রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
১৪
পরপর তিনটা থাপ্পড়ে গালের মাড়িসহ নড়ে উঠল মায়ার। ব্যথা কাতরে উঠে সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষনাৎ কেঁদে উঠল হু হু শব্দে। কে বা কারা মায়াকে এমন নির্দয় ভাবে মারলো তাও জানে না মায়া। লোকটার পরপর থাপ্পড়ের মায়া ঠিকঠাক দেখার সুযোগটাই পায়নি মানুষটাকে। তবে যেটা মায়ার কানে এসেছে সেটা হলো কারও রাগান্বিত ফুস ফুস নিশ্বাসে শব্দ। ক্রন্দনরত মায়া দু’হাতে দুগাল চেপে ধরেই হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে ভেজা দৃষ্টি তুলে তাকাতে চাইল সামনের মানুষটার দিকে। তাকালও! কিন্তু তৎক্ষনাৎ মায়ার সেই ভেজা দৃষ্টিতে ভিড়লো পরিচিত রিদের রাগান্বিত হিংস্র মুখটা। রিদকে দেখেই মায়া কান্নাটা আরও বাড়লো ঘোর অপমানে। লজ্জিত মায়া মাথা নত হয়ে আসতেই রিদ দক্ষ হাত চালান করলো মায়ার বাহু টেনে কাছে টানায়। মূহুর্তে মাঝেই মায়ার বাহু হেঁচকা টানে মুখোমুখি করে, দাঁতে দাঁত পিষলো রিদ। তপ্ত গলায় শুধালো মায়াকে…
‘ মিথ্যাবাদী নারী! একটার পর একটা মিথ্যা, কন্টিনিউসলি এতো মিথ্যা আসে কোত্থেকে তোর? জবান খুললেই মিথ্যা বলিস। এতো মিথ্যা বলতে বলতে ক্লান্ত হুসনা? নাকি শরীরের রক্ত মাংস পযন্ত মিথ্যা দিয়ে গড়ে ফেলেছিস বেয়াদব।
রিদের কথায় ঘোর অপমান বোধ করলো মায়া। প্রথমমত সে কিছুই করেনি। আর না কিছু বুঝতে পারছে কিসের জন্য এতোগুলা থাপ্পড় খেল সে? কি থেকে কি হলো তাও বুঝতে পারছে না। সকাল বেলা স্টেশন থেকে মামার সাথে বাসায় আসলো। রিকশা থেকে নেমে মালপত্র নিয়ে জুইও মায়ার মামা বাসার ভিতরে গেল। এখন মায়াও তাদের পিছনে বাসায় ভিতরে যেতো কিন্তু হঠাৎ ঝড়ের মতোন রিদ কোথায় থেকে এসে, কেন মায়াকে এতোগুলো থাপ্পড় মারলো তাও জানে না মায়া। আর না রিদের এখনকার কথা গুলোর মানে বুঝতে পারছে সে। মায়া যতটুকু মনে পরে সে রিদের সাথে বিগত মাস ধরে দেখা-সাক্ষাৎ বা কোনো রকম কথা হয়নি তাহলে মায়া মিথ্যাটা বললো কখন রিদকে তাও মনে পরছে না। ক্রন্দনরত মায়া ঘোর অপমানে চেতে উঠল, মোচড়ামুচড়ি করে রিদের হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিতে চাইল। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে রিদের উদ্দেশ্য জোড় গলায় বলল…
‘ ছাড়ুন আমাকে অসভ্য নেতা! আমি যতো খুশি ততো মিথ্যা বললো তাতে আপনার কি? আপনি শুনতে আসেন কেন? আপনি কে আমাকে মারার? নেতার ছেলে হয়েছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন? যা খুশি তাই করবেন আর আমরা কিছু বলতে পারবো না? এমন বালের এলাকায় না থাকলে কি হবে আমার? আমি আবার চলে যা…
মায়া আতঙ্কের নেয় উহুম! উহুম! শব্দ করে উঠল তৎক্ষনাৎ। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আসলো মূহুর্তেই। ছটফট করার নেয় দুহাতে আঁকড়ে ধরলো রিদের একহাত গাল থেকে ছাড়াতে চেয়ে। কিন্তু মায়ার ছটফটে রিদের হাত আরও শক্ত হয়ে আসলো মায়ার গালের মাড়ি চেপে ধরায়। মায়া গোঙ্গাল। ছটফট করার নেয় রিদের হাত থেকে গাল ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদ আরও তেতে উঠল। রাগে রি রি করে শুধালো…
‘ আমি কে তাই না? আমি তোর জম! তোকে মারার জন্য আমার বাপের ক্ষমতার দরকার নাই। সোজা তোর ঘরে গিয়ে মেরে আসবো। তোর কি মনে হয়? তুই পালিয়ে বাঁচবি? এই বালের এলাকা ছেড়ে কই পালাবি তুই? কোন দেশে শুনি? তুই তো এই দুনিয়া ছাড়লেও আমি তোকে রেখায় দিব না। পরকালেও আমার দাবি থাকবে প্রথমে। তোর তো সব পথই বন্ধ!
