রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
১৫
রিদের থাপ্পড় খেয়ে বাসায় ফিরে কান্নাকাটিতে হুলুস্থুল পাকিয়ে রেখেছে মায়া। চট্টগ্রামে থাকবে না মানে থাকবেই না। যে করেই হোক মায়া আজই ফিরতে চায় আশুগঞ্জ। এখানে আর নয়। মায়া হঠাৎ জেদের কান্নাকাটিতে অতিষ্ঠ মায়ার মামা সেলিম সাহেব ও তার মা ফুলবানু। জুইও খানিকটা বিরক্তির সহিত দাঁড়িয়ে আছে ফোন হাতে নিয়ে। ভিডিও কলে আছে আরিফ। মায়াকে বারবার এটা সেটা বলে বুঝাতে চাচ্ছে কিন্তু জেদ্দি মায়া সেইসব শুনতে নারাজ। রাতের ট্রেনে চট্টগ্রামে আসতে না আসতেই সকালের ট্রেনে আবার চলে যাওয়ার জেদ ধরার কারণটাও ঠিকঠাক করে কাউকে বলছে না মায়া। আর না রিদের কিছুক্ষণ আগের থাপ্পড় দেওয়া বিষয়টা কাউকে জানাচ্ছে। শুধু কান্নাকাটি করে বারবার বলছে সে চট্টগ্রামে থাকবে না। বাড়ির সবার জন্য মন পুরছে, সেজন্য বাসায় ফিরে যেতে চায় মায়া। মায়ার এমন যুক্তিহীন কারণটা কারও কাছে প্রযোজ্য নয় বলেই উপস্থিত সবাই বিরক্ত মায়ার উপর। কিন্তু অসহায় মায়া কান্নার কারণে ঠিকঠাক কথাও বলতে পারছে না শুধু হিচকি তুলে কেঁদে কেঁদে বারবার বলছে ‘ সে এই চট্টগ্রামে থাকবে না। এখানে পড়াশোনাও করবে না। বাসায় চলে যেতে চায়” মায়ার হুলুস্থুল কান্নাকাটির মাত্রা প্রহর হতেই জুই এক প্রকার বাধ্য হয়ে আরিফকে কল দেয়। আরিফ তখন থেকে মায়াকে বুঝাচ্ছিল শান্ত হতে। মায়া শুনতে চায় না বলে এজন্য বেশ কয়েকবার ধমকালো, কিন্তু তাতে মায়ার কান্না আরও বেড়ে গেল। এতে বিপাকে পরে গেলো সবাই। আরিফ নিজেকে শান্ত করে জুইকে বললো, মায়ার হাতে ফোনটা দিতে। জুইও তাই করলো। এক প্রকার জোর করে মায়ার হাতে ফোনটা গুঁজে দিল। মায়া কাঁদতে কাঁদতে ফোন কোলে নিয়েই বসে থাকলো তবও হাতে নিল না। আর না ফোনের দিকে তাকিয়ে আরিফের কথা শুনতে চাইল। আসিফ মায়ার কান্নাকাটিতে হতাশার ভারি নিশ্বাস ফেলে মায়াকে বুঝানোর উদ্দেশ্য ফের বললো,, এই মূহুর্তে পরিবারের সবার মনে অবস্থা ভালো নেই মুক্তা বিয়ে পিছিয়ে যাওয়াতে, সবাই টেনশনে আছে। তাই এখন যদি মায়া পড়বে না বলে জেদ করে বাসায় ফিরে যেতে চায় তাহলে মায়ার বাবা-মা আরও টেনশনে পরে যাবে। তখন দেখা যাবে টেনশনে টেনশনে মায়ার বাবা যদি অসুস্থ হয়ে পরে তখন কি মায়ার কষ্ট লাগবে না?
আরিফের বুঝদার কথা গুলো মায়ার মনে ধরতেই মায়ার কান্নাকাটি খানিকটা কমে আসলো। কোল থেকে ফোনটা হাত তুলে মুখ বরাবর ধরলো, ধীরে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো,’ মায়ার ভিষণ কষ্ট লাগবে। আসিফ হাল্কা হেসে মায়াকে ফের বুঝিয়ে বললো.’ আরিফ চট্টগ্রামে কয়েকদিনের মধ্যে ফিরে আসবে। তখন মায়ার ট্রান্সফারের বিষয়ে কথা বলবে কলেজে। এখন কান্নাকাটি না করতে।
মায়া কান্না কমে আসলে উত্তর করলো…
‘ সত্যি তো? ট্রান্সফার করাবে আমাকে, পরে মন বদল করবে নাতো?
