রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ২২

0
824

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

২২
রাস্তার পাশ ঘেঁষে ছোটখাটো একটা কফিশপ। রিদ সেই কফিশপে ভিতরে না বসে বাহিরের একটা টেবিলে বসল। আসিফ তার পাশেই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। একবার গুরুগম্ভীর রিদের দিকে তাকাল তো অন্যবার কাচুমাচু করে বসে থাকা মায়ার দিকে তাকাচ্ছে আড়েআড়ে। আসলে পরিস্থিতিটায় এমন যে ফ্যাসাদে পরে আসিফ সরাসরি কারও মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। পাঁচে যদি রিদ রেগে যায় বা মায়া আসিফের সরকারি তাকানোতে বিব্রতবোধ করে সেজন্য আসিফ সরাসরি মায়ার দিকে তাকাল না। ছোট টেবিলের চারটে চেয়ারে মধ্যে রিদের মুখোমুখি বসে মায়া। শ্রেয়া, নাদিয়া দুজনই রিদের দু’পাশের চেয়ার দুটোতে বসে। মায়া ভয়, লজ্জা, জড়তায় চুপ থাকলেও শ্রেয়া, নাদিয়া দুজনে মিলে অসংখ্য বার রিদকে বলে ফেলেছে মায়ার নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে সন্ধান দেওয়ার বিষয়টি। রিদ ভিতরকার বিস্ফোরণ ভাব চেপে শ্রেয়ার মুখে সবটাই শুনলো গম্ভীর মুখে। আসলে এই মূহুর্তে রিদের কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত সেটা তক্ষুনি বুঝল না সে। রিদের মতোন একজন বিচক্ষণ মানুষ কেবল বেকুব বনে বসে রইল। মূলত রিদের কালকম্বিও ধারণাতে ছিল না তাঁর খোঁজে, তার বউ, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইতে চলে আসবে। এই গোটা বিষয়টা রিদকে বেশ বড়সড় আকারের চমকিয়েছে। রিদতো তীব্র শকটে এক মূহুর্তের জন্য রিয়াকশন বিহীন কেমন বেকুব বনে চুপ ছিল। আসলে অতিরিক্ত শকট হলে রিদ তৎক্ষনাৎ মুখ খুলে কথা বলতে পারে না। কেমন চুপ করে যায়। যেমনটা হয়েছিল প্রথম যেদিন রিদ আসিফের মুখে মায়া পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেয়েছিল, সেদিন সাথে শুনেছিল মায়া এক্সিডেন্ট করে রিদকে খুঁজতে গিয়ে মারা গিয়েছিল? তখন রিদ এক মূহুর্তে জন্য ঠিক আজকের মতোন করেই চুপ করে গিয়েছিল। মূলত রিদের গলা চেপে গিয়েছিল অতিরিক্ত শকটে। তবে সেদিন বউয়ের মৃত্যুর সংবাদে রিদ অতিরিক্ত টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করলেও আজকে ব্যাপারটা হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ তার টেনশন হচ্ছে না বরং বউয়ের চোখে মুখে তাকে খোঁজে পাওয়ার জন্য যে বেকুলতার ছটফট দেখছে সেটা রিদকে পৈশাচিক শান্তি দিচ্ছে। রিদ একটু সময় নিয় সুস্হিরে ফিরতে চাইল। হলোও তাই। অনেকটা সময় নিয়ে রিদ গম্ভীর মুখে বসে থেকে শুধু শ্রেয়ার কথায় শুনলো। কিন্তু অনড় দৃষ্টি তীর শুরু থেকেই তাক করা ছিল মায়ার উপর। মূলত রিদ মায়ার ভয়ার্ত কাচুমাচু মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে শুরু থেকে সবটা শুনলো শ্রেয়ার মুখে। পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হতে রিদ কেমন গা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসল চেয়ারে। বউয়ের টানে রাতে এসেছিল সে চট্টগ্রামে। সকালের দিকে ঘুমিয়ে ছিল বলে বউয়ের সাথে দেখা করতে পারেনি। এখন কাটকাট দুপুর। মায়ার পরীক্ষা শেষ। তার ভাবনা ছিল এখন মায়ার সাথে দেখা করার কিন্তু তার আগেই মায়া আগ বাড়িয়ে দেখা করতে আসে রিদের সাথে তাও নিখোঁজ স্বামীর সন্ধানে। গোটা বিষয়টায় অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল রিদের জন্য। তাছাড়া তাদের দুজনের হুট করে বিয়েটা নিয়েও রিদের মনে কিছু প্রশ্ন ছিল। কিন্তু রিদ কখনো সরাসরি প্রশ্ন গুলো মায়াকে করতে পারছিল না, কারণ রিদের পরিচয়টা মায়ার কাছে ছিল না বলে। কিন্তু আজ মুখ্যম সুযোগ বুঝেই রিদ মায়াকে মনের জমানো প্রশ্ন গুলো করতে চায়। জানতে চায় কেন সেদিন রাতে রিদকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে সে পালিয়ে গেল। কেন সেদিন রাতের পর মায়া আর রিদের খোঁজ করেনি? কেন রিদের পরিচয়টা মায়া এখনো জানে না? না জেনে বা কিভাবে মায়া অপরিচিত রিদকে বিয়েটা করে নিল সেদিন? তাছাড়া সেদিন রাতে রিদ অসুস্থ থাকলেও মায়া সুস্থ ছিল তাহলে সেদিন রাতে মায়া সরাসরি রিদকে দেখার পরও এখন কেন চিনতে পারছে না তাঁকে? কেন? যদি সেদিন রাতে স্বামীকে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ছিল তাহলে এখন কেন হুলুস্থুল পাকিয়ে
এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে রিদের তথ্য জন্য। রিদকে তো প্রথম দেখায় চিনে যাওয়ার কথা? যদিও রিদের সেদিন রাতে হুশ ছিল না তারপরও সে সেদিন রাতে মায়াকে যতোটুকু দেখেছিল পরে তাদের দুজনের প্রথম দেখায় মায়াকে পুরোপুরি চিনতে না পারলেও সন্দেহ তালিকায় রেখেছিল মায়াকে এই ভেবে যে, এই মেয়েটায় হবে হয়তো সেদিন রাতের সেই মেয়েটি যার সাথে তার অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটা হয়েছিল। রিদ সন্দেহে বশে আজ এই পযন্ত আসল। জানতে পারলো তার ধারণায় ঠিক ছিল। অথচ তার বউ সরাসরি তাঁকে দেখেও চিনতে পারছে না এই বিষয়টিকে কেমন অদ্ভুত ঠেকল রিদের কাছে। সেজন্য মূলত রিদ সুযোগ বুঝে এখন সকল প্রশ্ন গুলো মায়াকে করতে চায়। কিন্তু তারপরও মায়াকে তাঁর আসল পরিচয় আপাতত দিবে না সে, অন্তত বউ তার যতদিন না পযন্ত নিজ থেকে রিদকে খুঁজে পাবে ততদিন। কপাল কুঁচকে রিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্নটা করে বলল…

