রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা লেখিকাঃ রিক্তা ইসলাম মায়া ০৮

0
767

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
লেখিকাঃ রিক্তা ইসলাম মায়া

০৮
‘ এই যে আপনি অবাধ্যে ঘুরাফেরা করতে পারছেন। যেখানে সেখানে প্রেমিকের সঙ্গে বসে আড্ডা দিতে পারছেন, তার পানি পান করতে পারছেন। নিজের মর্জি মতে চলতে পারছেন। এই যে এতোসব ফ্যাসিলিটি পাচ্ছেন তার জন্য অন্তত আপনার আল্লাহ শুকরিয়া আদায় করা দরকার!! নয়তো যদি ভুলক্রমে আপনি আমার কেউ হতেন তাহলে এতক্ষণে আপনার প্রেমিকের হাত আর আপনার মুখে দুটোর নকশায় মানচিত্র হয়ে যেত। তখন আপনি আমার সাথে তর্ক নয় গালে হাত দিয়ে কাঁদতেন।

কথা গুলো শেষ করেই ডিল মেরে বোতলটা পুকুরের পানিতে ফেলে দিল উনি। আর আমার লোকটার শান্ত কন্ঠের হুমকিতে গা শীতল হয়ে আসল। আজব লোকের পাল্লায় পরেছি তো সবসময়ই আমাকে এমন গুন্ডামীর করে হুমকি দেয় কেন? কি করেছি আমি? তার সাথে কিসের এতো শত্রুতা আমার? এই নিয়ে চতুর্থবারে মতো দেখা আমাদের অথচ প্রতি বারই উনি এমন হুমকি ধামকি দিয়ে আমায় অপমান করে আসছেন লোকটা। আজ আমি উনার বাসায় এসেছি মেহমান হয়ে, আজ অন্তত একটু ভালো ব্যবহার করা যেত আমার সাথে অথচ তার কোনো পরিবর্তন নেই। আমি জড়ানো গলায় বললাম..

‘ হুমকি দিচ্ছেন?
‘ উহুম! সত্যিটা বলছি।

এবার বেশ জড়তা কাজ করলো আমার মাঝে। শীতল হয়ে আসল আমার ভিতর। কি জন্য লোকটা আমাকে অকারণে অপমানিত করে বেড়ায় তাও জানি না। তবে নেতা সাহেব যে সুবিধার মানুষ না তার কথাবার্তায় অবগত হয়ে গেলাম। এখন লোকটার সাথে কথা বাড়ানো মানেই নিজের ইজ্জতের আরও একদফা ফালুদা বানানো। বলাতো যায় না কখন না জানি রেগে তার ফেবারিট ডায়লগ বলে উঠে, আউট!

অন্যের বাড়িতে এসে যদি তার বাড়ির থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে এর থেকে অপমান দুনিয়াতে আমার জন্য দ্বিতীয় কিছু হবে না বলে মনে হলো। এজন্য নিজের ইজ্জত বাঁচাতে লোকটার সাথে আর কথা বাড়াতে চাইলাম না। সে যা বলে তাই ঠিক। উনি যদি রিফাত ভাইকে আমার বয়ফ্রেন্ড ভাবে তাহলে সেটাই ঠিক উনার(রিদ) ভুল ভাঙ্গানো দরকার নেই। বরং ভালোই ভালোই তার সামনে থেকে কেটে পরাই উচিত মনে করে ভাসা ভাসা চোখে লোকটার(রিদ) দিকে তাকিয়ে মিহির স্বরে বললাম…

‘ আমি বরং যায়? আমার ভাইয়া অপেক্ষা করছে।

আমার কথায় তেমন কিছু বললো না উনি। বরং কপাল কুঁচকে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটার হঠাৎ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমি বেশ ইতস্তত বোধ করলাম। এইভাবে আমার চোখে তাকিয়ে কি দেখছে তাও বুঝতে না পেরে দৃষ্টি নত করলাম আমি। হাল্কা নড়েচড়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললাম…