আরিফ হেঁসে উঠে মায়াকে আশ্বস্ত করে বলল..
‘ তিন সত্যি আমার মন বদল হবে না। আগে ভাইকে চট্টগ্রামে আসতে দে তারপর ট্রান্সফার করাবো? ততদিন লক্ষী মেয়ের মতো থাকবি। নানুকে জ্বালাবি না কেমন?
মায়ার কান্না সম্পূর্ণ থেমে গিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো…
‘ আচ্ছা!
‘ আচ্ছা ভাই রাখছি। তোরা ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে। কান্নাকাটি করে চোখে-মুখের কি অবস্থা করেছিস তুই। মুখের মাক্সটা পযন্ত খুলিসনি। যাহ আগে গিয়ে ফ্রেশ হ আজকে কলেজে যাওয়ার দরকার নেই। সারারাত জার্নি করেছি খেয়েদেয়ে একটু ঘুমাবি কেমন?
‘ আচ্ছা!
‘ আচ্ছা নানুকে ফোনটা দে।
হাত বাড়িয়ে ফোনটা ফুলবাবু হাতে দিতে দিতে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়াল মায়া। তিনি ফোনটা হাতে নিয়ে আরিফের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছুটলো রান্না ঘরে দিকে আপাতত সবার জন্য চা করতে। সেলিম সাহেব সোফায় বসা ছিল। মায়ার কান্না থেমে যেতে দেখে মায়ের কাছে চা চাইলো। মায়া ড্রয়িংরুমে থেকে উঠে নিজেদের রুমের দিকে যেতেই মায়ার পিছন পিছন জুইও গেল। মায়া রুমে ঢুকে মাথার হিজাব আর মাক্স খুলতেই জুইয়ের চোখে দৃশ্যমান হলো রিদের থাপ্পড় দেওয়া লাল দুটো গাল। যেখানে স্পষ্ট পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে গিয়ে ফুলে আছে খানিকটা। মায়ার গালে অবস্থা দেখেই আতঙ্কের নেয় মৃদু চিৎকার করে উঠল জুই। তৎক্ষনাৎ এগিয়ে গিয়ে মায়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মায়ার গাল দেখে অস্থিরতায় প্রশ্ন করতে লাগলো একটার পর একটা। মায়ার গাল দেখে জুই চট করে বুঝে ফেললো কেউ মায়াকে নির্দয় ভাবে মেরেছে। কে বা কারা মায়াকে এমনভাবে মারলো জানতে চাইলে প্রথমে মায়া বলতে চায়নি রিদের নামটা। কিন্তু জুইয়ের ব্ল্যাকমেইল করে আরিফের ভয় দেখাতেই গরগর করে সবটা বলে দিল মায়া। বিনা কারণে রিদের মায়াকে আঘাত করাটাও পছন্দ হলো না জুইয়ের। সেজন্য জন্য জুই বেশ অনেকটা চেতে গেল রিদের উপর। রাগের মাথায় ছুট এটা সেটা বলে রিদকে গালমন্দও করলো। কখনো রিদের মুখোমুখি হলে অবশ্যই জানতে চায়বে কেন মায়াকে এমন ভাবে মারলো সেটা। সেদিনকার মতোন জুই বা মায়া কেউ আর কলেজে যায়নি। সারারাত জার্নি করার পর সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাল দুইবোন। সেলিম সাহেব সকালে নাস্তা করেই চলে গিয়েছিল কিন্তু মায়া নিজের গাল ওড়নার আঁচলে লুকিয়ে রাখলো সারাটা দিন যার দারুণ কারও চোখে পরলো না রিদের থাপ্পড়ের বিষয়টি। আর না মায়া কাউকে জানাল রিদ ওকে মেরেছে সেটা। জানাশুনার মধ্যে শুধু মাত্র জুই-ই জানতো ব্যাপারটা। তবে সেদিনকার মতোন মায়া আর রিদ দুজনের কারও সঙ্গেই দেখা হলো না একে অপরের। কিন্তু ভাগ্য ফেরে মায়া না চাইতেও রিদের দেখা পেয়ে গেল পরদিন। তাও কলেজের রাস্তায়। ভয়ার্ত মায়া রিদের ছায়াও মারাতে চায়নি বলে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু রিদের ঈগলের চোখে যেন তৎক্ষনাৎ ধরা পরে গেল সে। এক মূহুর্তে জন্য মায়ার মনে হলো রিদ যেন মায়ার অপেক্ষায় রাস্তায় বসে ছিল আয়োজন করে।
