রিদ-মায়ার প্রেমকাঁথা
লেখিকাঃ রিক্তা ইসলাম মায়া
০৫
ভয়ার্ত মুখে জড়সড় অবস্থায় কুচো হয়ে বসে আছি খাটের কোণায় অপরাধী মুখে। আমার ঠিক সামনে জুই তব্দা মেরে মাথা চেপে বসে আছে শকট হয়ে। দুজনের গায়ে এখনো কলেজ ডেন্স জড়ানো। সময়টা দুপুরে দু’টোর ঘরে। সকালে রিদ খানের সামনে থেকে পালিয়ে আমি কলেজে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারেনি জুইয়ের জন্য। আমাকে জোর করে বাসায় নিয়ে এসেছে ব্ল্যাকমেল করে। বলেছে ওর সাথে বাসায় না আসলে আরিফ ভাইয়াকে বলে দিবে আমি চুরি করে বিয়ে করে ফেলেছি। ওর কথায় ভয় পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসায় আসলাম এবং শুরু থেকে সবকিছুই বললাম, যা,যা সেদিন রাতে আমার সাথে হয়েছিল অচেনা লোকটাকে নিয়ে। আর তখন থেকেই আমার হঠাৎ বিয়ের বিষয়টা নিয়ে রিয়েক্ট করছে। যেন ওর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে এমন আচরণ করছে। করারই কথা আসলে আমার বড় বোনের বিয়ে এখনো হয়নি সেখানে আমি পরিবারের সবার ছোট হয়ে গেছে লুকায়িত ভাবে বিয়ে করে নিয়েছি এঔ বিষয়টি কারও সহজে মেনে নেওয়ার কথা না। জুইয়ের ক্ষেত্রেও তাই। আমার গোষ্ঠীর মধ্যে আমার বড় ভাই-বোন আছে যাদের আমার আগে বিয়ে হওয়ার কথা তারপর সিরিয়ালে আমি সবার শেষে। সেখানে আমি সবাইকে টপকে সিরিয়াল ভেঙ্গে সবার আগে বিয়ে করে নেওয়াটা শুধু চমকে নয় ঘোর পাপও বটে। বিগত দুই ঘন্টা ধরে এমন তব্দা মেরে বসে আছে জুই আমার বিয়ের ব্যাপারটা শুনে। প্রথম প্রথম ওর এমন ঝিম মেরে বসে থাকাটা ভয় করলেও এখন বেশ বিরক্ত লাগছে। আর কতক্ষণ এমন মরার ভয়ে ভয়ে কাটাবো আমি? এখনতো কিছু একটা বলা দরকার ওর তাই না? আজব! আমার বিয়ে হয়েছে সেই দেড় দুই বছর আগে, এতোদিন যাবত ভয়ে পেয়ে এসেছি মনে মনে সবাই জানলে কি হবে? এখনো ভয় আছে তবে এজন্য আর কতক্ষণ এমন মরার ঝিম মেরে বসে থাকবো? এবার নড়াচড়া করার দরকার না? এতো পুরাতন বিয়ের বিষয়টা নিয়ে লম্বা রিয়াকশন কিভাবে দিব আমি? বিরক্ত লাগছে! জুইয়ের বিষন্ন হতভম্ব মুখটার দিকে তাকিয়ে একটু সহজ হলাম। যাহ হবার হবে। এবার একটু নড়াচড়া করার দরকার ভেবে পা দুটো কুচো করার থেকে মুক্ত করলাম। ফ্লোরে পা জোড়া ফেলে সোজা হয়ে বসে আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম জুইয়ের মাথা চেপে ধরা নত মস্তিষ্কের দিকে। দ্বিধা কাটিয়ে সহজ গলায় বললাম…
‘ জুই এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে আমার কমড় ব্যথা করছে। তোরও নিশ্চয়ই করছে? একটা কাজ করি চল, দুজন ডেন্স চেঞ্জ করে, খাওয়া-দাওয়ার করে, তারপরও এসে সেইম দুঃখী দুঃখী পুঁজে নিয়ে বসি কেমন। শরীরে এনার্জি পাবো…
আমার কথা গুলো শেষ করার আগেই জুঁই হামলে পরে আমার উপর। পাশ থেকে বালিশটা নিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে আমাকে বিছানার উপর ফেলে আমার পেটের উপর চড়ে বসে। হাতে বালিশটা দিয়ে আমার মুখের উপর চেপে ধরে চেতন গলায় বলে…
‘ উর্দি! গর্দভ! এতো বড় কান্ড ঘটিয়ে তোর এখন খাওয়া দাওয়াত করা লাগবে না? টেনশনে আমি মরে যাচ্ছি আর তুই?