‘ কি এমন পরিস্থিতি ছিল যে স্বামীর মুখ দর্শন না করেই সোজা বিয়ে করে ফেললেন।

রিদের স্বাভাবিক কন্ঠের প্রশ্নে চট করে মুখ তুলে তাকাল মায়া। সবগুলো উৎসুক দৃষ্টি মায়ার দিকেই তাক করা। সবাই প্রশ্নটার উত্তর চায় এমন। মায়া জড়তায় ইতস্তত বোধ করলো উত্তরটা দিতে। রিদ তখনো মায়ার দিকে প্রহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে। শ্রেয়া মায়ার ইতস্ততা বুঝে রিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়ে বলতে চাইল….

‘ আসলে ভাই ওদের….

টেবিলে উপরের রিদের হাতটা ইশারায় শ্রেয়াকে দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে রিদ শক্ত গলায় ধমকে বলল…

‘ তুই উত্তর দিচ্ছিস কেন? প্রশ্নটা কি তোকে করেছি? তুই ছিলি সেদিন রাতে ওর সাথে?

রিদের শক্ত গলায় দমে যায় শ্রেয়া। আগ বাড়িয়ে আর মুখ খুললো না সে। রিদ যে শক্ত ধাঁচের মানুষ দেখা গেল শ্রেয়া যদি আবার আগ বাড়িয়ে মায়ার হয়ে উত্তর দিতে চাই তাহলে থাপ্পড় একটা আজ কপালে জুটবে নিশ্চিত। রিদের ধমকে শ্রেয়া চুপ করে যেতেই মায়া খানিকটা ভয়ার্ত হলো। কাচুমাচু করে রিনরিনিয়ে রিদের প্রশ্নের উত্তরে বলল…

‘ আসলে সেদিন রাতে ঐ লোকটাকে আমার ঐভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। নিজের পরিবারের লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আধার রাতে আমি পথ হারিয়ে দিশেহারা ছিলাম। লোকটাও এক্সিডেন্ট করে সেদিন রাস্তায় পরে ছিল। কপাল ফেটে উনার মুখ ঢেকে ছিল রক্তে, রাতে অন্ধকারে ঝড়ঝাপটায় যতটুকু দেখেছিলাম তাকে সেটা আমার এখন আর অতোটা মনে নেই। তাছাড়া পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমার ভাবনাতেও ছিল না লোকটাকে মনোযোগ দিয়ে দেখব বলে। আমি ছোট মানুষ ছিলাম। তারপর পথ হারিয়ে একটা এক্সিডেন্টের মানুষকে নিয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম। ঐ লোকটার হয়তো সুগারের সমস্যা ছিল সেজন্য ঠিকঠাক দাঁড়াতে পযন্ত পারছিলনা। ঐ পরিস্থিতিতে লোকটার মুখ আমি কতটুকু দেখেছিলাম সেটা এই মূহুর্তে আমার মনে নেই। বিগত দুই বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের। অনেকটা সময় চলে যাওয়ায় ঐ লোকটার মুখ আমি ভুলে গেছি। এখন আমার আর মনে নেই। তবে যতোটা মনে আছে, লোকটা বেশ লম্বাটে আর বলিষ্ঠবান টাইপের ছিল। তাঁকে সামলাতে আমার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল।

মায়া কথা গুলো শেষ করতে রিদের দ্বিতীয় প্রশ্নটা করল….

‘ ফেইস মনে নেই। তাহলে পরিচয়টা কেন নিলেন না?