ছটফট করার নেয় মায়া হঠাৎই রিদের হাতে কামড়ে ধরলে রিদ আহ! শব্দে তৎক্ষনাৎ হাত ঝাড়া দিয়ে মায়া গাল ছেড়ে দিতে মায়া চেতন গলায় শুধালো…
‘ আমি মরলেও যখন রেখায় পাব না তখন আপনি মরে যান আর আমাকে রেখায় দেন। তারপরও রেখান দেন। আমি আর পারছি না। আল্লাহ ওয়াস্তে আমাকে রোজ রোজ অপমান করা ছাড়ুন প্লিজ।
মায়ার কথায় রিদ পুনরায় মায়ার বাহু শক্ত হাতে কাছে টেনে রাগে কটমট করে বললো…
‘ তুই তো প্রথম থেকেই চাইতি আমি যেন মরে যায়। সেজন্য আহত অবস্থায় সেদিন রাতে একা ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলিস। আজও তোর জন্য মরতে মরতে বাঁচলাম। তোর কি মনে হয় আমি মরলে তোকে দুনিয়াতে একা রেখে যাব তোর নাগরের সাথেনসংসার করতে? আমাকে তোর দয়ালু মনে হয়? আমি মরলেও তোর সলিড বিহীত করে মরতাম যাতে দ্বিতীয় কোনো পুরুষের সঙ্গ তুই নিতে না পারিস। আরেকটা কথা! এতদিন শুধু সন্দেহ ছিল, এখন শিওর হয়ে বলছি, আমার সাথে ত্যাড়ামি করবি তো সোজা প্রাণে মরবি। মিথ্যা বলবি না। পালানোর চেষ্টা তো মোটেও করবি না। কারণ লাভ নেই। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্ম কুন্ডলি পযন্ত আছে আমার কাছে। তাই বারবার পালানোর সুযোগ পাবি না।
রিদের সব কথা গুলোই কেমন মাথা উপর দিয়ে গেল মায়ার। সবকিছু ধোঁয়াশার নেয় ঠেকল। মায়ার যতটুকু মাথায় আটলো সেটা হলো রিদ সাংঘাতিক বাজে আর অসভ্য প্রকৃতির মানুষ। রিদের কাউকে অপমান করতে কারণ লাগে না। ক্ষমতা দাপটে এমনি চড়িয়ে বেড়ায়। মানুষকে মানুষ মনে করে না যেমনটা মায়াকে মনে করে না সে। মায়াকে অকারণে অহেতুক অপমানিত করে রিদ শান্তি পায়। যেন মায়া রিদের চিরশত্রু হয়।
‘ কিসের শত্রুতামি আপনার আমার সাথে? কেন বারবার আমাকে অপমান করতে চলে আসেন?