দু’হাতে জোর খাটিয়ে মুখের উপর থেকে জুইয়ের হাতে বালিশটা ফেলে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করা চেষ্টা করলাম। উফফ আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। পেটের উপর এখনো জুই বসে আছে। ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলাম হাঁপাতে হাঁপাতে জুইয়ের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম…
‘ অসভ্য মাইয়া! বালিশ চাপা দিয়ে আমার জামাইকে বিধবা বানানোর ষড়যন্ত্র করিস তাই না? মরলে তো আমি মরবো! বউ হারালে আমার জামাই হারাবে, তোর কি? তুই তো আর কিছু হারবি না! ও মাগো! কতো বড় ষড়যন্ত্র৷ ভাগিস গায়ে জোর থাকায় আজ একটুর জন্য বেঁচে গেলাম। নয়তো আজ আমার জামাই একটুর জন্য বউ হারাতো। ইশশ বেচারা জামাই, বউ দেখার আগেই বিধবা হয়ে যেত।
আমার রাগান্বিত দৃষ্টি এরিয়ে জুইও উঠে বসে শুয়া থেকে। ওর দৃষ্টিতে তখনো ক্ষেপানো আমার উপর। আমার দিকে তেড়ে এসে আমার বাহু চেপে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলে….
‘ উল্টা-পাল্টা কথা বলবি তো আমি সোজা আরিফ ভাইয়ার কাছে বিচার দিব তোর নামে। বলে দিব তুই চুরি করে বিয়ে করে আমাদের থেকে লুকিয়েছিস এতোদিন। তারপর কি হবে ভেবেছিস? তোকে কে বাঁচাবে বড়দের হাত থেকে হুম? তখন ডাকিস তোর ঐ অচেনা, নাম না জানা জামাইকে। সে বাঁচাবে তার বউকে সবার হাতের মার খাওয়া থেকে কেমন? আমি বরং বলে দেয় সবাইকে। কি বলিস?
জুইয়ের হুমকি স্বরুপ কথায় নিভে গেলাম আমি। ভয় জড়ো হলো মূহুর্তেই। পরিবারের এই বড়দের জন্য বিয়ের বিষয়টা এতোদিন যাবত লুকিয়ে রেখেছিলাম আমি। এখন জুই আমার সেই ভয়টা বুঝে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে আমাকে ভয় দেখিয়ে। আমি অপরাধী মুখে ওর দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললাম…
‘ এমন করিস কেন? তুই না আমার বোন হোস। বোন হয়ে শত্রুর মতো কাজ করবি আমার সাথে?
‘ অবশ্যই করবো! হাজারবার করবো! কেন করবো না তুই বল? তোর আইডিয়া আছে তুই কতো বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছিস? বিয়ে কি ছেলেখেলা? তুই আধার রাতে কাকে বিয়ে করেছিস তাও জানিস না। ভালো মানুষ বিয়ে করেছিস, নাকি চোর-ডাকাত, লুচ্চা, নাকি বিবাহিত কোনো পুরুষকে বিয়ে করেছিস তাও বলতে পারছিস না। এখন আবার বলছিস নাম-ঠিকানা তো জানিস না, যাকে বিয়ে করলি তার চেহারাটাও নাকি ভুলে গেছিস দীর্ঘদিন না দেখায়। এটা কোনো কথা? একেতো বিয়ের মতোন এতো গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের বিষয়টা লুকিয়ে, লোকটার নাম-ঠিকানা না জেনে অপরাধ তো করেছিসই, এখন আবার স্বামী চেহারা ভুলে ঘোর পাপ করেছিস। তোর আইডিয়া আছে এই বিয়ের জন্য তোকে জীবনের কতোটা সাফার করতে হবে? জীবন এতো সহজ? লোকটা যদি বিবাহিত খারাপ লোক হয় তখন কি করবি তুই? হুট করে যে বিয়ে করেনিলি, আমাদের সমাজে ডিভোর্সির মানে বুঝিস? তুই স্বামী সংসার করিসনি, বা তোর কোন পরিস্থিতিতে বিয়েটা হয়েছিল সেটা কেউ দেখবে না। বরং