~~
সকাল ৪ঃ১৫। তীব্র অনিহা নিয়েই রিকশায় চড়ে বসল মায়া। কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু জুইয়ের জোড়াজুড়িতে যেতে হচ্ছে নয়তো সে কখনোই একা একা কলেজে যাওয়ার মেয়ে না। জুই অসুস্থ। কোমরে ভিষণ ব্যথা তাই আজ সে যাবে না সাদা ড্রেস পরে। মায়াও চেয়েছিল জুইয়ের সাথে সাথে না যেতে কিন্তু পারলো না। বিগত কয়েক দিনের বন্ধের জন্য কলেজের অনেক পড়া জমে আছে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই মায়াকে কলেজে যেতে হচ্ছে। বাসা থেকে কলেজের রাস্তা পায়ে হেঁটে গেলে পনেরোমিনিট। আর রিকশার করে গেলে পাঁচ-সাত মিনিটের মতোন লাগবে। মন খারাপের উদাসীন মায়া কোলের উপর বই পত্রে ব্যাগটা চেপে ধরে বসে থাকল থ মেরে। রিকশা চললো আপন গতিতে। চেনা পথ চেনা অলিগলি। কোনো কিছুই অজানা নয়। মূলত কয়েকদিনের বন্ধে পড়াশোনা প্রতি অমনোযোগী ছাত্রী মতোন আশপাশটা চোখ বুলাচ্ছিল উদাসীনতায়। দেখতে দেখতে হঠাৎই চমকে উঠার নেয় আতঙ্কে দ্রুত রিকশা হুট তুললো। মুখে মাক্স ঠিক করে তৎক্ষনাৎ রিকশা পিছনে মাথাটা এলিয়ে লুকিয়ে পরলো চোখ হিচে বন্ধ করে কারও ভয়ে। আর মনে মনে আল্লাহ, নাম জবতে জবতে দুয়া করতে লাগলো যাতে, সেই মানুষটার সম্মুখে ধরা না পরে যায়। উত্তেজিত মায়ার মনের দোয়া একটা সময় মন থেকে মুখের বুলি হয়ে আওড়াতে লাগলো মৃদু স্বরে। মায়ার চলন্ত রিকশা হঠাৎ থেমে যেতেই ধ্যান ভাঙ্গে ওর। উত্তেজনায় মায়া মনে করলো হয়তো ওহ কলেজ গেইটে পৌঁছে গেছে তাই আশেপাশে চেক না করেই আতঙ্কের নেয় লাফিয়ে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কাঁধে ব্যাগ জুলিয়ে তৎক্ষনাৎ ছুটলো সামনে। দ্রুত পা চালিয়ে পরপর কয়েক কদম হাঁটা মধ্যেই আকস্মিক মায়ার কাঁধের ব্যাগটা পিছন থেকে কেউ টেনে ধরতেই আটকে যায় মায়া। কেউ হেয়ালি গলায় সুর তুলে বলে…
‘ কি ম্যাডাম? এতো তাড়া কিসের কই যান?? আমাদেরকেও একটু সময় দিয়ে যান।
পরিচিত কন্ঠে কানে আসতেই মায়া ভয়ার্ত হয়। চোখ মুখ হিচে বন্ধ করে নেয়। নত মস্তিষ্কের পিছনে ফিরেই মৃদু গলায় আওড়ায়…
‘ ছাড়ুন! আমি কলেজে যাব!
মায়ার কথায় খানিকটা কপাল কুঁচকে আসে রিদের। তীক্ষ্ণ গলায় বলে…
‘ ছাড়ুন মানে? এখনো তো ধরাধরিই করলাম না ছাড়বো কেন?
রিদের কথায় নাক ছিটকালো মায়া..
‘ ছিঃ কি বাজে আপনি! ব্যাগ ছাড়ুন আমার। যাব আমি।
মায়ার কথায় রিদের হাতটা আরও শক্ত হয়ে আসে মায়ার ব্যাগে। রিদ মায়ার ব্যাগ টেনে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করাতে করাতে বললো…
‘ অবশ্যই ছাড়বো ম্যাডাম! তার আগে আপনার সাথে আমার হিসাব নিকাশ শেষ করি তারপর। শুনলাম আপনি নাকি আমাকে অমান্য করে চলেন? আমার পিছনে বাজে কথা বলেন। ঘটনাটা কি সত্যি?