‘ আমি যায়?
তৎক্ষনাৎ লোকটার গম্ভীর কন্ঠ আসল আমার কানে!
‘ লুক এট মি!
চমকে উনার দিকে তাকালাম। উনার কথা মানে বুঝতে না পেরে অবুঝ গলায় বললাম…
‘ জ্বি?
‘ তোমার চোখের ঐটা কি?
উনার(রিদ) কথায় তৎক্ষনাৎ হাত গেল চোখে। ভাবলাম হয়তো কিছু চোখের উপর পরেছে এজন্য উনি বলছে চোখে কি? আমি নিজের চোখের উপর আলতো হাত বুলিয়ে জিগ্যেসা করলাম..
‘ কোনটা?
আমার কথায় উনি উত্তর না করে চুপ করে রইল। তবে উনার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তখনো আমার ডান চোখের ভিতরে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অদ্ভুত ঠেকল আমার কাছে। আমি লোকটার দৃষ্টির মাঝে আবারও চোখে হাত বুলিয়ে একই প্রশ্ন করে বললাম…
‘ কোনটা?
‘ আউট!
বেশ চমকে উঠলাম আমি। আউট মানে? এবার আমি কি করেছি? হঠাৎ কি হলো উনার? অবাক হয়ে বললাম..
‘ মানে??
‘ আই সেইড,আউট অফ মাই হোম!
এবার বেশ কিছুটা জোরেই হুংকার ছাড়ল আমার উদ্দেশ্য। উনার হঠাৎ হুংকার ছাড়া কথায় মূহুর্তে কেঁপে উঠলাম আমি। অপমানের ঘোরে চোখের জল গড়াল তৎক্ষনাৎ। অতি কষ্ট চেপে রাখার অভিজ্ঞতা নেই আমার তাই বৃথা চেষ্টা করে দু’হাতে মুখ চেপে ধরলাম কান্না থামাতে কিন্তু ততক্ষণে আমার হিচকি উঠে যায়। হাল্কা শরীর নড়ে উঠছিল আমার অনবরত হিচকিতে কিন্তু তারপরও তীব্র কান্নায় জায়গায় ছেড়ে চলে যেতে পারছিলাম না অপমানে লজ্জিত হয়ে। আমার হঠাৎ কান্নায় যেন রাগটা আরও বাড়াল উনার তাই দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আমার উদ্দেশ্য শুধালো…

‘ বেয়াদব!

কথাটা বলে আর দাঁড়ালোও না। যে পথ এসেছিল সেই পথ ধরে ততক্ষণে চলেও গেল তিরতির মেজাজ। এই লোকটা যতরাগ সব কেন আমার জন্য হয় তাও জানি না। আর এখনই বা কেন হঠাৎ করে আমার উপর রেগে গেল তাও বুঝলাম মা। অপমানের ঘোরে ততক্ষণে আমার কান্নার বেগটা না চাইতেও যেন আরও বেড়ে গেল। আমি কিছু না করেও লোকটার কাছ থেকে ‘বেয়াদব ট্যাগ পেলাম। অথচ লোকটা বারবার আমাকে অপমান করেও তিনি আদবকায়দার মানুষ। আর আমি বেয়াদব।