সবাই তোর দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে তুই ডিভোর্সি। বিয়ের আগে একটা মেয়ে যদি দশটা ছেলের সাথে হারাম প্রেম করে, হারাম ভাবে শরীর বেঁচে দেয়, তাঁকে আমাদের সমাজে কলঙ্কি বলে না বরং বয়সের দোষ বলে চালিয়ে দেয়। অথচ একটা ভালো মেয়ে যদি আল্লাহ পবিত্র কালিমা পরে একজন পুরুষের সঙ্গে দুইদিন সংসার করে এবং সংসার ভেঙ্গে যায়। তাহলে সবাই মেয়েটাকে অপরাধী বলে, তাঁর দিকেই আঙ্গুল তুলে কলঙ্কি বলে দাবি করে। অথচ বিয়ে আর তালাক দু’টোই কিন্তু ইসলামের শরীয়তে হালাল। এখন তুই বল তোর সাথে আমার কি করার দরকার। তুই আমার বোন বিদায় আমার কলিজা জ্বলছে এই ভেবে যে, এই সমাজ তোকেও বিনা কারণে ডিভোর্স বলে কলঙ্কি বলবে। তার চেয়ে বড় কথা হলো তুই কোনো খারাপ লোকের চক্রে না পরিস। লোকটার পরিচয় জানলে অন্তত খুঁজ নিতে পারতাম লোকটা কে? যেমন চুপিসারে বিয়েটা করেছিস ঠিক তেমন চুপিসারে ডিভোর্সটাও নিয়ে নিতাম আরিফ ভাইয়াকে সবটা জানিয়ে। ইসলামের ছেলেদের একসঙ্গে চারটা বিয়ের হুকুম দিলেও মেয়েদের কিন্তু একাদিক বিয়ের হুকুম দেয়নি ততক্ষণ যতক্ষণ না পযন্ত স্বামীর সাথে তার তালাক হচ্ছে বা বিধবা হচ্ছে মেয়েটি। তুই বুঝতে পারছিস? তোর জীবন পুরোটায় আটকে আছে। ঐ লোকটাকে তালাক না দিলে তুইও লাইফে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবি না। তুই যদি মনে করে থাকিস তোর গোপন বিয়ের খবর কেউ জানে না তাই চুপিসারে দ্বিতীয় বিয়েটা করে নিবি তাহলে তুই ঘোর পাপ করবি। প্রথম স্বামী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিয়ে তো হবেই না উল্টো যিনাকারী হবি তুই।
জুইয়ের দীর্ঘ কথায় দমে গেলাম আমি। সত্যি বলতে আমি এতোটা গভীরে ভাবিনি। আমার মাথায় আসেনি জীবনের আমাকেও দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে হবে। পরিবারের মেয়ে আমি, জীবনের একটা সময়ে, একবার না একবার তো আমায় বিয়ের জন্য চাপ দিতো সবাই। তখন আমি কি করতাম? জুইয়ের কথার গভীরতা চিন্তা করতেই কান্না পেল আমার। তীব্র অপরাধ বোধে মিইয়ে গিয়ে ধরা গলায় বললাম…
‘ এমন সরি জুই। আমি ভুল করে ফেলেছি। আসলে তখন এতো কিছু আমার মাথায় আসেনি। তীব্র ভয়ে ভুল করে ফেলেছি। এখন কি করবো?
আমার অশ্রু সিক্ত টলমল চোখে দিকে তাকিয়ে জুই শান্ত হয়ে বসল। চিন্তিতের ভারি নিশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ আর কি করবি? যা করার তো আগেই করে ফেলেছিস। নিজের এতো বড় বিপদ বাদিয়ে চুপ করে আছিস এই ভয়ে পরিবারের বড়রা কি বলবে? অথচ তুই যে নিজের কতোবড় ক্ষতি করলি সেটা এখনো বুঝলি না। কারও কোনো ক্ষতি হয়নি, তুই ক্ষতি নিজের করেছিস রিতু। আল্লাহ তোকে সুবুদ্ধি দান করুক।
ওর কথার তলে সত্যি সত্যি আমি চুপ করে বসে আছি। জুইকে কি বলা উচিত বুঝতে পারছিনা। জুইও খানিকটা চুপ থেকে আমাকে বলল…
‘ আমাদের লোকটাকে খোঁজা দরকার রিতু।
জুইয়ের কথার মানে তৎক্ষনাৎ বুঝলাম না। সেই অচেনা লোকটাকে এখন খোঁজে কি করবো? আর খোঁজলেও বা পাবো কোথায়?
‘ কেন?
