পা ফেলে স্থান থেকে চলে যায়। আরহাম পিছন থেকে মাহানুরকে দেখতে থাকে। মাথার পিছনে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।

অতঃপর সকলের মতামত নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক হয় আজ থেকে বিশদিন পর পঁচিশ তারিখে। হামজা খান একটি রিং এগিয়ে দেয় আয়াসের দিকে। আজ আংটি পরিয়ে কথা পাকাপাকি করে রাখবে তাই। আয়াস আসার পর থেকে কেমন মূর্তি হয়ে বসে আছে। আড়চোখে বারে বারে সুনহেরার দিকে তাকাচ্ছে। সে যে প্রথম দেখাতেই সুনহেরার প্রেমে পরে গিয়েছে! তারপর সুনহেরার গুন্ডা মার্কা কথায় সে সম্পূর্ণ নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সুনহেরার মাঝে। কিন্তু সুনহেরার শেষের কথাটা তার পছন্দ হয়নি। এখন যেহেতু পছন্দ করে ফেলেছে তাই যেভাবেই হোক এই মেয়েকেই বিয়ে করবে সে। আর এই গুন্ডা মেয়েকে ভালো মেয়েতে পরিবর্তনও করবে বলে মনস্থির করলো। মাহানুর আয়াসকে অধমের মতো বসে থাকতে দেখে বলল,
-আয়াস আংটি পরিয়ে দে ভাবির হাতে!

আয়াস সুনহেরার দিকে তাকিয়েই আংটিটা হাতে নেয়। ছটপট পরিয়ে দেয় সে। সুনহেরা একবার রিং দেখে আয়াসের পানে তাকায় সে। কেমন নিষ্পাপ চাহনি মুখটি। সকলের অগোচরে সুনহেরা চোখ টিপ দেয়। আয়াস খানিকটা নড়েচড়ে বসে। সুনহেরার আচরণ দেখে তার এখন নিজেকে মেয়ে আর তাকে ছেলে মনে হচ্ছে।
মাহানুর ভুল করেও আর একবার আরহামের দিকে তাকালো না। সম্পূর্ণ ইগনোর করলো সে। অথচ বেচারা আরহাম না চাওয়ার সত্ত্বেও বার বার তার আঁখিজোড়া মাহানুরের দিকে যেয়েই থামছে।
_________________________

পরেরদিন সকালে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো মাহানুর আর অহনা। মাঝপথে তাঁদের দেখা হয় সিয়াম আর মুহিবের সাথে। চারজন কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় অহনার নজর পরে পাশে ফুলের দোকানে। কী সুন্দর সাদা গোলাপ গুলো তার দিকেই তাকিয়েই আছে। অহনা মাহানুরকে বলল,
-দোস্ত ফুলগুলো কত সুন্দর দেখ!
-দেখে আর কী লাভ দেওয়ার কেউই নাই!
অনেকটা আপসোস স্বরে বলল মাহানুর। সিয়াম মাহানুরের কথায় বলল,
-রাফিনকে বল কিনে দেবে।
মাহানুর কড়া চোখে তাকালো সিয়ামের দিকে। সিয়াম মাহানুরের চাহনি দেখে দৌড়ে পিছনে চলে যায়। ফুটফাতের ওপর হট্টগোল লাগিয়ে দেয় তারা তিনজন। মুহিব একটু দূরে দাঁড়িয়ে রাস্তার কুকুরদের সাথে দুষ্টামি করছে। মাহানুর একটু বকাঝকা দিয়ে সিয়ামের দিকে তেড়ে যেতেই সিয়াম মুহিবের কাছে চলে যায়। দুইজন ঘুরতে থাকে মুহিবের আগে পিছনে। বেচারা মুহিব বিরক্ত হয়ে বলল,
-ভাই তোদের জন্য আমার জী,,,,,,
কথা শেষ করতে পারলো না সে। সিয়াম তাকে ধাক্কা দেয়। রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছিলো তাই রাস্তা এখনও কাদা কাদা হয়ে আছে। সিয়ামের ধাক্কায় পিছলা খেয়ে জমিনে পরে মুহিব। ধপাস করে পরার আওয়াজে মাহানুর আর সিয়াম থেমে যায়। রাস্তার পাশ দিয়ে মানুষজন মুহিবের দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। মাহানুর ভোঁতা মুখে বলল,
-সিয়াইম্মার বাচ্চা তোর জন্যেই বেচারা মুহিব পরে গিয়েছে। যা উঠতে সাহায্য কর ওকে।
সিয়াম এগিয়ে যায়। মুহিব একা একাই উঠে বসে। কাদায় মাখোমাখো সে। মাহানুর ফিক করে হেসে ফেলে। সিয়ামও হাসতে থাকে। মাহানুর নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে সিয়ামকে দেয় মুহিবের মুখ পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্যে। মুহিব শুধু ফোঁস ফোঁস নিঃশাস ছাড়লো রাগে কিছু বলতে পারলো না।