‘ বললাম তো পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমার অতো কিছু মাথায় আসেনি। মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়তাম। বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু করার মতো পরিস্থিততে ছিলাম না। আমি ভিষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। একটা অপরিচিত অসুস্থ মানুষকে নিয়ে আবারও কতো গুলো অপরিচিত লোকদের মাঝে পরলাম। তারপর আবার সেই অপরিচিত মানুষ গুলো আমাদের সাহায্যে আগে, প্রথমে আমার চরিত্রে দিকে আঙ্গুল তুলে কেমন হুমকি ধামকি দিয়ে একপ্রকার ভয় দেখিয়ে আমাদের বিয়েটা দিল। এতে আমি ভিষণ আতঙ্কিত হয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাছাড়া আমার সাথে লোকটার মানে যার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিল তিনিও তেমন সেন্স ছিল না। মানে উনি অর্ধ জ্ঞানহারা ছিল। সেজন্য সবাই সহজে আমাকে দোষারোপ করে দ্বায় দিচ্ছিল। আমি তাদের বলার সুযোগ পায়নি, যে অসুস্থ লোকটাকে আমি চিনি না পযন্ত। সবাই একই ভাবে আমার চরিত্রের দিকে আঙুল চলছিল সহজভাবে কারণ অসুস্থ লোকটা আমার কাঁধ জড়িয়ে তার শরীর ভর আমার উপর দিয়ে রেখেছিল তাই। কাজি সাহেব আমাদের থানা পুলিশের দিবে এমনকি তখন বিয়েটা না করলে আমাকে সকালে সমাজের লোকদের সামনে অপদস্ত করবে এমনটা বলেছিল। এমন বাজে পরিস্থিতিতে আমি কখনো পরিনি। এসব পরিস্থিতিতে পরলে মানুষকে কি করতে হয় বা কিভাবে সামাল দেওয়া লাগে সেটাও জানতাম না। শুধু মনে মনে দোয়া করছিলাম কেউ আমার হয়ে আসুক আর আমাকে ঐ খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাক। আর নয়তো অসুস্থ লোকটা আমার হয়ে কিছু বলুন। কিন্তু সেদিনের মতোন আমার কোনো দোয়াই কবুল হয়নি। তাই জানের ভয়ে শুধু চুপ থেকে গেলাম আর যে যেটা বলছিল সেটা করছিলাম। তাছাড়া আমাকে বিয়ে করতে অসুস্থ লোকটাও কোনো আপত্তি জানাচ্ছিল না। সে অজ্ঞান না হলেও কিছুটা হুশে ছিল। আমি ভেবেছিলাম লোকটা হয়তো কিছু বলবে বিয়ের আগ মূহুর্তে তাদের কিন্তু তিনি কিছুই বলেনি। সেজন্য আমারও কিছু করার ছিল না। হাফেজ সাহেবের পরিবার ভাবছিল আমি আমার স্বামীর গার্লফ্রেন্ড হবো। তাকে নিয়ে রাতে কোথাও ধরা খেয়ে হাফেজ সাহেবের বাড়িতে আশ্রয় নিতে চাইছিলাম। সেজন্য আমাদের বিয়ে পরিয়ে দেয়। আর আমি চাপা রাগে, ভয়ে হঠাৎ স্বামী হওয়ায় লোকটার পরিচয় পযন্ত জানতে চাইনি কারও কাছে। এমনকি হাফেজ সাহেবের পরিবারের কাছেও চায়নি। বিয়ের সময় অতিরিক্ত কান্নাকাটি আর ভয়ে স্বামী নামটা কাজি সাহেবের মুখে শুনতে মনে নেই। কিন্তু কাবিননামায় ঠিকই দেখেছিলাম স্বামী নাম। কিন্তু ইনিসিয়াল সিগনেচার হওয়ায় ঘুরপ্যাঁচের নামটা আমি বুঝতে পারেনি কি ছিল। সেজন্য তার নামটাও আমার জানা ছিল না।