‘ কেন মানে? তোর ডিভোর্স নিতে হবে না লোকটার থেকে। নয়তো আমাদের পরিবার যখন তোর বিয়ে কথা বলবে অন্যকারও সাথে,, তখন কি করবি? এক স্বামীকে ডিভোর্স না দিলে দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। তাই ডিভোর্সটা মাস্ট বি প্রয়োজন বুঝলি।
জুইয়ের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। কারণ আমার অচেনা স্বামীক নিয়ে এই মূহুর্তে অনুভূতির চেয়ে বেশি ভয় কাজ করছে।
‘ আচ্ছা।
আমার সম্মতিতে জুই ফের প্রশ্ন করে বলল…
‘ লোকটাকে কিভাবে খোঁজে বের করবো? তার নাম-ঠিকানা কিছু জানিস না। তাকে দেখলেও চিনবি না তুই। এমনত অবস্থায় লোকটাকে খুঁজি কিভাবে বলতো? মাথায় তো কিছুই কাজ করছে না। তোর কাছে আইডি আছে কোনো?
মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিয়ে বললাম…
‘ নাহ
আমার কথায় জুই খানিকটা চেতে শক্ত গলায় বলে…
‘ তা থাকবে কেন? তোর কাছে আইডিয়া থাকলে তুই তো বুদ্ধিমতি হয়ে যাবি। তখন হবে আরেক সমস্যা।
জুইয়ের চেতন গলায় আমি মিনমিন করে বলল…
‘ রাগিস কেন? আমার কাছে আইডি না থাকলেও মাইশা, মাহির কাছে ভালো ভালো আইডি পাবি। আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে কুটনীতি আর জোড়াল বুদ্ধির জন্য কিন্তু ওরা অনেক তীক্ষ্ণ।
আমার কথায় দমে যায় জুই। হয়তো প্রস্তাবটা মনে ধরেছে। কারণ এই বিপদ থেকে বের হতে ওরাই আমাদের সাহায্য করতে পারবে। জুই খানিকটা থেমে চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ তুই ওদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাতে বলছিস?
‘ হুমমম!
‘ পরে যদি সমস্যা হয়?
‘ হবে না। ওরা আমাদের বেস্টু। কখনো কথা নাড়াচাড়া করবে না।
‘ ওকে দ্যান চল! গোসল করে রান্না করি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া খেতে আসবে এখনো রান্না-বান্না কিছুই হয়নি। বিকাল করে আরিফ ভাইয়া বাসায় না থাকলে ওদের সবাইকে গ্রুপ কল দিব কেমন। চল চল।
‘ আচ্ছা!
~~
পাঁচ বান্ধবীর আসড় জমেছে একত্রে। আমরা সবাই হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে বসা। চুপচাপ মোটেও নেই। আমার বিয়ের বিষয়টা নিয়ে তোড়জোড় চলছে সবার মাঝে। বলতে গেলে একেক জন্য শকটে ক্ষেপা বাঘিনী হয়ে বসে আছে আমার উপর। আমার দোষ এতো বড় কান্ড ঘটিয়ে কেন কাউকে জানায়নি। পরিবারের বড়দের ভয়ে বলতে না পারি এদের অন্তত বলা দরকার ছিল। আমাকে নিয়ে প্রত্যেকের আহাজারি চিন্তার শেষ ছিল নেই। আমি আর জুঁই একত্রে ভিডিও কলে জয়েন করেছি আরিফ ভাইয়ার ল্যাপটপ দিয়ে। বাকিরা সবাই যার যার বাড়িতে নিজ মোবাইলে জয়েন করেছে। এখন পড়ন্ত বিকাল। জুইয়ের কথা মতো ভিডিও কল জয়েন হয়েছিল আরও একঘন্টা আগে। এতক্ষণ ওদের সাথে আমার বিয়ের সকল বিষয়ে শেয়ার করা হয়ে গেছে। আমাকে একচোট ফ্রীতে বকাঝকা করা হয়ে গেছে সবার। এখন বেশ চিন্তিত মুখে ভাবতে বসেছে আমার হারিয়ে যাওয়া স্বামী মানে যার সাথে আমি বিয়ে হয়েছিল তাঁকে কিভাবে খোঁজে বের করা যায় সে নিয়ে। একেক জন্য একেক বুদ্ধি দিচ্ছে, কিন্তু কোনো বুদ্ধিই সেই লোকটাকে খুঁজে বের করার পথ বের করে দিচ্ছে না। এদের মধ্যে আমি একটু জড়সড় ভাব নিয়ে বসে আছি। যেহেতু আমি আসামী তাই আপাতত আমার বড় মুখ করে বসা উচিত নয়, এতে সবাই আরও ক্ষেপে যাবে আমার উপর। এমনই ছোট খাটো