অহনা ফুলের দোকানে এসেছে ফুল নিতে। ঐখানে যে তার বন্ধুরা কাদায় গোসল করছে তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আগে ফুল পরে এন্ট্রিটেনমেন্ট। সাদা গোলাপে সুবাস নিয়ে দোকানদারকে জিগ্যেস করে,
-মামা ফুলের দাম কত?
-একপিস বিশ টাকা মা।
-কতগুলো একসাথে করে বুকে বানিয়ে দেন তো চাচা আমার বউয়ের আবদার বলে কথা।
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকিত নয়নে পিছনে ফিরে তাকায় অহনা। পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে রিদ। মুখে তার বড় একটি হাসি। অহনা বিরক্তে চ শব্দ করে উঠলো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-আপনি কী আমার পিছা করছেন? যেখানে যাই সেখানেই কেনো চলে আসেন?
-তোমার পিছা করবো না তো কার পিছা করবো জানেমান!
হিরোর মতো ভাব নিয়ে বলল রিদ। অহনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-শুরু গিয়েছে ওভারএক্টিং! ভাই আগের জনমে কী আপনি মুভিতে কাজ করেছিলেন?
-ছি ছি! সিনেমা করা ছেলেরা ভালো হয় না আর আমি তো ভদ্র একটা ছেলে।
-গোড়ার আন্ডা! উফফ আপনার মুখ দেখলেই আমার রাগ হয়!
-কিন্তু আমার তো তোমার মুখ দেখলে ভালোবাসা উতলে পরে।
-ডিসগাস্টিং!
অহনা টাইট করে ব্যাগ ধরে চলে যেতে নেয়। রিদ ফুল নিয়ে অহনার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। অহনা আশেপাশে দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,
-আশেপাশের মানুষজন তাকিয়ে আছে প্লিস সামনে থেকে সরে যান।
-জানো জানো কাল আব্বাকে বললাম বিয়েটা করিয়ে দিতে আর কতকাল ভা’র্জি’ন থাকবো। আমারও তো কত স্বপ্ন আছে নিজের কিউট কিউট ছেলেমেয়েদের নিয়ে।
অহনার কান গরম হয়ে এলো রিদের কথা শুনে। ফর্সা মুখশ্রী মৃদু রক্তিম হয়ে উঠলো। কটমটে বলল,
-ধেৎ আপনার মতো মানুষের মুখে লাগাই আমার ভুল!
-মুখে লাগলা কখন?
অহনা এবার সত্যি চলে যেতে নিলে রিদ দ্রুত তার হাতে ফুল ধরিয়ে দেয়। অহনা আর ফেলে দেয় না ফুল। কোনোদিক না তাকিয়ে গটগট পায়ে চলে যায়। রিদের আড়াল হতেই ফুলে নাক ডুবিয়ে আপন মনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে সে।

>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here