সেদিন প্রচন্ড অপমানে অপমানিত হয়ে রিফাত ভাইকে নিয়ে ফিরে ছিলাম বাসায়। আমার সঙ্গে অবশ্য জুই ছিল। আরিফ ভাইয়া আমাদের সাথে আসতে পারেনি কারণ কোচিংয়ের স্যাররা নাকি কি আলোচনা সভা করবে রিদ খানের পরিবারের সাথে। এজন্য আরিফ ভাই সেদিন বেশ রাতে ফিরেছিল সেখান থেকে। কিন্তু আমার কান্নাকাটি দেখে রিফাত ভাইকে দিয়ে জুইকে তখনই পাঠিয়ে দিয়েছিল বাসায় আমার সাথে। আমার হঠাৎ কান্নার কারণটা অবশ্য জানতে চেয়েছিল সবাই, উত্তরের আমি শুধু পেটে ব্যথার কারণ বলে চালিয়ে দিয়েছিলাম তখন। রিদ খানের দাদা বাড়ি থেকে আসার সময় রিদ খানকে আর কোথায় দেখেনি। এভেন এখনো তার সাথে আমার দেখা হয়না। সেদিনের অপমানের কথা আমি ভুলিনি এজন্য অদৃশ্য অপছন্দের দেয়াল তৈরি হয়েছে রিদ খান প্রতি আমার। বলতে গেলে প্রচন্ড অপছন্দের অনিহার মানুষ রিদ খান আমার জীবনে এজন্য তাঁকে ঘিরে আজকাল আমার মধ্যে তিক্ততায় কাজ করে। তাছাড়া সেদিনের পর থেকে রিদ খানের সাথে আমার দেখা হয়না আজ চৌদ্দ দিন। উনাদের(রিদ) বাড়ি থেকে আসার একদিন পরই উনাকে(রিদ) আমাদের কলেজে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেখেছিলাম আমি। কি কাজে এসেছিল জানি না তবে চলে যাওয়ার সময় প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখলাম সাথে। আমাকে অবশ্য দেখেনি কারণ আমি আমার ক্লাসে ছিলাম। তৃতীয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় বারান্দায় বান্ধবীদের সাথে দাড়িয়ে ছিলাম বলে উনাকে দেখতে পেরেছিলাম। তবে উনাকে দেখে আমি নিজেকে যতোটা পারি আড়াল করে রেখেছিলাম। কারণ আমার ছোট মনে বেশ অনিহা ঝং ধরেছিল রিদ খানের জন্য বিশেষ করে লাস্ট যখন উনার বাড়ি থেকে আমাকে অপমান করে বেড়িয়ে যেতে বললো তখন থেকেই। এরপর থেকে রিদ খানকে নিয়ে আর ভাবতে বসেনি আমি। তবে এসবের মধ্যেও আমার অচেনার স্বামী খোঁজ করেছিলাম আমি। দূর্ভাগ্যবশত তাঁর খোঁজ আজও পেলাম না। কারণ হাফেজ সাহেবের নাম্বার এখনো বন্ধ পাচ্ছিলাম। তাই হতাশায় আজকাল হাফেজ সাহেবকেও কল করা কমিয়ে দিলাম। বলতে গেলে একেবারে কল করা হয়না উনাকে। তবে মনে মনে ঠিক করলাম এবার বাড়িতে গেলে বান্ধবীদের নিয়ে আবারও যাব নরসিংদী হাফেজ সাহেবের বাড়িতে। এবার হাফেজ সাহেবে খোঁজ করবো সুমন থেকে। কেন হাফেজ সাহেবের নাম্বারে কল যায় সেটাও জানতে চাইবো তবে এবার হাফেজ সাহেবের খোঁজ একা করবো না সাথে সুমন নামন ছেলেটির ফোন নাম্বারটাও নিয়ে আসব। কারণ আজ যদি সুমন নামক ছেলেটির নাম্বারটা বুদ্ধি করে নিয়ে আসতাম তাহলে এখন ফোন করে অবশ্যই জানতে পারতাম তার বাবার ফোনে কল যায় না কেন সেটা । আসলে’ চোর গেলে বুদ্ধি হয় ‘ একটা কথা আছে? ঠিক তেমনই হয়েছে আমার বিষয়ে। আমরা কেউ বুদ্ধি করে সুমন নামক ছেলেটির নাম্বার নেয়নি। ভাবলাম যেখানে হাফেজ সাহেবের নাম্বার আছে সেখানে অথযা সুমনের নাম্বার দিয়ে কি করবো? অথচ এখন বুঝতে পারছি আসলে সবই প্রয়োজন হয়। তখন বোকামি না করলে এখন আবারও যেতে হতো না নরসিংদীতে। এজন্য আজকাল আমার টিফিনের টাকা গুলো না খেয়ে জমিয়ে রাখছি ছোট পার্সের। সবার নরসিংদী যাতায়াত ভাড়া, দুপুরে খাবার বিল সব আমি দিবো বলে। যেহেতু আমার প্রয়োজনে সবাই যাবে সেজন্য বারবার ওদের পকেটে টাকা কেন খরচ করবে আমার জন্য? অবশ্য আমার তাদের খরচ বহন করা উচিত। কেউ তো আর রুজি করে না তাই না?
~~
বিয়ে মানেই আনন্দ মহল। একগাদা কার্জিনদের নিয়ে হৈ হুল্লোড় মাতামাতি পরিবেশ। হৈচৈ করে সবাই দল বেঁধে কার্লার মিলিয়ে শাড়ী, পাঞ্জাবি পড়ার উচ্ছ্বাস। ঘন্টা লাগিয়ে মন মতো সাজা। নতুন নতুন বিয়াই- বিয়াইন পাওয়া। দুলাভাইকে নিয়ে ঝামপেস আনন্দ করা। উফফ! অসংখ্য মূহুর্ত গুলো এক্ষুনিই আমার চোখে ভাসছে। আর ভাসবে নাই-ই বা কেন?
আমার বড় আপুর বিয়ে বলে কথা! কেউ ভাবতে পারছেন কতোটা খুশিতে ভাসছি আমি? মনের আনন্দে হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছি বলে আমার তো এক্ষুনি ক্লাস করতে মন চাচ্ছে না। অমনোযোগী হয়ে পরছি। কি এক অবস্থা! আসলে কাল বিকালে আম্মু ফোন করে জানাল আমার বড় আপু, মুক্তা ইসলামের বিয়ে, সেজন্য আরিফ ভাইয়া কাল রাতের ট্রেনই বাড়িতে গেল। কারণ ছেলে পক্ষ নাকি ইতিমধ্যে আপুকে পছন্দ করে গেছে। তাই এখন তাড়াহুড়ো করে সবাই আজকে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে চাচ্ছে। এজন্য মূলত বড় ভাই হিসাবে আরিফ ভাইয়ার বাড়িতে আর্জেন্টলি যাওয়া আরকি। আম্মু আরও জানাল সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই মাসেই আপুর বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে। ছেলে পরিবার ভালো! ছেলে ভালো এজন্য কারও আপত্তি নেই কোনো কিছুতে। বিয়েটা কথা শুনে আমি আর জুই তো পারিনা এক্ষুনি উড়ে চলে যায় বাড়িতে কিন্তু আমার আব্বুর কর্ড়া নিষেধ ‘ পড়ালেখা ছেড়ে ক্লাস মিস দিয়ে, কোনো ভাবেই বাড়িতে যাওয়া চলবে না। যেতে হলে অবশ্যই বিয়ের একদিন আগে যেতে হবে আমাদের। আর নয়তো না। উফফ! এতো কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা মানা যায় বলেন? মানুষ আনন্দের মূহুর্ত গুলোও কি হিসাব করে পালন করবে? আমি এখন আনন্দ করতে না পারলে বুড়ো বয়সে কি আমার মন চাইবে এসবের জন্য হ্যা? এই দিনটা আমি আর পাবো? বিষন্ন মনেই আরিফ ভাইকে রাতে বিদায় করলাম আমরা। এদিকে আপুর বিয়ের নিউজ পেয়ে আনন্দে আমি স্বামী কথাও ভুলে গেলাম। তাঁকে যে আমার খোঁজা মিশন বাকি সেটাও স্থগিত রাখলাম। আজকাল হাফেজ সাহেবের নাম্বারের তো ভুলেও কল দেয় না। মনে মনে ঠিক করলাম আপুর বিয়েটা শেষ হোক তারপর না-হয় নিজের হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে পুরো দমে আবারও খোঁজব। এখন থাক!