মায়ার দীর্ঘ কথা অতলে রিদের তৃতীয় প্রশ্নটা আসল সাথে সাথেই…

‘ তাহলে আপনার স্বামীর কাছ থেকে কেন জানতে চাইলেন না তার পরিচয় সম্পর্কে?

‘ ঐ লোকটাকে সাহায্য করতে যেয়ে আমি এতো বড় বিপদে পড়লাম। তারপর সে আমাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বিয়ে করে নিল বলে রাগে আর ভয়ে স্বামীর পাশ ঘেঁষেনি সেরাতে। দূরে দূরে ছিলাম। সেরাতে হাফেজ সাহেবের বউয়ের ফোন থেকে আরিফ ভাইয়াকে কল করে শেষ রাতের দিকে আমি পালিয়ে এসেছিলাম সেখান থেকে যেন লোকটা সকালে হুশে ফিরে আমাকে আর খোঁজে না পায় সেজন্য।

চতুর্থ প্রশ্ন করে বলল রিদ…
‘তখন স্বামী থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলে এখন কেন তাঁকে খোঁজ করতে চাইছেন?

‘ তখন আমি ভিষণ ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছিলাম। আমার চারপাশে সবাই অপরিচিত ছিল বলে আমার মনে হচ্ছিল সেখানে আমি সেইফ না। নিজের জীবনের তাগিদে পালিয়ে গেছিলাম। কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে লোকটাকে আমার খোঁজা দরকার সেজন্য বেশ কয়েকবার নরসিংদী গিয়ে হাফেজ সাহেবের বাড়ির লোকেশন অনেক কষ্টে খোঁজে বের করি। কিন্তু এতোকিছু পরও আজ পযন্ত লোকটার সম্পর্কে তেমন তথ্য বের করতে পারলাম না। শুধু নাম আর নাম্বারটা ছাড়া। হাফেজ সাহেব কিছুতেই আমাকে ঐ লোকটার নামটা বলেননি। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম উনাকে তারপরও তিনি বলেনি আমাকে। শুধু বলেছে কোনো এক প্রভাবশালী লোক নাকি আমার স্বামী। আমার মনে হচ্ছে ঐ লোকটা কোনো গুন্ডা বা খারাপ টাইপের মানুষ হবেন সেজন্য হাফেজ সাহেব উনার নামটা বলতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু আমি হাফেজ সাহেবকে এটা বুঝাতে অক্ষম হলাম যে, আসলে আমার স্বামী যদি খারাপও হয়, তারপরও আমার তার সন্ধান চায়। চাই মানে চাই। স্বামী নামক লোকটা খারাপ হতে পারে এমনটা জেনে-বুঝেই আমি তাঁকে খুঁজছি এতোদিন ধরে। এবার আপনার সাধ্যে থাকলে আমাকে একটু সাহায্য করে, ঐ লোকটার তথ্য যোগাড় করে দিতে পারবেন? বেশি কিছু জানতে চাই না শুধু ঐলোকটা কে সেটা বললেও চলবে।