ঘুর্ণিঝড় আমার মাথার উপর নাচছে। আমাদের গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে চতুর মেয়ে হলো মাইশা! পাজিল হলো মাহি। সবচেয়ে পড়ুয়া মেয়ে সুমি, আর জুই সবচেয়ে বুঝদার। পরিস্থিতি অনুযায়ী সবাইকে বুঝিয়ে শান্ত করার ক্ষমতা ওর আছে। আর আমি! সেটা না-হয় নাই বললাম। আমার গল্পে বুঝে যাবেন আমি কেমন। আচ্ছা যায় হোক! এবার মূল কাহিনীতে আসি। গ্রুপ কলে সবাই লোকটাকে খোঁজ পাওয়ার আলোচনা করছে। মাহি সামনে থেকে আমার শান্তশিষ্ট মুখটাকে লক্ষ করে জুইকে উদ্দেশ্য করে রাগান্বিত গলায় বলল…
‘ দোস্ত ওহ এমনে তাকাই রইছে কেন? আমারে কি ওর জামাই মনে করছে। ওর এমন ইনোসেন্ট ফেস দেখে আমি গলে যাব? অসভ্য মাইয়া বিয়াডা করছে তো করছে, জামাইর নামডাও জানতে পারলো না। মন তো চাচ্ছে ইচ্ছা মতোন কতক্ষণ ধুলায় করি। এই জুই, তুই আমার হয়ে কয়েকটা ধুমধাম লাগাতো এই মাইয়ারে। নাইলে আমার রাগ শান্ত হবে না হু।
মাহির কথায় তৎক্ষনাৎ সায় দিল মাইশাও। জুইয়ের উদ্দেশ্য বলল…
‘ হ জুই! আমার হয়েও দুইডা দিস কিন্তু ওরে।
আমি অসহায় মুখ করে জুইয়ের দিকে তাকালাম। জুই আমার অপরাধী মুখটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল টেনশনে। জুইয়ের বিষন্ন মুখটা দেখে সুমি আমার উদ্দেশ্য বলল…
‘ রিতুরে! দোস্ত তুই কেমনে এই বিয়েটা করলি?চেনা নাই, জানা নাই, কেউ অপরিচিত লোকরে অন্যের কথায় বিয়ে করে? আমিতো ভয়ে মরে যাচ্ছি, না জানি কোন বেডা মানুষরে বিয়েটা করছোস তুই। উফফ লোকটা যদি কোনো নেশাখোর খারাপ লোক হয়? আর তোকে দেখে তার মন যদি বদল হয়ে যায়, ডিভোর্স দিতে না করে। তখন কি করবি তুই?
সুমি কথায় আমার আরও ভয় হতে লাগলো। আমি সেদিন রাতে লোকটাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পেয়েছিলাম। হয়তো কারও সাথে মারামারি করে রাস্তায় পরেছিল। তারপর আবার কাজি সাহেব লোকটাকে ভালো বলছিল না। খারাপ লোকই বলে পরিচয় দিচ্ছিল আমাকে। হয়তো সন্ত্রাস হবে। সুমির কথার উত্তর আমি করতে পারলাম না টেনশনে। মনের মধ্যে তীব্র ভয় সৃষ্টি হলো অচেনা লোকটাকে নিয়ে। তখনই সুমির কথার উত্তর দিয়ে জুই শক্ত গলায় বলল…
‘ ডিভোর্স দিবে না মানে? অবশ্যই ডিভোর্স দিবে। আমাদের বোন আমরা এমনই ছেড়ে দিব মনে করেছিস? ওহ ছোট মানুষ বুঝিনি, পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়েটা করে ফেলেছে। এরমানে এই না লোকটার সাথে ওর সংসার করতে হবে। আমরা আগে লোকটাকে খুঁজে বের করবো তারপরও আরিফ ভাইকে সবটা জানিয়ে চুপিসারে ওর ডিভোর্স নিয়ে নিব ব্যাস। আমাদের পরিবারকে এসব জানাবো না।
মাহি বলল…
‘ সে না-হয় বুঝালাম! কিন্তু লোকটাকে কিভাবে খুঁজবো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা মায়া তুই লোকটার মুখে কারও নাম, বা কোনো জায়গার নাম শুনেছিস এমন কিছু?
‘নাহ!
আমাদের কথার ফোড়ন কেটে মাইশা বলল…
‘ জায়গার নামটা মনে আছে সেখানে তুই লোকটাকে খুঁজে পেয়েছিলি?
আমি মাথা নাড়িয়ে না’ বলতেই আরও হতাশ দেখা গেল সবার চেহারায়। খানিকটা সময় চুপ থেকে মাইশা আবারও দ্রুততার প্রশ্ন করল জুইকে। বলল…
‘ আচ্ছা জুই মায়ার না-হয় মনে নেই ওহ কোথায় ছেলেটার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কিন্তু তোর তো মনে আছে তোরা সেদিন রাতে কোন জায়গায় কোনো হোটেল ওঠেছিস?