হা হা হা! আমার আজও মনে পরে সেদিনকার কথা গুলো। আপুর বিয়ের জন্য ‘ স্বামীকে খোঁজব না বলে’ আমার ‘থাক কথার চিন্তা ভাবনাটা ছিল আমার জন্য চরম ভুল। এজন্য আমি অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম আমার এই থাক কথাটার ভিত্তিতে ধরে অনেকেই কতোটা হেনস্ত হতে হয়েছিল। অবশ্য এর কুফল হিসাবে আমিও ছাড় পায়নি। কতোটা ভুক্তভোগী হয়েছিলাম সেকথা মনে পড়লে আজও আফসোস হয়। আমাকে কতো কিছুই না সহ্য করতে হয়েছিল এই ব্যাপারে সেটা একমাত্র আমিই জানি। উফফ কি এক ঘাড় ত্যাড়া মানুষ। না মুখে কিছু বলবে, আর না আমাকে সহজে ছাড় দিবে। কোনো কিছু মন মতো না হলেই আমার সাথে ঘাড় ত্যাড়ামি শুরু করবে ততক্ষণ যতক্ষণ না পযন্ত তার মন মতো হচ্ছে সবকিছু। মোট কথা ত্যাড়ামি আরেক নামই হলো আমার ব্যক্তিগত সে হা, হা, হা।

দুপুরে তপ্ত রোদে যখন চারপাশের সবকিছু খাঁ খাঁ করছিল সেই তপ্ত রোদের অতিষ্ঠ হয়ে একদল শিক্ষার্থীরা ক্যানটিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে হাতে স্পিড ক্যান নিয়ে। টেবিলে গোল করে সিনিয়র ছাত্র ছাত্রীরা বসে আড্ডার আসড় মেতে। সিনিয়রদের ভিড়ে আমরা জুনিয়রা মোটামুটি শান্ত ভাবেই বসে আছি খাবার অর্ডার দিয়ে। আসলে এই মূহুর্তে কলেজ ক্যানটিনে বসে আছি আমি। আমার সাথে একই টেবিলে জুই, শ্রেয়া, আর নাদিয়া বসা। নাদিয়া আমাদের নতুন ফ্রেন্ড। কিছুদিন হলো সে আমাদের সাথে উঠাবসা করছে। মেয়েটি খুব ভালো। ওর সঙ্গ ও আমাদের অনেক হাসায় তারজন্য হুট করেই ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলা। আমাদের এখন টিফিন টাইম চলছে বর্তমান সময় ১২ঃ৪৫ মিনিট। টিফিন টাইম শেষ ১ঃ৩০ মিনিটে। আমাদের হাতে আরও পয়তাল্লিশ মিনিট সময় আছে বলেই সবাই কলেজে ক্যানটিনে বসে যে যেটা পারছে অর্ডার করে খাচ্ছে। আমিও খাব তবে সেটা আমার টিফিনবক্সের আনা নুডলস হবে। বাকিরা সবাই শিঙ্গারা,সমুসা, ঠান্ডা, বা কোল্ড কফি অর্ডার করেছে নিজেদের জন্য। আমি বাসা থেকে টিফিন নিয়ে আসার প্রধান কারণই হলো নিজের পকেটে খরচ জমাচ্ছি স্বামিকে খোঁজা জন্য, এজন্য গাড়ি ভাড়া ছাড়া ভারতি এক টাকাও খরচ করি না এদিক সেদিক। কিন্তু জুই কোনো টিফিনবক্স বহন করে না। কারণ ওর পকেটের খরচ টাকা সবটাই ক্যানটিনে বসে খরচ করে। তবে ওহ একা নিজের জন্য কোনো কিছু অর্ডার করে না, আমার জন্যও সমান সমান অর্ডার দেয় সবকিছু। ঠান্ডা অর্ডার করলে দুটো করবে, কোল্ড কফি অর্ডার করলে দুটো করবে, আবার শিঙ্গারা অর্ডার করলেও আমার জন্য সমান সমান করে অর্ডার করবে। এজন্য মূলত আমি নিজের পকেটের টাকা বাঁচিয়ে রাখতে পারি। বড় বোন থাকলে এই একটা সুবিধা নেওয়া যায় ওদের থেকে। হোক জুই আমার ছয় মাসের বড় তাতে কি? বড় বোনের দ্বায়িত্ব পালন করতে বিন্দু মাত্র পিছুপা হয়না ওহ। খাবার অর্ডার করেই সবাই বসেছিলাম। আমি আশেপাশে একটু তাকিয়ে ব্যাগ থেকে টিফিনবক্সটা বের করে টেবিলের উপর রাখতে শ্রেয়া আমার হাত থেকে টিফিনবক্সটা কেঁড়ে নিজের কাছে নিতে নিতে বলল…

‘ আজ কি এনেছিস তুই?