‘ স্বামীর সন্ধান নিয়ে কি করবেন? শুনলাম আপনার স্বামী নাকি আরও দুটো বিয়ে করেছে। কথা কি সত্য? তার তৃতীয় বউ হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি?

রিদের সহজ কথাটা মায়া সহজ ভাবে নিতে পারলো না। গুমরে ভিতরকার কষ্ট গুলো যেন মায়ার গলা চেপে ধরল। মায়ার ভিষণ কষ্টে কান্না পেল। কিন্তু রিদের সামনে কেঁদে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইল না। রিদ ওর আত্মীয় হয় এখন। তারপর আবার মায়ার সাথে রিদের বনাবনিও হয়না কখনো। এমন একটা লোককের সামনে কেঁদে মায়া নিজের ভিতরকার অবস্থা জানাতে চাই না। মায়ার যতটুকু সম্ভব রিদের সামনে নিজের ভিতরকার পরিস্থিতি না জানিয়ে উপর থেকে শুধু সাহায্য চাইবে। মায়ার স্বামীকে ঘিরে ওর মনের অনূভুতি গুলো প্রকাশ করবে না রিদকে। যথা সম্ভব মায়ার স্বামীকে ঘিরে ভালোবাসাটা রিদকে না বলে এরিয়ে যাবে। কারণ মায়ার ভালোবাসাটা শুধু মায়ার অবধি থাকবে। সেটা আর যায় হোক না কেন মায়া অন্তত কোনো বাহিরের লোকের সাথে প্রকাশ করার করতে চায় না।

‘ লোকটা যদি বিয়ে করে তো করুক। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার স্বামী চাই না। আর না তার বউ হতে চায়। সংসার তো দূরে থাক। কিন্তু তারপরও লোকটাকে আমার চিনা লাগবে। অন্তত ডিভোর্সের জন্য হলেও আমার লোকটাকে লাগবে। ডিভোর্স না হলে আমি অন্য কোথায় বিয়ে বসতে পারবো না। আমাদের ধর্মে নেই বিবাহিত মেয়েদের স্বামী থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করা। এখন আমার ডিভোর্সের জন্য হলেও ঐ লোকটাকে প্রয়োজন পরবে। তাছাড়া আমিতো আর লোকটার জন্য সারাজীবন বসে থাকতে পারবো না। আমারও একটা জীবন আছে। কাউকে ভালোবাসার রাইট আমারও আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের যে কখনো বিয়েটা হয়েছিল সেটাও ঐ লোকটা প্রমাণ করতে পারবে না কখনো আমি জানি। কারণ বিগত তিনমাসের ধরে লোকটাকে খুঁজে খুঁজেও তার তথ্য বের করতে আমি হিমশিম খাচ্ছি সেখানে উনার আমাকে খোঁজা আরও মুশকিল হয়ে যাবে। আমাদের বিয়েটা হয়েছিল এটা প্রমাণ করার জন্য কাজী থেকে শুরু করে কাবিননামা পযন্ত নেই আমাদের। সবকিছু আগুন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আরও বছর খানিক আগেই। সেই সুবাদে আমাকে ঐলোকটা কখনো চাইলেও নিজের স্ত্রী বলে প্রমাণ করতে পারবে না। আর প্রমাণ ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না যে কখনো আমাদের বিয়েটা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে আমরা বিবাহিত হয়েও সমাজে চোখে অবিবাহিত বলে প্রথমে ঘোষিত হবো। সমাজ হোক বা আইন বিয়ের হয়েছিল এটার শক্তপোক্ত প্রমাণ না থাকলে এমনই বিয়েটা বাতিল বলে ঘোষিত হবে। সেক্ষেত্রে বলা যায় আমি কোনো ঝামেলা ছাড়ায় এই সম্পর্কে থেকে সহজে বের হতে পারবো। বিয়েটাকেও অস্বীকার করতে পারবো। কিন্তু সবকিছু শেষ করার আগে আমি অন্তত একটাবার ঐ লোকটার খোঁজ পেতে চায় তার অগোচরে। তাঁর সামনে যাব না। কিন্তু জানতে চায় সে কে। তারপর না-হয় আরিফ ভাইকে বলে সবকিছু মিটমাট করে নিবো। আমাদের ডিভোর্সের বিষয়টাও আরিফ ভাই-ই দেখবে। কিন্তু তা….