জুই সুন্দর ভাবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল…
‘ হ্যা মনে আছে। নরসিংদীর একটা হোটেল উঠে ছিলাম। কিন্তু কেন?
জুইয়ের কথায় যেন আশার আলো ফুটলো মাইশার মুখে। তৎক্ষনাৎ উৎসাহে সহিত বলল…
‘ পারফেক্ট! এখন নিশ্চিয় এটাও মনে আছে তোরা মায়াকে সেদিন রাতে কোথায় খুঁজে পেয়েছিলি?
‘ না আমার এটা মনে নেই। অনেক আগের কথা জায়গার নামটা ভুলে গেছি। তাছাড়া সেদিন রাতে আরিফ ভাইয়া আমাকে হোটেলে রেখে মায়াকে আনতে গিয়েছিল। এখন মায়া বলতে পারবে জায়গার নামটা কি ছিল।
সবাই আশা নিয়ে আমার দিকে তাকাতেই আমি সাথে সাথে বলি…
‘ আমি জানি না সেই জায়গার নাম। সবকিছু অপরিচিত ছিল আমার কাছে। তাই আরিফ ভাইয়া আমার লোকেশন ট্র্যাক করে নিয়ে গেছিল সেদিন রাতে।
আমার কথায় চেতে উঠে মাইশা…
‘ কেউ আমারে ক! এই বলদ মাইয়ার সাথে আসলে কি করার উচিত। আমার তো হেব্বি রাগ উঠতেছে উফফ!
পুনরায় সবার মুখে হতাশা চেয়ে গেল। এতো বড় নরসিংদী জেলায় কোথায় গিয়ে খুঁজবে সেই এলাকা যে এলাকায় আমি হারিয়ে গিয়ে ছিলাম। প্রত্যেকের হতাশা মধ্যে হঠাৎ আমি উৎসাহের সহিত বলে উঠি..
‘ আমি জানি না তবে আরিফ ভাইয়া বলতে পারবে সেই জায়গার নামটা কি। ভাইয়া সবকিছু চিনে।
আমার কথায় মাইশা তৎক্ষনাৎ বলে…
‘ আরে বাহ! মায়া রানীর মাথায় দেখি গিলুও আছে। এই জুই দ্রুত আরিফ ভাইয়াকে ফোন করে জায়গার নামটা জিগ্যেস কর তো।
জুই কিছু বলার আগে মাহি বলল…
‘ তুই ঐ জায়গার নাম দিয়া কি করবি? কাজটা কি?
‘ পরে বলছি আগে জুই আরিফ ভাইয়ার থেকে জায়গার নামটা জান। কল দে ভাইকে।
জুই বলল..
‘ আরিফ ভাইকে ফোন করে বলবো কি? কি বলে জায়গার নামটা জিগ্যেসা করবো? ভাই যদি জিগ্যেসা করে কেন জানতে চাইছি তখন কি বলবো?
পাশ থেকে মাহি কুটনীতি বুদ্ধি খাটিয়ে বলল।।।
‘ তোর কিছু বলতে হবে না। যা বলার মায়াই বলবে। ওহ-ই আরিফ ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেসা করবে ওকে সেদিন রাতে নরসিংদী জেলায় কোথায় খুঁজে পেয়েছিল সেই নামটা বলতে। ভাই যদি কিছু জিগ্যেসা করে তাহলে বলবে ইংলিশে এসার্মেন্ট দিয়েছে কলেজ থেকে ‘এ মেমোরেবল ডে’ উপর। মায়ার জীবনের স্মরণীয় দিন হিসাবে সেই দিনের কথা লিখতে চাচ্ছে এজন্য নামটা ওর চায় ব্যাস।
মাহির কথা অনুযায়ী সবাই সায় দিল। আমিও সবাইকে ভিডিও কলে রেখে আরিফ ভাইকে কল দিলাম৷ ভাই কোচিং ক্লাসে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আমার জায়গার নাম জিগ্যেস করাতে প্রশ্ন করেছিল কেন? আমি মাহির শিখানো কথা গুলোই বললাম। সফলও হলাম। ভাইয়া জায়গার নামটা বলতেই আমি কল কেটে দিলাম। এবং ওদেরকে জানায় নরসিংদী জেলা, বাগিচা নামক এলাকায় আমাকে খুঁজে পেয়েছিল ভাই।
আমার কথায় মাইশা সন্তুষ্টি নিয়ে বলে…
‘ পারফেক্ট! আমাদের অর্ধেক খোঁজা এখানেই শেষ হয়ে গেছে জুই। মায়াকে যদি আরিফ ভাই নরসিংদী জেলা, বাগিচা এলাকায় খোঁজে পায়। তারমানে মায়া সেরাতে সেই এলাকায় ছিল ঐলোকটার সাথে। ওর বিয়েটা সেই এলাকার কাজি সাহেব দিয়েছিল। এখন আমাদের যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো, নরসিংদী জেলা বাগিচা এলাকায় যেতে হবে এবং সেই এলাকায় যতগুলো কাজি আছে সবগুলোর বাড়ি খুঁজে বের করতে হবে। এবং সেই কাজি পরিবারকে চিহ্নিত করতে হবে যারা মায়ার বিয়ে দিয়েছিল ঐলোকটার সাথে। কাজির কাছ থেকে আমরা মায়ার কাবিননামার একটা ফুটোকপি নিব। কারণ সেই কাবিননামায় নিশ্চয়ই মায়া স্বামী অথাৎ ঐ অচেনা লোকটার নাম-ঠিকানা দেওয়া আছে। সেই ঠিকানা অনুযায়ী না-হয় আমরা লোকটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। কি বলিস তোরা?