আমি কি বলার আগেই জুই বলল…

‘ নুডলস বানিয়েছিলাম সকালে।

‘ দে একটা চামচ দেতো!

আমি ব্যাগ খুলে এক্সট্রা চারটা চামচ বের করলাম। কারণ রোজকার কান্ড এটা। আমার একা টিফিনবাক্স চারজনে ভাগ করে খায়। আমি চামচ বের করে তিনজনকে তিনটা দিয়ে নিজের জন্য একটা রাখলাম। আমার ব্যাগটা পাশের চেয়ারে রেখে ওদের দিকে তাকাতেই দেখলাম সবাই ইতিমধ্যে খাওয়ার শুরু করে দিয়েছে টেবিলের মধ্যস্থে বক্সটা রেখে। আমি সেখান থেকে এক চামচ নিয়ে মুখে তুলতেই নাদিয়া নুডলস খেতে খেতে বলল…

‘ মায়া কাল পিঠা বানিয়ে আনিস তো টিফিনবক্সে করে।

জুই বক্স থেকে এক চামচ নুডলস মুখে দিতে দিতে নাদিয়া কথার উত্তর করলো…

‘ ওহ পিঠা পছন্দ করে না। এজন্য ওহ পিঠা খায়ও না, বানাইও না।

জুইয়ের কথায় আহাজারি করে বলে উঠল শ্রেয়া।

‘ কি সর্বনাশ! পিঠা পছন্দ করে না এমন পাবলিক আছে দুনিয়াতে? এই মায়া তুই পিঠা পছন্দ করিস না কেন?

শ্রেয়ার আহাজারিতে নুডলস চিবাতে চিবাতে বললাম…

‘ কোনো কারণ নেই। এমনই ভালো লাগে না আরকি।

‘ কি বলিস এসব দোস্ত? তাহলে তো এই চট্টগ্রামের স্হানীয় পোলাপাইনদের সাথে প্রেম আর বিয়ে দুটোই করতে পারবি না। দুটোতেই তোর জন্য হরতাল! এতো বড় কলেজে পড়েও যদি চট্টগ্রামের একটা প্রেম করতে না পারিস তাহলে ইজ্জত থাকবে বল?

শ্রেয়ার কথায় নাদিয়াও সম্মতি জানায় কথা গুলো বলল। কারণ দুজনই চট্টগ্রামের স্হানীয় বাসিন্দা। তবে জুই খানিকটা আপত্তি করে নাদিয়ার কথার উত্তরে বলল…

‘ পিঠার সাথে প্রেম, বিয়ের কি সম্পর্ক ওর?

জুইয়ের কথায় আমি সহমত প্রকাশ করলাম না। বরং চুপ থেকে নাদিয়ার কথার মানে খানিকটা বুঝতে পারলাম কারণ আমার নিজের নানুবাড়িও এই চট্টগ্রামে। এজন্য আমি জানি চট্টগ্রামের কালচার কেমন! এরা যে কতোটা সমাজবাদী মানুষ সেটা আর না বললাম। এখানে স্হানীয় মানুষদের ভাড়াটিয়ারা জমিদার বলে সম্ভোধন করে। অংহকার তাদের রক্তের শিরায় শিরায় ধার্য। শ্রেয়া নুডলস চিবোতে চিবোতে জুইয়ের কথার উত্তরে বলে…

‘ উহুম! পিঠা সাথে মায়ার কোনো সম্পর্ক নাই থাকতে পারে তবে পিঠার সাথে এই চট্টগ্রাম বাসির গভীর সম্পর্ক রয়েছে বুঝলি। চট্টগ্রামের এমন কোনো পাবলিক খোঁজে পাবি না তুই, যারা পিঠা পছন্দ করে না। এমনকি চট্টগ্রামের বিশেষ রীতি হলো তাঁরা মেহমানদারি করতেও সর্বপ্রথম তোকে পিঠার নাস্তা দিবে বিভিন্ন রকমের। এখানে তুই যত বেশি পিঠার আইটেম বানিয়ে মেহমানদারি করবি, তুই ততবেশি সমাজ ওয়ালা লোক হবি। অন্যান্য এলাকার মানুষ শখের বশে বা মন চাইলে মাসে, বছরের বা পিঠার সিজনে পিঠা বানিয়ে তারা খেতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু এই চট্টগ্রামের মানুষদের বাসায় তুই অতি বারো মাস পিঠার উৎসব পাবি। সকালে বা বিকালের নাস্তায় মাস্টি বি পিঠার নাস্তা থাকবে। মোট কথা এখানকার ছেলের বউদের অবশ্যই পিঠা বানানোর মতো বড়গুণ থাকতে হবে। নয়তো শশুর বাড়ির মানুষের খোঁটা ফ্রীতে শুনবে যে তোমরা সমাজ জানো না। আর যদি তুই চিন্তা করিস যে এখানকার ছেলেদের সাথে প্রেম করবি, তাহলেও তোকে পিঠার বিভিন্ন নাস্তা বানানোর মতো পারদর্শী হতে হবে। কারণ এরা দুইদিন পরপর তোর কাছে পিঠা খাওয়ার আবদার রাখবে। এজন্য বলছিলাম যদি চট্টগ্রামে প্রেম, বা বিয়ে করার মতো ইচ্ছা থাকে তাহলে অবশ্যই পিঠা বানানোর মতো বড়গুণ অবশ্যই থাকতে হবে মাস্ট।