মায়ার দীর্ঘ কথা শেষ হবার আগেই গম্ভীর গলায় আওড়াজ তুলল রিদ। চাপা রাগে দাঁত পিষে বলল…

‘ আউট!

হুট করে রিদের চাপা ধমকে উৎসুক জনতার মনোযোগ ভাঙ্গল তক্ষুনি। সবাই থমথমে মুখে মায়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাইল রিদের দিকে। রিদের হঠাৎ শক্ত হয়ে উঠা মুখটা, মায়া, নাদিয়া, শ্রেয়া না বুঝলেও আসিফ বেশ ঠাহর করতে পারল। মায়া মুখে ডিভোর্সের কথাটা হয়তো রিদের ভালো লাগেনি। না লাগার কথায়। কতো কিছু করলো বউকে খুঁজতে রিদ। এমন কি বউ টানে হুটহাট পাগলামি করে সকল কাজ ছেড়েছুঁড়ে চট্টগ্রামে চলে আসল। অথচ আজ রিদের জরুরি ভিত্তিতে নিজের ফ্যাক্টরীর প্রজেক্টে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। সব ছেড়েছুড়ে শুধু মায়াকে এক পলক দেখতে চলে আসল। আজ রাতেই তাদের আবার ঢাকা ব্যাক করার কথা ছিল, অথচ সেই বউ এখন বলছে রিদকে ডিভোর্স দিবে। কৌশলে কিভাবে এই বিয়েটা অস্বীকার করে এর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে সেই বুদ্ধিটাও শেয়ার করছে রিদকে। এতো সব শুনলে কারও মাথা ঠিক থাকবে? আসিফের নিজের মাথায় তো ঘুরছে মায়ার কৌশল শুনে। এবার রিদ ভাই রাগে বশে মায়াকে থাপ্পড় না মারলেই হয়। পাবলিক প্লেসে আছে তাঁরা! তারপর আবার দলের ছেলেরাও আশেপাশে দাঁড়িয়ে। বদনাম রটে যাবে মূহুর্তে রিদ ও রিদের বাবা নাহিদ খানের নামে। জেলা মন্ত্রীর ছেলে বলে কথা। বদলাম এমনই রটে যাবে রকেটের গতিতে। মন্ত্রীর ছেলে রিদ খান এক কলেজের মেয়েকে রাস্তায় থাপ্পড় মেরেছে। এবার কেউ জানতে চাইবে না তাদের মধ্যকার স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা। সবাই শুধু জানবে আর্দশ নাহিদ খানের ছেলে রিদ খান এক নারীর গায়ের হাত তুলেছে। আসিফ ভয়ে কাচুমাচু করে রিদের হাতের দিকে তাকাল। টেবিলে উপর রাখা হাতটার শক্ত মুঠোয় একটা কলম চেপে ধরা। হয়তো নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চেয়ে সেই কলমটির উপর ছুট যাচ্ছে। বৃদ্ধা আঙ্গুলে অনবরত কলমের অটোক্যাপ চেপে চেপে শব্দ করে নিপ ভিতর বাহির করে। মায়া চট করে বুঝল না হঠাৎ রিদের মনোভাব পরিবর্তনের কারণটা। কেমন অবুঝ গলায় শুধালো।

‘ জ্বি?