মাইশার চতুর বুদ্ধিতে সবাই উৎসাহের সহিত সহমত পোষণ করল। সেই সাথে আশা ফিরে পেল যেন সবার মধ্যে। সিদ্ধান্ত নিল আমরা সবাই নরসিংদী যাব একসাথে। কিন্তু ঝামেলা হলো আমি আর জুই আছি চট্টগ্রামে। আমাদের বাসায় যেতে হবে। মানে আশুগঞ্জ থেকে সবাই একত্রে একদিন নরসিংদী যাব কাজি সাহেবের বাড়ি খোঁজ করতে। কিন্তু এখন সমস্যা হলো আমি আর জুই এখান থেকে আশুগঞ্জ যাব কিভাবে? শুধু শুধু বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরলে তো আর যেতে পারবো না। আরিফ ভাইয়া দিব না। আবার আব্বুও কর্ড়া শাসন করবে। তিনি অনেক পড়ুয়া মানুষ। ছেলেমেয়েদের পড়া রেখে বাসায় বসে থাকাটা মোটেও পছন্দ না উনার। কি থেকে, কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখনই মাহি বলে উঠে…
‘ আরে দোস্ত চিল। এতো চাপ নিসনা। মায়ার স্বামী খোঁজার বুদ্ধি যখন বের হয়েছে, তখন তোদের আশুগঞ্জ আসার একটা উপায়ও বের হয়ে যাবে। এই রিতু একটা কাজ করতো। পেটের ব্যথায় ভান ধরে বিছানায় পরে থাকতো যেন তুই মারা যাচ্ছিস। খাওয়া-দাওয়ার সব বাদ দিয়ে শুধু বিছানায় গড়াগড়ি করে কাঁদবি। তোর দেখাদেখি জুইও কাঁদবে তোর চিন্তার করার ভান করে। তোর অবস্থা যখন গুরুতর কাহিল মনে হবে তখন বাধ্য হয়েই আরিফ ভাই তোকে আর জুইকে বাসায় পাঠিয়ে দিবে পরিবারের কাছে তোর সেবাযত্নের জন্য। যাহ এবার ঝটফট বিছানায় মরা মানুষের মতো শুয়ে আমাদের পেটে ব্যথার এক্টিন করে দেখাতো।
~~
ডাক্তারের চেম্বারের বাহিরে সিরিয়াল কেটে রোগীর সারিতে বসে আছি আরিফ ভাইয়ার কাঁধে মাথা ফেলে। ভাইয়া আলতো করে আমার কাঁধ জড়িয়ে বসে আছে আর বারবার চোখ ঘুরিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে দিকে তাকাচ্ছে। আর থেকে থেকে অপর হাতটা দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সান্ত্বনার সহিত। এখানে আমরা বসে আছি প্রায় একঘন্টা উপর হলো। মূলত আমার অসুস্থতার জন্যই বসা। কাল বিকালে বান্ধবীদের সাথে পরামর্শ করেছিলাম পেট ব্যথার অভিনয় করবো বলে। অথচ রাত হতে না হতে সত্যি সত্যিই আমি সিরিয়াস অসুস্থ হয়ে পড়লাম। রাতে অসময়ে অনেক সময় নিয়ে গোসল করা জন্য জ্বর এসেছে আমারা সাথে ফ্রীতে পেট খারাপও হলো। পেট খারাপে প্রধান কারণ হলো হাবিজাবি খেয়েছিলাম রাতে এজন্য সকাল থেকেই জ্বর আর পেটের সমস্যায় কাহিল আমি। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বমিও করে ফেলেছি। আমায় অসুস্থ নাজেহাল অবস্থা দেখে আরিফ ভাইয়া দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে দ্বিতীয় বার আর কোচিংনে যায়নি বরং ডাক্তার দেখাতে হসপিটালের নিয়ে এসেছে আমাকে । কিন্তু এখানে এসেও আরেক সমস্যা। ডাক্তার চেম্বারে নেই। ডাক্তারের রোগী দেখার সময় তিনটা থেকে অথচ এখন চার দশ বাজে। আমার মতো অনেক রোগীর ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছে অসুস্থ শরীর নিয়ে। আরিফ ভাইয়া এবার বেশ চটে যাচ্ছেন আমার বেগতিক খারাপ অবস্থা দেখে। জ্বরে আমি বারবার মাথা ফেলে দিচ্ছে ভাইয়ের কাঁধ থেকে। ভাইয়াও বার বার আমার মাথাটা উঠিয়ে নিজের কাঁধে চেপে রাখছে। অসুস্থতার কারণে চোখ দু’টোও খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছিল না আমার। তবে কান সজাগ ছিল। আমার বেহাল দশার মধ্যেই আরিফ ভাই কাউকে সালম দিয়ে উঠলো….