শ্রেয়ার দীর্ঘ কথার ইতি টানতেই আমি মাছি তাড়ানোর মতো বাতাস করলাম মুখের সামনে। বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বললাম…

‘ তাহলে তুই নিশ্চিত থাক এই শহরের মানুষের সাথে আমার কিছুই হবে না। কারণ আমার বিয়ে করার হলে অবশ্যই আমাদের এলাকায় কাউকে দেখে করবো। আমি হলাম কাম-চোর মানুষ, পিঠা বানানোর মতো এতোবড় রিস্ক কখনোই আমি নিতে পারবো না দোস্ত। তাছাড়া আম…

ধ্রাম’ শব্দে টেবিলসহ নুডলসের বাটি ছিটকে পড়লো আমার গায়ে, চেয়ারসহ তৎক্ষনাৎ উল্টে পরলাম ফ্লোরে। আমার কোমরে উপর পরলো কাঠের টেবিল। আহত হলাম বেশ। ব্যথায় যখন কুঁকড়িয়ে উঠলাম। তখন কেউ একজন আমাকে পুনরায় ব্যথা দিয়ে, আমার হাতের উপরে পরলো রক্তাক্ত অবস্থায়। সেকেন্ডর মাঝে চারপাশে হৈচৈ লেগে গেলো। আড্ডার মহলটা মূহুর্তেই টানটান উত্তেজনায় চেয়ে গেল। বিষন্ন ভয়ার্ত হলো পরিবেশটা। কারণ আকস্মিক ঘটনার প্রভাবে আমি তখনো বুঝে উঠতে পারছিলাম না হঠাৎ কি হলো আমার সাথে। আর কেনই বা আমি ফ্লোরে পরে গেলাম? অতি শকটে তব্দা মেরেছিলাম চারপাশে কি হচ্ছিল কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শুধু কিছু মানুষের চিৎকারের গুঞ্জন শুনতে পারছিলাম। আমি মাথা তুলে শূন্য দৃষ্টিতে পাশে তাকালাম দেখলাম এক যুবক আমার বামহাতে উপর রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে মাথা দিয়ে, ছটফট করছে মৃত্যু যন্ত্রণায়। ছেলেটির মাথা, কপাল, নাক, ঠোঁট ফেটে গলগল করে রক্ত ঝরছে। অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না ছেলেটিকে সাহায্য করতে। রক্তে আমার সাংঘাতিক ফোবিয়ার যার দারুণ তখনই বাকশক্তি হারায় কথা বলা থেকে। কষ্ট করেও যখন মুখের কিছু বলতে পারছিলাম না শুধু গরগর শব্দ হচ্ছিল তখনই বুঝতে পারলাম আমি কথা বলার শক্তি হারিয়েছি। জুই, শ্রেয়া, নাদিয়া ওরা কোথায় ছিল তাও বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমার চারপাশে পরিস্থিতিটা হঠাৎ করে এতোটা ভয়াবহ হয়ে গেল যে চারপাশে শুধু চাপা হা হাকারের চিৎকার ভেসে আসছিল আমার কানে। আমি শূন্য মস্তিষ্কের আবারও আমার সামনে পরে থাকা ছেলেটির দিকে তাকালাম। শরীরে তার অসংখ্য আঘাতে চিহ্ন। কেউ মেরেছে বেদুম বুঝাই যাচ্ছে। দৃষ্টি আমার তখনো আহত ছেলেটির উপরই ছিল কিন্তু মূহুর্তের মাঝে আবারও কানে আসল কিছু মানুষের হুংকারের চিৎকার। আমি চোখ উঠিয়ে সামনে তাকালাম। চোখে ভাসলো কিছু তাগড়া যুবক হাতে হকিস্টিক নিয়ে হুংকারের চিৎকার ছেড়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে আমার পাশে পরে থাকা রক্তাক্ত যুবকটিকে মারতে। নিবাক, বাকরুদ্ধ, ভাষাহীন আমি তখনো নিশ্চল শরীরে জায়গায় উপুড় হয়ে পরে রইলাম অতি শকটে। আমি এতোটাই হতভম্ব হয়ে পরেছিলাম যে আমাকে এখান থেকে পালানো উচিত সেটাও মাথায় কাজ করছিল না। বলতে গেলে তব্দা মেরে ছিলাম, আশেপাশে কি হচ্ছিল তখনো মাথা ঢুকছিল না কিছু। অতি শকটে কেমন পাথর মূর্তি হয়ে গেলাম। আমার কপালের ঘাম আর চোখে পানি দুটোই এক হয়ে ঝরতে লাগলো চিবুক বেয়ে। আমার দৃষ্টি তখনো আমার পাশে ছটফট করা শরীরের উপর। কি বেদুম নির্দয়ভাবে পেটানো হচ্ছে তাঁকে হকিস্টিক দিয়ে। সাত-আটজন ছেলে লাগাতার একের পর এক আঘাত করছে দু’হাতে হকিস্টিক তুলে পিটিয়ে অথচ আমি তাদের পাশেই পরে ছিলাম। সবকিছু এতো দ্রুত ঘটেছে যে আমি সুস্থ মস্তিষ্কে কিছু ভাবার মতো সময় পাইনি। তবে একটা সময় দেখলাম সবকিছু কেমন শান্ত হয়ে গেছে। রক্তাক্ত ছেলেটাকেও আর পেঠানো হচ্ছে না। সবাই কেমন দুপাশ করে দাঁড়াল আহত ছেলেটিকে ঘিরে, যেন কারও আসার জন্য অপেক্ষা তাদের। ঠিক তার পর মূহুর্তে বুঝলাম আমার উপর থেকে কারা যেন কাঠের শক্ত টেবিলটা সরিয়ে আমাকে টেনে ধরে ফ্লোরের থেকে উঠাচ্ছে। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে শূন্য চোখে পাশে তাকিয়ে দেখলাম জুই কান্নাকাটি করছে আমাকে আঁকড়ে ধরে। হঠাৎ জুঁই কেন কাঁদছে তখনো বুঝলাম না। তবে আমি দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছিলাম না হয়তো পায়ে আর কোমরে লোহার আর কাঠের সংমিশ্রত টেবিল-চেয়ারের ভারি খেয়েছি বলে তাই। এজন্য জুইয়ের সাথে সাথে আমাকে আঁকড়ে ধরল শ্রেয়া আর নাদিয়াও। টেনশনে জুই বারবার কাঁদতে কাঁদতে শ্রেয়াকে কিছু একটা বলছিল আমি কথা গুলো শুনতে পারছিলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না। জুই বারবার বলছিল, ‘ শ্রেয়া এখান থেকে ওকে বের করতে হবে। অনেকটা রক্ত বের হচ্ছে ওর। প্লিজ কিছু একটা কর। ওর রক্ত ফোবিয়ার আছে বেশিক্ষণ এখানে থাকলে সমস্যা হবে।