রিদের পরপর আচরণের মায়ার ভয়ে সাথে সাথে রাগও হচ্ছে ভিষণ। কেন রিদ বারবার মায়ার পিছনেই লাগতে আসে সেটা আজও বুঝতে পারেনি মায়া। কিসের এতো শত্রুতামি রিদের সাথে মায়ার তাও জানে না। তাই রাগান্বিত মায়া খানিকটা তেজ দেখিয়ে রিদকে শুধালো…
‘ বেশ করেছি, বলেছি। দরকার পরলে আরও বলবো। আপনি আসলেই একটা বাজে মানুষ। ব্যাগ ছাড়ুন!
মায়ার তেজ দেখানোটা রিদের বরাবরই পছন্দ না। তাই রিদ রাগে কটমট করে মায়ার ব্যাগ ছেড়ে তৎক্ষনাৎ মায়ার দু-হাত বাঁধে রিদের একহাতে মধ্যে, আসিফকে ডেকে বললো…
‘ আসিফ আমার বন্দুকটা দে তো? দেশদ্রোহী বাঁচিয়ে লাভ নেই। আমার এলাকায় থেকে আমার নামই বদনাম করার বিষয়টা হজম হচ্ছে না। সব রাজাকার বংশ আজই মেরে সাফ করে ফেলবো। আমাকে বাজে বলা আজই বের করছি। দে বন্দুক দে আমার।
রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ জ্বি ভাই ‘ উত্তর করে ছুটলো আসিফ। চোখের পলকে গাড়ি ডেস্কে থেকে বন্দুক নিয়ে হাজির হলো রিদের সামনে। মায়া আসিফকে রিদের হাতে বন্দুক তুলে দিতে দেখে ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো তখনই। আসিফ চমকে উঠে মায়ার দিকে তাকালেও রিদ বিরক্তি চোখে আশেপাশে তাকায়। সকাল হওয়ায় আশেপাশে মানুষজন বেশ আছে। মায়া এমন মরার কান্নায় রাস্তায় সিনক্রিয়েট হতে পারে বলে রিদ তৎক্ষনাৎ ধমক লাগায় মায়ার উদ্দেশ্য।
‘ এই মেয়ে চুপ! চুপ! চুপ! মরার কান্না করছো কেন? আমি কিছু করছি হ্যা? চোখে এতো পানি আসে কোত্থেকে? চুপ করো নয়তো এই বন্দুকের সব-কয়টা গুলি তোমার পেটে চালান করবো এক্ষুনি। চুপ!
মায়া ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না আটকাতে চায়। কিন্তু চোখ দিয়ে অনর্গল পানি ঝরছে রিদের হাতের বন্দুকের ভয়ে। এই প্রথম কারও হাতে বাস্তবিক বন্দুক দেখলো মায়া। তাও ওকেই মারতে? সাংঘাতিক না বিষয়টা? অবশ্যই সাংঘাতিক! রিদ মায়ার দু’হাত আড়াআড়ি অবস্থায় নিজের একহাতে আটকে অপর হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে। নত মস্তিষ্কের মায়া নিশ্চুপ কাঁদতে লাগলো। যাও একটু সাহসী হয়ে উঠেছিল মায়া রিদের সব কথার উত্তর করবে ভেবে। সেই সবটুকু সাহস ফুশ হয়ে যায় মূহুর্তেই রিদের হাতে বন্দুক দেখে। রিদ মায়াকে নিশ্চুপ কাঁদতে দেখে খানিকটা মায়া হলো। গলার রাগ কমিয়ে শাসন করে বলল…
‘ আর আমার সাথে তেজ দেখাবে? ত্যাড়ামি করবে কখনো?
মায়া মাথা নাড়িয়ে ‘ না’ বুঝায়। তখন রিদ মায়া হাত ছেড়ে দিতে দিতে বললো…
‘ ভেরি গুড গার্ল। এবার আমাকে সুন্দর করে আদবের সহিত সালাম দেন। এলাকার সিনিয়র বড় ভাইদের সালাম দিয়ে চলতে হয় জানেন না সেটা?
ছাড়া পেয়ে মায়া কাঁদতে কাঁদতে একহাত কপালে তুলে হাল্কা তুতলিয়ে রিদকে সালাম দিল…
‘ আ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!