‘ আসসালামু আলাইকুম ভাই।
‘ ওয়ালাইকুম সালাম! আরে আরিফ তুমি এখানে?
অল্প পরিচিত কন্ঠের কথা শুনে বন্ধ চোখের পাতা টেনে খোলে তাকাতে চাইলাম। নিভে যাওয়া চোখে অল্প তাকাতেই চোখে পরল অল্পসল্প পরিচিত লম্বাটে একটা মুখ। এই মুখটা আমি আগেও বেশ কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা মনে করা চেষ্টা চালাতেই আরিফ ভাই লোকটার কথার উত্তর করে বলে…
‘ আসলে ভাই, আমার ছোট বোনটা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি এখানে?
‘ হ্যাঁ আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম রিদ ভাইয়ে সাথে। ওর কি হয়েছে?
রিদ নামটা মস্তিষ্ক যেতেই সল্প পরিচিত লোকটাকে চেনে ফেললাম। আরে এ-তো আসিফ! রিদ খানের বডিগার্ড। তারমানে রিদ খান আমার আশেপাশেই কোথাও আছে বিষয়টি মাথায় আসতেই চমকে উঠলাম আমি। কারণ কাল সকালে আমাকে হুমকি দিয়েছিল লোকটা তার সামনে যাতে না পরি অথচ চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ঘুরেফিরে আবারও লোকটার সম্মুখে আমি। সুস্থ থাকলে এখান থেকে পালিয়ে বাঁচতাম আমি কিন্তু অসুস্থ বলে দাড়াতেও পারছি না। আমার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা মধ্যেই আরিফ ভাইয়া আসিফ লোকটার কথার উত্তরে বলল…
‘ আসলে ওর, রাত থেকে জ্বর আর পেট খারাপ। সকাল থেকে অবস্থা একটু বেশি সিরিয়াস হওয়ায় এখানে নিয়ে এসেছি কিন্তু এখানে এসে আরেক ঝামেলা ডাক্তার নেই। এখনো আসেনি । বোনটাও ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হয়ে পরছে…
আরিফ ভাইয়া বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই আমি গা গুলিয়ে বমি করতে চাইলাম কিন্তু খালি পেট হওয়ায় তিতু পানি ছাড়া পেট থেকে কিছুই বের হলো না। ওয়াক! ওয়াক করতে করতে আমার অবস্থা কাহিল। দূর্বলতায় শরীর ছেড়ে দিতেই আরিফ ভাইয়া আমার বাহু জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। বিচলিত কন্ঠে আমাকে ডেকে হুশে ফিরা চেষ্টা করে বলল..
‘ রিতু! এই রিতু! কষ্ট হচ্ছে তোর? নার্স! এই নার্স!
আরিফ ভাইয়া নার্স বলে চিল্লিয়ে আমাকে তৎক্ষনাৎ কোলে তুলে নিতেই আমার চোখে বুঁজে আসছিল দূর্বলতায়। চোখ বন্ধ করার আগে চোখে পরলো আরিফের ঠিক পিছনে স্টংলি দাড়িয়ে থাকা রিদ খানকে। উনি কেমন চোখ দুটো ছোট ছোট করে হালকা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হয়তো আমার অসুস্থতা তার চোখে পরছে কিন্তু এতোটা বুঝে উঠতে পারছে যে, আমাকে কাল সুস্থ দেখতে দেখতে হঠাৎ করে আজ কিভাবে অসুস্থ হয়ে পরলাম সেটা?
#চলিত…