রিদ ফের একই ভঙ্গিতে দাঁত পিষল…

‘ আউট।

মায়া থমথমে খেয়ে তখনো বসে রইল। রিদের শক্ত হয়ে উঠা মুখটার দিকে তাকাল। চোখ গুলো কেমন লালচে দেখাচ্ছে। হয়তো রাগে। কিন্তু কেন? হঠাৎ রাগের কি হলো এমন? মায়া বুঝল না। রিদ তখনো অনবরত কলমের ক্যাপ চেপে শব্দ করছিল। মায়া সেদিকে এক পলক তাকাল। তারপর আবারও চোখ তুলে রিদের দিকে তাকাতে চোখাচোখি হলো রিদের ক্রোধিত চোখ দুটোর সাথে। যেগুলো শুরু থেকেই মায়ার দিকে তাক করা ছিল। মায়া অপমানিত বোধ করে উঠে দাঁড়াল। ওহ জানতো এই রিদ খান মায়াকে আবারও অপমানিত করবে। শুধু শুধু শ্রেয়ার কথায় মজে মায়ার এখানে সাহায্য চাইতে আসাটায় ভুল হয়েছে। এই ঘাড়ত্যাড়া লোক রিদ খানের মুড কখন কোন রুপ নেই বলা মুশকিল। এই ভালো তো এই সাপের মতোন ফুশ করে উঠে। অসভ্য লোক। ক্ষমতা দাপটে অহংকারী হয়ে গেছে। মানুষকে অপমান করতে আর গায়ে বাজে না। মায়ার এখানে আসাটায় ঠিক হয়নি। মায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে খপ করে শ্রেয়ার হাত চেপে টেনে তুলতে তুলতে বলল…

‘ আমাদের এখানে আসাটায় ভুল হয়েছে শ্রেয়া। এই লোকের শরীর শুধু ক্ষমতার দাপটের অহংকার ভরা। এই লোকের সাহায্য আমার লাগবে না। আমার সমস্যা আমি নিজেই সমাধান করবো। চল এখান থেকে।

বলতে বলতে মায়া শ্রেয়াকে টেনে নিয়ে গেল নিজের সাথে। নাদিয়াও ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে ওদের সঙ্গে চলল। রিদ তখনো মায়ার যাওয়ার দিকে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে তাকিয়ে রইল। একই ভাবে হাতে কলমটাও চেপে যাচ্ছে। আসিফ সেদিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করল। একটু সময় নিয়ে ভয়ার্ত গলায় ডাকল…

‘ ভাই ভাবিকে কি আবার ডাকব??

রিদ দাঁতে দাঁত পিষে রাগে রি রি করে বলল…

‘ তোর ভাবিকে না উকিলকে ডাক আসিফ। এই বেয়াদব মহিলাকে সোজা করা দরকার। কতো বড় সাহস আমাকে বিচ্ছেদের কৌশল শেখায়।

‘ জ্বি ভাই।

আসিফের সম্মতিতে রিদ খেক করে উঠে….

‘ এই জ্বি কি হ্যাঁ?

‘ না ভাই আপনি যা বলছেন সেজন্য জ্বি আরকি।

‘ কি বলছি তোরে?

‘ উকিলের কথা আরকি।

‘ তো এখনো আমার মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার রুপ বের হয়ছে?

আসিফ তাড়াহুড়ো বলল…

‘ না ভাই, এইতো যাচ্ছি।

রিদের মেজাজ যেন আজ হুট করেই খিটখিটে হয়ে গেল। আসিফকে আবারও থামিয়ে বলল….

‘ কই যাবি?

‘ ভাই! উকিল ডাকতে।

‘ তোরে কইছি শুধু উকিল ডাকতে? অর্ধেক কথা শুনে যাস কেন?

আসিফ এবার সত্যি সত্যি ফ্যাসাদে পরে কাচুমাচু করে বলল…

‘ সরি ভাই। ভুল হয়ে গেছে।

রিদ পুনরায় খিটখিটে মেজাজে বলল…

‘ যা সামনে থেকে সর। বেয়াদব মহিলা মাথাটা গরম করে গেছে। আজ আর ঢাকা ফিরবো না। উকিল আর কাজি দু’টো যেন কাল বিকালের মধ্যে রেডি থাকে। এই ধান্ধাবাজ মহিলার প্রমাণ দরকার। কতো বড় সাহস আমাকে অস্বীকার করবে বলে। কাল প্রমাণ নিয়েই ঢাকা ফিরব এর আগে নয়।

‘ জ্বি ভাই।

রিদ বিরক্তির চোখ তুলে বলে…

‘ এই যাবি তুই এখান থেকে?

‘ জ্বি ভাই!

#চলিত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here