মায়ার সালাম শেষ হতে না হতেই রিদের ধমকে ফের চমকে উঠলো মায়া। রিদ ধমকে বললো…
‘ এই বেয়াদব মেয়ে! ভাইয়া কি হ্যাঁ? কোন কালের পাতানোর বোন তুমি আমার? ভাইয়া ডেকে আত্মীয়তা সম্পর্ক বাড়াতে চাও আমার সাথে? আমার বাবার সম্পত্তির ভাগ চায় তোমার, আমার বোন সেজে? সাংঘাতিক চালবাজ মেয়েতো তুমি? খবরদার ফের যদি আমাকে ভাইয়া ডেকেছ? আমি জগৎবাসির সবার জন্য ভাইয়া হলেও তোমার নয়। এই আসিফ! তুই বলতো, ওকে( মায়াকে উদ্দেশ্য করে দেখিয়ে) আমার বোনের মতো দেখতে লাগে হ্যাঁ?
আসিফ যেন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে রিদের ডাকে। তৎক্ষনাৎ অসম্মতি দিয়ে বলল আসিফ…
‘ না ভাই! একদমই লাগে না। আপনাদের হাইট, ওয়েট, কার্লার, কোনো কিছুই মিলে না। উনাকে তো(মায়া) আমাদের ভাবির মতো লাগে।
আসিফের এঙ্গেলের কথা মায়া না বুঝলেও রিদ ঠিকই বুঝতে পারে। রিদ আসিফের অতিরিক্ত কথা চোখে শাসায়। আসিফ দমে গিয়ে চুপচাপ জায়গায় ছেড়ে প্রস্হান করে। আরেকটু হলে আবেগী আসিফ সবকিছু ফাস করে দিতো মায়ার সামনে। আসিফ চলে যাওয়ার দিকে মায়া বোকার মতোন তাকিয়ে থাকে। মূলত ওর মাথায় কিছুই ঢুকেনি। মায়া কিভাবে এতো ছেলে আসিফের ভাবির মতোন দেখতে হতে পারে? আসিফের ভাবি নিশ্চয়ই কোনো বুড়ো মহিলা হবে? তাহলে কি মায়া বুড়ো মহিলাদের মতোন দেখতে? মায়ার ফের ধ্যান ভাঙ্গে রিদের ভয়ে। রিদ বলে…
‘ শুনো মেয়ে আমাকে ভাইয়া-টাইয়া ডাকা যাবে না। এই শব্দটা তোমার জন্য ব্যান। চাইলে স্যার ডাকতে পারো।
‘ জ্বি আচ্ছা!
‘ গুড! এবার সুন্দর করে সালাম দাওতো দেখি।
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার।
‘ গুড! এবার চাঁদা দেন!
মায়া প্রথমে বুঝলো না রিদের কথার মানে।
‘ হুমম?
‘ এলাকায় থাকতে গেলে চাঁদা দিতে হয় সিনিয়রদের জানেন না সেটা? দেন আমাকে চাঁদা দেন! দেখি কি কি আছে আপনার কাছে। বের করেন সব।
মায়া রিদের কথায় বিপাকে পরে গিয়ে আবারও চোখ টলমল হয়ে উঠে পানিতে। রিদ মায়ার চোখের পানি দেখে বিরক্তি নিয়ে নিজেই মায়ার কাঁধের ব্যাগ টেনে নিজের কাছে নিলো। পরপর মায়ার ব্যাগের সবগুলো চেইন খুলে ভিতর থেকে মায়ার টিফিনের বক্সটি হাতে নিল। একহাতে মায়ার বইয়ের ব্যাগটা ফিরত দিয়ে টিফিন বক্স খুলে দেখতে পেল গরুর মাংসের পাস্তা রান্না করার। রিদ দুই আঙ্গুলের সাহায্যে একটু মুখে দিয়েই মায়ার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের। মায়া মূলত রিদের দিকেই তাকিয়ে ছিল ড্যাবড্যাব করে। রিদ মুখে পাস্তাটা চিবুতে চিবুতে বললো…
‘ খুব জ্বাল। আমি এতো জ্বাল খেতে পারি না। কাল থেকে কম জ্বাল করে নিয়ে আসবা, মনে থাকবে?
কথা বলতে বলতে রিদ ফের দুই আঙ্গুলের সাহায্যে পাস্তা মুখে তুললে মায়া তৎক্ষনাৎ নিজের ব্যাগ গেঁটে রিদের জন্য ছোট চামচ বের করে দিল। রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে চামচটা হাতে নিতে নিতে বলল…
‘ এই খাবার কে রান্না করেছে তুমি??
মায়া নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলে…
‘ হুমমম!
রিদ চামচ দিয়ে পরপর পাস্তা মুখে তুলতে তুলতে বলল…
‘ কাল থেকে পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসবা। এখন যাও কলেজে। এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই। এতটুকু খাবার আমারই লাগবে। আউট!
(রি -চেক করিনি।)
#চলিত……