রিদের পরিচয় সম্পর্কে মায়াকে কিছু বললো না। বরং রিদ আগের নেয় কটমট করে শুধালো…
‘ তোর সাথে আমার সারাজীবনের শত্রুতামি। চিরশত্রু হুস তুই আমার। হইছে এবার? যা বাসায়।
কথা গুলো বলতে বলতে রিদ মায়াকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে উল্টো পায়ে হেটে গাড়ি দিকে চলে যায়। ঠিক যেই তেজে এসেছিল একই তেজে আবারও গিয়ে বসলো গাড়ির পিছনের সিটে। আসিফ রিদকে গাড়ির পিছনে বসতে দেখে লাফ দিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল স্টিয়ারিং চেপে। মূলত সে এতক্ষণ যাবত গাড়িতে বসে নিরব দশক হয়ে ছিল রিদের রাগ মায়ার প্রতি দেখে। আসিফ বুঝতে পারছে রিদের এতো রাগের কারণ। হয়তো এই মূহুর্তে মায়ারও জানা নেই রিদ কেন এতো রাগ করলো তবে একটা সময় ঠিকই বুঝতে পারবে মায়া, তখন আজকে দিনটার কথা খুব মনে পরবে হয়তো। আসিফ প্রথমে রিদের পিছন পিছন গাড়ি থেকে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু পথি মধ্যে রিদ মায়াকে থাপ্পড় লাগাতে দেখে আর সাহস করে বের হয়নি। বরং আধখোলা গাড়ির দরজা চাপিয়ে লাগিয়ে চুপচাপ গাড়িতে বসে পরে নিরব দশক হয়ে। কারণ সে জানতো আপাতত তার ঐখানে কোনো কাজ ছিল না। তাছাড়া সে যদি রিদের পিছন পিছন যেতো তাহলে মায়ার থাপ্পড় গুলোর সাথে সাথে আসিফও কয়েকটা থাপ্পড়ের ভাগ পেত রিদ থেকে। আসিফ অলরেডি একটা থাপ্পড় খেয়েছে রিদের হাতে রাতে। তাই এখন আর পাকামো করে রিদের পিছন পিছন গেল না। চুপচাপ আসিফ রিদের ভয়ে মুখ বন্ধ রেখে গাড়ি স্টাট করলো। ডাইভিং স্টিয়ারিং গোরাতে গোরাতে মিরর দিয়ে এক পলক দেখে নিল পিছনে বসা রিদকে। রিদ সিটে পিঠ ঠেকিয়ে চোখে উপর হাত ভাজ করে রেখে শুয়া। সারারাত জার্নি করে ক্লান্ত বুঝায় যাচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মুরাদপুর পযন্ত টানা দশ ঘন্টা রাস্তা আট ঘন্ট গাড়ি চালিয়ে দ্রুত এসেছে পৌঁছিয়েছে রিদ শুধু মায়াকে ধরতে। প্রথমে ওরা আশুগঞ্জ গিয়েছিল মায়ার খোঁজে কিন্তু পথি মধ্যে কৌশল করে আসিফ আরিফকে ফোন করে জেনে নেয় মায়া বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। মায়া চট্টগ্রামে আসছে জেনে তারপর রিদও গাড়ি স্পিড বাড়িয়ে দ্রুত এখানে এসে পৌছাল।
~~
সকাল সকাল রিদের গাড়ি দেখে দারোয়ান দ্রুত গেইট টেনে খুলে দিতেই আসিফ গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। বাড়ির সামনেই মালি সাথে দাঁড়িয়ে আরাফ খান পাইপ লাগিয়ে গাছে পানি দিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই চমকে উঠে সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো রিদের কালো মার্সিডিজ গাড়িটি। চমকিত আরাফ খান কপাল কুঁচকে হাতে ঘড়িটা দেখতে চাইল কয়টা বাজে। কিন্তু খালি হাত দেখে উনার মনে পরলো ঘড়ি এখনো পড়া হয়নি হাতে। রাতে খুলে রেখেছি আর ফরজের নামজ পর পড়া হয়নি। কিছুক্ষণ আগেই মাত্রই ফজরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে আসল উনি। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি সাথে সাথে এখনো মাথায় টুপি রয়েছে। উনি বিষন্নে একফাকে উজ্জ্বল পরিষ্কার আকাশটাও দেখে নিল বুঝতে পারলো এখনো সূর্য উঠেনি। এতো ভোর সকাল সকাল রিদের গাড়ি তাও খান বাড়িতে? বিষয়টা চরম আশ্চর্য জনক। যে ছেলেকে ফোনের পর ফোন করেও পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামেও আসতে চায় না বাবার কাজে। সেই ছেলে আপোষই আজ এতো সকালে দাদার বাড়ির চৌকাঠ মাড়ল? বিষন্নে আরাফ খান পাশের মালিকে প্রশ্ন করে বলল…
‘ এই আব্দুল! বাজে কয়টারে বলতে পারিস?
তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো আব্দুলের…
‘ না বড় স্যার! জানি নাতো।
আরাফ খান বিরক্ত চোখে এক পলক আব্দুলকে দেখে নিল। ঘাড় ঘুরিয়ে পুনরায় রিদের গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখল রিদ খালি পায়ে গাড়ি পিছনের দরজা খুলে নামছে। রিদকে বিধস্ত আর এলোমেলো অবস্থায় খালি পায়ে গাড়ি থেকে নামতে দেখে মূহুর্তে বিষন্নে হতবাক, হতবুদ্ধি হয়ে গেল আরাফ খান। অবাক করা চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলো রিদের পায়ে দিকে? এতো সকাল সকাল রিদ খালি পায়ে কোথায় থেকে আসলো তাও বুঝতে পারছে না উনি। আরাফ খান রিদকে কিছু জিগ্যেসা করবে তাও সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ রিদ গাড়ি থেকে নেমে সোজা হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। আরাফ খান জোর গলায় হাঁক ছেড়ে রিদকে আটকাতে চাইলো ডেকে। কিন্তু রিদ থামলো না। শুনেও না শুনার মতো করে হনহনে চলে যাচ্ছে বাড়ির ভিতরের দিকে। আপাতত তার ফ্রেশ হয়ে ঘুম দরকার। রিদকে থামতে না দেখে আরাফ খান পুনরায় ডেকে রিদের উদ্দেশ্যে বললো…
‘ এই রিদ কই যাচ্ছিস এদিকে আয়। আমার তোর সাথে সিরিয়াস কথা আছে। এতো সকাল সকাল খালি পায়ে কোত্থেকে উদয় হয়েছিস তুই? তোকে দেখে মনে হচ্ছে ছেঁকে খেয়ে বাঁকা হয়ে আছিস। সত্যি করে বল কয়টা মেয়ের ধোঁকা খেয়ে জুতা ফেলে এসেছিস রাস্তায়। সত্যি না বললে কিন্তু আমি তোর বাপ আর দাদীর কাছে বলে দিব তোর ছেঁকা খাওয়া কথা মনে রাখিস।
রিদ আরাফ খানের কথা কানে না তুলার মতোন করে সোজা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। সে জানে আরাফ খানের ডাকে সারা দিলে নানান উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবে অহেতুক যুক্তি দেখিয়ে। আসিফ গাড়ি পাক করে রিদের পিছন পিছনই যাচ্ছিল। আরাফ খান রিদকে না পেয়ে আসিফকে ডাকল। আসিফ আরাফ খানের ডাকে আমতা আমতা করলো। ইতস্তত বোধ করলো কাছে যেতে। আরাফ খান আসিফকে আমতাআমতা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধমক স্বরে বলল…
‘ এই রিদ ভাইয়ের বলদ এদিকে আয়। ডাকছি না আমি। আয় বলছি।
আসিফ দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে গেল আরাফ খানের কাছে। সে জানে তাকে এখন আরাফ খান নিজের কথায় ফাঁসাবে। সঠিক উত্তর না দিলে একছুট বোকাও খেতে হবে তাঁকে। আবার সত্যি বললেও ঝামেলা, রিদ ভাই আস্ত রাখবে না ওকে। আজতো শুধু একটা থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু এইবার সত্যি বললে রিদ ভাই সোজা গুলি করে উপরে টিকেট ধরিয়ে দিবে আসিফকে। আসিফ মনে মনে ভিষণ ভয় পেল ফ্যাসাদের পরিস্থিতিতে পরে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না বরং আরাফ খানের সামনে এসেই বোকার মতোন হাসলো। আসিফের বোকা হাসি দেখে আরাফ খানের সন্দেহ আরও ঘাড় হলো। আসিফকে শাসিয়ে বলল…
‘ বলদের মতোন হাসছিস কেন? আমি কি তোরে কমেডি দেখাইতে ডাকছি হ্যাঁ?