জুইয়ের আহাজারি কথা গুলো কানে আসছিল কিন্তু বুঝার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না। কারণ আমার দৃষ্টি ততক্ষণে গিয়ে ঠেকলো সামনের গম্ভীর মুখোর রিদ খানের উপর। কি দারুণ শান্ত ও গম্ভীর তার মুখখানা। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে এখানের বর্তমান পরিবেশটাও বেশ শান্ত ও শীতল এজন্য তিনিও গম্ভীর মুখে শোক পালন করছে এখন। অথচ উনার বামহাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝড়ছিল। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিটাতেও রক্তের ছিটায় রঞ্জিত। নিশ্চয়ই মারামারি করতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে তার! হবার কথা! আমার সাথে প্রথম দেখার দিনই উনার দাদা বলেছিল, রিদ খানের মুখ কম হাত চলে বেশি, আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। উনি হয়তো তখনো আমাকে লক্ষ করেনি। উনার পিছনে বেশকিছু বডিগার্ডসহ আসিফ নামক লোকটা দাঁড়িয়ে। তখনই হকিস্টিক হাতে এক যুবক রিদ খানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো…

‘ ভাই একবার বলেন এরে কি করবো? শালারে পুলিশের দিইয়া কিছু হবে না। দুইদিন পর ঠিকই বের হয়ে যাবে। তার চেয়ে বলেন ওরে মেরে ফেলি। শালার সাহস কিভাবে হয় আপনারে আঘাত করার।

একজনের কথার সায় জানাল আরেক জন। পাশ থেকে অন্যজন ঠিক একই ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে উনার(রিদ) উদ্দেশ্য বললো…

‘ জ্বিই ভাই! শুধু একবার বলেন! শালার বিষদাঁত বাইর করি মাইরা। হে কতো বড় সাহস আপনারে মারতে আসে। আবার আপনার বাপের সাথেও বেয়াদবি করছে। শালারে মন তো চাচ্ছে!

ছেলেটির কথা থামতেই হৈ হুল্লোড় করে বাকিরাও সম্মতি দিল। আহত ছেলেটিকে পুনরায় এলোপাতাড়ির লাথি মেরে আঘাত করতে নিষেধ করলো উনি(রিদ)। বেশ শান্ত দৃষ্টিতে রক্তাক্ত ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বেশ গম্ভীর মুখে ডানহাত দিয়ে বামহাতের পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বলল…

‘ দেখ! আমি সহজ সরল মানুষ বেশি কাহিনি পযন্ত না। এমনই আমি সমাজে বদনাম! তাছাড়া মানুষ নিজের এলাকায় সবাই বাঘ হয়। কিন্তু সিংহ তো তখনই হবি যখন তোরা ওকে ওর এলাকায়, ওরই নেতার দুয়ারে গিয়ে মেরে আসবি। আমার মনে হয় আমার ছেলেরা হিংসের থেকে কম নয়। বাকি তোদের সেফটি সিকিউরিটি আমার হাতে।

রিদ খানের বলতে দেরি হৈ হুল্লোড় করে ছেলেরা সম্মতি জানাতে দেরি হয়নি। কি নিদারুণ নিষ্ঠুর মানুষ রিদ খান। কারও আঘাতেও মন নরম হলো না উনার। অঝোর রক্তের স্রোত দেখেও বিন্দুমাত্র ঘাম ঝরল না তার কপাল বেয়ে। কতোটা পারদর্শী হলে মানুষ এমন শক্তপোক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে তা আমার জানা নেই। উনার লাঠিয়াল বাহিনী যখন আহত ছেলেটিকে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই উনার বেখেয়ালি দৃষ্টিতে ভিড়লাম আমি। সে আরও কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল আমাকে দেখে। তাঁর শান্ত দৃষ্টি হঠাৎ কুঁচকে এলো যখন দেখল আমাকে জুই, শ্রেয়া আর নাদিয়ার আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তখন। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আবারও ঘুরালো আমার পা থেকে মাথা অবধি। হয়তো দেখছে তার দয়াই আমার আহত শরীরটার পরিণতি। এবার নিশ্চয়ই খুশি হবেন তিনি। হবারই কথা। এতোদিন শুধু মুখে অপমান করতো আজ শরীরে আঘাত করতে পেরেছে বলে তার আজ খুশিদিন হবার কথা? কারণ আমিও তো তার শত্রুর দলের একজনই হয়। সেতো আমাকে তার শত্রুর মনে করে আসছে এতোদিন। আর শত্রুর আহতের মানুষ খুশিই হয়। তাই সেও হচ্ছে! এই নিয়ে পঞ্চম বারের মতো তার সাথে আমার দেখা প্রতিবারের চেয়ে এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন। এবার অপমানের সাথে সাথে তার হিংস্রত্বের শিকার হয়েছি আমি সমান ভাবে। আমার সারা শরীর নুডলসে মাখোঁ মাখোঁ। সাদা কলেজ ডেসটা রক্ত আর নুডলসের তৈলে মাখোঁ মাখোঁ। জুই কেঁদে কেঁদে আমার শরীর থেকে নুডলস ফেলছে আর বারবার কিছু একটা বলছে আমার উদ্দেশ্য। আমি সঠিক বুঝতে পারছি না। কারণ আমার নিশ্চল দৃষ্টি তখনো রিদ খানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির উপর। উনি আমার চেহারায় এতো কি দেখছে বুঝলাম না! তবে জুই হঠাৎ করে আমার কপালে কিছু একটা চেপে ধরতেই তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম আমি সেখানে! ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। মস্তিষ্ক সচল হলো। কপালে আলতো হাত বুলিয়ে হাতটা চোখের সামনে ধরতেই বুঝলাম আমার কপাল কেটে যাওয়াতে এমন বিলাপ করে কাঁদছে জুই। কিন্তু হঠাৎ করে আমার কপালটা কিটলো কিভাবে? ভাসা ভাসা চোখে নিচে তাকিয়ে দেখলাম আমার হাতের কাটা চামটাতে রক্ত লেগে ফ্লোরে পরে আছে। বুঝতে পারলাম তখন উল্টে পরে যাওয়াতে সেটা দিয়েই হয়তো কপাল কেটেছে আমার। এতোসব রক্তাক্ত কাহিনি দেখে এতক্ষণ ঠিক থাকলেও এবার নিজের রক্ত ঝরা দেখে শরীর ছেড়ে দিলাম। শূন্য দৃষ্টি আধার করে আনতেই অনুভব করলাম জুইয়ের সাথে সাথে এবার শ্রেয়া আর নাদিয়াও চিৎকার করে আমাকে ঝাপটে ধরছে নিচে পরা থেকে বাঁচাতে। তারপর? তারপর কি হলো আমার মনে নেই? আর না কোনো কিছু বুঝার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না। শুধু জ্ঞান হারাতে হারাতে দেখেছিলাম রিদ খানের অনল দৃষ্টি আমার উপর।

(কাল রাতেই দিতাম কিন্তু লেখতে লেখতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই দিতে পারিনি। সকাল থেকে কারেন্ট ছিল না। মাত্রই আসল)

#চলিত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here