আসিফ তৎক্ষনাৎ মুখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে ‘না বুঝালো। আরাফ খান আসিফের মাথা নাড়ানো দেখে ফের বললো…
‘ মুখে কি তালাও মারছোত?
আসিফ তাড়াহুড়ো বললো…
‘ না দাদাভাই!
‘ ওহ আচ্ছা তালা নাই তাই তো? শিওর তুই?
‘ জ্বি দাদাভাই!
‘ গুড! এবার তলাবিহীন জবানে সুন্দর করে ফটাফট বলতো দেখি তোরা দুই বলদ এতো সকালে কোত্থেকে এসেছিস?
যেটার ভয়ে ছিল সেটাই হলো। আরাফ খান আসিফকে এমন প্রশ্ন করবে সে প্রথম থেকেই জানতো এজন্য তো সে আসতে চায়নি। রিদের পিছন পিছন পালিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আরাফ খানে ঈগলের চোখে ঠিকই ধরা পরে গেল। আসিফ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বোকার মতোন হেঁসে বললো…
‘ কোথাও থেকে আসিনি দাদীভাই। এমনই এমনই আরকি।
‘ এমনই এমনই কি? আকাশ থেকে পরেছিস মাটিতে?
আমতাআমতা করে বললো আসিফ…
‘ না আসলে দাদীভাই আমরা…
আসিফের কথা শেষ করতে না দিয়ে ফের আরাফ খান বললো…
‘ আমরা আমরা কি? নিশ্চিত মারামারি করে এসেছিস তোরা। রিদের অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তোদের সাথের গুরু বডিগার্ড গুলা কই?? আনিস নি সাথে?
আরাফ খানের কথা মনে মনে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল আসিফ সত্যি লুকাতে পেরে। আরাফ খানের কথার রেশ টেনে বললো…
‘ আমাদের বডিগার্ড গুলো সবাই রাস্তায় আছে দাদাভাই। ঘন্টা দুয়েকের ভিতরে চলে আসবে হয়তো। আসলে আমাদের কোম্পানির কাজ ছিল চট্টগ্রামে, এজন্য আমি আর ভাই আগে আগে চলে এসেছিলাম রাতে আরকি।
‘ তাহলে তোর আর তোর ভাইয়ের এমন চোরের দশা কেন? কোম্পানির কাজে আসলে তো মানুষ বাবু হয়ে আসে। কিন্তু তোদের দেখে মনে হচ্ছে চুরি করে ধরা খেয়ে কোথাও জুতা ফেলে এসেছিস।
‘ না দাদাভাই! আসলে রিদ ভাইয়ের জুতা হঠাৎ ছিড়ে যাওয়াতে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম। মধ্যে রাত ছিল বলে নতুন জুতা আর নেওয়ার হয়নি।
‘ আমার কাছে আলু বেচত? রিদকে জীবনে নতুন জুতা ছাড়া পুরাতন জুতা পরতে দেখি নাই। তাহলে রিদের জুতা ছিড়বো কিভাবে? সত্যি বল যে মারামারি করতে গিয়ে জুতা কোথায় ফেলেছিস বলতে পারিস না।
আরাফ খানের কথা হাসালো আসিফ। মাথা চুলকিয়ে বললো..
‘ এতো জুতা জুতা করছেন কেন দাদাভাই?
আপনি রিদ ভাইয়ের জুতা দিয়ে কি করবেন?
‘ তোরে পিঠাইয়া বলদ থেকে মানুষ বানাব রিদ ভাইয়ের চামচা। যা ভাগ! রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ, নাস্তা কর।
#চলিত….